আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: সীমান্তে

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

সেপ্টেম্বর, ২০০১ আমার নিজেকে এত ভারী লাগছে কেন? আধোঅন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল মঞ্জুর। একেকটা ধাপ মনে হচ্ছে একেকটা অনতিক্রম্য দূরত্ব। কিছুতেই পেরোনো যাবে না, তার আগেই দম ফুরিয়ে যাবে আর সেপ্টেম্বর মাসের এই যে গরম; দুদিন ধরে বৃষ্টিটিষ্টি নেই, সন্ধ্যার পর গুমোট আর গলিটায় রিকসার টুংটাং আর গাড়ির হর্ন; একটা ট্রেন চলে যাচ্ছিল-সেই শব্দ।

মঞ্জুর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সামান্য হাপাচ্ছে। কলিংবেলের ওপর আঙুলও ভারী ঠেকল। এবার অপেক্ষা। দরজা খুলে দিল পাখি। আদুরে গলায় বলল, ও, বাবা তুমি, আমি ভাবলাম মা।

তোর মা ঘরে নেই? না। মা তো তিন তলায় গেছে। ও। মঞ্জুরের হাতে একটা আইসক্রীমের বাক্স ছিল, সেটা পাখির হাতে দিয়ে বলল, রেহানাকে বল, এককাপ চা দিতে। বলছি।

আইসক্রীমের বাক্স নিয়ে পাখি চলে গেল। বসবার ঘরটায় ফ্যানটা ছাড়া আর টিভিটাও শব্দ কমিয়ে ছাড়া। এই মুহূর্তে পেপসোডেন্টের বিজ্ঞাপন হচ্ছে। বসার ঘরেই সোফার ওপরে হাত-পা ছাড়িয়ে বসল মঞ্জুর। পোশাক ছাড়ল না।

ভারি ক্লান্ত লাগছিল আর সেই সঙ্গে উদ্বেগ। টিভির ওপর চোখ রাখল মঞ্জুর। চ্যানেল আই’র (সাতটার) খবর হচ্ছিল; কুষ্টিয়ায় কোন্ নদীর উপরে একটা কার্লভার্ট নির্মান উপলক্ষ্যে শেখ হাসিনা ভাষন দিচ্ছেন। ভাষনে পরোক্ষভাবে বেগম খালেদা জিয়া কে সমালোচনা করছেন তিনি। বললেন, ৯৬ এ ক্ষমতা পেয়ে এই ২০০১ সাল পর্যন্ত নানা উন্নয়নমূলক এবারেও অর্থাৎ ২০০১ সালেও তিনি ও তার দল জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবেন ইনশাল্লা।

কথাটা কি তিনি নিজেও বিশ্বাস করেন? আওয়ামি লিগ কি এবার আসতে পারবে। যেভাবে দলটির ছত্রছায়ায় সন্ত্রাস করছে গডফাদাররা। ফেনিতে জয়নাল হাজারী; নারায়নগঞ্জে শামীম ওসমান এসব কি নেতৃী জানেন না? জানেন তো অবশ্যই। অবশ্য ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং তো তিনি করতেই পারেন। রফিকও আজ এনিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করল।

ও যতই মৃত্যুর মুখে থাকুক না কে ও সময় পেলেই রাজনীতি নিয়ে ভাবে। রাজনৈতিক আলোচনা ওর প্রিয়; হয়তো বাঙালি বলেই। মঞ্জুরের মত রফিকও উভয়সঙ্কটে পড়েছে। আওয়ামি লিগকে সমর্থন করা যাচ্ছে না আবার স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলানোর কারণে জাতীয়তাবাদী দলকে কিছুতেই সমর্থন করা যাচ্ছে না। বারীন প্রায়ই বলে, ফ্যাসীবাদের জন্ম হবে বাংলাদেশে।

সে জানে উগ্র জাতীয়তাবাদ + মৌলবাদ = ফ্যাসিবাদ। জঙ্গিবাদের উত্থান হবে এদের ছত্রছায়ায়। সে আওয়ামি লিগের ঘোর সমালোচক, ৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামি লিগের দূর্নীতি ও স্থানীয় গডফাদারদের সন্ত্রাস বিরুদ্ধে সে পত্রিকায় লিখেওছিল। তবে, মঞ্জুরের ক্ষীন আশা আওয়ামি লিগ ভুলক্রটি শুধরে আবার ক্ষমতায় আসবে। স্বাধীনতাবিরোধী সঙ্গে আতাত করা জাতীয়তাবাদী শক্তি কিছুতেই নয়।

কিন্তু, কোনও দল পর পর দুবার নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশে এমন নজীর নেই। মঞ্জুর উদ্বেগ বোধ করে। এবং এখন সেপ্টেম্বর মাস বলেই দেশে জোর নির্বাচনী প্রচারনার হাওয়া বইছে। রাস্তায় বেরুলে মিছিল, সভা সমিতি আর তোরণ। বাসায় বাসায় গিয়ে রাজনৈতিক কর্মীদের লিফলেট বিতরণ।

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মঞ্জুরের উদ্বেগ ততই বাড়ছিল। তা হলে স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতা বসতে যাচ্ছে? তার হৃৎ স্পন্দ বেড়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাংকেও তুমুল হট্টগোল। সরকারী মোবাইল চালু না করার শর্তে নাছিম সাহেব নাকি পাঁচ কোটি টাকা ঘুষ খেয়েছেন! তা হলে? তা হলে আওয়ামি লিগ আসে কী করে? রফিক থাকলে কিছু বলত। তবে মঞ্জুর চুপ করেই থাকে।

সে বরাবরই নিরীহ ধরনের। উদ্বেগবোধ করে স্বাধীনতাবিরোধী সঙ্গে আতাত করা জাতীয়তাবাদী শক্তি না আবার ক্ষমতায় চলে আসে। তবে, মঞ্জুরের ক্ষীন আশা আওয়ামি লিগ ভুলক্রটি শুধরে নেবে। নিজেকে মনে মনে শান্তনা দেয় ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং তো সরকারের হাতে তারা কি স্বাধীনতাবিরোধী সঙ্গে আঁতাত করা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঠেকানো জন্য ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং করবে না? নিশ্চয়ই করবে। এটা হয়তো অন্যায় তবে আরেকটি অন্যায় ঠেকানোর জন্য আওয়ামি লিগ সেটা করতেই পারে।

পারে না? রফিক থাকলে কী বলত? ওর তো বিশ্বাস ছিল আওয়ামি লিগই আবার ক্ষমতায় আসবে। স্বাধীনতাবিরোধী সঙ্গে আতাত করা জাতীয়তাবাদী শক্তি কিছুতেই নয়। কিন্তু, কোনও দল পর পর দুবার নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশে এমন নজীর নেই। আর রফিক তো এখন কবরের শীতল অন্ধকারে। নির্বাচনের দিন সন্ধ্যা থেকেই টিভির সামনে বসে ছিল মঞ্জুর।

ভোর পাঁচটার দিকে অবশ বোধ করতে শুরু করে মঞ্জুর । টিভিটার ওপর চোখ রেখে সামনে বেতের টেবিলের ওপর পা তুলে দিয়ে সোফার ওপরে গা এলিয়ে বসেছিল; ভিতরে ভিতরে উদ্বেগটা বাড়ছিল তখন থেকে, একটা সিগারেট ধরানো দরকার সে টের পেল সিগারেট ধরানোর শক্তিটুকুও নেই। আর শরীরটা ভারী ঠেকছিল। গলার কাছে কপালের কাছে ঘাম ফুটছিল মাথার ওপরে পাখা ঘুরছিল; বসার ঘরে ম্লান আলো জ্বলেছিল। আজ কী কারণে কারেন্ট যায়নি।

হাতে রিমোট কন্ট্রোলার। ভীষন ভারী ঠেকল। ওটা টিপে যে টিভি বন্ধ করে দেবে সে শক্তিও নেই। মঞ্জুর পরম উদ্বেগ বোধ করে এদিকওদিক তাকাল। সে আওয়ামি লিগের ঘোর সমালোচক, ৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামি লিগের দূর্নীতি ও স্থানীয় গডফাদারদের সন্ত্রাস বিরুদ্ধে সে পত্রিকায় লিখেওছিল।

তবে সে আওয়ামি লিগের ঠিক পতন কামনা করেনি। কারণ জাতীয়তাবাদী দল স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। মঞ্জুরের বিস্ময় এখানেই যে দেশের অর্ধেক লোক জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থক আর তারা এখন জোটকে জিতিয়ে দিল! তারা একবারও প্রশ্ন তুলল না জাতীয়তাবাদী দলটি সঙ্গে কাদের নিল! দেশের অর্ধেক মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল ওরা কী করেছিল একাত্তরে। কে যেন তার ভিতরে বলে চলেছে: আবার যুদ্ধে যেতে হবে। সীমান্ত পেরুতে হবে।

আবার হাতে তুলে নিতে হবে ষ্টেন। অবশ বোধ করে মঞ্জুর; ইদানিং রক্তচাপের সমস্যাটা বেড়েছে। টের পায় মাথার তালু ঘামছে। গলার কাছে তৃষ্ণা এক গ্লাস পানি খেলে ভালো হত। ফিরোজাকে ডাকল দুবার।

গলার স্বর ঠিকঠাক ফুটল না। খানিক বাদে শক্তি সঞ্চয় করে রিমোটটা টিপে টিভি অফ করল করে উঠে দাঁড়াল সে । ওসব দেখে আর কী হবে। সবই যে শেষ হয়ে গেল। ভাবতে ভাবতে শোবার ঘরের দিকে যেতে থাকে মঞ্জুর।

দুটো পা-ই অবশ বোধ করে শক্তি নেই। মনে হচ্ছে পড়ে ...দরজার পাশে ফ্রিজ। ওটা খুলে পানির বোতল বার করে খাওয়া যায়। তক্ষুনি কে যেন তার ভিতরে বলে চলেছে: আবার যুদ্ধে যেতে হবে। সীমান্ত পেরুতে হবে।

আবার হাতে তুলে নিতে হবে ষ্টেন। সে ভূতের মতন হেঁটে শোবার ঘরে এল। কে হাঁটছে? আমি কি? না আমি না। অন্য কেউ। শোবার ঘরে আলো নেভানো।

আবছা অন্ধকারে ফিরোজার ঘুমন্ত শরীরটি বোঝা যায়। খালি গায়েই ছিল মঞ্জুর। অক্টোবরের প্রারম্ভে কী আর এমন শীত এখন বাংলাদেশে? বুকটা ভীষন কাঁপছে। অন্ধকার হাতড়ে লুঙ্গি ছেড়ে প্যান্ট পরে নিল মঞ্জুর। আবার যুদ্ধে যেতে হবে।

সীমান্ত পেরুতে হবে। আবার হাতে তুলে নিতে হবে ষ্টেন। মানিব্যাগটা সন্তপর্নে ড্রয়ার খুলে পকেটে ভরল। কাল ব্যাংক খোলা। কিন্তু, সেসব কথা এখন আর ভাবল না মঞ্জুর...এখন যুদ্ধে যেতে হবে ...ঘরের বাতি না-জ্বালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ফিরোজার দিকে ভালো করে তাকাল না মঞ্জুর।

কিংবা পাশের ঘরে ঘুমন্ত পাখির দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালও না। তার কারণ তার হৃদয় বড় কঠিন। তার হৃদয় কঠিন হওয়ার কারণ-একাত্তরে মঞ্জুরের বন্ধু বাদশার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল পাকিস্থানী সৈন্যরা। বাদশাদের বাড়ি ছিল নেত্রকোণার কলমাকান্দায়। ঢাকা ভার্সিটি ভরতি হয়েই বাদশার সঙ্গে পরিচয়, তারপর যা হয়- ঘনিষ্টতা।

রফিক বাদশা আর মঞ্জুর এই তিনজন ছিল অভিন্ন প্রাণ। বাদশার সঙ্গে মঞ্জুর আর রফিক একবার গিয়েছিল কলমাকান্দায়। সোমেশ্বরী নদীটা ওদের বাড়ির খুব কাছেই। মঞ্জুরা পিরোজপুরের ; বাদশার ছোট বোন পাখির সঙ্গে বিয়ের কথা তুলেছিল বাদশার মা-ই, মঞ্জুররা দক্ষিণ বঙ্গের লোক বলে নাক সিটকায়নি বাদশার মা সায়রা খালা। বিয়েটা হতই যদি না দেশে একটা যুদ্ধ বেধে যেত।

বাদশাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল পাকিস্থানী সৈন্যরা-তখন বারীন বাদশা আর মঞ্জুর মুক্তিবাহিনীতে ... ওরা বাদশার মাবাবাকে গুলি করে মেরেছিল আর পাখিকে ধরে নিয়ে যায় ... ... আর ... বাদশা ...বাদশা আত্মহত্যা করেছিল স্বাধীনতার পর ... সেমেশ্বরী নদীর পাড়ে ...আর এতদিন পর এখন আবার যুদ্ধে যেতে হবে বলে বাতি না-জ্বালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ফিরোজার দিকে ভালো করে তাকাল না মঞ্জুর বা পাখির ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালও না -তার কারণ তার হৃদয় বড় কঠিন। দোতলার বারান্ধায় এসে কোলাপস্যাবল গেটটা কৌশলে খুলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় ফজরের আযান শুনতে পেল মঞ্জুর। সেই সঙ্গে টের পেল ভোরের ঠান্ডা বাতাস ওর শরীরে ...। অন্যদিন ছটার দিকে রমনা পার্কে যায় হাঁটাহাঁটি করতে যায়। বারীণের কিডনি ইনফেকশান হওয়ার পর তারও ... পঞ্চাশ বছরের শরীরে মধুমেহ রোগটি বাসা বেধেঁছে।

হাঁটাহাঁটি এ রোগের অন্যতমন প্রতিকার বলেই ডাক্তারের পরামর্শে ... নিচের গলিতে তখনও অন্ধকার ফিকে হয়নি। মগবাজার থেকে মহাখালি পৌঁছতে ভোর হল । বাস ছাড়বে কি ছাড়বে না সে-নিয়ে সংশয় ছিল মঞ্জুরের। বাস না পেলে ট্রেনে যাব ট্রেন না পেলে হেঁটেই যাব। নেতৃকোণা কী এমন দূর? এখন যুদ্ধের সময়।

তিরিশ বছর আগে সেই বছরটা মাইলের পর মাইল হেঁটেছিল মঞ্জুর মাইলের পর মাইল আর ওরা ওই ঘাতকদের ক্ষমতায় বসালো? বসাতে পারল? টার্মিনালে এখন অন্ধকার অনেকটা কেটেছে। একটা বাস ছাড়বে ছাড়বে করছিল। লোকজন একেবারেই কম। বাসটায় উঠে পড়ল। বসল পিছন দিকে।

চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছে। যেন ওকে ফলো করছে কেই। বাসটা ছাড়তেই ঘুমিয়ে পড়ল মঞ্জুর। ঘন্টাখানেকবাদে দারুন এক অপস্বপ্ন দেখে ধড়মড় করে জেগে উঠল সে। জানালার ওপাশে রোদ ঝলমল করছিল।

মঞ্জুর হাসল। কেননা মঞ্জুর এখন জানে এই ঝলমলের রোদের বাংলাদেশে ফ্যাসীবাদের জন্ম হবে এখন । সে জানে উগ্র জাতীয়তাবাদ + মৌলবাদ = ফ্যাসিবাদ। জঙ্গিবাদের উত্থান হবে এদের ছত্রছায়ায়। আর বিশেষ বাহিনী গঠন করে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড ঘটাবে এরা।

দুর্নীতির পাহাড় জমবে। জাতীয়তাবাদীদের উপলব্দি ক্ষমতা অগভীর। এদের দেশপ্রেম লোকদেখানো। নেত্রকোনা পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর গড়াল। এখান থেকে কলমাকান্দাও যাওয়া যায়।

সেকথাও মনে পড়ল তার। বাদশাদের বাড়িটা ছিল কলমাকান্দা সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে। সেই নদীর শোলমাছ রেধে খাওয়াত সায়রা খালা। এখনও সেই স্বাদ লেগে আছে স্মৃতির জিভে। কে ধ্বংস করে দিল সেই সব রোদে ভরা উঠানের দিন।

মার্চ মাস। সতের কি আঠারো তারিখ। পাখিকে ছুঁয়েছিল মঞ্জুর। আহ, সোমেশ্বরী নদীটার কথা আজও মনে পড়ে। বাদশা ওই নদীতেই ডুবে আত্মহত্যা করেছিল স্বাধীনতার মাস দুয়েক পরে।

কলমাকান্দার সোমেশ্বরী, বিরিশিরির সোমেশ্বরী নয়। বাদশা জীবনের ওপর সব বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। বাবা মায়ের মৃত্যু ভাইবোনের মৃত্যু বাদশা একাই কলমাকান্দার সব রাজাকার আর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানদের খুন করেছি ...বাদশার মৃত্যু পর মরতে চেয়েছিল মঞ্জুরও। পারেনি। বারীন ওকে আকড়ে ধরেছিল।

তা ঝাড়া রামপুরায় জোহরা খালার বাড়িতে ৭৩এর ফিরোজাকে দেখল। ফিরোজা তখন ছিপছিপে ছিল, তন্বী ছিল। নজরুলগীতি গাইত। আর ...আর ...পাখির সঙ্গে ফিরোজার ভারি মিল ছিল। কথাটা কখনও বলা হয়নি ফিরোজাকে।

বলা আর হবেও না। বাস থেকে নেমে মঞ্জুর হাঁটতে থাকে স্টেশনের দিকে। রোদের তেজ আছে। খিদেও পেয়েছে। সকালে নাশতা খাওয়া হয়নি।

আজকাল খালিপেটে থাকলে হাতপা কাঁপে ওই মধুমেহর জন্য। আজ আর এসব সে গ্রাহ্য করল না বরং বিরিশিরির বাসের খোঁজ করতে থাকে। এখানেও চারপাশটা থমথম করছিল। কেবল তরুনযুবাদের একটা আনন্দমিছিল রাস্তা কাঁপিয়ে চলে যায়। তরুনযুবাদের অনেকেরই মুখে দাড়ি, কেউ কেউ টুপি পরা।

মঞ্জুর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গেল। ওর হাতটা নিশপিশ করে। তীব্র চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছে। ৭২ সালে ষ্টেন গানটা এ জমা দেওয়া ঠিক হয়নি। ওটা লুকিয়ে রাখা উচিত ছিল।

মেঘালয় থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় বাদশা বলল, অস্ত্র কখনও জমা দিতে নাই মঞ্জুর। কখন আবার কাজে লাগে। এই দুইটা এইখানে লুকায় রাখি, তুই কী বলিস? পরে দরকার হলে তুলে নিব। কথাটা শুনে অবাক হয়েছিল মঞ্জুর। বারীনও।

বাদশা তখনও বেঁচে বাদশা তখনও অবিস্কার করেনি কলমাকান্দায় ওদের বাড়ির ওপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গেছে। ক্যাম্পে অবশ্য নানা রকম গুঞ্জন শোনা যেত। তবে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস কী। গারো পাহারে একটা জলপাই গাছের নীচে রাতের অন্ধকারে বাদশা দুটো স্টেন লুকিয়ে রেখেছিল । এখন এত বছর পর সেখানেই চলেছে মঞ্জুর।

ওই জলপাই গাছের নিচে তিরিশ বছর ধরে দুটো ষ্টেন পড়ে আছে। সেকথা ভাবতেই ওর চোখ দুটো খুনেদের মতন ধকধক করে জ্বলছে আর নিভবে। এবং এই নেতৃকোণা শহরের খুব কম লোকই টের পাচ্ছে তা। হাতপা এখন রীতিমতন কাঁপছে মঞ্জুরের। ষ্টেশনের কাছেই একটা ভাতের হোটেলে ঢুকে পেট ভরে ভাত খেয়ে নেবে বলে ঠিক করল।

না নিজেকে আর কষ্ট দেব না। সামনে অনেকটা পথ পেরুতে হবে। এখনই ক্ষুধাতৃষ্ণায় ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। গারো পাহাড়ে পৌঁছনোর মতন শক্তি চাই। বিল মিটিয়ে হোটেলের বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরাল মঞ্জুর।

তারপর বাসের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। বাস ভরতি লোক। মঞ্জুর কোনওমতে উঠে পড়ল। একটা শিশু কাঁদছিল চিৎকার করে। আর ছিল মুরগীর খাঁচা, বিড়ির গন্ধ আর আমড়া বিক্রেতার সেই সঙ্গে ভাবছিল ফিরোজা আমাকে খুঁজবে? পাখি কি কাঁদছে ...আধ ঘন্টা মতন কাটলে বসার সিট পেল মঞ্জুর।

কংস নদীর পাড় থেকে বাতাস আসছিল। হু হু করে পেরিয়ে যাচ্ছিল ধানের ক্ষেত ...বাসটা ঝাঁকুনি খেল। মঞ্জুরের মাথা ঠুকে যায় জানালার ... কংস নদীটা পার হওয়ার সময় পাখির কথা মনে পড়ল । মেয়েটা এবার ইন্টারমিডিয়েট দেবে ... বাসটা যখন মঞ্জুরকে বিরিশিরি নামিয়ে দিল তখনও বিকেলের আলো মুছে যায়নি। সে বাস থেকে নেমে উত্তরমুখো হয়ে হাঁটতে থাকে।

ওদিকেই গারো পাহাড়। ওদিকেই বাদশার লুকিয়ে রাখা ষ্টেন গান একটা জলপাই গাছের নিচে এখনও পড়ে রয়েছে। বিরিশিরি জায়গাটা এমনিতেই নির্জন। রাস্তার দুধারে ছাড়া ছাড়া ঘরবাড়ি গাছপালা আর মাঠ। সেসবের ওপর সোনালি রঙের প্রলেপ পড়েছিল।

এই সুন্দর মায়াবী দেশে এখন এক অন্ধকায় জন্তু খল খল করে হেসে উঠবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব ... আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব আর এই সুন্দর মায়াবী দেশে এখন এক অন্ধকায় জন্তু খল খল করে হেসে উঠবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব ... এই সুন্দর মায়াবী দেশে এখন এক অন্ধকায় জন্তু খল খল করে হেসে উঠবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব... এই সুন্দর মায়াবী দেশে এখন এক অন্ধকায় জন্তু খল খল করে হেসে উঠবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব... এই সুন্দর মায়াবী দেশে এখন এক অন্ধকায় জন্তু খল খল করে হেসে উঠবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব... এই সুন্দর মায়াবী দেশে এখন এক অন্ধকায় জন্তু খল খল করে হেসে উঠবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব ...সোমেশ্বরী নদীটায় বালি আর বালি; হেঁটেই পেরুলো নদীটা। আরও অনেক মানুষ হাঁটছিল; তাদের সঙ্গে হাঁটছিল মঞ্জুর। ওপারে দূর্গাপুর। দূর্গাপুর পৌঁছতে সন্ধ্যা হল। এখানেও ছাত্রদের একটা আনন্দমিছিল বেরিয়েছে।

সে ক্রর হাসে। তার মনে পড়ল বাদশা তার জন্য অপেক্ষা করছে। গারো পাহাড়ে। অনেকদিন পর স্টেনটা তুলে ধরতে কেমন লাগবে? ওই মিছিলে ব্রাশ ফায়ার করার সময় আমার হৃদয় কি ভরে উঠবে? ৩০ বছর আগে সীমান্ত পেরিয়েছিল মঞ্জুর। তখন সীমান্ত পেরুনোর কারণ ছিল, তখন অনেকেই সীমান্ত পেরিয়েছিল; সে মনে করে এখন আবার সীমান্ত পেরুনোর সময় এসেছে।

মঞ্জুর গোপালপুর যাবে বলে ঠিক করেছে ও গোপালপুর দূর্গাপুরের উত্তরে। তিরিশ বছর আগে গোপালপুর দিয়েই সে সীমান্ত পেরিয়েছিল। এত বছর পর সেদিকে যাবে বলেই ঠিক করল। ও রাতভর হাঁটবে বলে ঠিক করল। এখন ওর পঞ্চাশ বছরের মধুমেহতে আক্রান্ত শরীরটা বিশ বয়েসে এসে ঠেকেছে।

সিগারটে টানতে টানতে ও হাঁটতে থাকে মঞ্জুর। দুপাশে দোকানপাটা সিনেমা হল ও একটা ব্যাংক। আলো জ্বলছিল। থমথম করছিল। আনন্দমিছিলটা ঘুরে আবার এদিকে আসছিল।

সে খানিকটা সরে পড়ল। মঞ্জুর জানে এখন ফ্যাসীবাদের জন্ম হবে বাংলাদেশে। সে জানে উগ্র জাতীয়তাবাদ + মৌলবাদ = ফ্যাসিবাদ। জঙ্গিবাদের উত্থান হবে এদের ছত্রছায়ায়। আর বিশেষ বাহিনী গঠন করে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড ঘটাবে এরা।

দুর্নীতির পাহাড় জমবে। জাতীয়তাবাদীদের উপলব্দি ক্ষমতা অগভীর। এদের দেশপ্রেম লোকদেখানো। ও হাঁটতে থাকে। একটা সময় পাকা রাস্তা শেষ হয়ে শুরু হয় গ্রাম্যপথ।

আকাশে ক্ষীনকায় একটা চাঁদ ঝুলে আছে। তার ম্লান আলো এখানকার পথেঘাটে ছড়িয়েছ। বিমর্ষ স্কুলঘরের ওপর ...মঞ্জুর পিরোজপুরের ছেলে হলেও এবং গত তিরিশটা বছর সে ঢাকায় কাটালেও সে এ অঞ্চলটা ভালোই চেনে। এর কারণ আছে। স্বাধীনতার পর সে এসব অঞ্চল পাখির খোঁজে চষে বেড়িয়েছে, তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে পাখিকে ।

পায়নি। মঞ্জুরের অবশ্য বিশ্বাস ছিল পাখি বেঁচে আছে -ওরকম ফুটফুটে মুখ ...কারা মেরে ফেলতে পারে? কারা? দূর্গাপুর শহরের মিছিলে চিৎকার ছিল নারায়ে তাকবীর ...ও ক্রোধে অন্ধ হয়ে যেতে থাকে। এবং তখন ফিরোজা কিংবা পাখির কথা মনে পড়েনা তার কেবল মনে পড়ে ...হাঁটতে হাঁটতে সে ঠিকই টের পায় তার বাঁয়ে এখন সোমেশ্বরী নদীটা । সোমেশ্বরী নদীর পাড়েই পাখিকে চুমু খেয়েছিল মঞ্জুর। বিরিসিরির সোমেশ্বরী না-কলমাকান্দার সোমেশ্বরীর পাড়ে।

সময়টা ১৯৭১ সালের ১৭ই মার্চ; রাত সাড়ে ৮টায়। বাদশাই সুযোগ করে দিয়েছিল। বাদশা জানত মঞ্জুরের সঙ্গেই পাখির বিয়েটা হতে যাচ্ছে। বাদশা ও বারীন নৌকা থেকে নেমে পড়েছিল। রাতটায় জোছনা ভরে ছিল আর নৌকাটা মৃদু মৃদু কাঁপছিল।

পাখিই কী রকম সাহসী হয়ে উঠেছিল ... ওর এত ফুটফুটে মুখ। সতের বছরের দেহটি এমন বাক্সময়। এসব ফিরোজা জানে না। এসব কথা ফিরোজাকে বলেনি মঞ্জুর। কারা তাকে মেরে ফেলতে পারে? পাখিকে? মঞ্জুর হাঁটতে থাকে।

দুপাশে নিঝুম গ্রাম। ঘুমন্ত জনপদ। নিঃসাড় লোকালয়। দুপাশে ঘুমন্ত গাছ ম্লান জোছনার আলো গ্রাম্যকুকুরের চিৎকার। রাতভর হেঁটে সে সীমান্তর কাছাকাছি পৌঁছে আরেকটা বিরুপ বিষন্ন ও ধূসর ভোরের মুখোমুখি হল।

সে জানে ওপারে মেঘালয়; তার আগে গারো পাহাড়। সে ভেবেছিল পথে আরও অনেকে থাকবে তার মতন অথচ সে কাউকে দেখতে পেল না। সে কেবল ভোরের ম্লান আলোয় গারো পাহাড়ের অবয়ব দেখে। এখানে একটা হাজং-গ্রাম। দূর থেকে মনি সিং কে দেখে থমকালো মঞ্জুর।

মনি সিং-এর দীর্ঘ শরীর টকটকে ফরসা; উঠানে দাঁড়িয়ে একদল হাজংএর সামনে দাঁড়িয়ে কী উত্তেজিত ভঙ্গিকে যেন বলছিলেন। মঞ্জুর জানে মনি সিং কী বলছেন হাজংদের। ওদের সবার হাতে, এমনকী মেয়েদের হাতেও ঝকঝকে দা, তীর-ধনুক আর বর্শা-বল্লম। সবার মুখ উত্তেজনায় চকচক করছিল। লুকিয়ে রাখা স্টেনের কথা মনে পড়ল মঞ্জুরের।

সে আবার হাঁটতে শুরু করল। মাটি অল্প অল্প করে উঁচু হয়ে উঠেছে। চড়াই-পথ বলেই হয়তো। দৃশ্যপথও বদলে যাচ্ছে ক্রমেই মাটিটা লাল। রুখু।

পথের দুপাশে ঘন গাছ, জঙ্গলমতন। বাঁশঝার। একটা বাঁশ বেয়ে উঠছিল একটা বাদামি-ধূসর রঙের ছোট একটা লজ্জাবতী বানর। বাঁশঝারের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল একটা অল্পবয়েসী ছেলে- বানরটাকে দেখছিল । ছেলেটা কি গারো? গারোই হবে।

কাছে এসে দেখল কালো চুল কালো চোখ / মাথা ও মুখটা গোলাকার/ কপাল চোখের দিকে কিছুটা বাড়ানো /ঘন ভ্রু/ ছোট চোখ/ গালে মনে হয়না দাড়িগোফ ওঠে / শরীর নির্লোম /চ্যাপ্টা নাকমুখ/ উঁচু চোয়াল/ নাকের ফুটা মোটা/ বুকটা চওড়া /হাত পা পেশি /স্থুল সবল শরীর/ বেঁটে /চমড়া মসৃন /পীতাভ রং ...এইসব দৃশ্য পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে মঞ্জুর। ক্রমেই একটি দিনের সূচনা হতে থাকে আর সেই সঙ্গে পাখিদের কোলাহল বাড়তে থাকে ও ভোরের রংহীন আকাশে কয়েকটি শকুন উড়ছে থাকে বলে মনে হয় মঞ্জুরের; পচা লাসের গন্ধও টের পায় সে। চারপাশটা কীরকম নিঝুম হয়ে আছে। সময়টা যেন তিরিশ বছর পিছিয়ে গেছে আর তখন তো ... এবং দূর থেকে দেখতে পায়-একটা কামরাঙ্গা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাদশা । ওকে দেখে ভীষন স্বস্তি পেল মঞ্জুর।

বুকের ধুকধুকানি কমে। এতক্ষন গাঢ় একাকীত্ব ভর করেছিল। সেটা কেটে গেল। বাদশার পরনে খাকি সার্ট। মুখে দাড়ি গোঁফ।

সিগারেট টানছিল। একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বলল, এত দেরি যে? বাস থামিয়ে চেক করছিল শালারা। মঞ্জুর থুতু ফেলে বলল। বাদশার মুখচোখ শক্ত হয়ে উঠল। বলল, আয়।

চল। পাহাড়ের আরেকটু ভিতরে একটা জলপাই গাছের নিচে চলে এল ওরা। বাদশা উবু হয়ে নরম মাটি খুঁড়তে শুরু করে দিল। আরও খানিকক্ষন বাদে স্টেনদুটো বার করে ওদুটোর গায়ে লেগে থাকা মাটিটাটি ঝেড়ে একটা মঞ্জুরের হাতে দিয়ে বলল, চল। ওটা নিয়ে মঞ্জুর বলল, চল।

এতদিন বাদে মঞ্জুরের হাতে স্টেনটা ভারী ঠেকল না। সূর্য ওঠার আগেই ওরা দুজন সীমান্তের কাছাকাছি চলে এল। অক্টোবার মাস বলেই আকাশে মেঘ জমল। অল্প অল্প বৃষ্টিও ঝরতে শুরু করল। ওরা বৃষ্টি ভেঙ্গে হাঁটতে থাকে।

ওপাশে মেঘালয়। ওপাশে কোথাও ( কিংবা আগরতলায়) মেজর জিয়া রয়েছেন; দেশ শক্রমুক্ত করার আগে মেজর জিয়ার কাছে দীক্ষা নেবে ওরা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা একটা উঁচু পোষ্ট থেকে ওদের দেখছিল। ওদের দেখে রক্ষীরা সম্ভবত অবাক হয়ে গিয়েছিল। কারা এরা ? উলফা নয়তো? ওরা গুলি করার প্রস্তুতি নিতে থাকে।

ওরা দুজন কিংবা মঞ্জুর একাই যেরকম ভেবেছিল সেরকম করে এত বছর পরে আর সীমান্ত প্রহরীরা উপরের মহলের নির্দেশে ওদের স্বাগত জানাল না। এতদিনে গঙ্গাযমুনার পানি যেমন গড়িয়ে গেছে তেমনি অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। তা ছাড়া, সীমান্তে আজকাল একটা-না-একটা গোলযোগ লেগেই রয়েছে। এসব কারণেই ওপার থেকে সীমান্তরক্ষীরা দুজনকে দেখেই নির্বিচারে গুলি চালালোর সিদ্ধান্ত নিল। ঠা ঠা ঠা ঠা ... একজন অনেককাল আগেই মৃত হয়েছিল; সে-ও আজ মরল।

সেই সঙ্গে আরেকজন যে মরতেই চেয়েছিল ... (উৎসর্গ: কাকাশালিখচড়াইগাঙচিল ...)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.