প্রথমেই আমাদের পাঠ্য পুস্তক থেকে দুধে পানি মিশানো আর বার বার পিছিয়ে পড়া বানরের জটিল ধাঁধা অপসারনের দাবী জানাচ্ছি । আমি জানিনা পাকিস্তান আমলে নাকি বৃটিশ আমলে এই ফালতু বিষয়গুলো আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ঢুকেছে । পাকিস্তানিদের বুদ্ধি যা তাতে মনে হচ্ছে একমাত্র বৃটিশদের মাথা থেকেই এই জটিল ফর্মূলা বের হতে পারে । নিষিদ্ধের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরায়ত । কিন্তু মানুষকে তো জানতে হবে নিষিদ্ধ বস্তুটি কী ? দুধে পানি মেশানোর নিষিদ্ধ কর্ম আর বারবার পিছিয়ে পড়ার পরিশ্রমী গল্প আমাদেরকে এক নিষিদ্ধ ভূবনে স্বাগত জানায় ।
আমরা জীবনের সব ক্ষেত্রে হয়ে উঠি ভেজালপ্রিয় । আমরা বারবার পিছিয়ে দেই আমাদের দেশকে-সমাজকে-রাস্ট্রকে ।
হ্যাঁ , নিছকই কৌতুক করার জন্যই দুধ আর বানরের কাহিনী নিয়ে এসেছি । বাস্তবে হয়তো এ জাতীয় অংকের প্রভাবে আমরা খারাপ কাজে লিপ্ত হইনা । কিন্তু আমরা যে ভেজালের অথৈ সাগরে ডুবে আছি তা প্রমানের জন্য রোকনদ্দৌলার আর প্রয়োজন নেই ।
এটা প্রমাণ ছাড়াই সত্য- যেন স্বতঃসিদ্ধ । আর পিছিয়ে পড়া ? অনেকে হয়তো বলবেন, এগিয়ে পিছিয়ে গেলে না হয় বানরের প্রসঙ্গ আসত । আমরা তো আগাচ্ছিনা ! না এমন যারা ভাবছেন তাদের সাথে আমি সর্বৈব একমত নই । আমার মতে আমরা এক কদম আগাই এবং দু'কদম পিছাই । ফলে আমরা আর বাঁশের শেষ প্রান্তে পৌঁছতে পারিনা ।
আমরা পিছিয়ে পিছিয়ে পরাধীন রাস্ট্রেরও অধম হয়ে যাচ্ছি ।
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে রাস্ট্রভাষা হিসেবে পাওয়াকে যদি প্রথম এগিয়ে যাওয়ার কাহিনী ধরি তাহলেও দেখব এর পর আর আগায়নি আমাদের ভাষাপ্রীতি । ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষনার মধ্যদিয়ে আমরা একটা স্বীকৃতি হয়তো পেয়েছি কিন্তু আমাদের ভাষার খুব বেশী উন্নতি হয়নি । আজ সর্বত্রই ইংরেজী আর হিন্দীর প্রাধান্য বলে দেয় ভাষার ক্ষেত্রে আমরা আগু-পিছু করতে করতে এখন পিছিয়েই আছি । ভাষার প্রতি ভালবাসা যেন ভেসে গেছে গড্ডল প্রবাহে ।
পাকিস্তানি শাসক-শোষক আর এদেশীয় গোলামীর মনোবৃত্তির মানুষগুলো করুণ পরিনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল এ অঞ্চলকে। কিন্তু সময়ের সাহসী সেনাদের অকুতোভয় সংগ্রাম আর দেশের প্রতি ভালবাসা তাদের সেই ষড়যন্ত্রের রাহু থেকে মুক্ত করে দেশকে । আমরা হয়ে যাই স্বাধীন । জ্ঞাত ইতিহাসে একসাথে এতদুর এগিয়ে যাওয়া আর কখনো হয়নি এ অঞ্চলের । একলাফে অনেকদুর ! যার সাথে তুলনা হয়না কোন বিজয়ের ।
এরপর আবার পিছিয়ে পড়ার কাহিনী । চার খলিফার সন্ত্রাস, রক্ষি বাহিনীর ত্রাস, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং বাকশাল প্রতিষ্ঠা, ২৫ বছরের গোলামী চুক্তি- যেন যতটুকু এগিয়েছে দেশ তার সবটুকু পিছিয়ে যাবার অফুরান চেষ্টা । যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশে কী করা উচিত ছিল বা কি করা উচিত হয়নি এ যুক্তি তর্কে না গিয়েও বলা যায় ঐ সময়টায় দেশ আগায়নি বরং পিছিয়েছে ।
তারপর কত রক্তের খেলা ! মুক্তিযুদ্ধের পর যেন আরেক মুক্তিযুদ্ধ ! কত শত বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ আর হারানোর শোকে কাতর মা-বাবা-আত্মীয়-স্বজনের আহাজারি পেরিয়ে উর্দি-নায়কের ক্ষমতার মসনদে আরোহন । রক্তের লাল গালিচায় সংবর্ধিত একজন নায়কের কাছে মানুষ হিটলারের নৃশংসতাই হয়তো প্রত্যাশা করেছিল ।
কিন্তু ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পর তার হাতেই দেশের চেহারা ফিরতে থাকে । আমরা আস্তে আস্তে এগুতে থাকি ।
আবার পিছনে ফিরার পালা । উত্থান যার রক্তের খেলায়, পতনও তার অবধারিত রক্তে- ইতিহাসের নির্মম এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি এখানেও । আবারও রক্তের দাগ পেরিয়ে ক্ষমতায় এলো আরেক উর্দিবীর ।
দেশ কি তখন এগিয়েছে ? অনেকে অমিমাংসিত রাখতে চান পর্বটা । আমি দেখি কিছু আগানোর কাহিনী । স্বৈরাচারের সময় দেশ কি এখনকার চেয়ে খারাপ ছিল ? যাইহোক, একদিকে উন্নতি ঘটলেও কিছু মৌলিক দাবীতে এক হয়ে যায় গোটা দেশ । ৭১ এর পর ৯০ -দেশের ইতিহাসে এই দুটোকেই কেবল বড় করে দেখেন অনেকে ।
তারপর গণতন্ত্র ।
দেশ এগিয়ে যাবার কাহিনী । বানরের শেষ লাফ দেবার কাহিনী । না, সে সৌভাগ্য আমাদের হয়নি । স্বৈরাচারের সময় দুর্ণীতি আড়ালে আবডালে চললেও এখন এটা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়ে যায় । টানা পাঁচ বছর দুর্ণীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমরা প্রমান করেছি দেশ আগায়নি পিছিয়েছে ।
ভাঙ্গা সুটকেসের আলাদিনের প্রদীপে পরিনত হওয়া, রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধার হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবার শপথ, স্বৈরাচার আর স্বৈরাচার বিরোধী শিবির একাট্টা হয়ে পথ চলার নতুন ঘোষনা রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটায় । রাজপথে সাপের মত পিটিয়ে মানুষ মারা, পরমত অশ্রদ্ধার চরম দৃষ্টান্ত দেখিয়ে ১/১১র জন্ম দেয়া, মাইনাস টু থিওরি ও তার ব্যর্থতা, দুর্ণীতি বিরোধী অভিযান এবং তার মুখ থুবড়ে পড়া, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি এবং তার ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ-আমরা একটা নতুন যুগে প্রবেশ করি ।
আমরা ভাবতে বসি এবার সত্যি সত্যিই দেশ আগাবে । ডিজিটাল বাংলাদেশ না হোক অন্তত, এতদিনকার পিছিয়ে পড়া ট্রেন্ড থেকে বেরিয়ে দেশ আগাতে শুরু করবে । কিন্তু প্রথম হোঁচটটা এত বড় হল- দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানকে দু-ভাগে বিভক্ত করে দিল ।
সেনাবাহিনী আজ নিজেরাই নিজেদের মুখোমুখি !যুদ্ধাপরাধিদের বিচারে কার এত গাত্রদাহ ? সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন জমছে !আমরা আবারো অনিশ্চয়তার দোলাচালে । আবারও আমরা রাজনীতি বিমুখ হয়ে উঠছি । আবরো ভাবছি নেতারা দেশকে শোষন করতেই জানে, শাসন করতে জানবেনা কোনদিন ।
খুব দুঃখ হয়, বাঁশটা তৈলাক্ত নয় তবু বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে বানরটা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।