কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
মিরপুর ১০ থেকে বিজয় সরণী ঘুরে মহাখালী ফ্লাইওভার হইয়া বনানী। এই হইল আমার প্রতিদিনের সমুদ্র ভ্রমণ। প্রতিদিন ঘুম হইতে উঠিয়াই সুমিষ্ট কালো ধোঁয়া, ডিস্কভারী বাসের জন্য গুণ গুণ করিয়া গান গাইতে গাইতে আধা ঘন্টা অপেক্ষমান থাকা, উহার ভেতরে আরামদায়ক ঠেলাঠেলি সবই আমাকে মুগ্ধ করে। বাংলাদেশে জন্মিয়াছি বলিয়া গর্বিত হই।
যথারীতি আজকে সকালেও একই সমুদ্র ভ্রমণ আর তাজা কালো ধোঁয়া গলাধঃকরণ করিয়া ভার্সিটি যাইতেছি। কালকে অনেক রাত পর্যন্ত সামু তে পদার্পণ করিয়াছি। অনেক কাহিনী ঘটাইলাম, অনেক কাহিনী পড়িলাম। প্রায় রাত ৪ টা পর্যন্ত ছিলাম নেটে। সকালে রওনা দেই সাড়ে ৬ টায়।
দু চোখ লাল। ঘুমে ঘুমে সময় প্রবাহিত হয় আর আমি আতকা জেগে উঠি, বনানী পিছে ফেলে আসি নাই তো !!!
সব সময় যেমনটা হয়, ফ্লাইওভারের শেষের দিকে ট্রাফিক জামে আটকালাম। খুব চেষ্টা করে যাইতেছি জাগিয়া থাকিতে, কী ক্লাস করব সেইটা ভাবিয়া হাল্কা একটু হাসিলাম। মনে মনেই। যতদূর জ্ঞাত হয়, মনে মনে হাসার উপর সরকার এখনো ট্যাক্স বসায় নি, যদিও নিশ্চিত না।
হঠাত দেখি, রাস্তার পাশের দেয়ালটার ওপাশে অনেকগুলো একতালা টিনের বাড়ির মতন যেখানে তাহার উপর অনেক বড় একটা বাঁশ দাড়া করানো। ঘটনা হইল, বাঁশের উপর তলায় পাকিস্তানের পতাকা পত পত করে উড়িতেছে। আমি হতভম্ব। এইটা আমি কোথায় আসিলাম!!
ভালো ভাবে, চোখটা কচলে নিয়া দেখি, যা দেখিতেছি তাই । সবুজ রঙ, বিলীন প্রায় চাঁদ, মাঝখানে তারা ।
বাচ্চাদের লেখা গল্পের মতন স্বপ্নে দেখিতেছি না তো !! নাহ, জাগিয়াই তো আছি। চারিদিকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ। তাহলে, আর কারও চোখে পড়িতেছে না কেন ??
ভাবিলাম, পাশের জনকে জিজ্ঞাসা করা উচিত। তাকিয়েই দেখি, আমার অজান্তেই আমার পাশের সিট দখলকারিণী এক সুনয়না অষ্টাদশী। মিষ্টি ঘ্রাণের উতস উনারই পারফিউম, সেটাও উদ্ঘাটন করিলাম।
ভাবলাম, হোক তিনি নারী সম্প্রদায়ের, তবুও এহেন পতাকার বিষয়ে তাহাকে বলা যেতেই পারে।
মিন মিন করিয়া হাল্কা গলা খাকারী দিয়া বলিলাম, ওপাশে ঐটা দেখছেন ??
উনি তাকাইলেন আমার দিকে। আমি কিঞ্চিত ভড়কাইয়া গেলাম। তাকানোটা খুব একটা বন্ধুত্বসুলভ যে ছিল না ,তা বলাই বাহুল্য। হাল্কা বোধহয় সন্দেহও উঁকি দিল তাহার চোঁখে।
উনি আবার দৃষ্টি ফিরাইয়া নিলেন।
উনি কি আমার কথা শুনিয়াছেন ? এইদিকে ট্রাফিক জাম ছাড়িবার আগেই আমার নিশ্চিত হইতে হইবে যে কী দেখিলাম। তাছাড়া আমি নিজেও ত জানি, কী পরিমান ঘুম আমার চোঁখ দখল করিয়া জাকিয়া বসিয়াছে।
বাধ্য হইয়াই আবারও সেই অষ্টাদশীকে ডাকিলাম, এক্সকিউজ মি, আমি যা দেখছি, আপনিও কি তাহাই দেখিতেছেন ??
উনি এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাইলেন। মুখে কৌতুহল, চোঁখে সন্দেহ আর ঠোঁটে বিদ্রুপ।
আজকের দিনে দ্বিতীয় বারের মত আমি ভড়কাইয়া গেলাম। তাও প্রবল ভাবে। হঠাত মনে উদয় হল, ইনি তাতিয়ানা নন তো !! আমি কিঞ্চিত চিন্তায় পড়িয়া যাই।
আমার এই চিন্তায় বাঁধা হইয়া দাঁড়ায় উনার পরবর্তী বক্তব্য ।
“মেয়ে দেখলেই ফাজলেমী করেন ?? আপনি কোথাকার কে এসেছেন যে, আপনি যা দেখেছেন আমাকেও তা দেখতে হবে ? মজা নেন এখানে ? বাসের মদ্ধ্যে আপনার মত মানুষ থাকে বলেই মেয়েরা উঠতে চায় না।
টিকিট কেঁটে এমন অভদ্র মানুষ রা বাসে উঠে ? একবার কি যেন বললেন, পাত্তা দেই নি। আবার বেহায়ার মতন ডাকেন !! ঘটনা কী আপনার ? সমস্যা কী ?”
আরে, ইনিই তো বোধহয় তাতিয়ানা ।
পাকিস্তানের পতাকা, আবার তাতিয়ানা কে সামনে পাওয়া, ক্লাসে দেরী হইয়া যাইবার সমূহ সম্ভাবনা, বাসের লোকজনের হাতে গণ ধোলাই খাইবার ভয় আর সর্বোপরি ঘুমের চাপ । সব কিছু মিলিয়া আমার সিঙ্গেল কোর প্রসেসর ক্ষমতা সম্পন্ন ব্রেইন পীড়াদায়ক হইয়া উঠিতে লাগল। আতঙ্কিত হইয়া গেলাম।
সামনের সিটে থেকে এক লোক ঘুরে তাকাইলেন। ভদ্র আর সৌম্য চেহারা। আমাকে দেখে বলিলান, হচ্ছেটা কী এইসব ? কমন সেন্সের বড্ড অভাব। দেখে তো তোমাকে ভদ্র ছেলেই মনে হয়, কিন্তু স্বভাবের এই আবস্থা কেন ? কমন সেন্স এত কম কেন ?
আরও ভড়কে গেলাম। এটা নাফিস ভাই না তো ? আমি সেই মুহুর্তে পুরাই কনফিউজড, মানে বিচলিত।
মাথার ভিতর প্রসেসর গরম হইয়া গিয়াছে ।
তাতিয়ানা(ধরি) আবার হুঙ্কার করে বিচার দিলেন, "উনি আমার সাথে ফাজলেমি করিতেছেন। উনি আমাকে কী সব দেখাইতে চান। " নাফিস ভাই (ধরি) অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন। বলিলেন, "দেশে ভদ্র কেহ নাই।
কী ভাই, কী দেখাইতে চান ?"
অতক্ষণে লজ্জায় আমার ঘুম শশুর বাড়ি গমন করিয়াছে।
আমি অস্ফুটে বলিলাম, "নাহ সামনে দেখা যাইতেছে পাকিস্তানের পতাকা। তাই ভাবিলাম, সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা আমার নাগরিক কর্তব্য। " পেছন থেকে, এক অলস ছেলে, কী যেন কটুক্তি করিল। যাহার যা স্বভাব, কী আর বলা যায়।
অলসেরা তো এমনই।
এর মাঝে ভিড় বাড়িয়া গিয়াছে। এক বিজ্ঞ ব্যাক্তির আগমন। উনার জামার বুক পকেটে ভাঙ্গা একটা পেন্সিল। উনি বলিলান, আসলেই তো।
তবুও থাক, জানালা যখন আপনার পাশে, আপনাদের ব্যাপার আপনারাই বুঝেন।
এমন সময়, পেছন থেকে সেই অলস ছেলে বলিল, "আ মর জ্বালা। ওইখানে কোন এক পীর বাবার নামে মাদ্রাসা করা হইতেছে। ওই গরীব মানুষেরা ত এইখান কার কলেজে পড়িতে পারেনা, তারা ওই খানে পড়িবে। "
আমি কহিলাম,
"তো ? পাকিস্তানের পতাকা কেন?"
উত্তর আসিল,"আরে, ঐটাইতো ইসলামের প্রতীক।
আপনি কী ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানেন না ?"
সেই অলস ছেলের কথা শুনিয়া আমি অন্তত চুপ হইয়া গেলাম। বাকীদের কথা জানি না।
(বানান ভুলের ধৃষ্টতা ক্ষমা করিবেন। আরও বাকী যা যা ভুল আছে তাও । )
(কমেডি যে করেছি সেটা সবাই বুঝছেন আশা করি।
কিন্তু, ঘটনার মূল টা সত্য। মানে, আজকে আমি দেখলাম পুরা পাকিস্তানের পতাকার মতই একটা সবুজ জমিনে সাদা চাঁদ তারার পতাকা, এটা সত্য যে তাদের উপর ৩ টা তারা ছিল। পাকিস্তানের তারার পজিশনে একটা, আর বাকি ২ টা ছোট ছোট। ওগুলো অল্প একটু উপরে দেয়া। এই পতাকা শুধু এখানেই না, আগারগাঁও তেও আমি দেখেছি।
আমি অবাক হই। আজকে এক লোক কে জিজ্ঞাসা করলাম। উনি বললেন, পীরেরা মনে করে চাঁদ তারা বোধহয় ইসলামের প্রতীক। আর, সেখানকার মাদ্রাসায় এলাকার গরীব যে শিশুরা পড়তে আসে তাদেরও একই জিনিস বোঝানো হয়। এই সমস্যার সমাধান কী হবে আমি জানি না।
ইসলাম সম্পর্কে এ ধরণের ভ্রান্ত ধারণা আমাদের পরিহার করা উচিত।
আর আশা করি, ব্লগের হাস্যরস টাকে ব্যক্তিগত ভাবে নিবে এমন কোন শত্রু আমার নাই। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।