আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জুবা থেকে নিমুলে- ক্যাপইতা- তরিত,ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া- সাউথ সুদান



সাউথ সুদানের প্রায় সব প্রদেশে যাবার সুযোগ হয়েছে। এবারে আবার তরিত যেতে হল। আগেরবার অল্প সময় কাটিয়েছিলাম সেখানে। এবার দু’রাত থাকতে হবে,শহরটাও ভাল করে দেখা যাবে। প্রথমে জুবা থেকে নিমুলে গেলাম, ফ্লাইট টাইম এক ঘণ্টা বিশ মিনিট।

নিমুলে উগান্ডা সীমান্ত শহর, এখান দিয়ে সব পণ্য সামগ্রী সাউথ সুদানে আসে। এলাকাটা পাহাড়ি এবং রাস্তাগুলো পাহাড়ের ঢাল বেয়ে চলে গেছে। শহরটা বেশ সাজানো এবং অনেক সুযোগ সুবিধা এখানে আছে। পাহাড়ি এলাকা বলে এখানে গরম কিছুটা কম। উগান্ডার পাশে হওয়াতে এবং ব্যবসা কেন্দ্র হওয়ার কারনে এখানকার মানুষজনের অবস্থা তুলনামুলকভাবে একটু ভাল।

ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি দুরের পাহাড়গুলো নীল আকাশের নীচে একটু নীলচে লাগে।

নিমুলে শহর থেকে একটু দূরে
আমরা একটা গ্রামের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বেশ বড় বড় ঝোপ গাছ আছে গ্রামে, অনেকগুলো টুকুল কাছাকাছি, সাধারণত একসাথে এত টুকুল দেখা যায় না। বাচ্চারা সামনের খোলা জায়গাতে খেলাধুলা করছে। মাঝে মাঝে হালকা বাতাস, সোনালি সূর্যের আলো, হালকা সাদা মেঘের ভেলার নীচে আশেপাশের শান্ত পরিবেশ।

বিদেশীরা সীমান্ত পার হয়ে উগান্ডাতে যাতায়াত করে, দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভাল।

নিমুলের জনপদ- সাউথ সুদান
স্থানীয় কিছু মানুষ দেখলাম আশেপাশে, এখানকার মানুষগুলো আন্তরিক মনে হল, হয়ত পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষের আচার ব্যবহারের উপর বেশ প্রভাব ফেলে। কিছুক্ষণ পর আমরা ক্যাপইতার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম।

ক্যাপইতা -ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া

নিমুলে থেকে ক্যাপইতা এক ঘণ্টা ফ্লাইট টাইম। ক্যাপইতার কাছাকাছি অনেক বড় বড় গাছ দেখলাম।

এখানে গাছ বেশ ঘন, পাহাড় ও সমতল এখানে সহবস্থানে আছে। সমতলে শুকনো নদীর ধারা একেবেকে চলে গেছে, এখন পানি নেই তবে বর্ষায় এগুলো পানিতে ভরে যায়। এখানে একটা ল্যান্ডিং স্ট্রিপ আছে তবে অবস্থা বেশী সুবিধার না। এখানকার রাস্তাগুলো মাটির সাথে কঙ্কর মেশানো। একটু পাহাড়ি এলাকা, পুরো সমতল না এই অঞ্চল।



এখানকার ঘরবাড়িগুলো বেশ নতুন ও পাকা, উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এখানে বেশ নতুন ঘরবাড়ী,সরকারী অফিস আদালত, চার্চ, এনজিও এবং নানা সংস্থা এখানে বাসস্থান বানাচ্ছে। একসময় এখানকার এয়ার স্ট্রিপে ছোট বিমান উঠা নামা করত, স্ট্রিপের পাশেই একটা বিধ্বস্ত বিমান কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ক্যাপইতা এয়ার স্ট্রিপে পুরানো প্লেন
এখানে দেখলাম ঝোপঝাড় বেশ ঘন এবং সবুজ, গাছপালা বেশ লম্বা। অনেক বিশাল বিশাল ঝাউ গাছ দেখলাম এখানে। দেশের অন্য অংশে এধরনের গাছ তেমন দেখিনি।

গ্রামের বাচ্চারা গাছের নিচে খেলাধুলা করছে। এর মাঝেই পথ আছে সে পথে সাইকেলে করে মেয়ে ছেলে সবাই নিজেদের কাজে কিংবা গন্তব্যে যাতায়াত করছে।

এখানে গাছগুলো বেশ বড় –ক্যাপইতা
এটা একটা বেশ উন্নত জনপদ। রাস্তা ঘাট লাল মারামের হলেও বেশ প্রশস্ত এবং পরিকল্পনা মাফিক সাজানো। নতুন বেশ কিছু স্কুল কলেজ হয়েছে দেখা গেল।

বাজারের অবস্থাও বেশ ভাল লাগল। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকার কারনে এই শহরের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিছু সময় কাটিয়ে তরিতের পথে আমাদের আকাশযান উড়াল দিল।

তরিত- ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া

ক্যাপিওতা থেকে তরিত হেলিকপ্টারে ফ্লাইট টাইম চল্লিশ মিনিট। আজ ১২ টা ৩০ মিনিটে হেলিকপ্টার উড়াল দিল আর বিকেল ৪ টা ৩০ মিনিটে তরিত এসে পৌছালাম।

মাঝে দুই জায়গাতে ৩০ মিনিট করে ব্রেক ছিল। আবহাওয়া বেশ ভাল আজকে, নেমে জানতে পারলাম দুপুরে বেশ বৃষ্টি হয়েছে তাই এখন একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব, বাতাস ও আছে সেইসাথে। এই জনপদের চারিদিকে পাহাড়। উপত্যকার সমতলে শহর গড়ে উঠেছে। এখানকার আবহাওয়া জুবা থেকে ভাল, তাপমাত্রা একটু কম এখানে।

বিকেল বেলা কিছুক্ষণ নির্মল বাতাসে হাঁটাহাঁটি করলাম। সূর্যাস্তের সময় দুরের পাহাড়গুলোকে নীলাভ দেখাচ্ছিল সাথে আলো মেঘের লুকোচুরির মাঝে প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে বেশ আনন্দ পাচ্ছিলাম।

গোধূলি বেলায়- তরিত
পরদিন কাজকর্ম শেষ করে তরিত শহরটা ঘুরে দেখতে বের হলাম। শহর থেকে একটু দূরে আমদের আস্তানা তাই গ্রামের পাশ দিয়ে গাড়িতে করে শহরের দিকে রওয়ানা হলাম। এখানের রাস্তাগুলো ও চওড়া তবে লাল মারামের, একটু এবড়ো থেবড়ো, ঝাঁকি খেতে খেতে শহরের দিকে চলছি।

গ্রামের টুকুল গুলো বেশ পরিচ্ছন্ন, কিছু কিছু ঘরের মাটির দেয়ালে সুন্দর নক্সা করা, এধরনের নক্সা অন্য কোন জায়গাতে আগে চোখে পরেনি।

নক্সা আঁকা ঘরের মাটির দেয়াল
রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে ডান দিকে স্বাধীনতা চত্বর রেখে আমরা শহরে ঢোকার চৌরাস্তার মোড়ে পৌঁছে গেলাম। দুপুর বেলা এই বিশাল এলাকা ফাঁকা। বিকেলে এখানে মাঠের মধ্যে খেলাধুলা হয়। এর আশেপাশে অনেকগুলো সরকারী অফিস আদালত রয়েছে।

মাঠের একপাশে গাছের নিচে ছোট একটা ফলের দোকান খুলে বসেছে এক মহিলা, খদ্দেরের দেখা পাইনি যাওয়ার সময়। রোদের তেজ বেশ আজকে, গাড়িতে এসি থাকাতে টের পাইনি। এখানে রাস্তার মাঝের আইল্যান্ডে বড় একটা ঘড়ি লাগানো আছে। চার দিক থেকেই সময় দেখা যায়, ঘড়িটা সচল, সময় দিয়ে চলছে। রাস্তার পাশে মোবাইল কোম্পানির কয়েকটা বিলবোর্ড লাগানো আছে।



স্বাধীনতা চত্বর – চৌরাস্তার মোড়, তরিত
একটু সামনে এগিয়ে গেলে বাজার এলাকা,অনেক দোকানপাট, পণ্য দ্রবের ও কমতি নেই, কাপড়চোপর, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ শাকসবজি, মাংস সবই আছে এই বাজারে। পাশের দেশ উগান্ডার সাথে ভাল যোগাযোগ থাকার সুবাদে এখানে প্রায় সব জিনিসই পাওয়া যায়। বর্ষার সময়ে এখানে শাকসবজি ফলমূল অনেক পাওয়া যায়, শুকনার সময় একটু কমে যায় উৎপাদন। বাজারে বেশ কিছু মানুষ চোখে পড়ল। এই এলাকার আশেপাশেই শহরের প্রাণকেন্দ্র।

অফিস আদালত, প্রদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অফিস, এন জি ও দের অফিস সবই এই এলাকার আশেপাশে।

বাজার এলাকা -তরিতের পথে,ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া
বাজার থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলে একটা রাস্তা চলে গেছে নীল নদের শাখা নদীর দিকে। এই পথে যেতে একটা ক্লিনিক দেখলাম, গ্রাম ও আছে বেশকিছু রাস্তার দুপাশে। গ্রাম এলাকার কাছে ঘাসজমিতে অনেক গরু চড়ে বেড়াতে দেখলাম। রাখাল একটু দূরে ঝোপের পাশে ছায়াতে বসে আছে।

এখান থেকে দুরের পাহাড় দেখা যায়। রাস্তা পাহাড়ের দিকেই গেছে তবে সেখানে না গিয়ে আমরা সামনে নদীর দিকে যাচ্ছিলাম।

গ্রাম এলাকার টুকুল পাশে গরুর পাল চড়ে বেড়াচ্ছে-তরিত

এটা নামেই নদী আসলে একটা ছোট খালের মত, নদীর উপর একটা ব্রিজ আছে। এখান থেকে শহরের পানি নেয়া হয়। নদীর জলধারা এখন বেশ শীর্ণ, বর্ষায় এটা বেশ বেগবান হয়।

নদীর পারে এলাকার লোকজন প্রায় দিগম্বর বেশেই গোসল করছে। এখনো আদিম সমাজের ছাপ এখানে রয়ে গেছে। ঘণ্টা খানেক শহরের পথে ঘুরে আমরা আবার ফিরতি পথ ধরলাম। তরিতে জনসংখ্যা খুবই কম, বিশাল এলাকা, মাটির নীচে অনেক সম্পদ, কাজেই এই দিকে আগামীতে সমস্যা হতে পারে। জুবা থেকে এখানে এসে একটু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগে বেশ ভালই বোধ করছিলাম।

তরিত শহরের আশেপাশে এই সুযোগে দেখা হয়ে গেল।
 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।