আমি সত্য জানতে চাই
(জন্ম : ৩ জুলাই ১৯৩৯ মৃত্যু : ২৮ মে ২০০৮)
ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান কবি ও কথাশিল্পী খালেদা এদিব চৌধুরী। সাহিত্যকর্মের অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এছাড়াও কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, (১৯৮৮) আলাওল সাহিত্য পুরস্কার,( ১৯৮৯), কবি জসিম উদ্দিন সাহিত্য পুরস্কার, (১৯৮৯),বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, (১৯৯১), সহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০০৮ সালের আজকের দিনে (২৮ মে) মৃত্যুবরণ করেন সদালাপী এই কবি। মৃত্যুদিনে কবিকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
খালেদা এদিব চৌধুরী ১৯৩৯ সালের ৩রা জুলাই জন্মগ্রহন করেন কুমিল্লা জেলার পয়ালগাছা গ্রামের জমিদার চৌধুরী পরিবারে। তাঁর পিতার নাম আনোয়ারুল হক। ১৯৫৮ সালে তিনি টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজ থেকে স্নাতক, পরে শিক্ষায় স্নাতক লাভ করেন ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেক এবং ১৯৭১সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকত্তোর করেছেন। প্রথম জীবনে তিনি শিক্ষকতা করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। একটা সময় এসে তিনি তথ্য মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি দীর্ঘকাল সম্পাদনা করেন কিশোর পত্রিকা নবারুন। এছাড়াও তিনি মননশীল সাহিত্য পত্রিকা ’অতলান্তিক’ সম্পাদনা করেন। ১৯৭৩ সালে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কবিতা,গল্প,উপন্যাস,শিশু সাহিত্যসহ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪৩টি। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ
গল্পঃ ১।
জনমনিষ্যির গল্প (১৯৮২), ২। পোড়া মাটির গন্ধ, (১৯৮৫), ৩। অন্য এক নির্বাসন, (১৯৭৬)
কিশোর গল্পঃ ১। অন্তর বন্ধু, (১৯৮১), ২। বুবুর জন্য সারা দুপুর, (১৯৮৩),
মু্ক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্বঃ ১।
সেই পাখি নেই, (১৯৯৬), ২। শীতের দিন রাত্রি, (১৯৮৭)
কিশোর উপন্যাসঃ ১। অরণ্যের ক্যানভাস, (১৯৮৫), ২। তোমার পতাকা যারে দাও,( ১৯৮৮)
কিশোর অনুবাদঃ ১। স্পার্টাকাস (১৯৯৬), ২।
জীম করবেট ও মানুষ খেকো চিতা (১৯৯২), ৩। মা, (১৯৯১), ৪। জীবনানন্দ দাশঃ 'ঝরাপালক' এর কবি, (১৯৯৬)
উপন্যাসঃ ১। অনন্ত মধ্যাহ্ন রাত, ১৯৮০), ২। হে প্রেম হে সময়, (১৯৯৭),
কবিতাঃ ১।
আমার দাহ আমার হাত, (১৯৭৮), ২। পান্থ তোমার ভালবাসা, (১৯৮৩), ৩। পাথরের আগুন, (১৯৮৫), ৪। তোমার অনঙ্গ, (১৯৮৬), ৫। দুহাতে আঁধার কেটে, (১৯৯৩), ৬।
হে বাঁধন লতার কাঁদন, (১৯৯৫), ৭। দুঁফোটা চোখের জল, (১৯৯৭),
কবিতা প্রেমীদের জন্য খালেদা এদিব চৌধুরী'র দু'টি কবিতা
সময় অনন্ত
এখন আমরা দুজনে প্রচ- প্রতিকূলে দগ্ধ হচ্ছি
আমাদের সময় নেই-অসময়ও নেই-
নগরীর দুয়ারে দাঁড়িয়ে একবারও স্বজন তাকায় না ফিরে
নিরুদ্দেশের পথে উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে
তোলপাড় হয়ে যাচ্ছি দুজনেই অবিরাম।
কেউ ডাকে না, তাকায় না পেছনে,
কেবল দগ্ধ হয় মাটি-এই মন, বসতবাড়ি
পুড়ে যায় মনের ভেতর অজানা আশঙ্কায়,
আমরা দুজনেই দূরত্বের পাহাড় ভেঙে ভেঙে
রোদন ও স্বপ্নের মধ্যে স্থির হয়ে আছি;
যেন রুদ্র ভালোবাসার জাল বুনতে বুনতে
হারিয়ে যাই এক কঠিন পথে-প্রান্তরে।
এখন দুজনের মধ্যভাগের সময়টুকুই একমাত্র সম্বল
এখন আমরা নীল প্রহরের যাত্রী
এক সুদূর ও অজানা সড়কে আমাদের নির্বাসন।
আমরা একবারও ডাকবো না কাউকে,
একবারও বলবো না-অনন্ত, তোমাকে কীভাবে
প্রচ- প্রতিরোধে আবিষ্কার করবো!
পুড়ে পুড়ে খাক্ হয়ে যাবো প্রতিশ্রুতির আগুনে?
মহাকালের ধ্বনি
খালেদা এদিব চৌধুরী
কিছু মনে থাকবে না জানি
শেষ হয়ে যাবে সব
আকাশে মিলিয়ে যাবে বিকেলের রোদ
এই এক-জীবনের ঋণে বাঁধা আছে কত প্রেম
বিনা আয়োজনে শেষ হয়ে যাবে দিন
বাসরের চির অহঙ্কার৷
তোমাকে বলতে বলতেই ছিঁড়ে যাবে বাঁধনের তার
তোমারও মনে হয় কোনো ঠাণ্ডা হাত স্পর্শ করবে না বাকি এ জীবনে
ভালবাসা ভুল হয়ে যাবে
পুরোনো জীবন ভুল হয়ে যায় যেইভাবে৷
একটি ছুটির ভোর তাড়া করে ফেরে এখনও
এখনও কামিনীর ডালে ফোটে ফুল
টুংটাং শব্দ ভেসে আসে
আমাকে ইথারে স্পর্শ করে কোনো স্বর
আমাকেও বুঝি ভুলে যেতে হয় সুগভীর আলিঙ্গন,
মুখ ফেরায় চঞ্চলা সুখ
অশ্রুগুলো স্পর্শ করে সর্বনাশা দিন
এসব কিছুই রইল না, কিছু থাকবে না ব্রত
তোমাকে বলতে বলতেই আগামিকালের ঘণ্টা বাজে
ছুটির সকাল মুখ টিপে হাসে,
স্রোতের মতোন বয়ে যায় দিন
জীবনও চলে যায় এইভাবে
মহাকাল শুধু পড়ে থাকে ভালবাসারই অভিশাপে৷
২০০৮ সালের ২৮ মে এই সদালাপী কবি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ক্যান্সার রোগে ভূগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি একমাত্র পুত্র প্রকৌশলী তানভিরুল হক প্রবাল, দুই কন্যা সংগীত শিল্পী সুমনা হক ও সংগীতা খান এবং অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
মৃত্যুদিনে কবিকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।