সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
১.
ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকাইয়া মাছ বাজারের বাহিরে দাড়াইয়া প্যাক-কাদা মাড়াইয়া ঢুকিবো কি ঢুকিবো না তাহা ভাবিতেছি আর সুরুজ আলী আমার পিছনে বাজারে থলে হাতে দাড়াইয়া আছে, এমন সময় আমার চোখ পাশেই ডালা সাজাইয়া বসা এক শুঁটকিওয়ালার উপর আপতিত হইলো। আমার মন খুশিতে গদগদ হইয়া সুরুজ আলীকে বলিলাম, "অনেক দিন শুটকির খাওয়া হয় না, চল আজকে আয়েশ করিয়া খাইবো "।
সুরুজ আলী তাহার নূরানী বদনখানা কিম্ভুৎকিমাকার করিয়া বলিলো, "ছিঃ, আজকালকার মানুষ আর শুঁটকি খায় নি ?"
তিন চার মাস শহরে থাকিয়া তাহার গায়ের রঙ বেশকিছুটা পরিস্কার হইয়াছে, ভালোমন্দ খাইয়া শরীরে বেশ চিকনাই জমিয়াছে, তাহার এইরকম নাক উচা কথা শুনিয়া মনে মনে বিরক্ত হইলেও আর কিছুই বলিলাম না। বড় বড় চার পাঁচ খানা চ্যাঁপা শুঁটকি নিয়া আনন্দে আটখানা হইয়া বাসায় আসিলাম।
২.
চিৎকার শুনিয়া ঘুম হইতে উঠিয়া দৌড়াইয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া দেখি, মা হতভম্ভ দৃষ্টিতে সুরুজ আলীর ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে পাথরের মত দাড়াইয়া আছে। আমি আর কোন দিকে তাকাইবার ফুসরত পাইলাম না, মায়ের হাত ধরিয়া চেয়ারে বসাইলাম, ইত্যবসরে সুরুজ আলীও আমার পাশে চলিয়া আসিলো। সুরুজ আলীর দিকে চোখ পড়িতেই আমি পিলে চমকাইয়া উঠিলাম, সমগ্র শরীরে লাল লাল ছোট ছোট দানার মত কি যেন হইয়াছে, জায়গায় জায়গায় ফুলিয়া গিয়াছে আর সে রীতিমত গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ঐসকল জায়গাগুলো চুলকাইতেছে ।
আমি হতভম্ভ হইয়া কিছুক্ষণ তাকাইয়া থাকিয়া পরিশেষে সুধাইলাম, "কি হইতে কি হইয়াছে ?"
তাহাকে খুবই মজার কিছু জিজ্ঞাস করা হইয়াছে এমন ভাব করিয়া মুখের সবগুলো দন্ত বিকশিত করিয়া বলিলো, " শুঁটকি খাইলে আমার খাউজানি হয় "।
আমি বলিলাম, শুঁটকিতে তোর চুলকানি হয় আগে জানতি না ? তাহলে গতকাল খেয়েছিলি কেন ? আজ থেকে তোর শুটকি খাওয়া বন্ধ।
মুখমন্ডলে কৃতিম দুঃখ দুঃখ ভাব ফুটাইয়া ঘাড় কাত করিয়া মৌন সম্মতি জানাইলেও আমার মনে হইলো সে বেশ খুশিই হইয়াছে।
৩.
ছুটির দিন, সপ্তাহ তিনেক পরের ঘটনা, মা শুঁটকি ভাজি করিতেছেন আর আমি পাশে বসিয়া দৈনিকপত্রিকার হেডলাইন পড়িয়া শুনাইতেছি আর শুটকি ভাজির মন মাতানো গন্ধ উপভোগ করিতেছি এমন সময় সুরুজ আলী বাজার নিয়া রান্না ঘরে প্রবেশ করিলো। প্রবেশ করিতে না করিতেই চিৎকার দিয়া রান্না ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলো, মা আর আমি সবকিছু ভুলিয়া তাহাকে অনুসরন করিলাম।
ততক্ষণে তাহার চিৎকার থামিয়া গিয়াছে কিন্তু নর্তনকুর্দন শরু হইয়া গিয়াছে। সে নাচিতেছে আর শরীর চুলকাইতেছে, শরীর চুলকাইতেছে আর নাচিতেছে, মাথা চুলকাইতেছে পা চুলকাইতেছে , হাত চুলকাইতেছে পাছা চুলকাইতেছে, ঘাড় চুলকাইতেছে পিঠ চুলকাইতেছে, যেখানে হাতে নাগাল পাইতেছে সেখানেই চুলকাইতেছে ।
হতভম্ভ ভাব কাটিয়া যাওয়ার পর আমি দৌড়াইয়া তাহাকে ঝাপটিয়া ধরিয়া পাজাকোলা করিয়া বাতরুমে নিয়া গেলাম। কালক্ষেপন না করিয়া বড় এক বালতি জল তাহার গায়ে ঢালিয়া দিলাম। মা সাথে সাথে গামছা দিয়া তাহার গা মুছিয়া দিলেন, ইত্যবসরে তাহার চুলকানিও থামিয়া গিয়াছে, কিন্তু তাহার চেহারা হয়েছে দেখার মত, শরীরের জায়গায় জায়গায় ফুলিয়া গিয়াছে, জায়গায় জায়গায় চুলকানোর ফলে আচরের সাদা সাদা দাগ বসিয়া গিয়াছে।
কিছুক্ষণ পর সবাই একটু ধাতস্হ হইলে, আমি জিজ্ঞেস করিলাম, "কি ব্যাপার ? কি হইয়াছে ?"
সুরজ আলী আগের মত দন্ত বিকোশিত করিয়া বলিলো, " শুঁটকির গন্ধে আমার বড়ই খাওজানি "
৪.
সুরজ আলীকে লইয়া বাজারে যাইতেছি আর মনে মনে ভাবিতেছি তাহাকে নিয়াতো মাছ ও শুটকির বাজারে যাওয়া যাইবে না তো কি করা যায়। শেষে ভাবিলাম তাহাকে রিকশায় বসাইয়া রাখিয়া যাইবো আর একটু পর পর হাতের বাজার তাহার রিকশায় আনিয়া রাখিবো।
বাজারে পৌছিয়া তাহাকে বলিলাম, তুই এইখানে চুপচাপ বসিয়া থাক আমি বাজার করিয়া আনি।
সে বেশ খুশিই হইলো কিন্তু চেহারায় করুন ভাব ফুটাইয়া তুলিয়া বলিলো, "আইচ্ছা , তয় তাড়াতাড়ি চইলা আইসেন "
বাজার মাত্র অর্ধেক হইয়াছে, আমি ভাবিলাম হাতের ব্যাগগুলো রিকসায় রাখিয়া আসি ।
রিকসার কাছে আসিয়া দেখি সুরুজ আলী তাহার বিখ্যাত চুলকানি শুরু করিয়া দিয়াছে।
আমি তাড়াতাড়ি তাহাকে টানিয়া বাজারের পাশে অবস্হিত নলকূপের নিচে ঠেলিয়া দিয়া সমগ্র শরীর ধুইয়া দিলাম। পরিশেষে সুধাইলাম এইখানেতো শুঁটকির কোন গন্ধই নাই তাহলে কিভাবে কি হইলো ?
সে বলিলো, ঐ যে দুরে বাজারের ভিতরে একটা দোকান দেখা যাইতেছে সেখানে বড় বড় শুঁটকি ঝুলাইয়া রাখছে। সে যথারীতি দন্ত বিকোশিত করিয়া বলিলো, "শুঁটকি দর্শনে আমার বড়ই খাওজানি"
৫.
অতঃপর, বাসায় শুঁটকি খাওয়া একেবারেই বন্ধ হইয়া গেলো, সুরুজ আলীকে আর বাজারে যায়তে হয় না, তাহার চুলকানিও আর দেখা যায়না। আমরাও শান্তিতে আছি শুধু আমাকে সাতসাকাল উঠিয়া থলে হাতে সুবোদ ছেলের মত বাজারে যাইতে হয়।
গতসপ্তাহে কোন একটা কাজে সুরুজ আলীকে লইয়া বাহির হইলাম।
কাজ শেষ করিয়া বাসায় আসিয়া রিকশা হইতে নামিয়া ভাড়া দিতে গেলে, রিকশাওয়ালা বলিলো, " স্যার দুইডা টাকা বা বাড়াইয়া দেন "
আমি বলিলাম কেন ?
সে উত্তরে বলিলো, " স্যার কি রোদ উঠছে দেখছেন ? এই রোদ্রের মধ্যে রিকশা চালাইয়া শুটকি হইয়া গিয়াছি "
আমি আর কথা না বাড়াইয়া তাহাকে দুইটাকা বাড়াইয়া দিয়া সুরুজ আলীর দিকে ফিরতেই আমার চোক্ষচড়ক গাছ হইয়া গেল ! দেখিতে পাইলাম তাহার চুলকানি শুরু হইয়া গিয়াছে।
কালক্ষেপন না করিয়া কেয়ারটেকারকে বলিলাম, "তাড়াতাড়ি এক বালতি পানি আনিয়া সুরুজের উপরে ঢালিয়া দেন "
কিছুক্ষণ পর চুলকানি কমিয়া গেলে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম এইবার কি হইয়াছে ?
সে বলিলো, রিকশাওয়ালা বেটা কইছে যে, রোদ্রের মধ্যে রিকশা চালাইয়া শুঁটকি হইয়া গেছে .... আসলে আমার শুঁটকি শব্দ শ্রবনে বড়ই খাউজানি ।
আমি ঊর্ধ্বমুখে মুখ তুলিয়া বলিলাম, "আল্লাহ তুমিই আল-হাকিম, সর্বজ্ঞ্যানের অধিকারী, আমি তাহার ভক্ষণ, ঘ্রান গ্রহন, দর্শন বন্ধ করিয়াছি এখন আমি তাহার "শ্রবন" কিভাবে বন্ধ করিবো ???
--------------------------------------------------------------------
সুরুজ আলীর আগের গল্পগুলো ....
২) সুরুজ আলী - লুকিং ফর “পটল” ইন দা শেক্সপীয়ার।
১) সুরুজ আলীর -- এ হালাল জার্নি উইত সুরুজ আলী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।