একজন লেখক বই লেখেন তার নিজের মতো করে। একটি বইয়ে লেখক তার একান্তই নিজস্ব ভাবনাগুলোকে শব্দ ও বাক্যের মালা গেঁথে পাঠককে উপহার দেন। আবার একেকজন পাঠক বই পড়েন তার নিজের মতো করে। ফলে লেখক ও পাঠকের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া বা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া যে কোনো শিল্পের মূল সার্থকতা হলো, পাঠক বা দর্শকের চিন্তাভাবনাকে নাড়া দেয়ার পারদর্শিকতায়।
একজন লেখক যখন পারেন তার সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে জাতির ক্ষয়ে যাওয়া বিবেককে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে। পারেন জনসাধারণের চিন্তাভাবনাকে তার ভাবনার দিকে মনোযোগী করতে। পারেন বিরুদ্ধবাদীদের ষড়যন্ত্রের মূলে উপর্যুপরি আঘাত করে তাড়িয়ে বেড়াতে। দিতে পারেন তার সৃষ্টির মাধ্যমে জাতিকে নতুন পথের খোরাক। আর তখনই সাহিত্য তার নিজস্ব ভাষা বা গতিপথ খুঁজে পায়।
অথবা তার রচনাটি পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাও আবার সে বইটি যদি হয় থ্রিলারধর্মী কাহিনীর, তাহলে তো কথাই নেই। সে বইয়ের নায়ক অনেক সময় বইয়ের পাতা ছেড়ে জীবন্ত রূপ নেয়। বইয়ের নির্জীব পাতা থেকে পাঠকের কাছে হয়ে ওঠে নিজের একান্ত আপন বা পৃথিবীর বাস্তব জীবনের একজন।
এমনই একজন লেখক আলেকজান্ডার রোবার।
যার সৃষ্টি অ্যালেক্স রোবার নামে অসংখ্য পাঠকের কাছে জীবন্ত রূপ নিয়েছে। যার অসংখ্য ভক্তের মধ্যে পৃথিবীর নির্জন দ্বীপে বিজ্ঞানী বাবার সঙ্গে বসবাসরত বারো বছরের একটি শিশু নিম। পৃথিবীর এ নির্জন দ্বীপে বসবাসকারী নিমের সাগর ও জঙ্গলের প্রায় সব প্রাণীর সঙ্গে একান্ত মিতালি। মা হারানো নিম তার বিজ্ঞানী বাবা, সাগর ও জঙ্গলের প্রাণী এবং প্রকৃতির সমন্বয়ে পৃথিবীর নির্জন দ্বীপে গড়ে তুলেছে তার একান্তই নিজ ভুবন। যে ভুবনে সে পৃথিবীর আর কাউকে ভাগ বসাতে দিতে রাজি নয়।
সে তার প্রিয় চরিত্র অ্যালেক্স রোবারের মতো সাগরের প্রাণীদের পিঠে চড়ে সাগর চষে বেড়ায়। বাবা বিজ্ঞানী হওয়ায় পৃথিবীর নির্জন দ্বীপে বসেও সে প্রযুক্তির সব সুযোগ-সুবিধা পায়। এরই মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সে অ্যালেক্স রোবার যার সৃষ্টি, সেই লেখক আলেকজান্ডার রোবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আলেকজান্ডার রোবার নিমের সঙ্গে অ্যালেক্স রোবার হিসেবে যোগাযোগ রক্ষা করে।
এক সময় নিমের বাবা তার বৈজ্ঞানিক কাজের প্রয়োজনে সাগরে যাত্রা করেন।
আর এদিকে একদল পর্যটক নিমের দ্বীপে আসে তাদের যান্ত্রিক জীবনটাকে কিছুটা হলেও আনন্দময় করে নিতে। কিন্তু শুধু বই পড়ে পৃথিবীকে জানা নিমের কাছে জাহাজের এ আনন্দপিয়াসী মানুষগুলোকে শত্রু মনে হয়। তাই সে তাদের এখান থেকে তাড়ানোর জন্য নানান ফন্দি আঁটে। ছোট হাতের অপরিপক্ব কাজে এক সময় তার ঠেলে দেয়া পাথর পড়ে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরিকে নতুন করে জাগিয়ে দেয়। অপরদিকে জাহাজে বেড়াতে আসা আরেকটি শিশু দ্বীপ বা জঙ্গলকে জেনেছে বই পড়ে।
তাই দ্বীপে সে নিমকে দেখে অবাক হয় না। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে বিশ্বাস করে না। দুজনের দেখা হওয়ার মাধ্যমে নিমের পৃৃথিবীর মানুষদের সম্পর্কে জানা ভুল ধারণার অবসান ঘটে। আগ্নেয়গিরিকে নতুন করে জেগে যাওয়া দেখে আনন্দ উপভোগ করতে আসা মানুষগুলো দ্বীপ ছেড়ে চলে যায়।
একদিন সাগরের বুকে প্রচ- ঝড় ওঠে।
সাগরের হাত থেকে বাবাকে বাঁচানোর জন্য নিম অ্যালেক্স রোবারকে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু একজন থ্রিলার লেখক যে নিজে সাহসী হবেনÑ তা তো নয়। যে আলেকজান্ডার রোবার বহুদিন ধরে ঘর থেকে বের হতে বা নিজের দরজা খোলার সাহস পায় না, তার এখানে কিইবা করার আছে। তারপরও তিনি ছোট একটি শিশুর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে পেছনে থেকে সাহস জোগায় তারই সৃষ্টি অ্যালেক্স রোবার।
কিন্তু মহিলা অ্যালেক্স রোবারকে নিম প্রথমে মেনে নিতে চায় না। এক সময় বাবা ফিরে আসে। বিজ্ঞানী বাবা ও লেখক আলেকজান্ডার রোবারকে নিয়ে নিমের নতুন জীবন শুরু হয়। এমনই একটা চমৎকার কাহিনী নিয়ে জেনিফার ফ্যাকেট ও মার্ক লেভিনের চলচ্চিত্র নিম’স আইল্যান্ড।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।