কতো কী করার আছে বাকি..................
গভীর রাতের ঘুম চিরে গলগল করে এক স্বপ্ন বেরিয়ে আসে। তাতে বর্ণ-গন্ধ লেগেছিল কিনা খেয়াল নেই কিন্তু অবয়বে তা ক্রমশ বিস্তৃত হয়-দৃশ্যান্তরের কুয়াশা সৃষ্টি করে, সেই কুয়াশাজালে ঘটনা এবং ঘটনাসম্ভূত শরীর ও ভৃমিরুপ তার অঙ্গীভূত কাঠামো কি শব্দ-বস্ত সমস্ত পরস্পর জড়িয়ে আরেক চিত্রবহুল মিহি চাদর তৈরি করে যার পরশ আমার ঘুমের শেষ প্রান্তরকে নাড়িয়ে দেয়। ফলে ঘুমবিহীন স্বপ্নে নাকি স্বপ্নবতি ঘুমে রাত কাবার করি বুঝতে পারি না। কেবল সকালে এই শহরের ইটকাঠের- ধুলি ধোঁয়ার- শব্দ গঞ্জনার চিত্রায়নে সেই স্বপ্ন অশরীরি আত্মা হয়ে আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, হয়তো বেয়াড়া স্বপ্নের আস্কারা দেখে আমার বিগত জীবনের সমস্ত স্বপ্ন এই শহরের দয়োলগুলোতে অভিজ্ঞ কোন পথিকের মত বসে থাকে। ফলে আমি স্বপ্ন মন্থিত হই।
সেই স্বপ্ন যা আমি গতরাতে দেখেছিলাম তাতে কিছু মরা মানুষের মুখ কথা বলে ওঠে, তাদের একজনের মুখাবয়বে আমার চাচা ভেসে ওঠেন, আর একজন তাকে চেনা যায় না, শরীরে সে সবার মতন, সেও কি যেন বলে-সবাই কি বলে বুঝি না কেবল একটা গোঙানরি আওয়াজ ছাড়া। সমস্ত শব্দ মিলিয়ে যে গোঙানির আওয়াজ ওঠে তা একটা বোতলে ঢুকে যায়- মদের বোতল । সেই বোতলে বাম-ডান সব একাকার। রক্ত ধোয়া পানি রঙের তরলে মানব পাকস্থলির নাড়ি-কন্ঠার হাড়-কত কত মুখচ্ছবি-হা করা মুখ নিসৃত স্লোগান সব জট পাকিয়ে থাক। সেই বোতল উপুড় করলে লালচে তরল গড়িয়ে কোথায় পড়ে বোঝা যায় ন।
হয়তো তা বাহিত হয় আমার ঘুম জুড়ে এবং তাও ছাড়িয়ে আমার একঘেয়ে সিথানপাশ ছেড়ে এই শহর, শহরের রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে। নইলে আমি তারপর থেকে কেন স্বপ্নসম্ভুত দিন কাটাই। আমি এরপর থেকে দুইপা কিংবা চার চাকায় যাতেই চলমান থাকি না কেন, বাতাসে উড়তে থাকা মার্কা প্রধাণ মনূষ্য চোহারার নীচে দাঁড়িয়ে থাকি না কেন আমি স্বপ্ন সাধনাতেই ব্যস্ত থাকি। কারণ আমার অদৃশ্য আরেক শরীর স্বপ্ন শিথানেই শুয়ে থাকে। সেই দ্বিতীয় সত্ত্বা প্রধাণ হয়ে ওঠে আর তার দেখা স্বপ্ন আমার মানসপটে দৃশ্যায়িত হয় জীবন-যাপনের পথে পথে।
নাকি সেই প্রধাণ যে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বুঝি না-আমি স্বপ্ন কল্পনাতেই নিবিষ্ট থাকি। মনে পড়ে সেই আলবিহীন জমির স্বপ্ন-শরতের সাদা মেঘে ঘোড়া ছুটানোর স্বপ্ন -আহা সেই কিশলয় স্বপ্নদল কোথায় যে এখন। মনে পড়ে বাল্যের সেই তীব্র শিহরণ জাগানো স্বপ্ন। শরীরের প্রতিটি রোমকূপের সুখানুভূতির পানসে সাদা প্রসবন পৃথিবীর বুকে নিজের একটা পরিচয়ই দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল সেদিন।
তারপর বয়েসের ঘাটে চৌকাঠে কত স্বপ্ন। হঠাৎ এলোমেলো স্লোগান আর বিকট মাইক আমার স্বপ্ন ভাবনায় বিঘ্ন ঘটায়। নির্বাচন আবার। ভাবি আমার স্বপ্ন মিছিলে আরোতো কত স্বপ্ন। আমার চারপাশ আমার ইতিহাসের স্বপ্ন।
এই ছুটোছুটির জীবনে কত স্বপ্নের মৃত্যু হয়, কে তার খবর রাখে। মাঝে মাঝে ভাবি মানুষ মরে যতজন আকছার তাদের স্বপ্ন মরে আরো বেশি। সেই মরা মানুষের স্বপ্নগুলো কোথায় যায়। নিশ্চই এই শহরের এই দেশের পথে-ঘাটে অদৃশ্য প্রায় ধুলো বালি হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর জীবিত মানুষ নিঃশ্বাসে তা টেনে নেয়।
নইলে এদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখে কেন-কেন প্রতিবারের নির্বাচনে উল্লাসের মচ্ছব তোলে। ইতিহাস কি মনে থাকে না কারুর। আহা কানে বাজে সেই স্বপ্ন -তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ কিংবা রক্ত চামড়ার সেই পোষ্টার সেই স্বপ্ন -গণতন্ত্র মুক্তি পাক। সেই স্বপ্নগুলো নিশ্চিতভাবেই ধূলো-বালি হয়ে বেঁচে আছে- নইলে নির্বাচন নিয়ে কিসের আশা করে এদেশের মানু। এই স্বাধীন বাংলাদেশে যত মানুষ মরেছে, যত ধর্ষণ হয়েছে তা কি কোন অংশে পাকিস্তানি শাসনের চেয়ে কম।
যত ভ্রূণ নষ্ট করেছে সেই ঘাতকেরা-তার চেয়ে বেশি ভ্রূণ কি পঁচে না আমাদের ডাষ্টবিন আর ডোবায়- কি এক হাহাকার ছুটে যায় মুহূর্তে- কতো স্বপ্ন অংকুরিতই হয় না।
শীতের সবুজে বিষণ্ণতা। তার ঝরে পড়ার সময় এলো। আবার বসন্ত মঞ্জরিতে বৃক্ষমন স্বপ্নাতুর হবে। প্রকৃতি এমনই তার কোন সন্তানকেই সে বিরুপ করে না।
কিন্তু মানুষ-হায় মানুষ। সেই রাতের স্বপ্নে আমি একটা মানুষ দেখেছিলাম, তার গায়ে অসংখ্য ক্ষত। জীবনভর তার যত প্রবঞ্চণা- অপমান সমস্তই শরীরের ক্ষত হয়ে স্থায়ী হয়ে রয়েছে। মৃত্যুকালেও সে তা বয়ে যাবে। পরদিন নির্বাচনি মিছিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমি স্তম্ভিত হই।
কারণ সেই মানুষটা তখন আমার চোখে দেশের মানচিত্র হয়ে ফুটে উঠে। হায় দেশের গায়ে আরেকটি ক্ষত তৈরির প্রলংয়করি উৎসবে মেতে আছি সবাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।