বছরের পর বছর ধরে যাচ্ছে লাখ লাখ ডলার। সুটকেস, ব্যাকপ্যাক ও প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগে করে যাওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থের গন্তব্য আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের কার্যালয়। আর এই অর্থ পাঠাচ্ছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।
১০ বছরের বেশি সময় ধরে এই অর্থ কারজাইয়ের কার্যালয়ে যাচ্ছে বলে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কারজাইয়ের সাবেক ও বর্তমান উপদেষ্টাদের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
খবর রয়টার্সের।
প্রতিবেদনে এই অর্থকে তথাকথিত ‘ভুতুড়ে অর্থ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠানোর পেছনে সিআইএর লক্ষ্য হচ্ছে, আফগানিস্তানে মার্কিন প্রভাব বিস্তার। কিন্তু পরিণামে এতে বরং দুর্নীতি বেড়েছে। যুদ্ধবাজ আফগান নেতারা ক্ষমতাবান হয়েছেন।
একই সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে ওয়াশিংটনের বেরিয়ে আসার কৌশল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা ‘নিউইয়ক টাইমস’কে বলেন, আফগানিস্তানে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় উত্স রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
হামিদ কারজাইয়ের কার্যালয়ে নগদ অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে অবশ্য ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি সিআইএ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।
২০০২ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত কারজাইয়ের কার্যালয়ে চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খলিল রোমান বলেন, ‘কারজাইয়ের দপ্তরে এই অর্থকে আমরা “ভুতুড়ে অর্থ” হিসেবে জানি।
এই অর্থ গোপনে এসে গোপনে বেরিয়ে গেছে। ’
মার্কিন অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সিআইএ বিভিন্ন প্রয়োজনে আফগান প্রশাসনকে অর্থসহায়তা দিয়ে আসছে। ব্যাপারটি আফগানিস্তানে নিয়মিত মার্কিন সাহায্যেরই অংশ বলে জানা গেছে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে জানা যায়, হামিদ কারজাইয়ের কার্যালয়ে নগদ অর্থ দেওয়াটাও নিয়মিত মার্কিন সাহায্যের অংশ। এটি গোপন কোনো বিষয় নয়।
এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন মেনেই এ অর্থসহায়তা চালু করা হয়।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সিআইয়ের এই অর্থ কারজাই ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করেছেন—এমন কোনো প্রমাণ অবশ্য নেই। সিআইয়ের কাছ থেকে অর্থ আসার পর তা আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অনেক মার্কিন কর্মকর্তাই আফগান প্রেসিডেন্টের কাছে এই অর্থ আসার বিষয়টি জানেন। এমনকি বেশ কয়েকজন আফগান কর্মকর্তার এ বিষয়ে ধারণা রয়েছে।
তাঁদেরই কয়েকজন ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে জানান, কারজাইয়ের ঘনিষ্ঠ মহলে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার জন্য সিআইএ এই অর্থের জোগান দেয়। অর্থ জোগানের আরও একটি লক্ষ্য, আফগান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা।
এই অর্থের একটা বড় অংশ চলে গেছে আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ গোষ্ঠীপ্রধানদের হাতে। রাজনীতিকেরাও এই অর্থের ভাগ পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের সন্দেহ, এই অর্থের একটা বড় অংশ প্রায়ই তালেবান নেতাদের হাতে যেত।
কয়েকজন মার্কিন ও আফগান কর্মকর্তা জানান, সিআইয়ে এই অর্থের মাধ্যমে বিভিন্ন যুদ্ধবাজ গোষ্ঠীকে মদদ দিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের। এর মাধ্যমে সিআইএ মার্কিন সরকারকেও বিপদের মধ্যে ফেলেছে।
২০১০ সালে ইরান থেকে ব্যাগ ভর্তি অর্থ পেয়েছিলেন হামিদ কারজাই। আফগানিস্তানে ইরানি সহায়তার অংশ হিসেবে কারজাই এ অর্থ পান বলে তিনি জানিয়েছিলেন। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও কারজাই একই অর্থসহায়তা পেয়েছিলেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিআইয়ের অর্থের মতো ইরানি অর্থও চলে গেছে আফগান যুদ্ধবাজ ও রাজনীতিকদের কাছে।
১১ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন কারজাই। তাঁর শাসনামলে তিনি দেশে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করেননি বলেই চলে। আফগানিস্তানে বিভিন্ন সূত্র থেকে কোটি কোটি ডলারের অর্থসহায়তা পেলেও এখনো মাঝারি শক্তির একটি নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াও থমকে আছে একই জায়গায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।