আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ - নির্মলেন্দু গুণ

FROM MIRPUR DHAKA

নেকাব্বর জানে তাঁর সম্পত্তির হিসাব চাইতে আসবে না কেউ কোনোদিন। এই জন্মে শুধু একবার চেয়েছিল একজন, 'কী কইরা পালবা আমারে, তোমার কী আছে কিছু তেনা?' সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে ফাতেমাকে জড়িয়ে দু'হাতে বুকে পিষে বলেছিল নেকাব্বর; 'আছে, আছে, লোহার চাককার মতো দুটা হাত, গতরে আত্তীর বল - আর কীডা চাস্ মাগী। ' 'তুমি বুঝি খাবা কলাগাছ?' আজ এই গোধুলিবেলায় প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালা চোখে নিয়ে নেকাব্বর সহসা তাকালো ফিরে সেই কলাবাগানের গাঢ় অন্ধকারে। তিরিশ বছর পরে আজ বুঝি সত্য হলো ফাতেমার মিষ্টি উপহাস। পাকস্থলি জ্বলে ওঠে ক্ষুধার আগুনে, মনে হয় গিলে খায় সাজানো কদলীবন,' যদি ফের ফিরে পায় এতটুকু শক্তি দুটি হাতে, যদি পায় দাঁড়াবার মতো এতটুকু শক্তি দুটি পায়ে।

কিন্তু সে কি ফিরে পাবে ফের? ফাতেমার মতো ফাঁকি দিয়া সময় গিয়েছে ঢের চলে। কারা যেন ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে সব শক্তি তার। বিনিময়ে দিয়ে দেছে ব্যাধি, জরা, দুর্বলতা, বক্ষে ক্ষয়কাশ- অনাদরে, অনাহারে কবরে ডুবেছে সূর্য, ফাতেমার তিরিশ বছর। এখন কোথায় যাবে নেকাব্বর? হয়তো গিলেছে নদী তার শেষ ভিটেখানি, কবর ফাতেমা- কিন্তু তার শ্রম. তার দেহবল, তার অকৃত্রিম নিষ্ঠা কারা নিলো? আজ এই গোধুলিবেলায় এই যে আমার পৃথিবীকে মনে হলো পাপ, মনে হলো হাবিয়া দোজখ - কেউ কি নেবে না তার এতটুকু দায়? মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চায় না সুদুরে চলে যেতে, নেকাব্বর ভাবে, অজানা অচেনা স্বর্গে বুঝি মেটে বাস্তবের তৃষ্ণা কোনোদিন? তবু যারা চায়, তারা কেন চায়? তারা কেন চায়? কেন চায়? নেকাব্বর শুয়ে আছে জীবনের শেষ ইস্টিশনে। তার পচা বাসী শব ঘিরে আছে সাংবাদিক দল।

কেউ বলে অনাহারে, কেউ বলে অপুষ্টিতে, কেউ বলে বার্ধক্যজনিত ব্যাধি, - নেকাব্বর কিছুই বলে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।