...
বাদুড় নিশাচর প্রাণী। এটা আমরা কে না জানি! তবে যেটা আমরা জানি না তা হলো নারীদের সঙ্গে বাদুড়ের সখ্য। বাদুড়ের সঙ্গে মার্কিনি এক মহিলার সখ্য গড়ে উঠেছিল দুদশক আগে। মহিলার নাম মারলিন টোটিল। তিনি ছিলেন টেক্সাসভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাদুড় সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি।
তিনি যখন এক সভায় বাদুড়ের সঙ্গে তার সখ্যের কথা বলছিলেন তখন ওই সভায় এক মহিলা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদকারিণী টোটিলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, যদি তিনি এর প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে টোটিলকে ২০ মার্কিন ডলার দিতে রাজি আছেন। টোটিল এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জবাব দেন প্রমাণ না দিতে পারলে তিনিও ওই মহিলাকে ২০ ডলার দিবেন। বাদুড় সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের সভা শেষ পর্যন্ত বাদুড় নিয়ে বাজি ধরার সভায় পরিণত হয়। ফলে ওই দিন আর বাদুড় রক্ষা বিষয়ক আলোচনা হয়নি।
এর কিছুদিন পর ওই মহিলা যখন টোটিলের অফিসে আসেন তখন টোটিল একটি বাদুড় তার পাঙ্ক করা চুলে ওপর ছুড়ে মারেন কিন্তু বাদুড়টি উড়ে যায়। মহিলা বিরক্ত হয়ে বলেন, একি তামাশা? টোটিল বলেন, তামাশা হয় আমি আপনাকে শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম বাদুড়ের সঙ্গেও মানুষের সখ্য হতে পারে। কই বাদুড়টা উড়ে গেলো? আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়নি তাই উড়ে গেছে। এটা কি আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে? অবশ্যই। এই দেখুন।
এই বলে তিনি অফিসের সব দর্জা জানালা বন্ধ করে দিলেন লাইট অফ করলেন, তারপর চুল ছেড়ে দিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি করতে লাগলেন কিছুক্ষণ পর আগন্তুক মহিলা বুঝতে পারলেন কি যেন একটা এসে টোটিলের মাথায় বসলো। লাইট জ্বেলে দেয়ার পর দেখা গেলো একটা বাদুড় মহিলার খয়েরি চুলের মধ্যে কাঁকড়ার মতো আটকে আছে আগন্তুক মহিলা টোটিলের কাছে জানতে চাইলেন এটা কিভাবে এলো? আপনি তো সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছিলেন? টোটিল মৃদু হেসে জানালেন, হ্যাঁ বন্ধ করে দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু একটি জানালায় একটু ফাঁক রেখেছিলাম। তা হলে আমারই হার হলো নিন এই বিশ ডলারের চেক। টোটিল বিনয়ের সঙ্গে জানালেন এটা নিতে পারি এক শর্তে কি? আপনি আমাদের ব্যাট প্রিজারভেশন ফাউন্ডশনে ডোনেশন হিসেবে দেন, তা হলে এটা আমি গ্রহণ করবো। এটা তো আমাদের বেট ছিল? তাতে কি? ঠিক আছে।
টোটিল জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই বাদুড় নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা নেশায় পরিণত হয়। তিনি বাদুড় সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন করেছেন, তার এই কাজ মানুষ কিভাবে দেখছেন তিনি জানেন না তবে বাদুড়েরা যে তাকে আপন মনে করে এর প্রমাণ তিনি পেয়েছেন। টোটিলের বাদুড় রক্ষা ফাউন্ডেশনের কারণে শুধু আমেরিকায় বাদুড়ের একটি নিরাপদ আশ্রয় গড়ে ওঠে। দক্ষিণ আমেরিকার এরোজোনার ঈগলত্রিক কেভে ২ কোটি ৫০ লাখ বাদুড়ের আশ্রয়স্থল হয়।
টোটিল এ গুহা পরিদর্শন করেন। টোটিলের এই বাদুর প্রীতিতে সবাই কিন্তু সুদৃষ্টিতে দ্যাখেনি। হংকংয়ের একজন বাদুড় বিশেষজ্ঞ বলেছেন বাদুড় নিয়ে এতো মাতামাতি করার কিছু নেই কারণ বাদুড় তো আসলে ডাকুলা। ভ্যামপায়ার এই রক্তচোষা প্রাণীটি নিজেকে বাদুড়ে রূপান্তরিত করেছে। গ্রে এডিসের এই মতবাদ কিন্তু সবাই মেনে নেননি।
চীনের একজন এর প্রতিবাদ করেন। তিনি এডিসের এই মতবাদের প্রতিবাদ করে বলেন, বাদুড় মানুষের শত্রুও নয়, দুর্ভাগ্যের প্রতীকও নয় বরং এটা সৌভাগ্যের প্রতীক। পিচফল গাছে বাদুড়ের আগমন হলে ওই গাছের মালিক সৌভাগ্যবান হন। কারণ একটি বাদুড় প্রতিরাতে কমপক্ষে তিন হাজার মশা ও পোকামাকড় সাবাড় করে থাকে। এ ছাড়া বাদুড় আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য ফলের গাছের শুধু পোকামাকড়ই নয়, মানুষের মতো এর ছোট ছোট মরা ডাল ও শুষ্ক পাতা পরিষ্কার করে গাছকে সজীব রাখে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।