আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলনসই প্রযুক্তিই সই!



পণ্য ও প্রযুক্তির উদ্ভাবক এবং একই সাথে প্রস্তুত, বিপণন ও বিক্রয়কারীদের মাঝে একটি সাধারণ প্রবণতা হল কিছু ক্রেতাকে বিক্রয়ের সাথে সাথেই চিন্তা ভাবনা করে বের করা কিভাবে আবার সেই একই ক্রেতার কাছে থেকে মালপানি খসানো যায়। তাই প্রতিটি পণ্যেই নিত্যনতুন ফীচার আর চমক যোগ করা হয় যেন ক্রেতার খুব জলদিই মনে হয় যে তিনি যেই মডেল ব্যাবহার করছেন তা ইতিমধ্যে সেকেলে আর অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। আর তাই এখনকার মডেল বদলে “আপটুডেট” করে নেয়া দরকার। তাই বাক্সো টিভির বদলে পাতলা খান, তালপাখার বদলে এসি, আর ইঁট মোবাইলের বদলে আইফোন। তবে অন্যান্য সব কিছুর চেয়ে কম্পিউটার আর তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই পাগলা ঘোড়ার ছুট সবচেয়ে বেশী।

কম্পিউটারের মূল চালিকাশক্তি মাইক্রোপ্রসেসরের ক্ষমতা প্রতি আঠারো মাসে দ্বিগুণ হবার কথা। এবং গত তিন দশক ধরে তা চলেও আসছে। কিন্তু এই পাগলা ঘোড়াকে ছুটাতে হলে সেই পরিমাণে গবেষণার প্রয়োজন আর তার খর্চা মেটানোর জন্য সেই পরিমাণেই বিক্কিরি বাট্টার দরকার। তাই প্রযুক্তি কোম্পানীদের বিরামহীণ বিপণন শ্লোগানে আমরা প্রতিদিন মুখরিত থাকি, এই আজকে আসলে অমুক প্রতিষ্ঠানের লেটেস্ট প্রসেসর, তার পরের দিনেই আসল পরবর্তী প্রজন্মের র‌্যাম আর তার কদিন পরেই নতুন অপারেটিং সিস্টেম যার খাঁই মেটাতে পুরো যন্ত্রেরই রদবদল। আধুনিক বিশ্বের হিসেবে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর পরে কম্পিউটার পালটানো দরকার হয়।

কিন্ত কাজের প্রয়োজন হিসেব করলে দেখা যায় যেই এই হুড়মুড় করে দৌড়ের অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়। আমার বাড়ির যন্তরটা প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। এক প্রোসেসরের পেন্টিয়াম ফোর, একটু বাড়িয়ে নেয়া এক গিগা র‌্যাম দিয়ে দিব্যি চলছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় কোর দুচারটা বাড়াই কিন্তু পকেটের দিকে দেখে নিজেরে সংযমের মহত্ব সম্পর্কে দুচারটা কথা মনে করিয়ে দেই। তবে মজার কথা হল, কমসমের মধ্যে ভাল প্রযুক্তির দাম মনে হয় মানুষ ভালই দেয়।

তাই আজকালকার প্রযুক্তির বাজারে নতুন এক প্রবণতা দেখছি। সেরা আর লেটেস্ট মডেলের প্রযুক্তির বদলে কোনরকমে কাজ চলে যায় এইরকম প্রযুক্তির এক বিশাল বাজার তৈরি হয়ে গেছে। এই যেমন, ক্যানন, সনি আর নাইকন যখন সেরা প্রযুক্তির মুভি ক্যামেরা নিয়ে নিযেদের মাঝে মহাসমরে ব্যাস্ত সেই সময়ে পিওর ডিজিটাল নামে একটা পিচ্চি প্রতিষ্ঠান ফ্লিপ নামে একটা পিচ্চি ক্যামকর্ডার বের করল বাজারে। ছবির কোয়ালিটির দিক থেকে সনি আর প্যানাসনিকের সামনে নিতান্ত হাসি তামাশার কোলালিটি খুব বেশী হলে সেই সময়ের মোবাইলের ক্যামেরা থেকে একটু ভাল। কিন্তু ফট করে পকেট থেকে বের করে ভিডিও করে সেই ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করে দেবার জন্য চমৎকার জিনিষ।

আর শ ডলারের প্রাইসরেঞ্জ হিসেবে গিফট আইটেম হিসেবেও ফাটাফাটি। এই এক পিচকি ক্যামেরা এমনই নাম করল যে দুবছরের মাথায় আমেরিকার মুভি ক্যামেরা মার্কেটের প্রায় ১৩% খেয়ে ফেলল। যেখানে এক শতাংশের ভগ্নাংশের জন্য মারামারি হয় তার জন্য এটা বিশাল সংখ্যা। তাই গতবছর থেকে ক্যানন, সনি আর প্যানাসনিকও দেখি এইরকম মাইক্রো মুভি ক্যামেরা অফার করা শুরু করেছে। নাগ্রোপান্টের ওএলপিসি মুভমেন্ট যখন শ ডলারে বাচ্চাকাচ্চাদের ল্যাপ্টপ দেবার ঘোষণা দিয়েছিল তখন তাই নিয়ে বিশাল হইচই পড়ে গেছিল।

তার বছরখানেক পরেই আসুস ঘোষণা দিল যে তারাও কমসম বাজেটের ল্যাপটপ বাজারে ছাড়বে। তার কদিন পরে যখন সেই ল্যাপটপের স্পেসিফিকেশন আসল তাতে বড়রা হেসেই বাঁচেনা । সাত ইঞ্চি স্ক্রীণ আর নাই কোন অপটিকাল ড্রাইভ, আর হার্ড ডিস্কের বদলে পিচকি ফ্ল্যাশ ডিস্ক, চলবে আবার লিনাক্সে কে ব্যাভার করবে এই জিনিষ? কিন্তু দুতিন বছরও মনে হয় যায়নি এখনকার প্রযুক্তির বাজারের সবচেয়ে বড় বিক্রির বাজার হল ‘নেটবুক’ কম্পিউটার। সাইজে ছোট্ট, ফলে স্ক্রীনের জন্য খরচ কম, অপটিকাল ড্রাইভ নাই ফলে আরেকটা খরচ নাই, নিজস্ব গ্রাফিক্স কার্ড নেই বলে গেমের জন্যও ভাল না, কিন্তু টুকটাক অফিস ডকুমেন্ট আর ব্রাউজিং এর কাজ আরামে হয়ে যায়। আর বাড়ির টিনেজারদের ঘ্যানঘ্যান থেকে বাঁচার জন্য বাপমায়ের পার্ফক্ট এক্সকিউজ।

তাই ডেল এর মিনি ৯ , লেনোভোর এস১০, সনির ভায়ো পি সবগুলোই কম বাজেটের দুবলা মেশিন, কিন্তু পাবলিকের কাজ চালানোর জন্য তাইই সই। তাই আজকে অনেক চেষ্টা করেও মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এক্সপির বুকে ছুরি বসাতে পারছে না। আর ভিস্তার পরের প্রজন্মের উইন্ডোজ সেভেনে অপারেটিং সিস্টেমের ভেতর থেকেই এক্সপি এবং এক্সপির লেগ্যাসি সফটওয়ারগুলো চালানোর ব্যাবস্থা করে দিতে হচ্ছে । তাই প্রযুক্তির বাজারে আজকের নতুন শ্লোগান সেরা প্রযুক্তি তো আছেই কিন্তু কাজ চালানোর মত প্রযুক্তি হলেই দিন চলে যায়। আর সত্যি কথা হল, ভবিষ্যতের কম্পিউটিং প্রযুক্তি কি হবে আর কি যন্ত্র ব্যাবহার করে আমরা কি কাজ করব আজকেই তা বলা মুশকিল।

এই সপ্তাহের হিট খবরের মধ্যে একটা হল, আমেরিকান সম্ভ্রান্ত পত্রিকা দি নিউ ইয়র্কারের প্রচ্ছদ করেছেন জনৈক শিল্পী। দেখে চমৎকার জলরঙ্গের কাজ বলে যা মনে হয় তা আসলে আইফোনে দেড় ঘন্টা নয় ডলারের ড্রইং এপ্লিকেশন নিয়ে করা কারুকাজ। গিজমোডোর যেই প্রবন্ধে অনুপ্রাণিত হয়ে.... চিন্তাগুলোকে গুছিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.