গত পরশুদিন এক জামায়াত নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে খুব আশ্চর্য হলাম । সঙ্গত কারনে আমি তার নাম টা প্রকাশ করলাম না, অনেক আগে থেকেই তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি । ব্যক্তি হিসেবে তাকে আমি সম্মান করতাম, এখনো করি । মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার ছিলেন কিনা আমি জানিনা, আর সব জামায়াত কর্মীরাই রাজাকার ছিলো, বা রাজাকারী মনোভাব পোষণ করে তাও আমি মানিনা । প্রত্যেকটা জায়গাতেই ভালো মন্দ দুই রকমের মানুষ এ থাকে ।
যাই হোক, তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে শাহবাগের মহাসমাবেশ কে এক ধরনের প্রপাগান্ডা বলে ব্যক্ত করেছেন । তার মতে শাহবাগের মহাসমাবেশের কয়েক হাজার তরুন নাকি কখনোই একটি দেশের চিন্তাধারা কে রিপ্রেজেন্ট করেনা । অথচ এই বাংলাদেশ আর বাংলা ভাষার লড়াই এর সূচনা প্রথমে তরুনরাই শুরু করেছিলো । দেশের ইতিহাসে যত আন্দোলন , অভূথ্যান বা বিদ্রোহ হয়েছিলো সবকিছুতেই তরুন রা অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলো । তাদের আন্দোলন , তাদের চিন্তা চেতনা তারা সমগ্র দেশে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলো বলেই আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি ।
কয়েকজন তরুন থেকেই শাহবাগের সমাবেশ এখন লাখো লাখো মানুষের জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছে ।
তিনি আরো বলছিলেন যে , আজ কালকার তরুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানেনা, তাদের কে যতটুকু জানানো হয়েছে তারা শুধু ততটুকুই জানে । মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা ছিলেন তারা যুদ্ধের পর যা লিখেছে, যা বলেছে তরুণরা তাই জেনেছে, তাই বিশ্বাস করেছে, আমি আসলেই কনফিউসড উনি ‘যুদ্ধের পক্ষে যারা ছিলেন’ বলতে আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন । বাংলাদেশ আমাদের দেশ, আমরা সবাই স্বাধীনতা চেয়েছি, মুক্তি চেয়েছি আর তাই আমরা যুদ্ধ করে মুক্তি ছিনিয়ে এনেছি । একই দেশে বাস করে এখানে কতিপয় লোকের যুদ্ধের বিপক্ষে থাকার কারন আমি ঠিক বুঝলাম না ।
আচ্ছা তারপর ও ধরে নিলাম বিপক্ষে থাকার পিছনে তাদের লজিক ছিলো , তাহলে মুক্তিযুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা বা বুদ্ধিজীবীরা যুদ্ধের যে মিথ্যা ইতিহাস (তার কথা থেকে আমি তাই বুঝলাম) লিখেছে তার জবাবে তারা কিছু লিখেন নি কেন? তারা কেন বলেননি আসল সত্যিটা কি ছিলো? কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৩৪৪ টি খুনের মামলা, ঐ সময়ে যা্রা তার কর্মকান্ড স্বচক্ষে দেখেছিলো , যারা ভুক্তোভুগি ছিলো তারাই স্বাক্ষ্য দিয়ে তার সত্যতা প্রমাণ করেছে । যারা স্বাক্ষ্য দিয়েছে তারা কি সবাই মিথ্যেবাদী, নাকি সবাই বোকা? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই । প্রত্যেকটা মানুষেই নিজস্ব চিন্তা ভাবনা থেকে একেকটা ব্যাপার কে বিশ্লেষণ করে । যুদ্ধের বিপক্ষে থাকা এক ব্যাপার আর যুদ্ধের বিপক্ষে থেকে পক্ষে যারা আছে তাদের কর্মকান্ডে ব্যাঘাত ঘটানো, তাদের পরিবার পরিজনদের মেরে ফেলা, ধর্ষন আর লুটপাটের সুযোগ নেয়া অন্য ব্যাপার । এই অন্য ব্যাপারটাই আমি বুঝিনা ।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি , খুব দ্রুত যদি না হয় একসময় স্বাক্ষ্য প্রমাণ দেয়ার লোকজন ও খুঁজে পাওয়া যাবেনা । শাহবাগের মহাসমাবেশের মাধ্যমে যদি জনগণের টনক নড়ে , যদি বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন হয় তার চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।