মায়ের যত্ন
গর্ভাবস্থা থেকেই মায়ের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ মায়ের সঠিক পুষ্টি ও যত্নের উপর নির্ভর করছে একটি সবল শিশুর জন্ম।
অনেকেই মনে করেন মা বেশি খেলে বাচ্চা বড় হবে। সেক্ষেত্রে জন্মের পর মায়ের সমস্যা হবে। তবে মায়ের জন্য মিনারেল, কাবোর্হাইড্রেটের মত ৬টি উপাদানের প্রয়োজন।
এই উপাদানগুলি যখন মায়ের শরীরে পরিমাণ মত থাকবে তখনই একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হবে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের খেয়াল রাখাটাও বেশ জরুরি। এই সময় একজন মাকে ভারী জিনিস তুলতে দেয়া যাবে না। স্বামীর সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সহানুভূতিশীল হতে হবে।
গর্ভাবস্থায় স্বামী স্ত্রীর মিলন হওয়া উচিত নয়।
বিশেষ করে থার্ড ত্রাইমেস্তারের (তৃতীয় স্তর) সময় একেবারেই নয়। নাহলে পানি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেটা মাকে করতে হবে, সেটা হল মা অবশ্যই তার দুধের বোঁটার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ বোঁটা যদি ভোতা থাকে তাহলে শিশুকে দুধ খাওয়াতে অসুবিধা হবে। সে জন্য বোঁটা টিপে টিপে ম্যাসাজ করে চোখা করতে হবে যাতে শিশু ঠিকমত দুধ পায়।
এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে বোঁটা ফেটে গেছে কি না। এজন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। নইলে শিশুকে জন্মের পরপর দুধ খাওয়াতে গেলে সমস্যা হতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী anti-natal চেকআপ করাতে হবে। বিভিন্ন ধরনের টিকা সময়মত নেওয়াটা মায়ের জন্য বিশেষভাবে জরুরি।
এছাড়া যদি লেবার পেইন বা প্রসব বেদনা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও না হয় তাইলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
শিশুর যত্ন
জন্মের পর পরই বাচ্চার গায়ের লেগে থাকা সাদা মত অংশগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। তার পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা ঠিক আছে কিনা, বা চোখের সমস্যা আছে কিনা খেয়াল করতে হবে।
অনেক সময় শিশুর খাদ্যনালী ঠিকমত তৈরি হয় না। ফলে মুখ থেকে ফেনা বের হয়।
তখন শিশুকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এই ব্যাপারগুলো সাধারণত ডাক্তাররাই খেয়াল করে থাকেন।
নবজাতককে কাপড় দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে রাখা উচিত। তবে গরমের সময় হালকা কাপড় পরিয়ে রাখা ভালো। খেয়াল রাখতে হবে ঘাম যাতে না হয়।
অনেক সময় ঘামের কারণে বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগে যায়।
বাচ্চাকে সবসময় বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় প্রথম দিকে শিশু দুধ পায় না। এ জন্য তিনদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বার বার টানতে দিতে হবে।
আর দুই দিক দিয়েই দুধ খেতে দিতে হবে। টানা এক দিকে খেতে থাকলে অন্যপাশের বুকটা ভারী হয়ে যাবে।
কোন কারণে যদি দুধ একপাশে জমতে থাকে তাহলে সেটা টিপে টিপে বের করে একটা বাটিতে করে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এরপর বাচ্চাটিকে ছোট চামচ দিয়ে খাওয়াতে হবে।
ফিডার বা বোতলে দুধ খাওয়ার অভ্যাস একদম করা যাবে না।
এই অভ্যাস হলে শিশু আর বুকের দুধ খেতে চাইবে না।
এভাবে টানা ৬ মাস শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। আর কিছু খাওয়ানো যাবে না। এমনকি পানিও না। ৬ মাস পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে ধীরে ধীরে অন্যান্য খাবার যেমন- ভাত, ডাল, সবজি, ডিম, মাংস, মাছ এসব খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।
সবসময় খেয়াল করতে হবে বাচ্চার মানসিক পরিবর্তনগুলো ঠিক মত হচ্ছে কিনা। যেমন ৫ থেকে ৬ মাস বয়সে বাচ্চা হাঁটার চেষ্টা করে। দেড় দুই বছর বয়সে কথা বলার চেষ্টা করে।
অনেক বাচ্চা আছে যারা দেরিতে কথা বলে। তখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
বাচ্চার ওজন ঠিকঠাক আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জন্মের সময় একটি সুস্থ বাচ্চার যে ওজন থাকে, ৬ মাস পরে তার ওজন হয় দ্বিগুণ। এক থেকে দেড় বছর বয়সে ওজন তিনগুণ বেড়ে যায়।
এছাড়া শিশুর টিকাগুলো সময়মত দেয়া হচ্ছে কিনা সেদিকও নজর রাখতে হবে। ছোটখাটো অসুখ যেমন বমি, পায়খানা, জ্বর এগুলো হলে ডাক্তারকে জানাতে হবে কিংবা নিয়ে যেতে হবে।
এরপর ডাক্তার শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে যে উপদেশগুলো দিবেন সেগুলো মেনে চলতে হবে।
শিশু জন্মের আগে ও পরে যদি এইসব দিকগুলো ঠিক মত খেয়াল করা হয় তাহলে আপনার শিশুটি অবশ্যই সুস্থ ও সবল থাকবে।
ছবি সৌজন্যে: অভিনেত্রী দীপা খন্দকার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।