আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তরিত - ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া - সাউথ সুদান

কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্‌ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ
আজকে প্রথম বারের মত অন্য প্রদেশে যাব। আমাদের গন্তব্য ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া প্রদেশের রাজধানী তরিত, তরিত শহরটা ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া প্রদেশের তরিত কাউন্টির মধ্যে, এই প্রদেশের কাউন্টির সংখ্যা আটটি, তরিতকাউন্টির পায়াম ছয়টি।

প্রথমে প্রদেশ, তারপর কাউন্টি এবং পায়াম এরপরও ভাগ আছে ওটাকে বোম বলে। জুবা থেকে বাসে করে তরিত যাওয়া যায়। লাল মারামের রাস্তা। পাকা রাস্তাও আছে কিছু জায়গাতে। আমাদের বাহন হেলিকপ্টার, জুবা - তরিত ফ্লাইট টাইম ৪০ মিনিট।

জুবা থেকে টেক অফের পর শহরটা একটু ভাল করে দেখলাম, আস্তে আস্তে শহরটা উন্নত হচ্ছে। এখনো টিনের ঘর ও টুকুলের ছড়াছড়ি, নতুন হোটেল ও অট্টালিকা কিছু দেখা যায়। নীল নদের পাড় ধরে জুবা ব্রিজ পার হয়ে, জুবা –তরিত রোডের সমান্তরালে আমাদের হেলিকপ্টার উড়ে চলল। জুবা শহর এলাকা ছাড়ার পর ভু প্রকৃতি একদম একরকমের । লম্বা ঘাস, মাঝে মাঝে একলা একটা দুটো ঝোপ গাছ, মাঝে মাঝে একটু ঘন গাছের জঙ্গল, মাঝে মাঝে বেশ তালগাছও দেখা যায়।

পাথরের পাহাড় আছে , এই পাহাড় গুলো তে বড় গাছ ও ঘাস আছে, ন্যাড়া পাথরও দেখা যায় মাঝে মাঝে। নীচে সবুজের মেলা, সবুজের পাশে মাঝে মাঝে লাল মাটির দেখা মেলে। সেখানে একটুখানি এলাকা নিয়ে গ্রামের মত, কয়েকটা টুকুল এবং এর কাছেই পানির উৎস আছে। গাছের লাইন দেখা গেলে বুঝতে হবে রাস্তা চলে গেছে গ্রামের দিকে, এগুলো মুলত পায়ে চলা পথ। বিশাল এলাকা জনমানব শূন্য ।

এত অনাবাদী সবুজ জমি একমাত্র এদেশেই দেখা সম্ভব। ছোট নদীও এঁকে বেঁকে বয়ে যাচ্ছে এর মধ্যে দিয়ে। নদীর পাড়ে কিছু জন বসতি আছে মাঝে মাঝে। আকাশ পরিস্কার , মাঝে মাঝে হাল্কা সাদা মেঘ, আমরা উড়ে চলছি। নীচে লাল মারামের রাস্তা বেশ প্রশস্ত , গাড়ি ঘোড়া তেমন নেই।

রাস্তা তরিত ও নিমুলের দিকে চলে গেছে দুভাগ হয়ে। নিমুলে উগান্ডা বর্ডারের পাশের শহর । এখান দিয়ে সাউথ সুদানে উগান্ডা থেকে মালপত্র ঢুকে। এই আমদানিকরা জিনিষ দিয়ে জুবা শহর এবং সমস্ত দেশ চলছে। তরিত ছোট শহর, ঘরবাড়ি এখানেও একতাল , টিনের এবং টুকুল।

ইদানিং কিছু উঁচু বাড়িঘর হচ্ছে। হেলিপ্যাড মারাম দিয়ে বানানো। বিমান বন্দর নেই। কাজকর্ম শেষ করে একটু শহর দেখেতে বের হলাম। রুয়ান্ডার ভিন সেন্ট ছিলো আমার সাথে।

তরিত স্বাধীনতা স্কোয়ার নাম্লাম , কয়েকটা ছবি তুললাম। তারপর রাউন্ড এবাউট ঘুরে আবার ফিরে এলাম। শহরে যাওয়ার রাস্তা ভাল না, অনেক খানা খন্দ আছে। শহরও তেমন উন্নত না। আরেক বার আসতে হবে এখানে।

এখানেও পাহাড় ও তৃণভূমি রয়েছে। কিছু ছবি তুললাম। তরিতে নতুন স্কুল বানানো হচ্ছে দেখলাম। অনেক ছোট ছোট বাচ্চা। রাস্তার দুইপাশ এখনো কারো দখলে নেই।

কিছু দোকান পাট রয়েছে রাস্তা থেকে একটু দূরে। ইথিওপিয়ার মবিগেতা একবার ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়ার রাজধানী তরিত আটকে গিয়েছিল, থাকার কোন প্রস্তুতি না থাকায় জুবাতে ফেরার জন্য লোকাল মাইক্রো বাসে উঠে বসলো । এগুলো নিয়মিত এই পথে চলাচল করে। উঠার পর সে বুঝতে পারল যে কাজটা ঠিক হয়নি। ততক্ষণে বাস ছেড়ে দিয়েছে।

রাস্তা কাঁচা, খানাখন্দে ভরা, তার মাঝে ড্রাইভার পাগলের মত চালাচ্ছে। জান হাতে নিয়ে সে বসে আছে। এপথে মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে, মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক। যেহেতু ফেরার পথ নেয় তাই সে ঘাপটি মেরে বসে রইল। পথে কিছুক্ষণ যাত্রা বিরতি।

সেখানে একটা ছোট দোকানে ঢুকে কড়া পাঁকের দু গ্লাস মদ মেরে দিল। কিছুক্ষণ পর সে ঘুমিয়ে গেল, তাই কিছুই বুঝতে পারে না পথে কি হল। জুবাতে এসে হেল্পার তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়ে বলল এখন নেমে পড়। ঘুম চলে আসাতে শান্তিমত ভ্রমন শেষ করতে পেরেছিল। দুপুরে মজার লাঞ্চ করলাম চিকেন দিয়ে।

সাথে ছিল ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও ভাত । পরে জুস ও ফল খেলাম। সময়টা ভালভাবে কেটে গেলো। ২ টার সময় হেলিকপ্টার চলে এলো , কিছুক্ষণের মধ্যে বোর্ডিং শেষ হল । আমরা ফিরে চললাম জুবাতে।


 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।