আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশবিদেশের উপকথা- সর্প রাজপুত্র (ফিরোজপুর)

এই উপকথা পাঞ্জাবের শতদ্রু নদের তীরবর্তী ফিরোজপুর অঞ্চলের।
এক দেশে ছিল এক গরীব বৃদ্ধা। তিনকুলে তার কেউ কোত্থাও ছিল না। এর বাড়ী ওর বাড়ী ধান ভেনে, মুড়ি ভেজে, ফসল তোলার মরশুমে জমিতে ঝরে পড়া শস্যমঞ্জরী কুড়িয়ে বা কারুর বাড়ীতে প্রয়োজন থাকলে ঠিকা কাজ করে দিয়ে কোনোক্রমে তার দিন গুজরান হতো। কোনোদিন দু'বেলা দু'মুঠো জুটতো, কোনোদিন বা একবেলা আধপেটা।


একদিন সকালে উঠে সে দেখলো ঘরে কোনো খাদ্যই নেই কয়েক মুঠো ছাতু ছাড়া। কী খেয়ে সে তাহলে বেরোয় কাজে? একেবারে উপোস থাকলে তো পারবে না কাজ করতে, আগের রাতেও বেচারির কিছু খাওয়া হয় নি। সে ভাবলো যাই পুকুর থেকে কলসী ভরে জল আনি, এই ছাতুটুকু জল দিয়ে মেখে কাঁচলঙ্কা দিয়ে খেয়ে কাজে বেরোই।
যা ভাবা সেই কাজ, সে কলসী নিয়ে পুকুরে গেল। কলসী ভরে জল তুলে পাড়ে তুলে রেখে সে ভাবলো পুকুরে যখন এসেইছি, স্নান করেই যাই।

এই ভেবে সে পুকুরে নেমে ভালো করে ডুব দিয়ে স্নান করে নিল। তারপরে উঠে ভিজা কাপড় নিংড়ে, আঁচলে মাথা মুছে যেই না কলসী তুলতে গেছে, শোনে "ফোঁস ফোঁস ফোঁস"। কী সর্বনাশ! কলসীর ভিতরে ফোঁস করে কে?
ঢাকনা একটু তুলে সে দেখলো ভেতরে ইয়া বড়ো একটা সাপ কুন্ডলী করে আছে।
সে ভাবলো- কপালে এই ছিল? জল তুলে রাখলাম কলসী ভরে, সাপ হয়ে গেল? যাই হোক, সাপই বাড়ী নিয়ে যাই, আমাকে যদি কামড়ায় তবে আমার ভবজ্বালা একেবারেই ঘুচবে, বাঁচবো। দিনের পর দিন আধপেটা খেয়ে বা না খেয়ে এই উঞ্ছবৃত্তি আর ভালো লাগে না।


তাই হলো, কলসীতে সাপ নিয়ে সে ফিরে এলো কুটিরে। কুটিরের দাওয়াতে কলসী রেখে সে ভিজা কাপড় পাল্টে শুকনা কাপড় পরে ভিজা কাপড় বেড়ায় মেলে এলো। তারপরে কলসীর ঢাকনা খুললো।
খুলে দ্যাখে---এ কী কান্ড? সাপ তো না, ভিতরে যে এক সাতলহরী হার! সেই হারের শত শত রত্নমাণিক্যের ছটায় চোখ ধাঁধিয়ে গেল তার।
সে ভাবলো ঠাকুর তবে এই অভাগীর দিকে চোখ তুলে চাইলেন? এই বহুমূল্য রত্নহার রাজার কাছে নিয়ে যাই।


কালবিলম্ব না করে কলসীতে ঢাকনা চাপা দিয়ে সে সাতলহরী হার সমেত কলসী নিয়ে চললো রাজার কাছে। রাজা এই অপূর্ব হার বহু অর্থমূল্যে কিনে নিলেন বৃদ্ধার কাছ থেকে। বৃদ্ধার সব দুঃখ ঘুচে গেল।
রাজা হারখানি রানীকে নিয়ে দিলেন, বললেন, "দ্যাখো রানি, কিছুদিন পরেই পাশের রাজ্যে আমাদের নিমন্ত্রণ সেই রাজ্যের রাজার কন্যার অন্নপ্রাশনে। সেইদিন তুমি এই হারখানি পরে যদি আমার সঙ্গে চলো, তাহলে চমৎকার হবে।

এমন হার কেউ কখনো দ্যাখে নি, এইসব রত্নমাণিক্যের বুঝি দুনিয়ায় জুড়ি নেই। "
রানী তো আনন্দে ডগোমগো। তাড়াতাড়ি হারখানি নিয়ে যত্ন করে গয়নার বাক্সে রাখলেন। কিন্তু এই হার পরে নেমন্তন্নে যাওয়া তাঁর আর হলো না।
পরদিন গয়নাপত্র গুছিয়ে রাখবেন বলে রাণী যেই না গয়নার বাক্স খুলেছেন, অ মা এ কী কান্ড! বাক্স থেকে হামা দিয়ে বেরিয়ে এলো ফুটফুটে এক বাচ্চা ছেলে।

প্রায় বছরখানেক বয়সের। ফোকলা দাঁতে ফিক করে হাসলো রাণীর দিকে ঝিকিমিকি চোখ মেলে চেয়ে।
এই রাজা ও রাণীর বিবাহ হয়েছিল বেশ অনেক বছর, কিন্তু এঁদের কোনো সন্তান ছিল না। বহু ঠাকুরদেবতার থানে হত্যা দিয়ে, বহু পুণ্যস্থানে প্রার্থনা করে, পুণ্য বৃক্ষে সূত্রবন্ধন করে, সাধুসন্ন্যাসীর আশীর্বাদ নিয়েও কিছুতেই কিছু হয় নি। তাই এঁদের মনে ভারী দুঃখ ছিল এতকাল।


এখন অপ্রত্যাশিতভাবে এই ছেলেকে পেয়ে রাজা রাণী তাকে পুত্র হিসাবে মানুষ করতে লাগলেন। চারিদিকে প্রচার হয়ে গেল রাজপুত্রের আসন্ন অন্নপ্রাশনের খবর।
পাশের যেই রাজ্যের রাজকন্যার অন্নপ্রাশনে এঁদের নিমন্ত্রণ ছিল, সেখানে যাওয়া হলো না, উপরন্তু এঁরাই সে রাজ্যের রাজারাণীকে পরিজনসমেত নিমন্ত্রণ করে পাঠালেন এঁদের পুত্রের মুখেভাতে।
চারিদিকে রাজপুত্রের খবর ছড়িয়ে পড়লো বটে সঙ্গে সঙ্গে কানাঘুষো ও ছড়িয়ে পড়লো, কারণ ব্যাপার যে খুবই রহস্যময়! কবে জন্মালো রাজপুত্র? কবেই বা এতখানি বড় হয়ে গেল যে তার অন্নপ্রাশন কাছিয়ে এলো?
যাই হোক বিরাট অনুষ্ঠান করে রাজপুত্রের অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান হলো। পাশের রাজ্যের রাজা, রাণী, ছোট্টো রাজকন্যা আর তাদের পরিজনেরা সবাই নিমন্ত্রণ খেতে এলেন।


ফুটফুটে সুন্দর রাজপুত্রটির সঙ্গে নিজের কন্যার বিবাহ দেবার জন্য পাশের রাজ্যের রাজারাণী সেখানেই আর্জি জানিয়ে রাখলেন। এই রাজপুত্রের পিতামাতাও আহ্লাদের সঙ্গে রাজি হলেন। এই পুত্রটি আর কন্যাটি বড় হলে এদের বিবাহবন্ধনের জন্য দুইজোড়া পিতামাতাই কড়ার করে রাখলেন।
তারপরে দিন যায়, দেখতে দেখতে পাশাপাশি রাজ্যে বড় হয়ে ওঠে ছেলেমেয়েদুটি। মাঝে মাঝে বেড়াতে গেলে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, একসাথে খেলাধূলাও করে তারা।

বড় হলে তাদের বিবাহ হবে, এও তারা জানে।
যৌবনপ্রাপ্তির পরেই তাদের বিবাহ হয়ে গেল মহাধূমধামে। পিতৃগৃহ ছেড়ে পতিগৃহে আসার আগে কন্যাকে তার মা বলে দিলেন, প্রথম সুযোগেই যেন সে স্বামীর কাছে জেনে নেয় স্বামীর জন্মের রহস্যটা ঠিক কী। সে কি সত্যি এই রাজারাণীর পুত্র নাকি দত্তকপুত্র নাকি অন্য কোনো রহস্য আছে তার পরিচয়ে?
(আগামী পর্বে বাকীটুকু)

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।