মনের জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবনাগুলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখি। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ হয়ে, ঐ দূর দিগন্ত পানে...
সকালে আমার দিনটা শুরু হয় বনলতার সুন্দর মুখশ্রী খানা দেখে। রাতে ঘুমানো পর্বের একটা পর্ব হচ্ছে তার একখানা ছবি ডেস্কটপে খুলে রাখা, যাতে ভোরে ঘুম চোখে উঠে পিসি খুলেই প্রথমে তার ছবিখানা চোখে পড়ে। আজও ভোরে উঠে মনিটর খুলে তার ছবিটা দেখে হেসে সেটি বন্ধ করে করে জানলা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখে বুঝার চেষ্টা করছিলাম বাইরে ঠান্ডা কেমন হবে। আজ অবশ্য প্রকৃতি নিজে থেকেই ঢাকঢোল পিঠিয়ে জানান দিচ্ছে ঠান্ডার পরিমাণ।
পথঘাট সব তুষারে ঢেকে আছে। এখনও পড়ছে। টেম্পারেচার চেক করে আঁতকে উঠার প্রয়োজন নেই। এমন দিনে তাপমাত্রা যেমন হওয়ার কথা তার চেয়ে ভাল নিশ্চয় হবে না।
রোজকার সকালের নানান আনুষঙ্গিকতা সেরে বেরোলাম অবশেষে, হাত পা মুড়িয়ে, মাথার উপর ছাতাখানা ধরা।
উশৃঙ্খল তুষারকণার হাত থেকে বাচার ক্ষুদ্র একটুকুন প্রয়াস। মনে সুপ্ত আশা বনলতার সাথে দেখা হবে পথিমধ্যে। দূর থেকে বার কয়েকবার কয়েকজনকে দেখে মনেও হল ওই বুঝি সে চলে গেল। হায়! আরও একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। কানে তখন রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজছিল।
ঠিক মনে নেই কোন গানটা। হঠাৎ আমার হাত কয়েক সামনে ভুজ ভাজির মত বনলতার আবির্ভাব। এই ব্যাপারটা আমি এখনও ধরতে পারলাম না। সোজা রাস্তা, একপ্রান্তে দাঁড়ালে পুরা এক মাইল দূরের সব কিছু দেখা যায়। হাত কয়েক সামনেই কেন তাকে নজরে পড়বে।
প্রতিটা দিন তো আর তার চাঁদ বদনখানি দেখার এমন সুযোগ হয়না। একটু দূর থেকে নজরে পড়লে একটু বেশিক্ষণ তাকে দেখা যেতো এই আরকি। একদিন মাত্র তার সাথে চোখাচোখি হয়েছিল। রবিবাবুর একটা কবিতা মনে পড়ছে।
ছাদের উপরে বহিয়ো নীরবে
ওগো দক্ষিণ-হাওয়া
প্রেয়সীর সাথে যে নিমিষে হবে
চারি চক্ষুতে চাওয়া।
হঠাৎ এই কবিতাটার কথা কেন মনে পড়ল বুঝতে পারছিনা। বোধহয় কাল রাতে শেষের কবিতা শুনার ফল। যায় হোক, হয়তোবা সেই চোখাচোখির দিন দক্ষিণা-হাওয়া নীরবে নিভৃতেই বয়েছিল, হয়তোবা না। জীবনানন্দের শরণাপন্ন হয়ে সেই চোখের নাম দিয়েছিলাম 'পাখির নীড়'। আজকে যখন তার সাথে হাত কয়েক দূরত্বে দেখা হয়ে গেল মনে হল সাক্ষাৎ বনলতা সেন যেন কবিতা থেকে উঠে এসেছেন।
অল্প কয়েকটি মুহুর্ত। কিন্তু সেই কয়েকটি মুহুর্তেই যেন মনের জানালায় অচেনা অজানা কোন পাখি যেন মধুর সুরে গেয়ে গেল। শ্যামল মিত্রের একটা গানের কথা মনের মাঝে গুনগুনিয়ে গেল।
নাম রেখেছি বনলতা
যখন দেখেছি
হয়তোবা সেই ক্ষণে তোমায়
ভালবেসেছি
বনলতা কও কথা
হইয়ো নাকো কুণ্ঠিতা।
তৃতীয় এবং চতুর্থ স্তবক খানা নিয়ে আমি যদিও সন্দিহান কিন্তু কি এসে যায় তাতে।
এমন মন ভুলানো পাখির গান তো রোজ রোজ শুনা হয় না। ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে পরলাম। এবং ভুলটা করলাম। রাস্তা তুষারের কারণে এমনিতেই পিচ্ছিল তার উপর আমার একহাতে ব্যাগ ধরা আর অন্য হাতে ছাতা। একটা ভুল পদক্ষেপ এবং পরক্ষণেই আমি ভূপাতিত।
বেশ জোরেই পরলাম। ব্যাথা ও লাগেনি বলতে পারছিনা। হাত পা ঝেড়ে উঠে প্রথমেই এদিক ওদিক তাকালাম কেও দেখে ফেলেছে কিনা বুঝার জন্য। দূরে কয়েকজনকে দেখলাম তারা দেখেছে কিনা বুঝতে পারছিনা। অথবা দেখলেও ভ্রুক্ষেপ করছেনা।
নিজের মনে হেসে তখনও ভূলুণ্ঠিত আমার ব্যাগখানার দিকে চেয়ে মনে মনে বললাম, "বুঝলিতো বনলতা নামে কেন কেও থাকতে নেই নইলে সবার তোর মতন এ দশা হতো"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।