বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
আমার আজও মনে আছে। ১৯৭০ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি। মেঘলাদুপুর।
রত্না আপুকে দারুণ বকল বড় চাচী । আমি যে সময়টার কথা বলছি- সে সময়টায় আমাদের পুরনো আমলের দোতলা বাড়িটি মেঘের ছায়ায় কেমন অপরিচিত হয়ে ছিল। দুপুরের আগেই আমি স্কুল থেকে ফিরেছি। আজও একজন রিক্সালাকে রামপুরার দিকে গুলি করে মেরে ফেলেছে পুলিশ । আজও নবাবপুরের দিকটায় সকাল থেকেই খুব বিক্ষোভ হচ্ছে।
ছাত্ররা দলে দলে স্কুল থেকে বেরিয়ে প্রচন্ড আক্রোশে ঢিল ছুঁড়ছিল পুলিশের দিকে । সেই সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া তো ছিলই।
দুপুরের ঠিক আগে আগে আমি একতলার লাল সিমেন্টের অন্ধকার অন্ধকার বড় বারান্দায় উঠে আসি। ঠিক তক্ষুনি বাগানের গাছপাতার ওপর বৃষ্টি ফোঁটা পতনের শব্দ শুনলাম। বড় চাচী কাপড় তুলছিল।
বারান্দার শেষ মাথায় সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছি- রত্না আপু দুদ্দাড় করে আমার পাশ দিয়ে দৌড়ে নেমে গেল। রত্না আপু মনে হয় বাগানে যাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজতে। বাগানের ঘাসের ওপর গাছপালার পাশে বৃষ্টিতে ভিজতে রত্না আপুর নাকি দারুণ লাগে। সে জন্য বড় চাচীর বকাঝকাও কম খায়না রত্না আপু।
দোতলার বারান্দায় সবে উঠে এসেছি। নীচ থেকে বড় চাচীর চিল-চিৎকার শুনলাম: আবার বাগানে গেছস। তোর বাপের কানে গেলে আমাকে কাইটা ফেলব ...। আমি হেসে ফেলি। ঐ টুকুর জন্য কেউ কারুকে কেটে ফেলে! ধুৎ! তবে হ্যাঁ, আমার বড় চাচা, মানে রত্না আপুর আব্বা ভারি গোঁড়া; দশাসই চেহারার দাড়িঅলা গম্ভীর এক মুখ।
মাঝে মাঝে ভাবি: রবীন্দ্রনাথের মুখেও তো দাড়ি- অথচ বড় চাচার ধরনধারন রবীন্দ্রনাথের ঠিক উলটো; রত্না আপুই বরং রবীন্দ্রনাথের মতন। বৃষ্টির পর আকাশে রামধনু দেখা গেলে চিৎকার করে বাড়ি মাত করে ফেলে রত্না আপু। রত্না আপুর উচ্ছলতা বড় চাচার তো অসহ্য ঠেকবেই। বড়চাচা উকিল মানুষ: এই মুহূর্তে রয়েছেন কোর্টে। রত্না আপু এই সুযোগে বৃষ্টিতে ভিজবে বলে বাগানে নেমে গেছে।
তো, মেঘলা দিনে আমার শীত শীত করে। আমি গোছল না করেই খেতে বসে গেছি। আম্মার মুখ অন্ধকার। আম্মার সঙ্গে বড় চাচীর ঠিক বনিবনা হয় না। কাজেই আম্মা বরাবরই রত্না আপুর পক্ষে।
বড় চাচীর বকা খেল বলে রত্না আপুর জন্য আম্মার খারাপ লাগছে। আমার পাতে অল্পখানি আচার তুলে দিয়ে আম্মা বলল, তোর বড় চাচী বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করে রে শাওন। রত্না বৃষ্টিতে ভিজছে তো কী হইসে?
ভাত মাখতে মাখতে আমার হাসি পেল। রত্না আপু কলেজে ওঠার পর আম্মা বলেছিল: কী ড্যাকরা মেয়ে রে বাবা-বিকাল পর্যন্ত কলেজ করে। আম্মা যদি জানত- বিকাল পর্যন্ত কার সঙ্গে থাকে রত্না!
আমার খাওয়া শেষ।
আমার হাতে এক বাটি ক্ষীর দিয়ে আম্মা বলল, যা। তোর বড় চাচীকে দিয়ে আয়। আজ রত্নার জন্মদিন। তোর বড়চাচাতে আর মেয়ের জন্মদিন পালন করব না।
ক্ষীরের বাটি নিয়ে আমি নীচে নেমে এলাম।
তখনও মেঘ করে ছিল। বৃষ্টির জোর নেই। ঝির ঝির করে ঝরছিল। দরজা খোলাই ছিল। ঢুকলাম।
বসার ঘরে লাইট জ্বলেছিল। সোফার ওপর ভিজা কাপড় শুকাতে দিয়েছে। ফ্যানও ফুল স্পীডে ঘুরছিল। ঘরে কেউ নেই। দেওয়ালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একটা ছবি।
কাচ দিয়ে বাঁধানো; বেশ বড় ছবি। বড় চাচা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ভীষন রেসপেক্ট করেন। জিন্না লোকটা কি বড় চাচার মতই বড্ড গোঁড়া? গত মাসে পাকিস্তান গিয়েছিলেন বড় চাচা। ফেরার সময় সঙ্গে করে অর্ধডজন বোরখা নিয়ে এসেছেন। তারপর থেকেই বড় চাচা বোরখা পরার জন্য চাপ দিচ্ছেন রত্না আপুকে ।
রত্না আপু মরে গেলেও বোরখা পরবে না। এই নিয়ে তুমুল হইহল্লা এবাড়িতে। বড় চাচা আমার আম্মাকেও বোরখা পড়তে বলেন। অথচ, বড় চাচী নিজেই বোরখা পড়ে না। এ নিয়ে আব্বার সঙ্গে বড় চাচার কথাবার্তা কিছুদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে।
আব্বা আসলে বড় চাচার প্রতিপক্ষ: আব্বা বঙ্গবন্ধুর কড়া সমর্থক বলেই। এই ফাঁকে বলে রাখি: গত বছর বিনা শর্তে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর রমনা রেসকোর্স ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যেগে এক বিশাল সংবর্ধনায় ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করে। বড় চাচা বঙ্গবন্ধুকে পছন্দ করেন না। বঙ্গবন্ধু নাকি পাকিস্তান ভাঙ্গতে চায়! বঙ্গবন্ধু বড় চাচাদের প্রতিপক্ষ। বড় চাচী রান্না ঘরে ছিল।
ক্ষীরের বাটি দিলাম। বড় চাচীর মুখটা কেমন গম্ভীর। তখনও রতœাপুর ওপর রেগে ছিল বোধহয়। আমি রত্না আপুর ঘরের দিকে যাই। দরজা ভেজানো, ঠেলে ঢুকলাম।
ঘরটায় আবছা অন্ধকার। আবছা অন্ধকারে হাসনাহেনার গন্ধ। এ ঘরে যতবারই আসি। আমি ঐ ফুলের গন্ধ পাই। জানালায় মৃদু বৃষ্টির শব্দ।
রত্না আপু বিছানায় শুয়ে। আমি মাথার কাছে বসলাম। একটু পর রত্না আপু ফিসফিস করে বলল, আজ আমার জন্মদিন। আর আম্মার মনটা আমি খারাপ করে দিলাম। কী যে ভুল করছি তখন বৃষ্টিতে ভিজা গুড্ডি।
আমার নাম শাওন হলেও রত্না আপু আমাকে ঘুড্ডি বলে ডাকে। আমি ফিসফিস করে বললাম, তোমার জন্য আম্মা ক্ষীর পাঠায়ছে রত্না আপু। রত্না আপু দীর্ঘশ্বাস ফেলল মনে হল। বড় চাচা জন্মদিন পালনের ঘোর বিরোধী। রত্না আপুর কি মন খারাপ সেজন্য? আমারও একই কারণে মন খারাপ হয়ে যায় ।
রত্না আপু যে আমাকে ভীষণ ভালোবাসে; বিশ্বাসও করে। রত্না আপুর লেখা চিঠিগুলি (আসলে প্রেমপত্র) আমিই তো জয়দীপদাকে দিয়ে আসি। আপাতত জয়দীপদার বাস দক্ষিণ মৈশুন্ডীর একটা মন্দিরের ভিতরে একটি ঘরে । কখনও জয়দীপদার সঙ্গে দেখা হলেই চা-সিঙ্গারা খাইয়ে নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা জুড়ে দেন; দাড়িঅলা লম্বা ফরসা মতন দেখতে জয়দীপদা। কবি।
রত্না আপু বলে, দীপ শুধু কবি না, বিপ্লবীও ঘুড্ডি। তার মানে- জয়দীপদা বিপ্লবী কবি। রত্না আপু সঙ্গে ধানমন্ডির কোণ্ স্টুডিওতে ছবি তুলেছিল জয়দীপদা। জয়দীপদা আমায় সে ছবি দেখিয়েছিল। বেশ ঘনিষ্ট ছবি।
আমি লজ্জ্বা পেলাম। জয়দীপদা বলল, আহা, লজ্জ্বা পেও না শাওন। একদিন পৃথিবী তেমনই হয়ে যাবে দেখ। যৌথখামারে যৌথপ্রেম: তারপর শিশুবন্টন। জানো, প্রাচীন মিশরে ভাইবোনের বিয়ে হত?
রত্না আপু ঘরের জানালায় বৃষ্টির মৃদু শব্দ।
ঘরে আবছা অন্ধকার। হাসনাহেনার গন্ধ। কী মনে করে রত্না আপু বলল, আমি যখন থাকব না তখন তুই মাঝে মাঝে আমার ঘরে এসে বসে থাকিস ঘুড্ডি।
কই যাবা তুমি? আমি তো রীতিমতো অবাক।
আমি জানি আমি কই যাব?
না।
তয় জিগাস ক্যান।
তাই তো?
পুলিশের গুলিতে এক পথচারীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ধর্মঘট চলছিল । ঘরের মেঝেতে বসে দুপুরবেলা আঁক কষছিলাম। হঠাৎ বেলি ফুলের গন্ধ পেলাম। মুখ তুলে দেখি- রত্না আপু।
আমার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে আমার হাতে একটা খাম গুঁজে দিয়ে বলল: যা! মন্দিরে যা। এই খামটা দীপকে দিয়ে আয়। মনের মত কাজ পেয়ে মনটা নেচে উঠল। আমি খামটা নিয়ে দুপধাপ নিচে নেমে এলাম। তারপর দৌড় ... দৌড়- গলির পর তস্য গলি পেরিয়ে তারপর টিপু সুলতান রোড: তারপর দক্ষিণ মৌশুন্ডির সরু গলি: সেই মন্দির।
তার চাতালে ১৯৭০ সালের স্তব্দ দুপুর থমকে ছিল; সেই রোদ। ছোট্ট চাতালে এক ঝাঁক পায়রা। তখনও জানতাম না ঠিক এক বছর পর পাকিস্তানি সৈন্যেরা মন্দিরে আগুন দেবে। পূজারিকে গুলি করে মারবে। জয়দীপদার ঘরের সামনে এসে হাঁপাচ্ছি।
দরজায় তালা । কী করি। বুদ্ধি করে দরজার নিচে দিয়ে খামটা গলিয়ে দিলাম।
প্রত্যেক বছর জুন মাসের শেষে আমরা সপরিবারে হরিরামপুর যাই। জুন মাসের শেষে দাদুর মৃত্যু বার্ষিকী।
হরিরামপুর যাওয়ার দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল- ততই আমার মন আনন্দে দুলে দুলে উঠছিল। তার কারণ আছে। হরিরামপুর মানেই খোলামেলা দাদুবাড়ি। রাতের বেলায় চাঁদনি আসর, ঝিটকার হাটের ছানার সন্দেশ, পদ্মা নদী। ঝিটকার হাটের ছানার সন্দেশ খেতে আমার কী যে ভালো লাগে ।
যখনই হরিরামপুর যাই ছোট চাচা আমার হাতে কতগুলি আধুলি ধরিয়ে দেন। ছোট চাচা কবি। ছোট চাচা কবি বলে ঠিকই কিশোরের মন বোঝেন।
বড় চাচা অবশ্যি ছোটদের বাড়ির বাইরে যাওয়া আদপেই পছন্দ করেন না।
জুন মাসের সাতাশ তারিখ।
সকাল বেলায় আমাদের উয়ারির বাড়ির থেকে দুটো নীল-সাদা রঙের ভক্সওয়াগেন আর একটা মেরুন রঙের মাজদা মানিকগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হল। নীল ভক্সওয়াগানের পিছনের সিটে আমি বসেছি । গাড়ি চালাচ্ছে বাবা। পাশে মা। মায়ের কোলে মুন্নি।
আমি জানালার পাশে বসেছি। হাওয়ায় আমার চুল উড়ছে। আজ দিনটায় মেঘটেঘ নাই। কেমন ফুটফুটে রোদ উঠেছে। ছোট চাচা আমার পাশে বসেছে।
ছোট চাচার ফরসা মুখ, ঝাকড়া চুল; সাদা পাঞ্জাবি পরেছে। ছোট চাচা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সদ্য কবিতার বই বেড়িয়েছে। হাসিখুশি । আমার জন্মের পর বড় চাচা আমার নাম রাখতে চেয়ে ছিল: শাহ্ আলম।
ছোট চাচা কঠোর প্রতিবাদ করেছিল। ছোট চাচা আমার নাম রেখেছে, শাওন। ছোট চাচা বড় চাচার প্রতিপক্ষ।
ছোট চাচা পাঞ্জাবীর পকেটে হাত ঢোকাল। তারপর কী যেন বার করে বলল, নে ধর।
আমি হাত বাড়াই। কী। দেখি চারটে চকচকে আধুলি। আমার মনটা আরও খুশি হয়ে গেল। ঠিক তখনই রাস্তায় পাকিস্তানি সৈন্যদের এক ট্রাক দেখে চুপসে গেলাম।
তখনও জানতাম না ঠিক এক বছর পর পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা কী রকম ধ্বংযজ্ঞে মেতে উঠবে।
দুপুরের ঠিক আগে আগেই দাদুবাড়ি পৌঁছলাম। তখন মেঘ করেছিল। বাড়ি ভর্তি লোক। ছোট ফুপুরা এসেছে সিঙ্গাইর থেকে।
বড় ফুপুরা ঘিওর থাকেন- তারাও এসেকে। আমার দুই ফুপু। অনেকদিন পর বাদলকে দেখলাম। বাদল ছোট ফুপুর ছেলে। আমারই সমবয়েসি।
ক্লাস এইটে পড়ে। বাদল তেমন উচ্ছ্বল নয়; কেমন গুটানো। কখনও জানতাম না পরের বছর জুন মাসে পাকিস্তানি সৈন্যরা আমার ফুপুর সামনে থেকে বাদলকে টেনে হিঁচড়ে উঠানে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলবে!
উঠানের ঠিক মাঝখানে লাল রঙের একটা হৃস্টপুষ্ট একটা গরু খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। গরু ঘিরে হালকা পাতলা ভিড়। বাদলও উঠানে দাঁড়িয়ে ছিল ।
কাল গরুটাকে জবাই করা হবে। প্রতি বছর দাদুর মৃত্যুবার্ষিকীতে একটা গরু জবেহ করা হয় । আমার দাদু ছিলেন হরিরামপুরের ডাকসাইটে মানুষ। সে কারণেই দাদুর মৃত্যুবাষির্কীতে আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রায় হাজার খানেক লোক এসে উপস্থিত হয়। দুপুরের আগেই কাচারিবাড়ির একটা ঘরে চাটাইয়ের ওপর ভাতের পাহাড় জমে ওঠে।
দাদুর মৃত্যুবার্ষিকীর খরচ সবাই শেয়ার করে। সামান্য মনোমালিন্য থাকলেও আমাদের পরিবার বন্ধন এখনও অটুট। সন্ধ্যের পর জ্যোস্না ফুটলে ছাদে চাঁদনি আসর বসে। মধ্যরাত অবধি আড্ডা হয়। হাসিঠাট্টা হয়।
চাঁদনি আসর নিয়ে ছোট চাচা একটি কবিতাও লিখেছে: ‘ঝিটকার প্রসিদ্ধ ধবল জ্যোস্নায় আমরা ক’জন। ’ বড় ফুপু আর আমার আম্মার গানের গলা ভালো। সুতরাং-‘আজ জোছনা সবাই গেছে বনে। ’ বড় চাচা কেবল ব্যাতিক্রম। তিনি কখনও চাঁদনি আসরে আসেন না।
তার সম্ভবত চাঁদনি রাত ভালো লাগে না। তিনি অনেক রাত অবধি নামাজ পড়েন। অবশ্য ছোট চাচা নামাজ না পড়লেও আমার আব্বা নিয়মিতই নামাজ পড়েন। অথচ, আব্বা ভারি আড্ডাবাজ। বড় চাচীকেও কখনও ছাদে যেতে দেন না বড় চাচা।
বড় চাচী জায়নামাজে বসে থাকেন। আমার মনে হয় চাঁদনি আসরে আসার জন্য বড় চাচীর মনটা ভীষণই ছটফট করে। অথচ, চাচীকে জোর করে জায়নামাজে বসিয়ে রাখা হয়। তবে রত্না আপু ঠিকই চাঁদনি আসর মাত করে রাখে। ঘন ঘন নিচে নেমে ট্রে ভরতি করে চা চানাচুর বিসকিট ওপরে নিয়ে আসে।
রত্না আপুর প্রধান সহকারি আমি ।
পর দিন। ভোর। বাড়ির লোকেরা সব ভিড় করেছে উঠানে। সেই হৃস্টপুষ্ট লাল গরুটা কে ধরেবেঁধে উঠানে শুইয়ে ফেলা হয়েছে।
এক্ষুনি জবেহ করা হবে। আমি আর রত্না আপু যে খিড়কি দরজা দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। কেউই লক্ষই করল না।
হরিরামপুরের আমাদের দাদুবাড়ির পিছনে ধু ধু মাঠ। তারপর দুপাশে ঘন বাঁশঝাড়।
বাঁশঝারের মধ্যিখান দিয়ে পথ বেঁকে গেছে নদীর ধারে। পদ্মা নদী। এপারে খেয়াঘাট। ওপারে চর। ভালো করে রোদ ওঠার আগেই রত্না আপু আর আমি খেয়াঘাটে পৌঁছে গেলাম।
পদ্মা নদী দেখে বুক কেঁপে উঠল। আজ নদী পেরুব। যদি নৌকা উলটে যায়। গতবার কি তার আগেরবারও আমি আর রত্না আপু পদ্মা নদীর ঘাট অবধি এলেও কখনও নৌকায় করে নদী পাড় হইনি। আজ নদী পেরিয়ে চরে যাব ঠিক করেছি।
ঘাটে একটি নৌকা ওপারে যাওয়া জন্য তৈরিই ছিল। আমরা নৌকায় উঠে গলুইয়ে বসলাম। পাশাপাশি। দেখতে দেখতে নৌকার গলুই ঘুরে গেল। নৌকায় যাত্রী তেমন নাই ।
একজন বৃদ্ধ কেবল একটা ছাগলছানা নিয়ে বসেছিল। রত্না আপুর শ্যামলা মুখটা কেমন গম্ভীর। আপনমনে বলল, জানস ঘুড্ডি- আমরা যে চরে যাইতেছি সেই চরের নাম বয়রা।
বয়রা?
হ। বয়রা।
বয়রা মানে কি রত্না আপু?
কানে যে কম শোনে বোধহয়।
বয়রা চরের লোকেরা কানে কম শোনে?
মনে হয়।
আমি কোলে ছাগল ছানা নিয়ে বসে থাকা বৃদ্ধর দিকে তাকালাম।
তারপর কতক্ষণ যে কাটল। বয়রা চরের ঘাটে নৌকা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছি আমরা।
ঘাটটা কেমন বিরান। বহুদূর পর্যন্ত বালি আর বালি ছড়িয়ে আছে। মধ্যাহ্ণের রৌদ্রকিরণে বালির কণাগুলি হিরের কুচির মতন ঝিকমিক করছিল। আমার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সেই বৃদ্ধটি ছাগলছানা কোলে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
আমি আর রত্না আপু পাশাপাশি হাঁটছি। আজ হলুদ রঙের শাড়ি পরেছিল রত্না আপু । লাল ব্লাউজ। গলায় মুক্তার মালা। মৃদু হেসে বলল, জানস ঘুড্ডি একটুপর না মজার একটা ঘটনা ঘটবে।
কী?
রত্না আপুর মুখে চাপা হাসি। বলব না। নিজেই দেখতে পাবি।
জায়গাটা কেমন বালি বালি আর ফাঁকা। চর বলে কি গাছ থাকতে নেই।
দূরে অবশ্য গাছপালা চোখে পড়ল। হঠাৎ দেখলাম জয়দীপদা! বালির ওপর পা ছড়িয়ে বসে আছে। আমি তো রীতিমতো অবাক। খালি গা। ফরসা শরীর।
বুকে বাদামি রোমে ভর্তি । কালো রঙের প্যান্ট। মুখ ভরতি দাড়ি। সিগারেট টানছেন। আমাদের দেখে সিগারেট ছুঁড়ে দিলেন ফেলে দিলেন।
রত্না আপু ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল জয়দীপদার বুকে। তারপর দু-জন দুজনকে খুব চুমু খেল। আমি যে দাঁড়িয়ে আছি- কারও খেয়ালই নেই। আমার লজ্জ্বা হল। মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
একবার জয়দীপদা আমাকে বুঝিয়ে ছিল: একদিন পৃথিবী নাকি তেমনই হয়ে যাবে। যৌথখামারে যৌথপ্রেম: শিশু-বন্টন। অনেক অনেক আগে প্রাচীন মিশরে ভাইবোনের বিয়ে হত। সেসব কথা এখন আমার মনে পড়ে যেতেই শরীরে ঘাম ছুটল।
খানিক বাদে দুজন বিচ্ছিন্ন হল।
আমি জিজ্ঞেস না করে পারলাম না: তুমি...তুমি এখানে কী করে এলে জয়দীপদা?
এখন আমার কাজ তো এখানেই- এই বয়রা চরের জেলেপাড়ায়। ভুলে গেছ-আমি বিপ্লবী কবি।
ও।
জয়দীপদা ততক্ষণে আরেকটি সিগারেট ধরিয়েছে। রত্না আপু চোখের ইঙ্গিত করে জয়দীপদাকে কী সব বলল।
জয়দীপদা বলল, আজ আমরা বিয়ে করব শাওন।
বিয়ে? আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এদিক-ওদিক তাকালাম। বিয়ে করতে কত কিছু লাগে। কিছুই যে নেই।
খালি ধূধূ চর। রোদ। গরম বালি। নদীর পাগলা হাওয়া। ওপরে ঝকঝকে আকাশ।
জয়দীপদা মাথা চুলকে বলল, বিয়েটিয়ে না করলেও হয় অবিশ্যি। তবে তোমার তন্বি দিদিটিকে বহু আগেই বাংলার মাটি বাংলার জল সাক্ষী রেখে বিয়ে করব ঠিক করেছি। এ বিয়ের পুরোহিত তুমিই হও না কেন শাওন? বলে হা হা করে হেসে উঠল জয়দীপদা।
আমি?
হ্যাঁ। তুমি।
হে মোর কিশোর পুরোহিত।
সব দেখেশুনে আমার মাথা ঝিমঝিম করছিল। তো, বিয়েটা হল। অদ্ভুত ভাবেই হল। অনেক আগে থেকেই হয়তো মনে মনে ভেবে রেখেছিল রত্না আপুরা।
প্রথমে বরকনে মুখোমুখি দাঁড়াল। দুজন দুজনের দিকে তাকালো। রত্না আপুর গলার মুক্তার মালাটি রত্না আপু জয়দীপদার গলায় পড়িয়ে দিল। তারপর আমার সামনে নতজানু হল। আমি পুরোহিত বলেই দুজনার মাথার ওপর বালি ছিটিয়ে আর্শীবাদ করলাম।
বিয়ের পদ্ধতিটা আমি আরও নিঁখুত করলাম। আমার পকেটে ছোট চাচার দেওয়া চারটে আধুলির তিনটি তখনও ছিল। তার মধ্যে একটি খরচ হয়েছে নৌকায় খেয়া পাড় হতে। আরেকটি খরচ হবে ফেরার সময় । বাকি থাকল দুটো ।
আমি দুটো আধুলি দিয়ে বরবউকে আর্শীবাদ করলাম।
জয়দীপদা ‘সাধু’, ‘সাধু’ করে উঠল।
নদীর উথালপাথাল হাওয়ায় জয়দীপদার চুল উড়ছিল। জুন মাসের শেষ। দেখতে দেখতে চরের ওপর গভীর ছায়া জমে উঠল।
আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি পড়তেও দেরি হল না। সে বৃষ্টিও হয়ে উঠল ধূসর। আকস্মিক আড়াল পেয়ে যেতেই রত্না আপুরা বালির ওপর গড়িয়ে পড়ল। অনেক ক্ষণ।
আমি ধুম বৃষ্টির ভিতরে বসে ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে রইলাম। কেন যেন আমার আর লজ্জ্বা করছিল না। সম্ভবত আমাকে পুরোহিতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল বলেই।
বৃষ্টিবাদল থামল এক সময় । এবার ফিরতে হয়।
জয়দীপদা নৌকা পর্যন্ত এল। আমরা শেষ বিকেলের ম্লান আলোর নদী পেরুলাম।
তুমি কী করে জানলে যে জয়দীপদা এখানে?
কেন? সেদিন তুই মন্দিরে চিঠি নিয়া গেলি-মনে নাই?
ও, হ্যাঁ।
চিঠিতে সব লেখা ছিল। আমি আগেই জানতাম ও বয়রায় মাঝেমাঝে আসে।
জেলেশ্রমিকদের মধ্যে কাজ করে।
ও।
তুই একটা আস্ত ভোদাই ঘুড্ডি।
ও।
তারপর কী ভেবে গলার স্বর নীচু করে রত্না আপু বলল, দীপরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ রে ঘুড্ডি।
কেন?
দীপরা মনে করে ইস্ট পাকিস্তান খালি খালি স্বাধীন হইয়া কী লাভ যদি না ইস্ট পাকিস্তানের খাইটা খাওয়া মানুষজন দুইবেলা ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা না পাওয়া যায় । দেখ না। বলে নৌকার যাত্রীদের দিকে ইঙ্গিত করল রত্না আপু। নৌকায় নানা বয়েসী ছেলে বুড়ো নারী। প্রায় সবার পরনেই ছেঁড়া পোশাক।
প্রায় সবারই মুখচোখ কেমন দুঃখী।
তাই তো? ফিসফিস করে বলি।
দীপ বলে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ আসলে নাকি মিথ।
মিথ! মিথ কী?
কী জানি। রত্না আপু কাঁধ ঝাঁকালো।
ও এইসব বলে। আমি শুনে যাই।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা । উঠানে তখনও লোকজনের ভিড়। বড় বারান্দায় আলো জ্বলে ছিল।
বড়চাচা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে ছিলেন। পাশে ঝিটকা লোকমানিয়া দরগার ইমাম সাহেব বসে। ইমাম সাহেব পশ্চিমা। লাহোরী না সিন্ধি-কোন্খানে জানি দেশ। পরনে কুর্তা।
মাথায় সবুজ রঙের তুর্কি ফেজটুপি ।
আমাদের দেখে বড় চাচা খেঁকিয়ে উঠলেন। এই! তোরা ... তোরা এই দিকে আয়।
আমি আর রত্না আপু বারান্দায় উঠে আসি। আমার বুক কাঁপছে।
আবুল কাশেম ফজলুল হকের মতন দেখতে বড়চাচা । বিশালকায়। কাছে যেতেই গর্জে উঠলেন, কই গেছলি তোরা?
বেড়াইতে আব্বা। কন্ঠস্বরে কী তেজ রত্না আপুর। হলুদ শাড়িতে বিস্তর কাদা।
মুখচোখ দেখে মনে হচ্ছিল না ভয় পেয়েছে।
বেড়াইতে! কই গেছিলি বেড়াইতে!
অর্ধেক সত্যি অর্ধেক মিথ্যা বলল রত্না আপু। বেড়াইতে গেছিলাম নদীর ঘাটে।
নদীর ঘাটে! হারামজাদি! শরম করে না তোগো? বাড়ি ভরতি মেহমান। কাজকর্ম নাই।
চিৎকার শুনে ভিতর থেকে ছোট চাচা ছুটে এল । আহা, ভাইজান । থাক না । বাইরের লোকের সামনে-তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সিন ক্রিয়েট না করলে হয় না আপনার।
তুমি চুপ থাক ছোটমিয়া।
বড় চাচা গর্জে উঠলেন। তুমি কমিনিস্ট কর। কবিয়ালি কর। তোমার দেখাদেখিন বাসায় দুই দুইডা কমিনিস্টের ছাও পয়দা হইছে।
কে কমিউনিষ্ট?
কমিনিস্ট না হইলের ময়মরুব্বীর কাজকাম ফেলায়া পাড়া বেড়ায়।
ধিংগি মাইয়া কুনানের। বেহ্লাজ। বেশরম।
আমার ভয় লাগলেও হাসি পেল। এখন যদি বড় চাচাকে বলে দিই যে- খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গার ব্যানার্জী বাড়ির জয়দীপ বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার একমাত্র কন্যা সিতারা পারভীন ওরফে রত্নার শাদী মুবারক আজ দুপুরে সম্পন্ন হয়ে গেছে! তা হলে?
ইমাম সাহেব বললেন, আহা, আহা, তরফদার সাহিব।
তরফদার সাহিব। জেনানার কম বইস। তেনার গুসতাকি মাফ করিয়ে দেন। যান আম্মি, ভিতরে যান। খানা খিলান।
লেকিন, আর জানি পাড়া না বেড়ান।
ততক্ষণে সবাই জড়ো হয়েছিল। রত্না আপু ভিতরে যাবার জন্য পা বাড়াবে- বিদুৎ গতিতে ইজি চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বড় চাচা রত্না আপুর মুখে থাপ্পড় কষলেন।
আশ্চর্য! রত্না আপু টলে উঠলেও চিৎকার করল না।
ভাইজান! ছোটচাচা গর্জে উঠলেন।
তুই চুপ কর। কবিয়াল!
আমার হাত ধরে টানতে টানতে আম্মা আমাকে ভিতরের ঘরে নিয়ে গেল । থাপ্পড় মারার জন্য আম্মার হাতও উঠেছিল। তারপর হয়তো কে কোন্ পক্ষ ভেবে হাত করে শূন্যে স্থির হয়ে গেল ...
পরদিনই আমরা ঢাকায় ফিরে এলাম।
চর বয়রায় রত্না আপুর বিয়ের দিন বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম।
সেই জন্যেই কি না কে জানে: জ্বরে পড়লাম। আর, জ্বরের কী ঘোর। কী ঘোর। সারা গায়ে তাপ। অল্প অল্প ব্যথা।
মাঝে মাঝে টের পাই ভিজা গামছা দিয়ে আমার শরীর মুছে দিচ্ছে আম্মা । বর্ষাকাল শেষ হয়নি। আবছা বৃষ্টির শব্দও যেন শুনতে পেলাম ।
ক’দ্দিন পর আমার জ্বর সারল মনে নেই। আমি আবার স্কুল যেতে শুরু করলাম।
একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরেছি। শুনলাম কারা যেন রতœাপুকে দেখতে এসেছে। আমার বুকটা ধরাস করে উঠল। আম্মার কাছে সব জানলাম। ছেলে পাকিস্তানি।
সোয়েব ইউসুফ। ব্যবসা করে। বড় চাচার বন্ধু আলী আসগর ইউসুফজাই; ইসলামপন্থি রাজনীতি করেন পাকিস্তানে-সোয়েব ইউসুফ তারই মেজ ছেলে।
বিয়ে- জুলাই মাসের পনেরো তারিখ-স্থির হল।
পাত্রপক্ষ চলে গেলে রত্না আপু কাঁদল না।
মুখটা কেবল গম্ভীর দেখাল। আম্মার মুখও গম্ভীর। ছোট চাচার। আব্বার।
সে রাতেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল রত্না আপু।
আর ফিরল না। একদিন যায় । দুইদিন যায়। রত্না আপু আর ফিরে এল না।
আমাদের উয়ারির বাড়িটা থমথমে হয়ে উঠল।
একদিন বিকেল বেলা স্কুল থেকে ফেরার পথে আমি দক্ষিণ মৈশুন্ডীর সেই মন্দিরে গেলাম। জয়দীপদার ঘর তালা। পূজারী বললেন, জয়দীপদা এখানে আর থাকে না।
আমি রত্না আপুর ঘরে যাই। ঘরে হাসনাহেনার মৃদু গন্ধ।
এ ঘরে যতবার আসি ততবার ঐ ফুলের গন্ধ পাই। উত্তর দিকের বড় জানালাটা খোলা। জানালা ও ঘরের কিছু অংশে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নরম রোদ পড়ে আছে। আমি বিছানার এককোণে বসি। ছোট বালিশের পাশে একটা বই।
বইটি তুলে নিই। কবিতার বই; ছোট চাচার: ‘বনময়ূরীকে তোমরা কখনোই হত্যা করো না। ’ কবিতার বইয়ের একটি পৃষ্টায় আমার চোখ আটকে গেল:
দেখ, আমরা ক’জন
বসেছিলাম ঝিটকার প্রসিদ্ধ ধবল জ্যোস্নায়
তাম্রপ্রস্তর যুগে।
দূর সভ্যতার কল্লোলিত যান্ত্রিক ভিড়েও
তোমরা আমাদের পেয়ে যাবে।
আমারা যেহেতু বহমান।
আমার কেমন কান্নায় পায়। আমি বসে থাকি। খুব কাছে থেকে রত্না আপু ফিসফিস করে বলছে, আমি যখন থাকব না তখন তুই মাঝে মাঝে আমার ঘরে এসে বসে থাকিস ঘুড্ডি।
কই যাবা তুমি?
আমি জানি আমি কই যাব?
না।
তয় জিগাস ক্যান!
তাই তো?
আমি জানি রত্না আপুরা কোথায় আছে।
সেই ধূ ধূ চরে এখন শীত নেমেছে। আমি জানি রত্না আপু এখন কার বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে রয়েছে । আমার কিছু ভাল লাগছিল না। আমি ঠিক করলাম আমিও সেই শীতমাখা চরে যাব।
তবে আমার যাত্রায় ছেদ পড়ল।
কারণ, তত দিনে আমার বড় চাচারা আমাদের প্রতিপক্ষ বলেই আমাদের ওপর একটা ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছেন। নাঃ, পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের ওয়ারির ‘তরফদার মঞ্জিল’ তছনছ করেনি কি আগুনও দেয়নি। কেবল, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি এক মধ্যরাত্রে পাকিস্তানি আর্মিম বাড়িটা ঘিরে ফেলে: তারপর, ছোটচাচাকে টেনেহিঁচড়ে ট্রাকে তোলে । ছোটচাচা ২৫ মার্চ রাত্রেই বাড়ি ছেড়েছিল। কিছু জিনিসপত্র নিতেই কেবল বাড়ি এসেছিল।
আমি দৌড়ে বড় চাচার ঘরে যাই।
বড় চাচা তখন জায়নামাজে বসেছিলেন। প্রতিপক্ষ ধরা পড়েছে। তাকে এখন ফালি ফালি করে কাটার জন্য ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন তো খোদার কাছে শোকরানা আদায় করা যেতেই পারে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।