শান্তিবাদ
গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় “তালাক বললেই হিল্লা বিয়ে, নয়তো গ্রামছাড়া” শীর্ষক বীভৎস সংবাদ প্রতিবেদনটি পড়ে দেহ-মন আরশ কেঁপে ওঠল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে রাগের মাথায় তালাক শব্দ উচ্চারণ করলেই ওই দম্পতির ওপর নেমে আসছে হিল্লা বিয়ের ফতোয়া। হিল্লা বিয়েতে রাজি না হলে করা হচ্ছে সমাজচ্যুত। একাধিক দম্পতিকে গ্রামও ছাড়তে হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘একতাবদ্ধ সমাজ’ নামে একটি সংগঠন তাদের প্রণীত ফতোয়া মান্য করতে গ্রামবাসীকে বাধ্য করছে।
সর্বশেষ শরিয়তি সংগঠন ‘একতাবদ্ধ সমাজ’ কর্তৃক জারীকৃত হিল্লা বিয়ের ফতোয়া না মানায় গ্রামের আখতার হোসেন ও ঝরনা বেগম নামের দম্পতিকে একঘরে করে রেখেছে। (বিস্তারিত তথ্যসূত্র: Click This Link)
মুহূর্তের মধ্যেই এক-দুই-তিন তালাক, বাইন তালাক, হয়ে গেল বিবি তালাক। ঘণ্টার মধ্যেই হিল্লা অতঃপর একটি অশ্লীল রাতের পরেই পুনঃ বিয়ে প্রথা মূলত: কুরআনের চরম অবমাননা করে আসছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন, লা... হালিম। [২: বাকারা-২২৫] অর্থ: তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদের দায়ী করবেন না।
কিন্তু তিনি তোমাদের বাস্তবিক শপথের জন্য দায়ী করবেন...।
অর্থাৎ যে কথা বা শপথের মৌখিক ব্যতীত বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই, অর্থহীন শপথ বলতে উহাই বুঝায়। অর্থাৎ হাসি-ঠাট্টা, রং-তামাশা বা রাগের বশবর্তী হয়ে যে কোনো শপথ বা শতবার ‘তালাক’ ঘোষণা করলেও অতঃপর উভয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সংসার করতে থাকাই ‘অর্থহীন’ শপথ।
কিন্তু শরিয়ত হাসি-ঠাট্টা, রং-তামাশা বা রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক এর ‘অর্থহীন’ শপথকে আল্লাহ-নবীর কোরান বিরুদ্ধ ফতোয়া জারির মাধ্যমে কত লক্ষ-কোটি পবিত্র সংসার ধ্বংস করেছে! শরিয়তের তেঁতুল গ্রাসে এভাবে কত জন মান-সম্মান হারিয়েছে তার হিসাব কে-ই বা রেখেছে! কত অবলা স্ত্রী চোখের জলে আল্লার আরশ ভিজিয়েছে, কত নারী মনের দুঃখে আত্মহত্যা করেছে, কেউ-বা অসহায় শিশুসন্তান নিয়ে রাস্তায় নেমেছে, পথে-ঘাটে লাঞ্ছিত হয়েছে; তার হিসাব শরিয়ত রাখেনি। শরিয়ত যুগের পর যুগ ধরে এভাবে ইছলামের শিকড় উৎপাটনে রত রয়েছে।
প্রচলিত ফতোয়া বলতে এমন ঘোষণা বুঝায় যা কুরআনে নেই, কথিত হাদিছ, ফেকহা ইত্যাদিতে নেই, অর্থাৎ শতভাগ কোরান-বহির্ভূত এবং কোরান বিরুদ্ধ। অতএব ফতোয়ার মূল অর্থ দাঁড়ায়: ব্যক্তি ও দলের চাপিয়ে দেয়া বিধান। কুরআনের সামনে ব্যক্তি ও দলের স্ব রচিত আইন সরাসরি কোরান তথা রাছুলের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। কেননা, কুরআন বারবার ঘোষণা করে, ‘কুরআন পূর্ণ, স্বয়ং সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ জীবনবিধান; সহজ, সরলভাবে বিশদ ব্যাখ্যা-তফসীরসহ অবতীর্ণ করা হয়েছে; যাতে মানুষ সহজে বুঝতে পারে।
শরিয়ত হাদিছ-ফতোয়া ডিঙিয়ে কুরআনের কাছে যাওয়া যায়েজ মনে করে না! আজ ১৪শ বছর যাবৎ আল্লাহর কুরআনের বিরুদ্ধে মানব সমাজে কঠিন শিকড় গেড়েছে মনুষ্য রচিত লক্ষ লক্ষ উপ-বিধান সম্বলিত অজস্র কেতাব সম্ভার।
এদের সম্বন্ধে আল্লাহ-রাছুলের হুশিয়ারি:
ফাওইলুল্লিল্লাজীনা...ইয়াকছিবুন। [২: বাকরা-৭৯] অর্থ: সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে, ‘ইহা আল্লাহর তরফ থেকে’ তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি তাদের।
সুতরাং হিল্লা বিয়েসহ শরিয়তের চাঁপিয়ে দেয়া মনুষ্যরচিত হাদিছ, ফেকহা, এজমা, কেয়াস, ফতোয়া এবং ফতোয়া সংক্রান্ত ধর্মের নামে সকল গ্রন্থাদি পরিহারপূর্বক সত্যমিথ্যা সনাক্তকারী একমাত্র কুরআনিকভাবেই সমাধান করা উচিত। আর কুরআনিক বিষয়ে সমাধানের জন্য ম. জামিলুল বাসার (ফতোয়া বিষয়ক বিস্তারিত প্রতিবেদন: Click This Link. এবং
তালাক বিষয়ক বিস্তারিত প্রতিবেদন: Click This Link.) এর সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
বিনীত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।