আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুগ যুগান্তরে যৌনতার রূপ

সকল অন্ধকারের হোক অবসান

ভারতের ইতিহাস আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধর্মের বিবর্তনের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। রজতকান্ত রায় যৌন ইতিহাস সম্পর্কিত এক বইয়ের আলোচনায় এমন কথা দিয়েই শুরু করেন। একেই বোধহয় বলে অন্যের মুখে ঝাল খাওয়া। মানে রজতকান্ত রায়ের মুখেই আমার জানতে হলো একটি বই প্রসঙ্গে। গ্রন্থের নাম: সেক্স অ্যান্ড পাওয়ার: ডিফাইনিং হিস্ট্রি, শেপিং সোসাইটিজ।

লেখিকার নাম রীতা ব্যানার্জি। ইংরাজিতে লেখা বইটি বেরিয়েছে পেঙ্গুইন বুকস থেকে। যাহোক, বইটির একটি দারুন দিক তুলে এনেছেন রায় বাবু। আর সেই জায়গাটি আমার কাছে বিশেষ ভালো লেগেছে বিধায় ব্লগে লিখতে বসেছি। রায় বলছেন, ব্যানার্জি অর্থাৎ গ্রন্থের লেখিকা তাঁর বইতে যৌন ইতিহাসকে দেখিয়েছেন কয়েকটি যুগে ভাগ করে।

সেগুলো হলো: বৈদিক যুগ (খৃ.পূ ৩০০০- খৃ.পূ. ৫০০), বৌদ্ধ যুগ (খৃ.পূ ৫০০- ১০০ খৃস্টাব্দ), স্বর্ণ যুগ (১০০ খৃস্টাব্দ- ১২০০/১৫০০ খৃস্টাব্দ), ঔপনিবেশিক যুগ অর্থাৎ মুসলমান ও ইংরেজ আমল (১২০০ খৃস্টাব্দ - ১৯৪৭ খৃস্টাব্দ) এবং গণতন্ত্র যুগ (১৯৪৭ খৃস্টাব্দ থেকে চলছে)। শ্রীমতি ব্যানার্জি বলছেন, প্রত্যেক যুগেই পাল্টেছে যৌন বিষয়ক মানসিকতা। এবং সেটা প্রধানত সেটা ধর্মীয় প্রভাবেই। সুপ্রাচীন কালে বেদোক্ত ঋষিদের স্ত্রী ছিলো। বৌদ্ধ যুগে এলো শ্রমণ ও শ্রমণা দুই শ্রেণী; পালি ভাষায় এঁদের নাম ছিলো থের ও থেরি।

বৌদ্ধ মতে এঁদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক ছিলো নিষিদ্ধ। পরবর্তী সময়ে শঙ্করাচার্য এসে চড়াও হলেন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ওপর। প্রতিষ্ঠা করলেন দণ্ডী বা সন্নাসী সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ে নারীর কোনো স্থান ছিলো না। এরপর এ অঞ্চলে এলো মধ্যপ্রাচ্য থেকে মুসলমান সাধক।

তাদের আবার স্ত্রী-পুত্র ছিলো। এসময় আরবদেশের রাবেয়াসহ কয়েকজন সাধিকার নাম পাওয়া যায়। এভাবেই একের পর এক যুগে নানা ধর্ম নানা মত এসেছে, পাল্টেছে যৌনতা সম্পর্কিত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। সেটা সাধকদের জন্য যেমন, তেমনি শাসকদের জন্যও। লেখিকা বলছেন, বৈদিক যুগে যৌন সম্পর্ক ছিলো নেহাতই ধর্মীয় কর্তব্য বা "আ সেক্রেড ডিউটি"।

বৌদ্ধ যুগে এই যৌন সম্পর্ক হয়ে দাঁড়ায় নির্বাণ লাভের অন্তরায়। কিন্তু স্বর্ণ যুগে তা হয়ে যায় "স্যালভেশন", এই সময়েই চালু হয় রোম্যান্স ও কোর্টশিপ। মন্দিরের গায়ে গায়ে তখন খোদিত হয় নানা কায়দার সঙ্গমরত নরনারী। কি "অভূতপূর্ব ও অভাব্যপর দৃশ্য" ! ঔপনিবেশিক আমলে যৌন সম্পর্ক হয়ে দাঁড়ায় লজ্জার বস্তু। এবং লেখিকার ভাষ্য অনুযায়ী, গণতন্ত্রের যুগে এই যৌনতা "আ সেক্সুয়াল প্যারাডক্স"।

আমি জানি না মূল বইয়ে লেখিকা যৌনতা নিয়ে বুর্জোয়া সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে এনেছেন কিনা। যদি না আনেন তাহলে বলতে হয় গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক তিনি বাদ দিয়ে গেছেন। কারণ বুর্জোয়া মানসিকতায় যৌনতা চার দেয়ালের ভেতর, লজ্জার পর্দায় আটকা পড়ে- উৎপাদন ব্যবস্থায় গতি আনার জন্য। লেখিকা এই বিষয়টি এনেছেন কি আনেন নি সেটা জানতে পারছি না ঐ "অন্যের মুখে ঝাল খাওয়ার" জন্য। মানে, যেহেতু বইয়ের আলোচনা করেছেন রায় বাবু, তিনি বাদ দিয়েছেন কিনা তাও বলা যাচ্ছে না।

উৎসাহীরা রায় বাবুর গ্রন্থালোচনাটি পাবেন দেশ পত্রিকার বর্তমান সংখ্যায় (১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯)। এবং অত্যুৎসাহীরা মূল বইটিই সংগ্রহ করতে পারেন। বাংলাদেশী টাকায় নয়শ' টাকার মতো হবে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।