............................................
প্রথমেই স্কুলের টুকরো একটা ঘটনা দিয়ে আজকের আলোচনা শুরু করছি....যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন ক্লাস নাইনের মুন্না ভাই দুইতলা থেকে লাফ দিয়েছিল। লাফ মেরেছিল নায়িকার জন্য নয়! ছেলেদের কমনরুমে নায়িকাকে নিয়ে হাত ধরে গল্প করার সময় হেডস্যার (মুন্না ভাইয়ের মামা) এসে পড়ায় মু্ন্না ভাই হেডস্যারের ভয়ে জান বাঁচানো ফরয মনে করে নায়িকাকে ফেলে বিসমিল্লাহ বলে ভাঙ্গা জানালা থেকে অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে লাফ মেরেছিল। নায়িকা আমাদের ক্লাসমেট ছিল তাই ঘটনা ডিটেইল জানতাম। ঐ ঘটনার পর নায়িকা আর ফিরে যায়নি। যাবেই বা কেন! তার মতে, এটাকে কি কোনো ভালবাসা বলে???
“প্রেম/ভালবাসা জিনিসটাই হচ্ছে আবেগ দিয়ে মাখামাখি মনের একটা ভুয়া সম্পত্তি” বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ মনে করেন।
এজন্য তাদেরকে প্রেম না করতেই দেখা যায়। তবে যারা প্রেম/ভালবাসার মাধ্যমে শুভ পরিণয় ঘটায় তাদেরকে বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ যথেষ্ট রেসপেক্ট করেন।
তবে কোনো কোনো বিজ্ঞরা এ ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ না করে অতিরিক্ত তথ্য প্রদান করে বলেছেন, “প্রতিটা মানুষের হৃদয়ে ‘ভালবাসা’ নামক আবেগী এক ধরনের হরমোন থাকে। এই হরমোন কারো হৃদয়ে বেশি থাকে কারো হৃদয়ে কম থাকে। যাদের বেশি থাকে তাদেরকে বারবার প্রেমে পড়তে দেখা যায়।
এই হরমোন নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত থাকে তবে কারো কারো হৃদয়ে সারাজীবন পর্যন্তও থাকে যার কারণে তারা অধিক বয়সেও প্রেমে পড়ে। যেমন: হু.মু.এরশাদ”।
ভালবাসার পার্থক্য রয়েছে বলেই মুর্গা ঔপন্যাসিক আব্দুস সালাম মিতুলের “মানসী প্রিয়া”নামক উপন্যাস পড়ে আমরা তাকে ছাগলা বলে আখ্যায়িত করি আর অপরদিকে হুমায়ূন আহমেদের “নবনী” নামক প্রেমের উপন্যাস পড়ে পানি গিলি আর বলি কথাসাহিত্যিক কথাসাহিত্যিক।
এ পৃথিবীতে যারা আবেগের বশবর্তী হয়ে কাজ করে তারা কখনোই কোনো কাজ ঠিক মত করতে পারে না। কারণ আবেগ জিনিসটা মানুষের মধ্যে সাময়িক সময়ের জন্য আসে।
আবেগ শেষ তো সব শেষ। এই জন্যই মৃত মানুষের জন্য আত্নীয় স্বজনের ক্রন্দন সাময়িক সময়ের জন্য হয়। তবে যে মৃত মানুষটাকে সত্যিকার অর্থে অনুভব করে তার কিন্তু অন্তরেই তার প্রতি মমতা সবসময়ই জমে থাকে।
আর এ কারণেই একজন চেইন স্মোকার তার স্ত্রী-কন্যার অনুরোধের প্রেক্ষিতে আবেগায়িত হয়ে “স্মোকিং ছেড়ে দিবো” বলেও ছাড়তে পারে না। কিন্তু যখন সে হিসাব কষতে থাকে স্মোকিং-এর কুফলতার ব্যাপারে অর্থাৎ বাস্তবিক চিন্তা ভাবনা যখন শুরু করে তখনই সে সফলতার সহিত স্মোকিং ছাড়তে পারে।
ঠিক এভাবে নেতা কর্মীরা ইলেকশনের আগে আবেগায়িত হয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেন। কিন্তু ইলেকশনের কিছুদিন পরে জয়ী নেতা কর্মীদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না কারণ আবেগ তখন ঘুমে রূপান্তরিত হয়।
এ ধরনের অসংখ্য অসংখ্য উদাহরণ আছে আপনার আমার সবার জানা।
একবার ভাবুন তো “তোমাকে ভালবাসি” বা “তোকে/তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না” এইসব কথা যখন কাউকে বলা হয় তখন কত্ত বড় মিথ্যাটা বলা হয়? যদি আপনি বিশ্বপ্রেমিক/বিশ্বপ্রেমিকা হয়ে থাকলে মনে মনে প্রশ্ন করবেন,” কেন? এতে মিথ্যার কি আছে?” যাদের চিন্তাধারা বাস্তবধর্মী তারা কিন্তু ঠিকই ধরতে পেরেছে মিথ্যাটা কি। মিথ্যাটা হল মানুষ নিজেকেই শুধু ভালবাসে.....আর তারপর তার পরিবারকে ভালবাসতে পারে.....এর বাইরে অন্য কাউকে না।
( পরিবারের মধ্যে অবশ্য স্ত্রী/স্বামীকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ)....। অন্যদেরকে সে খেয়াল রাখতে পারে সেটাকে ভালবাসা বা প্রেম বলা যায় না সেটাকে বলে উপকার বা দায়িত্ববোধ।
আকর্ষণ থেকে প্রেমের উৎপত্তি আর প্রেম থেকে দায়িত্ববোধের সৃষ্টি। আর এটাই সাচ্চা প্রেম। এই ধরনের প্রেম বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ একটু একটু পছন্দ করেন।
তবে অধিকাংশ প্রেমই যেহেতু মুন্না ভাইয়ের মত আবেগী তাই বিজ্ঞরা ওটা থেকে দূরে থাকতেই পরামর্শ দিয়েছেন।
সত্যি বলতে কি....ভালবাসা নামক আবেগী জিনিসটা দিয়ে মাখামাখি করা অদৃশ্য বস্তুটা আসলে প্রেম নয়.....ওটাকে বলে ভন্ডামী
অনেকদিন আগে মাসুমা মীমের “আবেগ” নামক একটা উপন্যাস পড়েছিলাম যার কাহিনী খুবই জঘন্য ছিল। কিন্তু অনেক সত্যই উপন্যাসটাতে ছিল। তাই উপন্যাসটা খারাপ হলেও পড়তে বলছি।
আবেগকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখুন।
..........
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: হুমায়ূন মামা আর শাওন মামীকে নিয়ে ফাও একটা কথা বললে সত্যি সত্যি আজকে আমি ব্লক মারবো)
জোড়াতালি মারা এই লেখাটা আমার এক আবেগী বন্ধুকে উৎসর্গ করলাম যে এই সাইটে আসে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।