আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফারিনের গল্প (৩): ক্রন্দসী, সেন্টিমেন্টাল maudlin!

শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
[আমার তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে ফারিন, তার মাথায় রাজ্যের যত চিন্তা। অদ্ভুত এক স্বভাব তার, সারাক্ষণ নানা অভিযানে ব্যস্ত--বিজন বনের ভেতর দিয়ে, তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে, মেঘমালাদের দেশ ছাড়িয়ে, হয়তো পরীদের দেশ সেই সুদূর কোহে আলফামে। আর কথা বলছে নানা মানুষ ও জিনিসের সাথে--কঙ্কাবতী, কনকলতা, সন্ধ্যামালতী, ব্যাঙমা-ব্যাঙমি, পরীদের রাজকন্যা দরিয়া, বা প্রাচীন অশ্বত্থ বৃক্ষ কিংবা সঞ্জীবনি ঝরণার সাথে। ইদানিং কথা বলার এক নতুন ধরণের সঙ্গী পেয়েছে সে।

বিভিন্ন শব্দ (word) নাকি তার কাছে মানুষের মত তাদের জীবনকাহিনী বলে। আজকে ফারিনের ৩য় কাহিনীটি প্রিয় পাঠকদের জন্য নীচে তুলে ধরা হল। ] ফারিনঃ আমি আলোকিত ও অভিযানপ্রিয় ফারিন। তুমি কে গো? maudlin: তুমি একথা বলতে পারলে! তুমি আমাকে চেন না! তাহলে আর কি। আমারই দুর্ভাগ্য...[ফোঁপানোর শব্দ] ফারিনঃ [বিব্রত হয়ে] আহা, এত অল্পতে সেন্টিমেন্টাল হয়ে গেলে চলবে? আমি দুঃখিত যে তোমাকে চিনি না।

maudlin: তোমার আর কি দোষ! আমার স্বভাবই এমন, সবসময় সেন্টিমেন্টাল থাকি আর কান্না পায়। এ গুণটা আমি পেয়েছি আমি মেরি মগডালেন (Mary Magdalene) এর কাছ থেকে। ফারিনঃ মেরি মগডালেন কে? আর উনি কি সবসময় এরকম থাকতেন? maudlin: উনার ব্যাপারে নানা মত রয়েছে। আমি তাহলে আমার জন্মসংক্রান্ত কাহিনীটি বলছি, যাতে তুমি আমাকে বুঝতে পার। মেরি মগডালেনের কাহিনী পবিত্র নবী ঈসাহ মসীহের (যীশু খ্রীষ্ট, Jesus Christ) সাথে গভীরভাবে জড়িত।

বাইবেলের নতুন নিয়মের (New Testament) যে ৪টি গ্রন্থে যীশুর জীবন ও শিক্ষার কাহিনী আছে তাদেরকে একসাথে গসপেল (Gospel) বলা হয়। এই গসপেলের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ঘট্নায় মেরি মূল ভূমিকা পালন করেন। বাইবেলের কাহিনীতে অবশ্য মেরি মগডালেনের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন তাঁর বয়্স, সামাজিক অবস্থান বা পরিবারের উল্লেখ নেই। তবে তাঁর নাম থেকে ধারণা হয়, তিনি এসেছিলেন মগডালা (Magdala) শহর থেকে। বর্তমানে জেরুজালেমের ১২০ মাইল পূর্বে গালীল (Galilee) সাগরের তীরে মগডালা নামে একটি শহর রয়েছে।

সাহিত্য, বাইবেলের নতুন নিয়্ম এবং ইহুদী শাস্ত্রেও মগডালার কথা পাওয়া যায়। রোমান শাসনামলে গালীলের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুব করুণ, কারণ রোমান রাজারা তাদের উপর চড়া ট্যাক্স ধার্য্য করত। ফলে অনেক পরিবার কখনো কখনো পেটের দায়ে তাদের শিশুদের বিক্রি করে দিত দাস ব্যবসায়ীদের কাছে। মেরি'র ভাগ্যেও সম্ভবত এই পরিণতি ঘটেছিল। ফারিনঃ [শিউরে উঠে] ইস, কী ভয়ংকর! আমি তো আব্বু-আম্মুকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারব না।

maudlin: হ্যাঁ। খুব ভয়ংকর। আবার কিছু বর্ণনামতে অভাবের তাড়নায় মেরি খারাপ মহিলা হয়ে গিয়েছিলেন, যদিও এ বর্ণনার সত্যতার ব্যপারে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। তুমি তো ছোট, তাই ভাল বুঝবে না। তুমি যখন বড় হবে, বুঝতে পারবে যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতায় মহিলাদের কী চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।

চলে যাওয়া মানুষের জন্য তুমি তো আর কিছু করতে পারবে না, কিন্তু তাদের জন্য ভালোবেসে যদি এক ফোঁটা চোখের জল ফেল, তাহলেই চলবে। ফারিন: [মাথা নেড়ে] আমি অবশ্যই তাদেরকে ভালবাসব। maudlin: ধন্যবাদ। লুক (Luke)-এর গসপেলে [Luke 8.2] বর্ণিত আছে, নবী মসীহ মেরির ভেতর থেকে ৭টা প্রেত (seven demons), যারা তাঁর উপর আছর করে ছিল (possessed), তাড়িয়ে তাঁর আত্মা পরিশুদ্ধ করেন। এই পরিশুদ্ধি সম্ভব কারণ স্রষ্টা গভীর মমতায় সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, আর তাই গভীর মমতায় তাদেরকে ক্ষমাও করেন।

বাইবেলে বলা আছে, মেরি মসীহের ২টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন: ক্রুশবিদ্ধকরণ (crucifixion) ও পুনরুজ্জীবন (resurrection)। তিনি যীশুর শেষ জেরুজালেম যাত্রায় সাথে ছিলেন, এবং তীব্র যন্ত্রণায় তাঁর ক্রুশবিদ্ধকরণ প্রত্যক্ষ করেন, যা মহাবিজ্ঞানী নিউটনের মতে শুক্রবার দিন, ২৩ এপ্রিল ৩৪ খ্রীষ্টাব্দ, রোমান শাসক পন্টিয়াস পাইলেটের (Pontius Pilate) আদেশে রোমানরা ঘটিয়েছিল। ক্রুশবিদ্ধকরণের পর যীশুর শবাধার (sepulcher) পাহারা দিতে গিয়ে মেরি দেখেন কবরে তাঁর দেহ নেই। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন কেউ একজন তাঁকে বলেন, "তুমি কাঁদছ কেন?" মেরি ভাবলেন লোকটি একজন মালি, এবং বললেন, "তারা আমার প্রভুর দেহ নিয়ে গেছে, আমি জানি না কোথায়।

" লোকটি তখন তাঁর নাম ধরে ডাকেন, এবং মেরি দেখতে পান তাঁর সামনে যীশু দাঁড়িয়ে। আনন্দে আপ্লুত হয়ে তিনি যীশুকে ছুঁতে যান, কিন্তু তিনি তাঁকে বলেন, "তুমি আমাকে ছুঁয়োনা। " তারপর যীশুর নির্দেশে তিনি দৌড়ে গিয়ে হাওয়ারীদেরকে (যীশুর শিষ্য, apostles) প্রভুর পুনরুজ্জীবনের সংবাদ দেন। বাস্তবে কী হয়েছিল, এ ব্যাপারে নানা মত, কিন্তু এই ঘটনা খ্রীষ্টান জাগরণের এক বড় ভিত। যদিও মেরি যীশুর ১২ জন হাওয়ারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নন, এবং তাঁর বিভিন্ন কাহিনীতে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি আছে, পুনরুজ্জীবনের ঘটনার কারণে তিনি অনেকের কাছে একজন হাওয়ারী, এবং তাকে বলা হয় হাওয়ারীদের হাওয়ারী (apostle of the apostles). ফারিনঃ তা মেরি মগডালেনের কাছ থেকে কিভাবে তোমার জন্ম হল? maudlin: তুমি তো শুনলে মেরি জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন।

জীবনের বড় অংশই কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছেন তিনি। মধ্যযুগে তাঁকে নিয়ে অনেক চিত্রকর্ম আঁকা হয়েছে। এসব চিত্রকর্মে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে দেখানো হয়ছে অনুশোচনার অশ্রুজলে, ক্রন্দনরত পাপী হিসেবে। ১৬ শতকের মধ্যে তাঁর নামের বানান Magdalene থেকে ধীরে ধীরে আমার জন্ম: maudlin, যা ইংরেজরা ব্যবহার করত এমন কাউকে বুঝাতে যে কান্নারতভাবে সেন্টিমেন্টাল, এমন একজন যে কথায় কথায় কেঁদে উঠে। ফারিনঃ তার মানে তোমার সাথে সেন্টিমেন্টাল শব্দটা অতিরিক্ত যোগ হয়েছে।

এরকম হল কেন? maudlin: যেহেতু ঐসব ছবিতে Magdalene কে পাপী হিসেবে দেখানো হয়েছে, সম্ভবত এই কারণে তাঁর কান্নার ভাষা গভীরভাবে অনুভব করতে পারেনি মানুষ। একজন পাপীর কান্না মনে হয়েছে সেন্টিমেন্টাল। তাই এখন maudlin অর্থ ক্রন্দনরতভাবে বা অতিরিক্ত সেন্টিমেন্টাল effusively, overfully, or tearfully sentimental). আমি এখন একটি ইংরেজি বিশেষণ (adjective), আমার ২টি ব্যবহার দেখলে ব্যপারটা স্পষ্ট হবে: "a maudlin wife who cries each time her husband makes the slightest delay in reaching home after his office", "maudlin expressions of sympathy"। ফারিনঃ মেরির কথা শুনতে আমার আরো ইচ্ছে করছে। maudlin: আমার যে আজ যেতে হয়, ফারিন।

আরেকদিন সময় পেলে বলব মেরির সাথে লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চির চিত্রকর্ম The Last Supper, ফ্রান্সের Merovingian রাজবংশ, যীশুর শেষ ভোজে ব্যবহৃ্ত বিখ্যাত পৌরাণিক পেয়ালা Holy Grail, এবং Knights Templar-দের কথিত সম্পর্কের কথা। আপাতত আমার সমার্থকদের (synonym) চিনে নাও: bathetic, mawkish, mushy, saccharine. sentimental. আজ তাহলে বিদায়। ছবি: ইন্টারনেট
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।