বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
কবি মুকুন্দদাস। ব্রিটিশ শাসনশোষনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন এই কবি। বিলেতি পন্য বর্জন এবং ব্রিটিশের শাসন-শোষনের কথা তিনি অত্যন্ত সহজবোধ্য ভাষায় বর্ণনা করতে পারতেন।
লিখেছিলেন: ‘ ছিল ধান গোলা ভরা/শ্বেত ইঁদুরে করল সারা। ’ কাজেই ইংরেজ সরকার কবিকে গ্রেপ্তার করে। তারপর বিচারের নামে প্রহসন। তিন বছরের কারাদন্ড। জরিমানার অর্থ জোগান দিয়ে হন সর্বস্বান্ত।
তাইই বলছিলাম-মুকুন্দদাস কেবলি চারণকবি ছিলেন না -ছিলেন তার চাইতেও অনেক বড় ...
১৮৭৮ সালে মুকুন্দদাসের জন্ম। কোথায়? ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। পরিবারটির ছিল নৌকার কারবার। অর্থাৎ মাঝি ...যা হোক। মুকুন্দদাসের পিতার নাম গুরুদয়াল।
তিনি আর নৌকা না বেয়ে পরিবারসমেত বরিশাল চলে এলেন । বরিশালের ডেপুটি আদালতে আরদালির কাজ নিলেন।
ছেলে বড় হচ্ছিল-মানে মুকুন্দ। আসলে মুকুন্দর নাম ছিল- যজ্ঞেশ্বর। গুরুদয়াল ছেলের এই নামই রেখেছিলেন।
যজ্ঞেশ্বর রামানন্দ নামে এক সাধকের কাছে দীক্ষা নেয়। এই রামানন্দ সম্ভবত কালীসাধক ছিলেন-সম্ভবত তিনি রামকৃষ্ণপরমহংসদেবের কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। রামানন্দের কাছে দীক্ষা নেওয়ার পর যজ্ঞেশ্বর নতুন নাম গ্রহন করেন। মুকুন্দদাস। মুকুন্দদাসের কাব্যভাবনায় কালী মায়ের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী,
আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে। ।
মুকুন্দদাস বরিশাল জেলা স্কুল ও ব্রজমোহন স্কুলে এন্ট্রাস পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ফাইনাল পরীক্ষায় অবশ্য কৃতকার্য হতে পারেননি। যা হোক।
বড় গান ভালোবাসতেন। তখন মুকুন্দর বয়স উনিশ। বীরেশ্বর গুপ্তের কন্ঠে শুনলেন কীর্তন-যোগ দিলেন কীর্তনদলে।
পরে নিজেই একটি গানের দল গঠন করে গানের জগতে ডুব দিলেন।
(আরও অনেক অনেক বছর পর একই জায়গায় -অর্থাৎ বরিশালে- আলতাফ মাহমুদ গানের দল করে গান গাইবেন।
আলতাফ মাহমুদও সুর করবেন ভাষার গান ...স্বাধীনতার গান ...বাংলা এভাবে ...)
সময়টা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভকাল। ঐ সময়ে সারা ভারতবর্ষজুড়ে চলছিল স্বদেশী আন্দোলন। বরিশালের নিস্তরঙ্গ জীবনেও আছড়ে পড়েছিল সেই উত্তাপ। বরিশালের কংগ্রেস নেতা তখন অশ্বিনীকুমার দত্ত। মুকুন্দদাস তাঁর কাছে দীক্ষা নিলেন।
অশ্বিনীকুমার দত্ত বললেন, মুকুন্দ, তুমি তো ভালো গান লিখ। গান লিইখা ইংরেজগোরে জ্বালাইয়া পোড়াইয়া দাও দি।
দিমু গুরু। মুকুন্দদাস আপ্লুত হয়ে বললেন।
গান লিখলেন মুকুন্দদাস ।
কী গান?
যে গান আমরা এই একুশ শতকেও শুনি।
ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে,
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে। ।
তাথৈ তাথৈ থৈ দ্রিমী দ্রিমী দং দং
ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে।
দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী,
আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে।
।
সাজ রে সন্তান হিন্দু মুসলমান
থাকে থাকিবে প্রাণ না হয় যাইবে প্রাণ। ।
লইয়ে কৃপাণ হও রে আগুয়ান,
নিতে হয় মুকুন্দে-রে নিও রে সঙ্গে। ।
বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় মুকুন্দদাসের লেখা গান বেরুল। তুমুল হইচই পড়ে গেল। লোকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধু হল। ভারি তেজ ও উদ্দীপনা সে গানে। গান লিখে- গান গেয়ে জীবনে বহু মেডেল পেয়েছেন মুকুন্দদাস।
১৯০৮ সালে মুকুন্দদাসের লেখা “মাতৃপূজা” নামে গানের একটি সংকলনও প্রকাশ হয়। সাধনসঙ্গীত, পল্লীসেবা, ব্রহ্মচারিণী, পথ, সাথী, সমাজ, কর্মক্ষেত্র প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এর কয়েকটি তাঁর জীবদ্দশায় এবং বাকিগুলি মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়।
আগেই বলেছি ব্রিটিশবিরোধী গান লিখে ৩ বছর কারাভোগ করেছেন মুকুন্দদাস। কিন্তু দমে যান নি।
১৯২২ সালের অসহযোগ আন্দোলন ও ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। গানে গানে আগুন জ্বালিয়ে দেন। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল তখন বেঁচে। তাঁদের কানে মুকুন্দদাসের গান পৌঁছল। তাঁরা মুকুন্দদাসকে
চারণকবি বলে অবহিত করলেন।
কিন্তু, মুকুন্দদাস কি কেবলি চারণকবি?
এই প্রশ্নটি তরুন প্রজন্মের কাছে রইল।
রাস্ট্রদ্রোহী মামলায় জরিমানার অর্থ জোগান দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন মুকুন্দদাস। বিত্তশালী পরিবারের ছেলে ত ছিলেন না তিনি ...সেই সময় তাঁর পরিবারটিকে অন্নের সংস্থান করতে কী রকম যুদ্ধ করতে হয়েছিল একবার কল্পনা করে দেখুন ...
তারপরও আমরা তাঁকে কেবলি চারণকবিই বলি।
তাঁর ছবি নতুন প্রজন্মকে দেখাব বলে ইন্টারনেট ঘেঁটেও ভালো একটা ছবি অবধি পাওয়া গেল না ...
এই আক্ষেপ।
ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে ...গানটি নিয়েছি আবু নাঈমের ব্লগ থেকে
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।