আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তৌহিদসহ পাঁচ জন ৭ দিনের রিমান্ডে



পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ডিএডি তৌহিদুল আলমসহ পাঁচজনকে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মোঃ আব্দুর রহিম রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হচ্ছে ডিএডি আব্দুর রহিম, হাবিলদার আজাদ আলী, নায়েক মোঃ ফিরোজ আহমেদ ও সিপাহী জাকির হোসেন। এদিকে সিআইডি গতকাল পর্যন্ত পিলখানা থেকে আলামত সংগ্রহের কাজ শেষ করতে পারেনি।

অপরদিকে ঘটনা তদন্তে সাবেক সচিব আনিস-উজ-জামানের নেতৃত্বে গঠিত ১১ সদস্যের কমিটি ও লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর নিজস্ব ৯ সদস্যের কমিটি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, আনিস-উজ-জামানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি গতকাল পিলখানা সদর দফতরে ও আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সিআইডি সূত্র জানায়, তদন্তভার পাওয়ার পর সিআইডির ৫১ সদস্য পিলখানা দফতরে গত ৩ দিন ধরে আলামত সংগ্রহের কাজেই বেশি ব্যস্ত রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আলামত সংগ্রহের কাজ শেষ হতে পারে। এ কারণেই সিআইডি অন্যদিকে বেশি মনোনিবেশ করতে পারেনি।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যসহ সংশ্লিষ্ট ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তে সংশ্লিষ্ট সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, পিলখানার ঘটনা তদন্ত নিয়ে এখনো বলার মতো কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আরো কয়েকদিন তদন্ত শেষে কিছু বলা সম্ভব হবে। এদিকে তৌহিদসহ ৫ জনকে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

টিএফআই সেলে ৬টি সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ গতকাল দুপুর সোয়া তিনটায় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরা এবং পেছনে হাতবাঁধা অবস্থায় ডিএডি তৌহিদসহ পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ডিএডি তৌহিদুল আলম ও ডিএডি আব্দুর রহিম মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব গ্রেফতারকৃত পাঁচজনকে সিআইডির হাতে হস্তান্তর করে।

আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় আসামিরা সরাসরি জড়িত আছে। তাদের সাথে জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার, লুটকৃত অস্ত্র উদ্ধার, জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। বেলা সোয়া তিনটার সময় কড়া পুলিশ প্রহরায় গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হয়। আসামিদের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিল না। ডিএডি তৌহিদের পক্ষে এ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া জামিনের আবেদন প্রস্তুত করলেও ওকালতনামা না পাওয়ায় জামিনের আবেদন করতে পারেননি।

তবে আসামিদের পক্ষে কোন আইনজীবী না থাকলেও ৪ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য রাখেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ডিএডি তৌহিদুল আলম জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী তাকে পিলখানার ভেতর থেকে গ্রেফতার করে। হাবিলদার আজাদ আলী বলেন, তিনি ৩২ বছর ধরে বিডিআরে চাকরি করছেন। ঘটনার পূর্বেই এক মাসের ছুটিতে থাকার সময় তিনি রংপুরে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ঘটনার সময় পিলখানায় না থাকলেও রংপুরের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সিপাহী জাকির হোসেন জানান, তিনি ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিডিআর সদর দফতর থেকে পালিয়ে ৪ নম্বর গেটের সামনে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে । ডিএডি আব্দুল রহিম বলেন, তারা নির্যার্তিত হয়েছেন আটকের পর। তাদের রিমান্ডে নিয়ে আরও নির্যাতন করা হবে। এ ধরনের ঘটনার সাথে তারা জড়িত নয়। সুষ্ঠু বিচার তারাও চান।

কিন্তু তাদের কথা বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। নায়েক ফিরোজ আহমেদ খান বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঘটনার দিন পিলখানা থেকে নিউমার্কেটের দিকে যাচ্ছিলেন। কার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে তা জানতেন না। রাস্তায় সাংবাদিক ও পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। গ্রেফতারকৃতরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সবাই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় জড়িতা না থাকার দাবি করেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা সদর দফতরে বিডিআর বিদ্রোহ শুরুর পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয় তাতে নেতৃত্ব দেন তৌহিদ। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঐ বিদ্রোহের ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে লালবাগ থানার ওসি নবজ্যোতি খীসা বাদি হয়ে সহস্রাধিক বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ডিএডি তৌহিদুল আলমকে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, লুটপাট, লাশ গুমসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য গ্রেফতার ঃ মতিঝিল থানা পুলিশ গতকাল চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করেছে।

মতিঝিল থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জানান, আলমগীর মঙ্গলবার মালিবাগের একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিতে চাকরির জন্য যায়। তার কথাবার্তা সন্দেহ হওয়ায় কোম্পানীর লোকজন থানায় খবর দিলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আলমগীর জানায়, বিডিআরের নিয়ম অনুযায়ী চাকরি করা অবস্থায় তার বয়স ২৫ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে করায় গত জানুয়ারি মাসে তার চাকরি যায়। ওসি জানান, আলমগীরের কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় সিআইডিকে খবর দেয়া হয়। সকালে সিআইডি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

প্রয়োজনে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।