মহলদার
বাংলালিংকের আয়োজনে ২ দিনব্যাপী লোক উৎসব শুরু হয়েছিল জীবন্ত কিংবদন্তী, বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের বাড়ি, উজানধল গ্রামে গত শুক্রবার। আজ মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছে জানতে পারলাম গত রাতে ঝড় বৃষ্টির জন্য আজ সেখানে মেলার কোন আয়োজন, অনুষ্ঠান নেই। স্স্থানীয় প্রসাশন, ঢাকা থেকে আগত শিল্পীবৃন্দ, মিডিয়ার লোকজনের উপস্থিতিতে গতকালই মেলার উদ্ধোধন হয় এবং গতকাল কিছু আয়োজন ছিল। আজ কোন অনুষ্ঠান হয়নি।
তবে বাউল সম্রাটের বাড়ি যাওয়া, তাকে সরাসরি দেখতে পাওয়া আমার কাছে অনেক বড় কিছু। সেখানে যাওয়ার পথের এবং তাঁর বাড়ির কিছু ছবি শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে।
উজানধলের পথে -১
উজানধলের পথে -২
উজানধল গ্রামে যাওয়ার এই রাস্তাটি হাওরের বুক চিরে চলে গেছে। দুই পাশে যতদুর চোখ যয়, শুধু ধান ক্ষেত, আর ধান ক্ষেত। বাংলার এই রূপ দেখে আপনি উদ্বেলিত হয়ে যাবেন।
সে এক অন্য রকম অনুভূতি!
রাস্তার পাশে সবুজ ধানক্ষেত। কিছুদিন পর কৃষক ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তখন দেখা যাবে বাংলার আরেক অনুপম দৃশ্য।
হাঁস রাখাল তার হাঁস গুলো ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে কিছুক্ষণ। হাওর অঞ্চলের খুব পরিচিত দৃশ্য এটি।
মেলা উপলক্ষ্যে এই বোর্ডটি রাখা হয়েছে বাউল সম্রাটের বাড়ি ঢোকার পথে।
এটি বাউল সম্রাটের বাড়ি। তাঁর বাড়ির উঠানে দাঁড়ানোর স্মৃতিটাকে বেঁধে নিলাম ফ্রেমে।
বাউল সম্রাটের বাড়িতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগীতালয়।
গান পরিবেশনরত তাঁর ভক্তদের একাংশ।
তাঁর স্ত্রী সরলা বিবি গত হয়েছেন অনেক আগে। এখানে সমাহিত করা হয়েছে তাকে।
শাহ্ আব্দুল করিমের স্ত্রীর সমাধি।
শাহ্ আব্দুল করিমের বাড়ির সামনের কালনি নদী। এই নদীতে ডুব সাতাঁর কেটে, মাছ ধরে শৈশব কাটিয়েছেন এই কিংবদন্তী।
স্ত্রী-পুত্রের সাথে শাহ্ আব্দুল করিম।
শাহ্ আব্দুল করিমের স্ত্রী সরলা বিবি।
বাউল সম্রাটের প্রাপ্ত পদকের একাংশ।
তাঁর বাড়িতে পৌঁছানোর পর কথা হল তাঁর ছেলের সাথে। জানালেন গতকাল ভক্তদের সাথে অনেক সময় দিয়েছেন।
শারিরীকভাবে এমনিতেই তিনি খুব অসুস্থ। তেমন কথা বলতে পারেন না। সবাইকে ভাল চিনতেও পারেন না। তার উপর গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছেন। তিনি খুব ক্লান্ত।
এখন ঘুমাচ্ছেন। জানতে চাইলাম তাঁকে কি এক নজর দেখতে পাব কিনা। তিনি বললেন, হ্যাঁ ঘরে গিয়ে দেখে আসুন। ঘরে গিয়ে দেখলাম একটি সাধারণ খাটের উপর ঘুমিয়ে আছেন কত সাদা মাটা এই মানুষটি। অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলাম এই কিংবদন্তীর দিকে।
নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাঁর শরীরের খুব খারাপ অবস্থা। ছবিতে যেমন দেখেছি, এখন দেখলে হঠাৎ করে চেনাই যায় না। । তাঁর খাটের একপাশে একটি শোকেসে রাখা তাঁর বিভিন্ন ক্রেস্ট, দেয়ালে ঝুলানো, শোকেসের উপরে রাখা বিভিন্ন সম্মাননা পত্র।
একজন সম্রাট ও যে কত নির্মোহ হতে পারেন তিনি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি যে বাউল, তিনি যে মাটির সন্তান, ভোগ বিলাসী জীবন যে তার জন্য বড্ড বেমানান! নির্মোহ এই মানুষটির জীবনে চাওয়া নেই কিছুই। কিন্তু আমাদের যে দায় আছে অনেক।
খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর একটা ছবি উঠাবো। কিন্তু হলো না।
তাতে দুঃখ নেই। জীবন্ত এই কিংবদন্তীকে যে নিজের চোখে দেখলাম তাই বা কম কিসের?
এরপর ফেরার পালা। ফেরার পথে চোখে পড়ল মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার দৃশ্য। ধারন করে নিলাম কয়েটি মুহূর্ত।
এইসব দৃশ্য দেখে আমারো ছোটবেলার মাছ ধরার কথা মনে পড়ে গেল।
পোলো দিয়ে মাছ ধরা। কতবার গেছি যে পোলো দিয়ে মাছ ধরতে। হাওর অঞ্চল ছাড়া এইসব দৃশ্য বাংলাদেশের এখন খুব কম জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। এই সব দেখতে দেখতে, বাউল সম্রাটের কথা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল সেই গানটি.....
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম........।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।