যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
বার্মার যে বয়সী বটবৃক্ষের পাশে নামিয়ে দিয়ে গেলো চার্চের মানবাধিকার কর্মীদের, পরের বার সেখানেই র্যাম্বো নামিয়ে গেলো একদল দুর্ধর্ষ বেসামরিক অস্ত্রধারীদের। বার্মিজ আর্মী গণহত্যা চালাচ্ছে বার্মা-থাইল্যান্ড লাগোয়া খ্রিষ্টান অধ্যুষিত একটা ছোট জাতিস্বত্ত্বার উপরে। সেই অত্যাচারের নির্মম কাহিনী গিয়ে পৌছুলে কলারোডা বেইজড একটা মিশনারীজের কাছে। তারা পাঠালো তাদের একদল ভলান্টিয়ারকে - যারা সেখানে অসহায় বিভিন্ন মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করবে। তবে ঐ গ্রামটাতে নদীপথে চিনে নিয়ে যাতে পারে পাইথন আর কোবড়া শিকারী র্যাম্বো।
তাদের মিশন কি জানতে চাইলে দলপতি মাইকেল জানিয়েছিল, শান্তি প্রতিষ্ঠা! র্যাম্বো জিজ্ঞেস করলো, কোন অস্ত্র নিয়ে এসেছো তোমরা? মাইকেল জানালো, অবশ্যই না। র্যাম্বো তখন আগ্রহ হারালো, বললো, অস্ত্র ছাড়া বার্মায় কেবল চার্চের বানী শুনিয়ে শান্তি প্রতীষ্ঠা করা সম্ভব না! গ্রুপটার একজন নারী সদস্য এরপরে বৃষ্টিতে ভিজে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে র্যাম্বোর হৃদয় মানবতার জন্য গলিয়ে ফেলে বিখ্যাত একটা ডায়লগ দিয়ে, লিভ ফর নাথিং, ডাই ফর সামথিং।
কিন্তু বার্মার সেই গ্রামে গিয়ে গ্রুপটা ঠিকই ধরা পড়ে। নির্ধারিত সময়ের দশদিন পার হয়ে গেলেও যখন তারা কলারোডা ফিরে গেল না তখন এলো মিশনের অধ্যক্ষ, সাথে একদল বেসরকারী দুর্ধর্ষ কমান্ডো। র্যাম্বো তাদেরকে নিয়েও এলো সেই বয়সী বট বৃক্ষ তলে।
কমান্ডো গ্রুপটা তাকে নেহায়েত একজন বোটম্যান হিসাবে অপেক্ষায় রেখে গেল। গ্রুপটা বার্মিজ আর্মির সাথে টক্কর দিতে যখন সাহস পাচ্ছিলো না তখন কিন্তু র্যাম্বো ঠিকই সেই পুরানো ভয়ংকর যোদ্ধা হিসাবে আবির্ভূত হলো। তারপরে পুরা ওয়ানম্যান শো - স্ট্যালিন একাই যুদ্ধ করে হানাদার বার্মিজদের হত্যা করে সবাইকে মুক্ত করে নিয়ে এলো। মিশনারী গ্রুপের নেতা মাইকেল নিজেই একজন বার্মিজ হানাদারকে মেরে বুঝতে পারলো শান্তি প্রতীষ্ঠায় অস্ত্র কতটা জরুরী। এবং অতপর র্যাম্বো সুখে শান্তিতে তার আম্রিকান র্যাঞ্চে বসবাস করিতে লাগিলো।
তবে র্যাম্বো-৫ এ সে আবার র্যাঞ্চ ছেড়ে বের হবে, রক্ত তার যুদ্ধের দামামা শোনায়...আবার কোথাও তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধে যাবেন।
বার্মার উক্ত অঞ্চলটি৫০ বৎসর যাবত ওয়ারজোন ছবির শুরুতেই এই বক্তব্য রয়েছে। ক্যারেন নামে পরিচিত ঐ জাতিগোষ্ঠী বার্মার সাত পার্সেন্ট। প্রায় সত্তর লাখ। বার্মার প্রথম পাশ্চাত্য শিক্ষিত খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী ক্যারেনরা।
১৯৪৮ এ স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে ও পরে ক্যারেনদের প্রভাব সরকারে সুস্পষ্ট ছিল। কিন্তু পরবর্তী শাষক ক্যারেনদের বিতারিত করে প্রশাসন, সেনাবাহিনী থেকে। ক্যারেন প্রদেশেও তাদেরও উপরে অত্যাচার চলে। তবে ক্যারেনদের ঐব্যবদ্ধতার ইতিহাস আরো পুরাতন। সেই ১৯৪৯ সালেই তারা একবার রেংগুন প্রায় দখন করে নিতে যাচ্ছিলো।
কিন্তু সেটা বিফলে যাওয়ায় ক্যারেনদের উপরে নেমে আসে আরো অত্যাচার। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে লাখো লাখো ক্যারেন উদ্বাস্তু হয়েছে থাইল্যান্ডে। সেখানেও প্রায় চারলাখ ক্যারেন পাহাড়ের আদিবাসী।
তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমেরিকার একটা চার্চের প্রথমেই মনে হলো ঐ অঞ্চলটাতে শান্তি প্রতিষ্ঠা জরুরী, পৃথিবীতে এত রাষ্ট্র, এত জাতিস্বত্তা, প্রতিদিন এত ঘটনা - তার মধ্যে কেউ তাদের উক্ত জায়গটার কথা না জানালে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অঞ্চলটিকে তুলে না ধরলে একদল ক্ষুদ্র মিশনারী কিভাবে ঐ জায়গটাকেই বেছে নেবেন? এবং তাদের এই এপ্রোচের পরবর্তী ধাপটাও বেশ অবধারিত, কমান্ডোর আগমনও প্রমাণ করে।
সমস্ত ছবিটাতে "বার্মা" শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।
অথচ সমস্ত বিশ্ব জানে বার্মা অনেক বছর আগে থেকে মায়ানমার। ফিকশন হলোই বা। এর তথ্য যখন সত্যের উপরে দাড়িয়ে তখন মোটিভ কিন্তু বেশ পরিষ্কার ভাবেই ধরা পড়ে যায়। মনে করুন বৃটিশদের কথা - প্রথমেই বাইবেলধারীরা এলো, পরে এলো পাইরেট।
হলিউডের এই ছবিটাকে আমার মনে হয়েছে বিশ্বব্যাপী মানুষের মস্তক ধোলাই।
এরপরে যদি কোনদিন শোনেন ক্যারেনদের সাহায্যে ইরাবতীতে পৌঁছে গেছে আম্রিকার বিশাল নৌবহর - ভুলেও আপনার খারাপ লাগবে না - ততদিনে ছবিতে প্রদর্শিত বার্মিজ আর্মির অত্যাচার আপনাকে বার্মার উপরে যে কারো আক্রমণের অনুমোদন দিয়েই রেখেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।