আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ::: আমার অভিজ্ঞতা > পর্ব ০১

"যুদ্ধপাপীদের শাস্তি চাই"

একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আস্তে আস্তে যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন থেকে কিছু কিছু বুঝতে ও জানতে শুরু করলাম- দেশ কী? আমি কোন দেশের নাগরিক? এই দেশটির ইতিহাস। এ যেন রূপ কথার গল্প শুনছি। [ আমার বাবা ] সন্ধ্যা-রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে, বাবা আমাদের তিন ভাই-বোন কে নিয়ে গল্প করতে বসতেন। আপু বড়, তাই আপু বাবাকে ধরতো যুদ্ধের গল্প বলতে। আমরা মুখ হা করে শুনতাম।

মা বাংলা বই-এর সব গল্প গুলো আমাদের শোনাতেন, সে থেকে পড়া হয়ে যেত, নতুন করে তেমন পড়তে হতো না। যত বড় হতে থাকলাম আর বুঝতে থাকলাম, তখন বাস্তবতা সামনে আসতে থাকলো। বুঝলাম ওসব কোন রূপ কথা নয়। জ্বলজ্বলে সত্য কথা। নির্মম সত্য! পাকিস্তনী হানাদর আর রাজাকার নামক এই দেশীয় নিমোখহারামীদের কথা শুনেই ওদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা জন্মাতে শুরু করলো।

চিনলাম জাতির অন্যমত সন্তান বঙ্গবন্ধুকে। চিনলাম আরো বীর সন্তানদের। এবার চেনার পালা সেই "রাজাকারদের"। বই, প্রবন্ধ আর মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস গুলো নিয়ে ঘাটা-ঘাটি করতে লাগলাম। ছবি ও নাটক থেকে শিখলাম ও জানলাম।

কিন্তু, সরকার বদল হবার পর পরই দেখলাম আবার অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। যা ঘটে গেছে, তা আবার নতুন করে কীভাবে লেখা হয়? যারা পরিবর্তন করছে, তাদের কাছে কী "টাইম মেশিন" আছে!!! এবার সত্য জানার পালা। অনেকে বলে, "রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে, আবার কীসের বিচার?" আমি বলবো, যা সত্য তা কেউ বলে না। কেউ কী জানে আসল কথা? কেউ কী জানার চেষ্টা করেছে? অনেকে বলেছে, "তুমি যুদ্ধ দেখনি, তুমি কী জানো হে ছোকরা?" আমি যা দেখিনি, তা জানতে চেয়েছি, জেনেছি যতটুকু পেরেছি এবং জানছি ও জানবো। বর্তমান মানুষ তো বিশ্ব যুদ্ধ দেখেনি, হিটলার কে দেখেনি।

তবে কীভাবে, বিশ্ব যুদ্ধের কথা বলে? "হিটলার" বলে গাল দেয় অন্যকে? "কলাগাছটা আমার করে নেয়ার দিন শেষ" *.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*.*. ফেসবুকের এক সিনিয়র বন্ধুর আমন্ত্রণে আমার ব্লগিং করা শুরু। সামহয়ারইন-এ যখন ব্লগিং করা শুরু করলাম, তখন বেশ উত্তেজনা টাইপ ব্যাপর-স্যাপার চলছে। "ছাগু" আর "রাজাকার" প্রসংঙ্গ। তার সাথে দু-একটি মানবিক আবেদন চোখে পড়ার মত। ব্লগারদের অনেকের পোষ্টে মন্তব্য করতাম।

নিজেও পোষ্ট দিতাম। কিছু কিছু ব্লগারকে দেখলাম না বুঝে মন্তব্য করে, না বুঝে অন্যকে গালাগাল করে। আবার একজনের মন্তব্য পড়ে নিজে "বুদ্ধিজীবী" হয়ে মন্তব্য করে। এরূপ আমাকেও দু-একজন গালাগাল শুরু করেদিল। একজন বললো. এটা নাকী ব্লগের "ঐতিহ্যগত সমস্যা" যাই হোক।

"অদৃশ্য মানুষ" হিসেবে ব্লগিং করছি। ইতি মধ্যে "একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন" মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। অনেকে এর বিপক্ষ পথ বেছে নিচ্ছিল। দিন যত গড়াচ্ছিল, ততই দেখলাম, যারা বিপক্ষ মত পোষণ করে এসেছিল, তাদের অনেককে ব্লগে দেখা যায় না এবং অনেকে নিজেকে "পক্ষ" দল হিসেবে জাহির করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলেন। আমি ব্লগিং শুরু করি নভেম্বরে।

ডিসেম্বরে "মুক্তিযুদ্ধ" ও "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার" নিয়ে জোরে-সোরে পোষ্ট পরতে লাগলো। ভাবতে গর্বে বুক ভরে যায়, মানুষ কতটা সচেতন। ইতিমধ্যে একটি স্বাক্ষর ফর্ম করা হলো। আমি নিজেও অনেকের মত তা তুলে রাখলাম। কিন্তু কী করবো, কীভাবে করবো।

এগিয়ে এলো খুব কাছের কিছু বন্ধুরা। পুরোন এক বন্ধু (মাহমুদুল হাসান রুবেল), পরে জানলাম সেও নাকী ব্লগিং করে। সিদ্ধান্ত হলো প্যাড ছাপানো হবে। ব্লগ থেকে ৮০ হাজার স্বাক্ষর গ্রহণ করা মতো প্যাড। সে নিজে ছাপালো ৪০টি প্যাড।

প্রতিটি প্যাড-এ ১০০০ স্বাক্ষর নেয়া যাবে। সেটা ছিল জানুয়ারি মাস। এবার স্বাক্ষর কীভাবে সংগ্রহ করা যায়, সে ভাবনা। বন্ধু অমিত ( পরে "চটপটি " নামে ব্লগিং শুরু) এবং বন্ধু মার্শাল (সম্প্রতি অনেক ঠেলা-ঠেলির পর "বন্ধু কই কৈ " নামে ব্লগিং শুরু) সাথে রুবেল বাংলাদেশ-এর ক্রিকেট খেলার সময় স্টেডিয়ামে স্বাক্ষর নেয়ার কাজ শুরু করলাম। নাওয়া-খাওয়া সব বন্ধ।

এটা যেন একটা নেশার মত হয়ে গেল। সবাই এতো আগ্রহ করে স্বাক্ষর দিচ্ছে দেখ বুকটা ভরে গেল আবার। প্রতিদিনের কাজ নিয়ে পোষ্ট দিতাম আমি আর রুবেল। সচেতনতা আরো বাড়লো। [ যিনি প্রথম স্বাক্ষরটি করেছিলেন।

একজন প্রবাসী বাঙালি ( আগের স্বাক্ষর গুলো আমাদের নিজেদের) ] [ স্বাক্ষর করে এই পুরো পরিবারটি একসাথে ] ====================================================== আজ এই টুকু। কাল ২য় পর্ব লিখবো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.