আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!
-এই টাই ?
-হুম ভাই এই বাসা । আনিকারা দুইতালায় থাকে । এই দেখেন বাসা নাম্বার তের ।
-তুমি কেমনে জানো ? এর আগে বার ঠিক জাইনা কেমন বিপদে পড়ছিলা মনে নাই ? পাজামা ধরে টানা টানি শুরু হইয়া গেছিল ।
-আরে আমার কি দোষ বলেন ? আনিকা বলছিল হাউজিংয়ের বাসা নাম্বার তের ।
আমি তো তের নাম্বার বাসাতেই গেছিলাম ।
-হুম বুঝলাম । তোমার কোন দোষ নাই তো । সে কইছে মোহাম্মাদি হাউজিংয়ের বাসা নাম্বার তের আর তুমি হাজির হইছো কাদেরাবাগ হাউজিংয়ের তের নাম্বার বাসার সামনে । তোমার দোষ কেমনে থাকে ?
দেখলাম হেকটর দাঁত বের করে হাসলো ।
আজ দুপুর বেলা ওর যে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেল সেটা যেন খুব একটা হাসির ঘটনা । অবশ্য যারা যারা ঘটনা প্রত্যেক্ষ করেছে তাদের কাছে হাসির ঘটনাই বটে । হেকটর যখন পাজামা ছাড়া পাঞ্জাবী পরে ঝেড়ে দৌড়াচ্ছিল আমরা বড় আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । যদিও ঐটা হেকটরের জন্য মোটেও আনন্দময় কোন ঘটনা ছিল না । হেকটর বলল
-অপু ভাই এতো সমস্যা নেওয়া ঠিক না ।
যা হওয়ার হইছে । এখন আসেন আসল কাজ করি ।
আমি খানিকটা চমকে উঠি ! ব্যাটা কয়কি ? বললাম
-আসল কাজ মানে কি ?
-আরে আপনাকে কি বললাম ? আনিকার সাথে দেখা করতে হবে মনে নেই ? ওর সাথে দেখা করার কথা ছিল আজকে কিন্তু মাঝখান দিয়ে তো দেখলেনই কি ঝামেলা বেঁধে গেল । আমি না যাওয়াতে ও খুব মাইন্ড করেছে ! এখন ওকে কোন মতে বুঝিয়ে ঠিক করেছি । এখন দেখা না করলেই নয় ভাই ।
আমি আবার তের নাম্বার বাড়িটার দিকে তাকালাম । কেবল বাড়ির সামনের দিকে একটা এনার্জি সেভিং লাইট জ্বলছিল দেখেছি ! তাছাড়া পুরা বাড়ি একাবারে অন্ধকার ! একটা আলোও জ্বলছে না !
অবশ্য রাত এখন যথেষ্ঠ হয়েছে । একটার কিছু বেশি বাজে ! এই সময়ে কারো বাড়িতে মানুষ কেমনে যায় আমি ঠিক বুঝলাম না ! আর ঐ মাইয়ার মাথায় কি আছে কে জানে ? আর আমাদের হেকটরের মাথায়ই বা কি কাজ করতেছে কে জানে ?
এমনিতেই হেকটরে আজকে একটা বড় ফাড়া গেছে ! এখন আবার কি বিপদ হয় কে জানে !
আমরা দাড়িয়ে আছি বাড়ির ডানদিকে ! হাউজিংয়ের এই দিকটা একাবারে নির্জন । মানুষজন কেউ নেই এমন কি একটা কুকুরও দেখা যাচ্ছে না ! এখন যদি কেউ আমাদের দেখে ফেলে তাহলে কি ভেবে বসবে কে জানে ?
হেকটরকে দেখলাম পরনের লুঙ্গি কাঁছা মারতে !
বিকেল থেকে হেকটর সেই বাহারী পাঞ্জাবী পরে আছে । পাজামা তো আর নেই তাই আমার একটা লুঙ্গি পরে আছে !
দুপুরের ঘটনার পরে আমি পাশের এলাকায় যাই একটা কাজে ! হেকটরের জন্য একটু চিন্তা হচ্ছিল কিন্তু কিছু করার নাই ! ওর ফোন বন্ধ ছিল আর আমার মনে হয় না ও তখন কথা বলার মুডে ছিল ! যাই হোক কাজ সেরে যখন বাসায় আসলে দেখি হেকটর আমার ঘরের বিছানায় বসে আছে !
আমি দেখে বললাম
-আরে তুমি ? কই ছিলা ? কখন আসছো ?
-আর কইয়েন না ! মাত্রই এলাম !
-ঘটনা কি ? দেখা হইছে ?
দেখলাম ওর মুখটা মলিক হয়ে গেল ! যদিও অনেকটাই জানি তবুও আবারও ওর মুখে শুনলাম পুরো ঘটনা ! শুনে হাসতে হাসতে শেষ !!
একটু পরে ভাল করে তাকিয়ে দেখি এখনও কেবল পাঞ্জাবীতেই আছে ! আমার কোন প্যান্ট ওর হায়ে লাগলো না তাই লুঙ্গিই দিলাম ! বললাম
-আজকে রাতটা আমার এখানেই থেকে যাও ! কাল সকালে কিছু ভাবা যাবে !
হেকটরের মনে হয় সেই রকমই ইচ্ছা ছিল !
রাতে খেয়ে যখন ঘুমাতে যাবো তখনই হেকটর নতুন কথা শোনালো ! একটা ভুল হয়ে গেছে ! সারা দিন নাকি আনিকা তার জন্য অপেক্ষা করেছে ।
হেকটর না যাওয়াতে খুব রাগ করেছে । এখন যে করেই হোক তার রাগ ভাঙ্গাতে হবে !
তা না হলে নাকি সে বাঁচবে না ! হেকটর কে কিভাবে মরতে দেই তাই এতো রাতে এখনে আসা ! কিন্তু হেকটর আসলে কি করতে যাচ্ছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না !
আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়ে হেকটর বাধরুমের পাইপ বেয়ে উঠতে লাগলো !
-আরে তুমি কর কি ? কেউ চলে আসলে উপায় আছে ?
খানিকটা উপরে উঠে হেকটর থামলো ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-চিন্তা নিয়েন না ! কেউ আসবে না !
হেকটরের মুখে কথা মুখেই রয়ে গেল ! কোথা থেকে একটা চিৎকার ভেসে উঠলো
-এই চোর চোর !
আমার বুকটা ধরাৎ করে কেঁপে উঠলো ! এই সেরেছে । এবার বুঝি মাইরই খেতে হয় ! আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ! কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল এভাবেই ! একটা পায়ের আওয়াজ এগিয়ে আসছে দ্রুত ! আমি শুনতে পাচ্ছি !
এর মধ্যেই হেকটর যত টুকু উঠেছিল সে খান থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়লো ! তারপরই দৌড় !
কেবল একটা কথাই ওর মুখ দিয়ে বের হল
-অপু ভাই দৌড়ান !
আমিও আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না ! একবার যদি ধরা পরি তাহলে খবরই আছে ! আমরা দুজনেই গলির শেষ মাথা বরাবর দৌড়াতে শুরু করলাম। হেকটর আমার থেকে একটু এগিয়ে আছে । আমার আগেই সে পৌছে গেল গলির মাথা ! কোন কথা চিন্তা না করে ডান দিকে মোড় নিল ! আমি ওকে সাবধান করতে গেলাম যে ডানদিকে যেও না ! এই এলাকায় আগে থাকতাম ! গলীর ঐ দিকে একটা বড় নর্দমা আছে ! রাস্তা শেষ ! কিন্তু আমার কথা ওর কানে পোছায় ততক্ষনে সে চলে গেল চোখে আড়ালে !
কি আর করা আমি বাঁ দিকে দৌড় দিলাম !
পাঁচ সাত মিনিট পরে যখন মনে হল আমার পিছনে কেউ নেই তখন একটু দম নেওয়ার জন্য থামলাম ! যাক এবারের যাত্রায় বাঁচা গেল মনে হচ্ছে ! আমি এমনটাই ভাবছি তখনই আমার ভুল ভাঙ্গল ! একটা হেড লাইটের আলো এসে আমার চোখে লাগল !
এতো রাতে গাড়ি ?
এখানে ?
প্রথম যে কথা টা মনে হল সেটা হল
পুলিশ !
টহল পুলিশ !
সেরেছে রে !
হঠাৎই একটা গম্ভীর কন্ঠ বলে উঠল !
-কে ? এদিকে আসুন !
আমি দুরুর দুরুর বুক নিয়ে এগিয়ে গেলাম ! এখান থেকে দৌড় দেওয়ার মানে নেই !
আমি কাছে যেতেই ভাল করে দেখালাম চেহারাটা ! বেশ শক্ত সামর্থ্য চেহারা ! পুলিশ ভ্যানের সাথে হেলাদ দিয়ে দাড়িয়ে আছে ! সিগারেট টানছে একভাবে ! আমার দিকে না তাকিয়ে বলল
-দৌড়াচ্ছিলেন কেন ?
কি বলবো প্রথমে কিছু বুঝতে পারছিলাম না ।
তখনই মাথায় বুদ্ধিটা আসলো !
বললাম
-আসলে আমি একটা অনলাইন সংবাদ পত্রিকায় কাজ করি ! রাতে বাসায় আসছিলাম । বাড়ির কাছে আসতেই দেখি একজন কাঁছা মারা লোক আমাদের বাসার বাথরুমের পাইপ দিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে । তের নাম্বার বাসা ! তাকে তাড়া করছিলাম !
আমার কথা শুনেই পুলিশ অফিসার খানিকটা কৌতুহলী হয়ে বলল
-ঠিক দেখেছেন কাঁছা মারা ?
-জি ! ঠিক দেখেছি !
-কি রংয়ের লুঙ্গি ছিল !
-সাদা কালো চেক !
নিজের লুঙ্গির রং নিজে না জানলে কি আর চলে !
পুলিশ চরাৎ করে লাফ দিয়ে উঠলো ! খানিকটা চিৎকার করেই বলল
-দ্যাটস দ্যা কার্লপ্রিট !
আমি খানিকটা সংকিত গলায় বললাম
-কে ?
-ছায়া হেকমত ! সব সময় সাদা কালো চেকের লুঙ্গি পরে !
-ছায়া হেকমত ?
আমার কথা কোন জবাব না দিয়ে পুলিশ অফিসার বলল
-আপনি কোন দিকে দিয়ে আসছেন ?
-এই তো তের নাম্বার বাড়ির সামনে দিয়ে !
-হুম ! আজকে বেটাকে পেয়েছি ! এদিকে যেতেতু আসে নাই ! ডান দিকে গেছে নিশ্চিত । ঐ দিকে রাস্তা বন্ধ !
তারপর পুলিশ অফিসারটি নিজের ওয়ারলেস বের করে কি যেন হ্যালো ওভার আউট বলতে শুরু করলো ! কাকে কাকে যেন নির্দেশ দিচ্ছে ! আমি চুপচাপ শুনছি আর ঘামছি ! ঐ দিকে হেকটর গেছে । না জানি ওর কপালে আজকে কি আছে !
এখন যদি এখান থেকে কেটে পরা যায় তাহলে ওকে একটু সাহায্য করা যায় ! বেটা কিছু না বুঝে কেন যে ঐ দিকে দৌড় দিল !
আমি বললাম
-আমি কি যেতে পারি ?
-দাড়ান !
পুলিশ অফিসারটি কথা শেষ করে আমার দিকে ফিরলো ! বলল
-আইডি কার্ড আছে ?
-জি !
-কোন পত্রিকা ?
-জি দৈনিক বটবৃক্ষ !
-হুম ! ভাল পত্রিকা ! আমি প্রায়ই ঢু মারি আপনাদের পেইজে ! যাই হোক ! শুনেন আজকে ঐ ছায়া হেকমত কে ধরতেই হবে ! আপনাদের পত্রিয় একটা নিউজ করা যায় না আামকে নিয়ে ! কি বলেন ! এমন একটা ছবি ছাপলেন যে আমি ছায়া হেকমত কে ঘাড় ধরে নিয়ে যাচ্ছি ! শিরনাম হবে "এস আই হাসান মোশারফ হাতে ধরা পড়লো ছায়া হেকমত" ! কেমন ?
-হুম ! যাবে না কেন ? অবশ্যই যাবে ! তা এই ছায়া হেকমত টা কে ?
আমার মুখে ছায়া হেকমতের কথা শুনেই এস আই হাসান মোশারফের মুখ টা বিকৃত হয়ে উঠল ! বলল
-আই বলবেন না ! শ্লা একটা ছেচড়া চোর ! এই এলাকায় খুব উৎপাত করছে কদিন থেকে ! আর সব থেকে বড় কথা হল ....।
কথা শেষ না করে এস আই চুপ করে গেলেন !
-বড় কথা ?
-হেকমত কোন দামী জিনিস চুরি করে না !
-তাহলে ?
-তার পছন্দের তালিকায় আছে মেয়েদের ছায়া ব্লাউজ পেটিকোর্ট এই সব ! কি অদ্ভুদ দেখেন ?
-হুম !
-আর দুঃখের কথা কি বলবো আমার নিজের বউয়ের ছায়া ব্লাউজ তিন বার চুরি করে নিয়ে গেছে । লজ্জায় কাউকে বলতেই পারি না !
-তাই নাকি ?
আরো কিছু কথা বলার ইচ্ছা ছিল দেখলাম একটু দুর থেকে কাদের যেন গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ! দুর থেকেই একজন বলে উঠল
-স্যার আজকে পেয়েছি ব্যাটা কে !
দেখলাম এস আই হাসান মোশারফ হৈ হৈ করে উঠলো !
-আজকে পেয়েছি !
আস্তে আস্তে লোক গুলো আলোতে আসলো ! আমি তাকিয়ে আছি তাদের দিকে ! মোটা চার জন পুলিশের পোষাক পরা লোক ! সিপাহীই মনে হল ! তাদের মাঝ খানে কালো মত কিছু একটা হেটে আসতে টালতে টালতে !
আরো কাছে আসলে তাদের চেহারা আরো ফুটে উঠলো ! দেখলাম
মাঝখানে দাড়ানো লোকটা টালছে ! সারা গায়ে নর্দমার কালো ময়লা লেগে আছে ! সেখান থেকে বিকট দুর্গন্ধ আসছে ! যদিও ওর চেহারা বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু আমার একটুও বুঝতে বাকি রইলো না এই হেকমত চোর মনে করে ওরা কাকে ধরে নিয়ে এসেছে !
এস আই হাসান মোশারফ রুমাল দিয়ে নাক চেপে ধরে বলল
-এটার এই অবস্থা কেন ?
চারজন সিপাহীদের একজন বলল
-আর বলবেন না স্যার ! অন্ধকারে মনে হয় হুশ করতে পারি নি । সোজা ডোবার ভিতরে গিয়ে পরেছে ! উঠতেই পারছিলনা ! শেষে আমরা দড়ি দিয়ে টেনে তুলেছি ! দেখছেন কেমন টলছে !
আমি আর একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম হেকটরের গায়ে একটা সেন্ডু গেঞ্জী ! ওর বাহারী রংয়ের পাঞ্জাবীটা গেল কোথায় ?
আমার মনের কথার জবাব দিয়ে দিল আরেক সিপাহী ! বলল
-স্যার জানেন আজকে বেটা পাঞ্জাবী পরে চুরি করতে এসেছিল ! পাঞ্জাবীর কারনে ডোবার পানিতে ঠিক মত সুবিধা করতে পারছিল না । শেষ ওটা খুলেই ফেলেছে !
যাহ ! গেল ! এতো সাধের পাঞ্জাবীটা গেল !
এস আই বলল
-কি বেটা আজকাল পাঞ্জাবী পরে চুরি করিস ? চল আজকে থানায় চল ! তোকে মজা দেখাবো ! এই টাকে গাড়িতে তোল !
দেখলাম অনেকেই কেমন নাহু নাহু করতে লাগলো ! কিন্তু কোন লাভ হল না ! তুলতেই হল !
আমার দিকে তাকিয়ে এস আই বললেন
-আপনার বেশি সময় নেবো না ! জাষ্ট আধা ঘন্টা ! থানায় যাবেন ! একটা ছবি তুলবেন ! তারপর আপনার ছুটি !
-কিন্তু আমি ক্যামরা আনি নি !
-সমস্যা নাই ! মোবাইলের ক্যামারা দিয়ে তুললেও চলবে ! আপনার টা না হলে আমার হবে ! আমার মোবাইলের ক্যামারা দিয়ে তুলবেন ! এটা দিয়ে খুব ভাল ছবি উঠে !
এই বলে এস আই তার বিশাল সাইজের একটা মোবাইল বের করলেন !
আমি মানা করতে পারলাম না ! যেতেই হল ! আর টার উপর হেকটরে অবস্থাটা খুব সুবিধার মনে হচ্ছে না ! আমি কিছু বলতেও পারছি না !
আমার কাছে মনে হল হেকটর ঘোরের ভিতর আছে ! ডোবার ভিতরে পরার শক মনে হয় এখনও কাটাতে পারে নাই !
আমরা সবাই মিলে আদাবর থানার দিকে রওনা দিলাম !
-চা খাবেন ?
-এখন ? না মানে !
-আরে খান ! খান !
দেখলাম এস আই সাহেব আমার খুব খাতির যত্ন করছে ! কেন করছে কে জানে ? হয়তো আমি তার সংবাদ ছাপব এই জন্য হয় তো !
এস আই বলল
-আপনার নামটাই তো জানা হল না এখনও ?
-আমি অপু তানভীর !
-অপু তানভীর ?
এই বলে এস আই আমার দিকে ভাল করে তাকালো ! তারপর বলল
আপনাকে কেমন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে ! অন্ধকারে ঠিক মত দেখতে পারি নি আপনার চেহারা টা !
এই সেরেছে ! আমাকে কিভাবে চেনা চেনা মনে হচ্ছে !!
-আপনি কি ব্লগে লেখা লেখি করেন নাকি ?
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-আপনি কিভাবে জানেন ?
-আরে আপনাকেই তো খুজছি !
-আমাকে ?
-হুম ! আপনার ভাবীতো আপনার লেখার খুব ভক্ত !
-তাই নাকি ?
কোন ভাবীর কথা বলছে কে জানে ? আমি না বুঝেই একটু হাসার চেষ্টা করলাম !
আমি আরো কিছু বলতে গেলাম তখনই ভেতর থেকে হেকটরের চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেলাম !
গেলাম গো !! মাইরা গেলাম !
আর করুমনা !! আর করুম না ! আমারে বাঁচান !
কতক্ষন চলল এই খেলা ! আমি অনেক্ষন চুপ করে থেকে বললাম
-ঐ চোর কে নিয়ে করবেন ?
-আজকে আর একটু সাইজ করবো ! তারপর কালকে ছেড়ে দিবো !
-সাইজ ! এটা কি হচ্ছিল ?
দেখলাম এস আই হাসলো ! বলল
-এটা তো এমন কিছু না ! আজকে ব্যাটারে কাছে পাইছি ! জানেন আপনের ভাবীর কাছে আমার মান সম্মান কিছু ছিল না এই হেকমতের কারনে ! আপনার ভাবী আমাকে কটাক্ষ করে বলত তুমি আমার কেমন এস আই যে তোমার বউয়ের ছায়া কেউ চুরি করে নিয়ে যায় ! তখন কিছু বলতে পারি নি ! আজকে ব্যাটা কে থ্যাড়াপী দেবো!
-থ্যাড়াপী ?
-হুম ! ডিম থ্যাড়াপীর নাম শুনেন নাই ! আপনাদের তো শোনারই কথা ।
-ডিম ! হুম ! আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
-ডিম থ্যাড়াপী দেওয়ার পর আপনারা ডিম গুলো কি করেন !
আমার এই কথা শুনে দেখলাম এস আই বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসলো ! বলল
-আসলে ডিম গুলো আমরা ওদের কেই খেতে দেই !
-মানে কি ?
-মানে আর কি ! রাতের বেলা একদিন ঢোকে আর দিনের বেলা অন্য দিক দিয়ে ! যাক বাদ দেন ওসাব কথা ! ডিম থ্যাড়াপী দেওয়ার আগেই কয়েকটা ছবি তুলে ফেলেন তো ! ডিম দেওয়ার পরে ও আর দাড়িয়ে থাকতে পারবে না ! চলেন চলেন !
ফটো তোলার কাজ চলল কিছুক্ষন ! আরও কিছু কথা বার্তা জিজ্ঞেস করলাম এস আই কে ! এবার এস আইয়ের কাছে অনুমুতি চাইলাম হেকটরের সাথে কিছু কথা বলার জন্য !
এক পাশে নিয়ে গেলাম ওকে ! ওকে মোটামুটি ধুয়ে সাফ করা হয়েছে ।
কিন্তু গা থেকে দর্গন্ধ এখনও আসছে !
-হেকটর !
-জে ! কেডা !
-আমি !
-আমি কেডা ?
-তোমার নাম কি ?
-আমার নাম ছায়া হেকমত !
-কি বল !
-জি ঠিকই বলি ! আপনে কে ভাই ! আমি প্রতিদিন মাইয়া গো ছায়া ব্লাউজ চুরি করি !
-তাই নাকি ?
আসলে হেকটর একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে । কোথায় আছে ঠিক বুঝতে পারছে না ! সিপাহী মনে হয় ভাল ডলা দিয়েছে । এখনও ডিম থ্যাড়াপী দেয় নাই দিলে কি হবে কে জানে !!
শুনেছিলাম পুলিশের হাতে পড়লে সবাই সব কিছু স্বীকার করে নেয় ! কিছু শুরু না হতেই এতো কিছু স্বীকার করেন নিচ্ছে না জানি সামনে আরো কত কিছু বলবে ! বললাম
-ছায়া পেটিকোর্ট দিয়ে কি কর ? বিক্রি কর ?
-জে না ! বাসায় জমা করে রাখি !
-জমা কেন কর ?
-শখ বলতে পারেন !
-আর কি কর ?
-আর সব করি !
-সব কি ? ছিনতাই কর ?
-জে করি ! নিয়মিত করি !
-গাঁজা খাও ?
-জে ! খাই ! আজকাও খাইছি !
-ইয়াবা !
-জি খাই !
বুঝতে পারছি এখন ওকে যা বলা যাবে সব কিছুতেই হ্যা বলবে । এর মাঝেও আমার কেন জানি একটু মজা করতে মন চাইলো ! বললাম
-তা আকলিমাকে ভালবাসো তো ?
-জে বাসি ! খুব বাসি !
-বিয়া করবে তাকে ?
-জি ! কাইলই বিয়া করবো ! আপনেরে দাওায়ত দিবো !
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস না করে বের হয়ে এলাম ! এস আই দেখলাম আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ! আমি কাছে আসতেই বলল
-এখ যদি ওকে বলি রাজিব গান্ধিকে কে মেরেছিল ও বলবে ও নিজে মেরেছিল ! পুলিশি মাইরের এমনই চমক !
-হুম বুঝতে পারছি ! যাই হোক ! আমি কি এখন যেতে পারি ?
-হুম ! অবশ্যই ! অবশ্যই ! এই তামিন !! কোথায় গেলে ! গাড়ি বের কর ! অপু সাহেব কে নামিয়ে দিয়ে আসো ! আর আপনার কিন্তু আমার বাড়ি দাওয়াত রইলো ! মনে থাকবে তো !
আমি হেকটরের দিকে আর একবার তাকিয়ে বের হয়ে এলাম থানা থেকে !
নাহ ! বেচারা ! আজকে বেশ ধকল গেল ! আরও যাবে সারা রাতে !
পুয়র হেকটর !
বলেছিলাম যে বেগে ইট আসবে পাটকেল যাবে তার থেকে দ্বিগুন বেগে ! পুলাপাইন শুনে না কথা বার্তা !!
হেক্টু মিয়ার প্রথম ডেটিং বিপর্যয় !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।