saving the world by sleeping
লাল মোলাটের মোটা বাঁধানো বইটা । আগলে রাখতাম সবসময় । ছোট ছোট গল্প এক একটা । বয়স কত ছিল আমার ? ৪ কি ৫ । বার বার পড়তাম ।
তবুও মনে হত পড়া হল না ঠিক মত । আবারও পড়তাম । পিনকিও, সিনড্রেলা, বিউটি এন্ড দা বিস্ট , রেড রাইডিং হুড আরও কত কি । সব কি আর মনে আছে ? প্রায় একশের মত গল্প ছিল বইটিতে । এত আপন ।
সবসময়ের সঙ্গী । সুখে দুখে আমাকে আগলে রাখত । কি অবসরে, কি ক্লান্তিতে, কি স্তব্ধ নিরবতায়, একাকী সন্ধ্যা বেলায় । আমার সাথে ছিল অনেকদিন । পৃষ্ঠাগুলো খুলে গিয়েছিল ।
তবু পরম মমতায় তাকে আগলে রাখতাম । যখন বাবা ঠিক করলেন আর বিদেশ নয়, একবারে মাতৃভূমিতে ফিরতে হবে, তখন থেকে শুরু হল বইটির অভিমান । খুঁজে পেলাম না তাকে । সারাবাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজলাম । সে হারিয়ে গেল ।
আমার সম্বল ছিল এই একটি মাত্র গল্পের বই । ওখানে বাংলা বই খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর । তবুও বাংলার মাটিতে যতবারই পা ফেলেছি, ততবারই বাবার পান্জাবিটা টান দিয়ে বলতাম একটা গল্পের বই কিনে দাও না । বাবা মুচকি হাসতেন । কিন্তু কখনও কিনে দিতেন না ।
পাছে লেখাপড়ায় খারাপ করি এই ভয়ে । বড়ই মন খারাপ হত ।
গল্পের বইয়ের এই হাহাকার আমি আজও পূরণ করতে পারি নাই । এখন বয়স হয়েছে বই পড়ার ধৈর্যটা একটু একটু করে কমে যাচ্ছে । কিন্তু ছোটোবেলার সে অভাব আমাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় ।
সবসময় চেষ্টায় থাকি আমার ছোটো বোন যেন শূণ্যস্থানটা পূরণ করতে পারে । পিচ্চিটা যখন পড়তে শিখল, আমিতো জানি আমার বাবা-মা কেমন, তখন থেকেই বইয়ের পোকা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিলাম । কারখানাটা আজও চলছে । বৃক্ষ আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে । তবুও এই পোকার যাত্রা আজও থামেনি ।
বাবার কাছ থেকে আমি একটা বই পেয়েছিলাম । জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন সমগ্র । তখন আমি এস.এস.সি পাস করে ফেলেছি । যখন আমার জীবনের দিত্বীয় অধ্যায় শুরু করব ।
জাফর ইকবালের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে '৯২ তে ।
তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে । হুমায়ুন আহমেদ কে চিনি সপ্তম শ্রেণী থেকে । বহুব্রীহি থেকে তার সূত্রপাত । আমার চলা কখনও থেমে থাকেনি । স্কুলের ব্যাগ থাকতো গল্পের বইয়ে পরিপূর্ণ ।
একবার শুনলাম স্যার নাকি সব ক্লাসে গিয়ে গিয়ে ব্যাগ চেক করছে ।
ছিলাম তো ক্লাস ক্যাপ্টেন । সবার ব্যাগ থেকে যত গল্পের বই পাওয়া যায় সব এককাঠ্ঠা করলাম । তারপর সবগুলোকে নিয়ে লুকালাম ফলস সিলিংয়ের উপর । আশা করি সবাই ফলস সিলিং কি জিনিস জানেন নিশ্চয় ।
সব করপোরেট অফিসতো এখন এসব দিয়ে ডেকোরেট করে ।
পরে অবশ্য আমাদের ক্লাসে আর ঐ শিক্ষক তার পদধুলা দেননি ।
বাসায় তো গল্পের বইয়ের ক্যার্ফু ছিল । গল্পের বই কখনই পড়ার বইয়ের নিচে রাখতাম না । যদি ধরা পড়ি ।
পড়ার বই রাখতাম টেবিলের উপর । আর গল্পের বই রাখতাম ডেস্কের ভিতর । রুমের দরজাটা বন্ধ রাখতাম যেন খোলার সাথে সাথে ডেক্সটা বন্ধ করতে পারি ।
রাতের বেলা কম্বলের নিচে টর্চ লাইট জ্বেলে ড্রাকুলার বইটা পড়া । হারিয়ে যাওয়া সেইসব দিনগুলি ।
আমি এখনও খুঁজে ফিরি আমার হারিয়ে যাওয়া লাল মলাটের ছেঁড়া বইখানি । আমার জীবনের পরশ পাথর । আমার পরম পাওয়া ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।