আমি লিখি মানুষের কথা,মানুষ পড়ে না। তারা হাসে। তাদের হাসির জন্যে আমি লিখি 'সবকিছু হাসির বিষয় নয়' তারা হাসে না! তবু আমি লিখব।
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেল রফিকের। কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে।
নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখলো, স্বপ্ন নয়, জেগেই আছে সে।
রাবেয়ার পিঠে ঠেলা মেরে বললো--এই শুনছো?
--হুঁ।
বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো রাবেয়া।
রফিকের বুকে ভয়ের ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে। সে বললো--এই বাড়িতে চোর ঢুকেছে, শুনছো না কেমন ফিসফিস করে কথা বলছে।
--আ মলো যা, ফিসফিস করে ও-ঘরে কথা বলছে, তোমার মেয়ে।
--আঁ, শিরিন ফিসফিস করে কথা বলছে, ঘুমের ঘোরে কথা বলছে, জিন-ভুতের আসর হলো নাকি গো? এ-তো ভাল কথা নয়, কালই একবার
মোলবিসাহেবের কাছে যেতে হবে।
--আচ্ছা হাঁদা লোকরে বাবা, নিজেও ঘুমাবে না, আমাকেও শান্তিতে ঘুমাতে দিবে না।
বলে আবার পাশ ফিরলো রাবেয়া।
--কেন আমি আবার কি করলাম? মেয়েটার জন্যে চিন্তা হয় যে।
--মেয়ের জন্যে আর তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, ও জেগে আছে, মোবাইলে হবু-জামাইয়ের সাথে কথা বলছে।
--তা-ই বলো, আমি ভাবছি, মেয়ে আমার কার না কার সাথে কথা বলছে।
শিরিনের রাতের আলাপচারিতায় ক্রমাগত অভ্যস্ত হয়ে পড়ে রফিক।
বিয়ের দিন স্থির হয়ে আছে। ৫ই চৈত্র সে চলে যাবে পরের ঘরে।
পাত্রের নাম সাহেদ। বীমা কোম্পানির এজেন্ট। চটপটে ছেলে। ওর হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
শিরিনের বিয়ের জন্যে অনেক প্রস্তাব এসেছিল।
দাবী-দাওয়ার কারণে সেইসব প্রস্তাবগুলো সমন্ধ হয়ে ওঠেনি। সে হিসেবে সাহেদের বাবা
ফকির মিরজাকে ভালমানুষ বলতে হয়।
নামে ফকির কিন্তু বিষয়-সম্পত্তির হিসাবে তাঁকে পলাশপুরের বাদশা-ই বলতে হয়। একশো বিঘা জমি, বিশাল তিনতলা বাড়ি, ট্রাকটর, বড়-বড়
পুকুর, ধানের হামার, খড়ের পোয়াল, ধান-গম-সর্ষে পেষার কল, আইসক্রিম মিল, সব মিলিয়ে যেন রাজত্ব একখানা।
সেই লোক কিনা শিরিনকে দেখেই বললো--মেয়ে পছন্দ হয়েছে, বিনে পয়সায় আপনার মেয়েকে ঘরে নিয়ে যাব আমি।
দিন ঠিক করুন।
নতুন মোবাইল সেট মেয়ের হাতে দিয়ে আশীরবাদ করে গেলেন তিনি।
সেই মোবাইল-ই এখন মেয়ের সাথে হবু জামাইয়ের যোগাযোগের মাধ্যম। মাঝরাতে কথা হয়।
কত রকমের আলাপ।
রফিকের ঘুম ভাঙে। কখনও কানে বালিশ চাপা দেয়। কখনও-বা কানখাড়া করে শোনে--তোমার বাবার মতো ধনী না হলেও
আমার বাবা ভালমানুষ।
মনে-মনে হাসে রফিক। যাক সততার তবে দাম আছে।
নইলে সুন্দরী মেয়ে তো কতজনের আছে কিন্তু ফকির-সাহেব তাঁর মেয়েকেই নির্বাচন
করলেন কেন?
বিয়ের দিন যতো ঘনিয়ে আসে রফিকের ব্যস্ততা ততো বাড়ে। জমি বিক্রির জন্যে খদ্দের খোঁজে। দরদদরি করে। যতই হোক বিনে পয়সার বিয়ে,
বরযাত্রীদের খাতির না করলে মান থাকে না। শ-খানেক বরযাত্রী মানে ত্রিশ হাজারের ধাক্কা।
তার উপরে খালি হাতে জামাই নামানো নিতান্ত
ছোটলোকী। আংটি কিম্বা সোনার চেন এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে দু-বিঘে জমির ধাক্কা। তা যাক, মেয়েটা তো সুখে থাকবে।
রফিকের সুখের স্বপ্নে হানা দিলো একটা খবরের উড়ো চিল।
অবিশ্বাসী রফিক রোদে পুড়ে ছুটে গেল তিন মাইল। বললো--কি খবর বেয়াই-সাহেব এসব কি শুনছি? ফোনও তুলছেন না?
ফকিরের কথা মনের দগ্ধানি কমালো না বিন্দুমাত্র। গম্ভীর গলায় তিনি বললেন--যা শুনেছেন ঠিকই শুনেছেন, আপনি অন্য বর খুঁজুন।
--আমার অপরাধ?
--আপনার কোন অপরাধ নাই, তবে আপনার গুণবতী মেয়ে আমাদের বংশ পরিচয় নিয়ে কথা তুলেছে। তাই আমার ছেলে বেঁকে বসেছে।
কিছুতেই
তাকে সোজা করা যাবে না।
ফের তিন-মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরে এলো রফিক। শিরিন শরবত নিয়ে এলো। রফিক বললো--আমার প্রশ্নের উত্তর না পেলে আমি পানিও স্পর্শ
করবো না।
মেয়ে মেঝেয় দৃষ্টি রেখে বললো--কি প্রশ্ন?
--তুই ওদের জাত-বংশ নিয়ে কথা বললি কেন?
--আমি ঠিক জাত তুলে কিছু বলিনি, তোমাদের হবু-জামাই রোজ রাতে বলতো, বিয়ের পর তোমার আব্বাকে বলো একটা বাইক কিনে দিতে।
কোন দিন বলতো, আংটি আর চেন দুটোই যেন মজবুত হয়। কোনদিন আবার বলতো, জমিজমা সব তোমার নামে লেখে রেখেছে তো তোমার
বাবা, যতই হও না কেন, বাবা-মায়ের এক মেয়ে, মানুষকে বিশ্বাস নেই। বিয়ের পরেই তোমার বাবা-মাকে আমি রেজস্ট্রি-অফিস নিয়ে যাব।
আমি সেদিন না থাকতে পেরে বলেছি, তোমরা কি ভিখারী নাকি?
মেয়ের হাত থেকে শরবতের গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো রফিক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।