আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি
নির্মলেন্দু গুণের রিকশাওয়ালা বউকে রিকশা চালানো শিখিয়েছিলো দরজা বন্ধ করে, চৌকির ওপরে। আমাদের মনু মিয়ার সে ইচ্ছা কখনোই ছিলো না। তার খায়েশ এটুকুই- নিজে রিকশা চালিয়ে বউটাকে নিয়ে ঘুরবে। শুধু রাস্তাটা নদীর ধারে হলে ভালো হয়।
মনু মিয়া স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থার মাঝামাঝি একজন কৃষক।
রিকশার তার দরকার ছিলো না। কিন্তু বিকেলবেলায় কোনো কাজ থাকে না, বউকে নিয়ে কতোক্ষণ আর শুধু গল্প করা যায়! তার অবস্থাও এমন না যে, দুজনে মিলে রিকশায় ঘণ্টাচুক্তিতে কোথাও থেকে ঘুরে আসবে।
অনেকভেবেচিন্তে তাই বউকে না জানিয়েই রিকশাটা কিনে ফেললো। দু’চারদিন প্র্যাকটিস করে বউকে যখন রিকশা কেনার গোপন রহস্য বলে দিলো, বউয়ের মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোয়নি। বউ এর দাম দিয়েছিলো চোখ দিয়ে, ঠোঁট দিয়ে, তার সারা শরীর দিয়ে।
এরপর থেকে বৃষ্টি না থাকলে দু’জন বের হয় রিকশায় করে। একজন চালায়, একজন চলে। বাড়ির উঠানে একদিন বউটাও চালিয়েছিলে। কয়েক হাত মাত্র। মনু মিয়ার মনে হয়েছিলো, এই বউটা না থাকলে তার হয়তো কেবলই গাইতে হতো- ‘মনের মেঘ তো সরে না...’
আবেগের শৈত্যপ্রবাহিক কুয়াশা আস্তে আস্তে পাতলা হতে থাকে।
বউ ছাড়াও মনু মিয়ার রিকশায় আস্তে আস্তে অন্য প্যাসেঞ্জাররা উঠতে থাকে। আবেগিক উপযোগিতা থেকে রিকশা ক্রমেই প্রায়োগিক উপযোগিতার দিকে সরে যেতে থাকে। কিছু টাকা আসে; আগে যে সময়টা মনু মিয়া বাড়িতে বসে কাটাতো, এখন সে রিকশা চালিয়ে আয়-উপার্জন করে; ভাবে রিকশাটা ফেলে না রেখে মানুষের কিছু ইপকার করাও হচ্ছে। কখনো কখনো বিকেলবেলাও দখলে রাখে মনু মিয়ার বউয়ের সময় কিনে নেওয়া প্যাসেঞ্জাররা। মনু মিয়াও ভাবে, একটা দিন, দুটা দিন রিকশায় না চড়লে কিছু হবে না।
আস্তে আস্তে এভাবেই সারা সপ্তাহের বিকেলগুলো ফিকে হতে থাকে...। যে কারণে রিকশা কেনা, সেই কারণটিই আস্তে আস্তে অকারণ হতে থাকে। মনু মিয়ার বউয়ের ভাতের অভাব ঘোচে, ভূতের অভাব ঘোচে না। রিকশা চড়ার মনের ভূত তাড়া করে ফেরে প্রতিটা বিকেল। মনু মিয়া যদি বলতো- রিকশাটা শুধু বউকে চড়ানোর জন্য সে কিনে নি, কিনেছে শুধু আয়-উপার্জনের জন্য, মাঝেমাঝে বউকে নিয়ে খানিকটা বেড়ানোর জন্য- তাহলেও কিন্তু বউয়ের মধ্যে এই ভূত বাসা বাধতে পারে না।
মনু মিয়াও বোঝে না বউয়ের নিষ্করুণ চাহনি, লুকানো সেই চাউনি বউ ফেরত দেয় মনের ভূতকেই। বুকে বসে ভূত তাগড়াজোয়ান-মোটাতাজা হতে থাকে, বুকে চাপ চাপ ব্যাথা বাড়ে বউটার।
*
মূলত পরীকে ফোন করবে বলে একটা মোবাইল ফোন নিয়েছিলো পাপন। মায়ের সাথে ঝগড়া করে রাত ১২টায় পাপনকে কথার তোড়ে ভাসিয়ে দিবে বলে একটা মোবাইল ফোন কিনেছিলো পরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।