বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়
" এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়মাসে নামে তমাল‐বনে।
এমনি করে শ্রাবণ‐রজনীতে
হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ‐চোখ। "
আজকে সারাদিন ভাবছিলাম মেঘকে নিয়ে লেখবো ।
জীবনে দেখা বিভিন্ন সময়ে এই মেঘের সৌন্দর্যকে নিয়ে আজ কিছু একটা ভাবতে ইচ্ছে করছে । জাগতিক দূঃখ কষ্ট আর দৈন্যতা নিয়ে যখন আমরা হতাশ হয়ে অসহায়ের মত আকাশের দিকে লক্ষ্য করি । তখন কখনো কখনো আকাশে গায়ে কালো মেঘ দেখে মনের বিষন্নতা হয় হালকা। আবার কখনো দেখি মেঘহীন আকাশের গায়ে কেমন যেন অসহ্য নীলের ছড়াছড়ি । মন তখন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে আরো ।
আবার কখনো বা এই বিষন্ন মন কারও নীলের মাতোয়ারায় আনন্দে উদ্বেলিত হয়।
কখনো বা এই আকাশের কালো মেঘ আমাদের মনে আশংকার সৃষ্টি করে প্রচন্ড ঝড়ের। মারাত্বক ক্ষয়ক্ষতির দুঃশিন্তায় আমরা অস্থির হয়ে পড়ি । আবার কখনোবা দীর্ঘ অনাবৃষ্টির আর খরায় যখন মাঠঘাট বিদীর্ন আমরা আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ি ঈশান কোনে পুন্জিভূত কালো মেঘের ঘনঘটায় । আমরা চাতকের ন্যায় অধীর আগ্রহে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রতীক্ষা করি বৃষ্টি ধারার।
আমাদের জীবনধারায় আবহমান কাল থেকে এই মেঘের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের হাসি কান্না, নানা কাহিনী ,শ্লোকগাঁথা। মেঘকে ঘিরে রচনা হয়েছে নানা সাহিত্য,গান আর গল্প কবিতা। আমাদের জীবনে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই মেঘ।
মেঘ কে কখনো কল্পনা করা হয়েছে অশনি সংকেতের ন্যায় আবার কখনোবা মেঘ হয়েছে মেঘবালিকার ন্যায়। গল্পের নায়ক, নায়িকার চুলকে তুলনা করেছে মেঘের ন্যায় পেঁজা তুলো তুলো ন্যায় ।
আবার কখনো বা পদ্মার এক মাঝির জীবন কাহিনীতে মেঘ আবির্ভূত হয়েছে ভিলেনের ন্যায়। যে কিনা ঝড় হয়ে তছনছ করে দিয়েছে তার জীবনকে । পদ্মা ,মেঘনা , যমুনা কিংবা সমুদ্রের তীরবর্তী অন্চলের মানবের জীবনধারার উপর রচিত অধিকসংখ্যক কাহিনীতে এই কারনে মেঘের আবির্ভাব ভিলেনের মত ।
আবার আসুন শহরকেন্দ্রিক জীবন ধারায় এখানে মেঘ স্বাভাবিক ভাবে রচিত হয়েছে প্রেমকাহিনীর আবহ তৈরীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম হিসেবে । ধরা যাক নায়িকা কি কারনে সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় যেয়ে দেখলো সারা আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা অম্নি নায়িকার মন আনঁচান করে উঠলো নায়কের কথা মনে পড়ে ।
আরো মনে পড়লো অনেক কথাই যেন তাকে বলা হয়ে উঠেনি । আর সেটা বলার জন্য সাথে মোবাইলে "হ্যালো " ব্যাকগ্রাউন্ডে রেজওয়ানা চৌধুরীর গলায় বৃষ্টির গান
এই মেঘ থেকে শুধুমাত্র নায়ক নায়িকা নয় তার সাথে পৌড়রাও বাদ যায়না । অফিসে কর্মরত অবস্থায় চল্লিশার্দ্ধ ব্যাক্তি যখন লক্ষ্য করে জানালার ফাঁক গলে সারা আকাশ জুড়ে কালো মেঘ তিনি ও প্রয়োজন বোধ করেন আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে গিন্নীর সাথে একটু সুখ দূঃখের কথা বলার। আর ওদিকে গিন্নীও বসে নেই আকাশের কালো মেঘ দেখে তিনিও রান্নাঘরে কোমড়ে শাড়ি বেধে লেগে গেছেন বেগুনভাজা ,ইলিশ আর খিচুঁরীর পাঁকাতে ।
বাচ্চারাও এই মেঘ দেখে করে নানান রকম প্ল্যান।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই কালো মেঘের ঘনঘটায় তারা উল্লাসিত হয়ে নানারকম অজুহাতে স্কুলে না যাওয়ার চেষ্টা করে । এরপর গোপনে তো আছেই বিকল্প প্ল্যান স্কুল পালিয়ে মেঘলা দিনে বাদল হাওয়ায় খেলে বেড়ানো । কিন্ত এই শহরে আবার কিছু ছিন্নমূল,বস্তিবাসীদের মন হয়ে উঠে ভারাক্রান্ত কারন এই কালোমেঘের ঘন বর্ষন তাদের অবস্থাকে করে তুলবে আরো করুন এবং অসহায় ।
শহরের বেকার আর ভবঘুরের জন্য মেঘ হচ্ছে সময় কাটানোর এক সুন্দর মাধ্যম । অলসমনে তারা একমনে আকাশের গায়ে মেঘের আকার আকৃতিতে খুঁজে ফেরে প্রিয় কোন মানুষের মুখ অথবা আপন মনে আঁকে কোন চিত্র ।
এইভাবে দিন যায় দিন আসে শহর গ্রাম জনপদের সুখ কখনো বা দূঃখকে সাথে নিয়ে আসে মেঘ । কখনও আসে শরৎ এ কাশ ফুলের সাদা রং এর রুপের চাদরে । আবার কখনো বা আসে বৈশাখে রুদ্র মূর্তিতে ঘনঘোর কালো রুপ ধরে। আর বর্ষায় এই মেঘ সবচাইতে মোহনীয় আর কমনীয় রুপে আসে এই ধরনীর বুকে। শান্ত, ধীর, হালকা কালো বর্নের মেঘেরসারি যখন সারা আকাশ জুরে রুপের পসরা সাজিয়ে বসে তখন এই মন শুধু চায় উদাসী মনে আকাশের গায়ে রুপসী মেঘকে প্রানভরে দেখি ।
আর কবি বলে উঠে ছন্দের দোলায় .....
আমি কবি-সেই কবি-
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
এই কোলাহলমুখর ব্যস্ত নাগরিক জীবনের তীব্রগতির সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়তে গিয়ে যখন হাঁপিয়ে উঠি তখন মনের কল্পনায় নিজেকে আবিষ্কার করি মেঘেদের রাজ্যে । চোখ বন্ধ করে উপলদ্ধি করি চারপাশে তীব্র বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। আর কল্পনার চোখে দেখি আমার চারপাশে সাদা মেঘের অসংখ্য পাহারের সারি আর সেইসাথে ভেসে আসে কানে বর্ষার মেঘের মেঘনাদ ।
অনেকক্ষন হলো মেঘ কে নিয়ে লেখছি আসুন এবার না হয় এই মেঘলা দিনে কান পেতে শুনি কিছুক্ষন সেই মেঘের গুরুগুরু মেঘনাদের সাথে বর্ষার রিমঝিম সুরেলা সংগীত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।