আপনাকে স্বাগতম! দেশীয় মাধ্যমগুলো ছাড়া প্রজন্ম চত্বরের যুব বিপ্লবের খবরগুলো এখন পর্যন্ত ভালো কোন কাভারেজ পাচ্ছে না বিবিসি বা ভিওএ’তে। যোদ্ধাপরাধের বিচার নিয়েও এদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এর কারণ খুবই সোজা, পশ্চিমা শাসকেরা খুব ভালো বন্ধু ছিলো না বাংলাদেশ-এর মুক্তিযুদ্ধকালে।
“ঢাকার শাহবাগে একাত্তরের চেতনা জেগে ওঠেছে” শিরোনামে সিএনএন-এর অনলাইন সংস্করণে গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে বেশ পরিপূর্ণ একটি নিউজ এসেছে। চমৎকার কিছু ছবিও এসেছে।
ছয়টি ভাগে বেশকিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে আন্তর্জাতিক পাঠকদের জন্য।
=======================
১) প্রথম ভাগে, ভূমিকা অংশে, আয়োজকদের তথ্য আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে ‘ব্লগার এন্ড অনলাইন একটিভিস্ট’ -এর উদ্যোগের কথা এবং কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়ার দাবির কথা। “চারটি দশক ধরে আমরা শান্ত ছিলাম এই আশায় যে, যোদ্ধাপরাধীদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের এ রায় আমরা গ্রহণ করতে পারি না।
কাদের মোল্লা জন্য ফাঁসির রায় না আসা পর্যন্ত আমরা শাহবাদ স্কয়ার ছাড়ছি না। ” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শোয়েবের কথা উদ্ধৃত করা হয় নিউজটিতে।
২) দ্বিতীয় ভাগটির শিরোনাম “ব্যাপক অংশগ্রহণ”।
সকল ধর্মের, সকল পেশার, সকল শ্রেণীর নারীপুরুষে শাহবাগ স্কয়ার এখন পরিপূর্ণ। বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সকল বয়সের মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী রোমানা আহমেদ বললেন: “আমি রাজনীতিতে মোটেই আগ্রহী নই। কিন্তু আমি জানি একাত্তরে এদেশে কী হয়েছিলো। যোদ্ধাপরাধীরা আমাদেরকে কী নির্যাতন করেছে সেটা আমি জানি। আমরা তাদেরকে বাঁচতে দিতে পারি না। যেখানে থাকুক তাদেরকে মরতে হবে।
”
“হত্যার শাস্তি যদি মৃতুদণ্ড হয়, তাহলে ৩ শতাধিক হত্যায় জড়িত থাকার পরও কীভাবে একজন অপরাধী কেবল যাবজ্জীবন শাস্তি পায়?” আরেকজন শিক্ষার্থীর প্রশ্ন।
৩) তৃতীয় ভাগটির নাম “প্রজন্ম চত্বর”।
ইন্টারনেটে অনেকেই জায়গাটির নাম ‘প্রজন্ম চত্বর’ বলছে, ইংরেজিতে যা হয় ‘জেনারেশন স্কয়ার’।
এর মানে হলো, আন্দোলনটি আয়োজিত হয়েছে তরুনদের আহ্বানে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা সেখানে জড়ো হয়েছেন, তারা জানালেন যে, একাত্তরে তারা একই চেতনায় একত্রিত হয়েছিলেন।
“যুব সম্প্রদায় একত্রিত হলে সবই সম্ভব। আজ তারা একত্রিত হয়েছে। ”
৪) চতুর্থ অংশটির নাম “কর্তৃপক্ষের সমর্থন”।
সরকারের কর্তাব্যক্তিরা জানালেন যে, তারা নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করবেন। কিন্তু শাহবাগ চত্বরের আন্দোলনের ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ।
কিছু কিছু সরকার দলীয় নেতানেত্রী শাহবাগে গিয়ে তাদের সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বললেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আয়োজিত গণআদালতে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ” নিরাপত্তার জন্য শত শত আইনপ্রয়োগকারীকে নিয়োগ করা হয়েছে।
৫) পঞ্চম অংশটির নাম “মহাসমাবেশ”
৮ ফেব্রুয়ারিতে এক মহা সমাবেশের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
তারা সকল শ্রেণী এবং সকল পেশাজীবিদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন। তবে কোন দলীয় ব্যানার বহন করা যাবে না। সমগ্র দেশে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে শাহবাগের আন্দোলনটি ব্লগারদের দ্বারা আহূত।
৬) ষষ্ঠ এবং শেষ অংশটির নাম “আরেকটি তাহরীর স্কয়ার?”
কিছু কিছু ব্লগার একে আরেকটি তাহরীর স্কয়ারের সাথে মিলিয়েছেন।
তাহরীর স্কয়ারের আন্দোলন ছিলো সরকারের বিরুদ্ধে, কিন্তু এখানে আন্দোলনকারীরা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। যোদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড ছাড়া তারা আর কিছুই চাচ্ছে না। সামহোয়ার ইন ব্লগে একজন ব্লগার লিখেছেন, “তাহরীর স্কয়ার শুধুই একটি অনুপ্রেরণা। জনগণ চাইলেই যে পারে, ওটা ছিলো একটি দৃষ্টান্ত। আন্দোলনের উদ্দেশ্য এক না হলেও, একই রকমভাবে আমরা জনগণকে উৎসাহিত করতে পারি।
”
তবে সকলেই “তাহরীর স্কয়ার” নামে একমত নন। ব্লগার আলম চৌধুরী বললেন, “এটি তাহরীর স্কয়ার নয়। এটি হলো বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে মেডিকেল কলেজের চত্বর। অন্য দেশ থেকে দৃষ্টান্ত আনার প্রয়োজন নেই, যেখানে আমাদের নিজেদেরই তা আছে। ”
আন্দোলনটি চতুর্থ দিনে গড়ানোর সাথে সাথে ‘প্রজন্ম চত্তরে’ মানুষের অংশগ্রহণ আরও বেড়েই চলেছে।
এ যেন একাত্তরের ফিরে আসা চেতনা।
===============================
*শুধু গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর মূলবক্তব্য দেওয়া হলো, সহযোদ্ধা ভাইবোনদের জন্য। জয় বাংলা! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।