আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রক্তচাপের দৈনন্দিন ছন্দ

পৃথিবীতে সবকিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং ছন্দ মেনে চলে। রাতের পর দিন আসে, দিনের পর রাত। সাগরে নির্দিষ্ট নিয়মে জোয়ার-ভাটা আসে, বার্ষিক ঋতুচক্রেও আমরা দেখি ছন্দময় চক্র। তেমন আমাদের দেহঘড়িতেও রয়েছে ছন্দ। হৃদ ঘাত, নাড়ির গতি কিংবা ঘুমের মতো রক্তচাপেরও দৈনিক ছন্দ রয়েছে।

সাধারণত রাতে ঘুমের সময় রক্তচাপ কম থাকে। কিন্তু ভোরে ঘুম থেকে ওঠার ঘণ্টাখানেক আগে থেকে রক্তচাপ বাড়তে থাকে। দিনে রক্তচাপ বাড়তে থাকে এবং বিকালে সবচেয়ে বেশি থাকে। বিকালের পর থেকে রক্তচাপ আবার কমতে থাকে। কারও রক্তচাপের ছন্দে অস্বাভাবিকতা থাকলে (যেমন- সকালে যদি রক্তচাপ বেশি থাকে), তার অন্তর্নিহিত কোনো গুরুতর ব্যাধি থাকার আশঙ্কা বেশি থাকে।

সাধারণত নানা রকম অসুখের কারণে এরকম হতে পারে। কারও রক্তচাপ দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তার রক্তচাপের নিয়মিত ছন্দ বিঘি্নত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তচাপের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নানা রকম গুরুতর ব্যাধির কারণে এমন হতে পারে। যেমন- ডিনির রোগ, শরীরে হরমোনের সমস্যা, মস্তিষ্কের কিংবা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার ইত্যাদি।

এ ছাড়া রক্তচাপের ওষুধ নিয়মিত সেবন না করলেও এমন হতে পারে। অনেকের রাতে ঘুমের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। একে নিদ্রাজনিত শ্বাস-আবদ্ধতা বলা হয়। এভাবে রাতে মাঝে মাঝে শ্বাস বন্ধ থাকার কারণে রক্তে কার্বন-ডাই-অঙ্াইডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ফুসফুসের রক্তনালির চাপ বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন এমন হতে থাকলে উচ্চরক্তচাপ হওয়ার প্রবণতা থাকে।

এ ছাড়া এ ধরনের সমস্যার জন্য রাতের ঘুম বিঘি্নত হয় এবং দিনে তন্দ্রাচ্ছন্নভাব থাকে এবং শারীরিকভাবে অবসন্ন বোধ হয়। রক্তচাপের ছন্দ বিঘি্নত হওয়ার পেছনে অনেক ঝুঁকি উপাদান কাজ করে। যেমন- * রাতের শিফটে কাজ করা_ মনে করা হয় যারা দিনের শিফটের পরিবর্তে রাতের শিফটে কাজ করে তাদের ঘুমের স্বাভাবিক চক্র বিঘি্নত হয়। তাদের এক পর্যায়ে রক্তচাপের ছন্দ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। * ক্যাফেইনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলেও রক্তচাপের ছন্দ বিঘি্নত হতে পারে।

* অতিরিক্ত বিড়ি, সিগারেট, তামাক ইত্যাদি সেবন করলে রক্তনালি সঙ্কুচিত হয় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। এভাবেও রক্তচাপের দৈনিক ছন্দ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। * অতিরিক্ত উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, মানসিক অশান্তির কারণে রক্তচাপের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘি্নত হতে পারে। উচ্চরক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপের কোনো লক্ষণ-উপসর্গ থাকে না।

সাধারণত উচ্চরক্তচাপের রোগীদের গুরুতর জটিলতা হওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তচাপের বিষয়টি শনাক্ত হয়। এমন রক্তচাপের দৈনিক ছন্দ বিঘি্নত হলেও তা দীর্ঘদিন চাপা থাকতে পারে। একমাত্র এর ফলে জটিলতা হলেই তা শনাক্ত হয়। আর সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা তা শনাক্ত করাও যায় না। এ জন্য ২৪ ঘণ্টা রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করলে রক্তচাপের দৈনিক ছন্দে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা বের করা হয়।

অতএব রক্তচাপের ছন্দ বিঘি্নত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : ভিজিটিং ফেলো

রয়ার লেবোন হাসপাতাল, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।