আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসুস্থ লাকী আক্তারের উপর হামলা : শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে ফাঁটল ধরানোর অপচেষ্টা

কেউ বুঝে না এই আমাকে...তাই আমিও কাউকে আর বুঝতে চাই না। শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে গগন কাঁপানো শ্লোগানে নের্তৃত্ব দেওয়া মেয়েটির নাম লাকী আক্তার। অনেকেই তাকে এখন অগ্নিকন্যা বলে ডাকছে। শাহবাগের সবার প্রিয় লাকী আক্তার হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক (বারডেম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শাহবাগে চলমান গণআন্দোলনে টানা ৬ দিন ধরে স্লোগান দেওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার সন্ধ্যায় তাকে বারডেমে নেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লাকীর শরীরে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। কণ্ঠশিল্পী সংসদ সদস্য মমতাজসহ ব্লাগার নের্তৃবৃন্দ তাকে দেখতে বারডেম গেছেন। অনেকেই লাকীর এই অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা লাকীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, অতিরিক্ত পরিশ্রম আর অনিয়মের কারণেই লাকীর এই শারীরিক দুর্বলতা।

চিন্তার কিছু নেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারলে লাকী আবার শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে ফিরে যেতে পারবেন। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া গণজাগরণ-গণআন্দোলনকে উচ্চকিত কণ্ঠে স্লোগানে স্লোগানে যারা উজ্জীবিত রাখছিলেন, তাদের একজন লাকী। গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদেরও একজন লাকি। স্লোগান দিয়েই প্রশংসিত হন তিনি সবার কাছেই।

তার তারুণ্যে উদ্ভাসিত হন অন্যরাও। কোনো ক্লান্তি ছিল না লাকীর প্রতিবাদী কণ্ঠে। অবিরাম গর্জে উঠছেন তিনি। তার এ অনবদ্য ভূমিকা মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশের নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা। বাংলাদেশি নারীদের অসীম ধৈর্যশক্তিরও প্রতীক হয়ে ওঠেন এই তরুণী।

মূলত তার তেজোদ্দীপ্ত কণ্ঠই ছড়িয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে সারাদেশে। কখনো ধীর লয়ে, কখনো ধারালো কণ্ঠে, কখনো বা গগণবিদারী স্লোগানে শাহবাগ চত্বরকে এক সুরে ভাসান শ্যামলা রঙের মেয়েটি। স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে মুষ্টিবদ্ধ হাত যেন গুঁড়িয়ে দিতে চায়, নিজামী-কামরুজ্জামানের গাড়ি, গভীর আবেগে মুছিয়ে দিতে চায়, রাজাকারের গাড়িতে দেশের পতাকা ওড়ানোর লাঞ্ছনা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ২৩ বছরের লাকী আক্তার। ছাত্র ইউনিয়নের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক তিনি।

স্লোগানের সময় কেঁপে ওঠেন তিনি, কেঁপে ওঠে উপস্থিত জনতাও। জনস্রোতে প্রতিবাদের তরঙ্গ তোলে লাকীর নতুন নতুন স্লোগান। স্লোগানের সময় অগ্নিমূর্তি হয়ে ওঠেন যেন, মুখের পেশী কেঁপে কেঁপে ওঠাটাও সহজেই চোখে পড়ে। নিজেকে উজাড় করে সর্বশক্তি নিয়ে যখন স্লোগান দেন, লালচে আভা পড়ে গালে, নাকের ডগায়। সময়ে সময়ে স্লোগানে তারতম্য আনেন লাকী।

মুহৃর্তের মধ্যে পাল্টে নেন স্লোগান। ‘ক’তে কাদের মোল্লা, জবাই কর জবাই কর’, জামায়াত-শিবির রাজাকার এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়, স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন শাহবাগ। যখনি মনে হয় উপস্থিত প্রতিবাদকারীরা একটু ঝিমিয়ে পড়ছেন, আবারো গর্জে ওঠে লাকীর কণ্ঠ। ‘ফ-তে ফোকাস, জবাই কর জবাই কর, ই-তে ইসলামী ব্যাংক, জবাই কর জবাই কর’, আবারো নতুনভাবে জেগে ওঠে শাহবাগ। এভাবেই ক’দিন ধরে অন্য এক শিহরণ জাগান লাকী আন্দোলনকারীদের মনে।

দেশের প্রতি সবার প্রাণে যেন জোয়ার নিয়ে আসেন তিনি। সবচেয়ে ভয়ংকর আর নোংরা ব্যাপার হলো, শাহবাগের সবার প্রিয় লাকী আক্তারকে নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছে জামাত-শিবেরের চ্যালারা। তারা বলছে, লাকীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কতো বড় জানোয়ার এরা, এই কুৎসিত রটনা আর অপপ্রচার থেকেই বোঝা যায়। এদিকে কিছুক্ষণ আগে পাওয়া খবরে জানা যায়, শাহবাগ আন্দোলনের অগ্নিকন্যাখ্যাত লাকীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

আহত অবস্থায় তিনি ফের বারডেমের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। রোববার রাত ১০টায় আন্দোলনের মঞ্চেই দুষ্কৃতকারীদের হাতে তিনি এ হামলার শিকার হন। বিশ্রাম শেষে শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে তিনি বারডেম থেকে সরাসরি আন্দোলনের মঞ্চে আসেন হামলার মাত্র আধাঘণ্টা আগে । আন্দোলনে যোগ দিয়ে লাকী আক্তার প্রথমে গণসঙ্গীতে কণ্ঠ দেন , এরপর মুখরিত হন স্রোগানে। এ সময় তাকে আঘাত করা হয়।

জানা যায়, রোববার রাত ১০টার দিকে স্লোগানের সময় তাকে পেছেন থেকে কে বা কারা মাথায় আঘাত করে। তখন তিনি মাথার পেছনের দিকে আঘাত পান। এ জন্য ছাত্রলীগকে দোষারোপ করছে। বর্তমানে তাকে বারডেমের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শাহবাগে জমায়েত হওয়া নতুন দিনের সৈনিকেরা সহ সমগ্র দেশবাসীর প্রত্যাশা, শিগগিরই সুস্থ হয়ে অগ্নিকন্যা লাকী আক্তার ফিরে আসবেন সবার মাঝে।

আবারও গর্জে উঠবে লাকীর কণ্ঠে বজ্রদ্বীপ্ত শ্লোগান। লাকী আক্তারের উপর হামলার জন্য দায়ী যেই হোক না কেন তার শাস্তি আমরা দাবী করি। পাশাপাশি আসুন সবাই লাকীর সুস্থতা কামনা করি একসাথে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।