একাত্তরের নয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্ববাংলার মানুষদের জন্য একটা গৌরবান্বিত সাধারণ পরিচয় নির্দিষ্ট করেছেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। 'সোনার মানুষ' বইয়ে তিনি একাধিক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, কিছু পাকিস্তানি দালাল আর রাজাকার, শান্তিবাহিনী, আল-বদর, আল-শামস, এসব ছাড়া দেশের সব মানুষ মুক্তিযোদ্ধা। এসব সোনার মানুষ যুদ্ধটা করেছেন দুই কাতারে। কেউ কেউ অবতীর্ণ হয়েছেন সম্মুখসমরে। আবার কেউ লুকিয়ে-চুকিয়ে গেরিলা কায়দায় ধরাশায়ী করেছেন মিলিটারিদের।
অন্য আরেকটি দল আর বেশির ভাগই এই দলের, যারা এ দুভাবে ছাড়াও যুদ্ধ করেছেন মানসিকভাবে। একটা যুদ্ধ 'মানসিক' ও 'শারীরিক' দুই রকমের প্রভাব ফেলে। এই বইয়ে তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি সেই সোনার মানুষদের তুলে ধরেছেন। যাদের হয়তো যুদ্ধটা করার কথা ছিল না, বা যারা মুক্তিযুদ্ধ করার মতো প্রেক্ষাপটেই ছিলেন না, অথচ যুদ্ধ নিয়তি সম্পর্কহীন মানুষগুলোই কিনা জড়িয়ে পড়ল শেষ পর্যন্ত মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়। যে যে পর্যায়ে ছিল, যে যে অবস্থানে ছিল, সেখান থেকেই চলে গেছেন 'মুক্তিযুদ্ধের ইস্টিশন'-এ।
নেমে পড়েছেন অস্ত্রসহ অথবা অস্ত্র ছাড়া। 'সোনার মানুষ ১'-এর মোসলেম ডাকাত। ডাকাত সর্দার ছিলেন যে যুদ্ধের আগে। দশ সদস্যবিশিষ্ট ডাকাত দল ছিল তার। অথচ সেই মানুষটিই কিনা যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কেমন বদলে গেলেন।
শরণার্থী শিবিরে গিয়ে এক অনাহারী শিশুর মুখে বিস্কুট তুলে দিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধার খাতায় কার্যত সে দিন থেকেই নাম লেখালেন। মূলত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাকে মূলমন্ত্র মেনে যুদ্ধে যোগ দিয়ে মোসলেম 'ডাকাত' থেকে 'মুক্তিযোদ্ধা' হয়ে উঠেছিলেন। লোকের দৃষ্টিতে এ রকম মানুষের পরিচয়ই 'সোনার মানুষ'। 'সোনার মানুষ ২'-এ পাওয়া যায় তেমনই আরেকজন সোনার মানুষের পরিচয়। 'সোনার মানুষ ৩'-এ লেখক তুলে ধরেছেন ব্যতিক্রম এক মুক্তিযোদ্ধার ঘটনা।
মূলত তিনটি ঘটনা পাঠককে নিয়ে যায় সেই সব সোনালি দিনে, যা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। পূর্ববাংলার মানুষ যেন এমন মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষারতই ছিলেন। সুযোগ আসামাত্র ধরতে পিছ-পা হননি। এমন মানুষরাই 'সোনার মানুষ' হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। বইটি প্রকাশ করেছে নান্দনিক প্রকাশনী সংস্থা।
মূল্য- ৩০০ টাকা। *মেহেদী উল্লাহ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।