অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
২০৩৫ সালের শুরুর কথা, মঙ্গলে মানুষের বসতি হয়েছে বেশী দিন হয় নি, এখনও এখানে জামির দাম কম, তবে যাতায়ত খরব অত্যন্ত বেশী, লটারিতে টিকেট জিতে আদু মিয়া আর বদু মিয়া পৌঁছালো রোবির্য়াসে। মানুষের বসতি তেমন বড় নয় এখানে,কয়েকটি মহল্লা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই শহর, পৃথিবীর অধিবাসীরাই যেহেতু এখানে বসতি গড়েছে, সুতরাং পৃথিবীর অনুকরণেই এখানে সভ্যতা শুরু হয়েছে।
ঘটি ডুবে না নামে তালপুকুর অবস্থা- ৩০০ সদস্যের সংসদ আছে দেশে, তবে ৩০০ পরিবার এখনও এসে পৌঁছায় নি এখানে, নির্বাচন হয়, বিরোধী দল এবং সরকারী দলও আছে, বস্তুত মঙ্গলের এই রোবিয়ার্সের সকল পরিবারের সকল সদস্যই রাষ্ট্র এবং শহরের কোনো না কোনো পদে আসীন,
আদু মিয়া এবং বদু মিয়া পৃথিবীতে থাকতে পলিটিক্স করতো, সমাজচিন্তকও ছিলো বটে তারা, তবে কেনো চাপিল এই ভুত তাদের মাথায়? কেনো হঠাৎ কোনো এক দিন তাদের মনে হইলো হেথা নয় মঙ্গলে মঙ্গল আবাস গড়িবো আমরা- এই সত্য কখনই উদঘাটিত হইবে না।
দেশে থাকিতে আদু মিয়া বদু মিয়ার পেপারে চিঠি লিখিবার অভ্যাস ছিলো, নিয়মিতই দেশের অধঃপতন এবং নৈতিকতার ঘাটতি নিয়া নাকি কান্না সমেত চিঠি সম্পাদকের টেবিলে জমা পড়তো, সম্পাদক টিস্যু দিয়ে টেবিল মুছে চিঠিগুলো ওয়েস্ট পেপার বক্সে ফেলতেন নিয়মিত।
তবে পৃথিবী থেকে মঙ্গলে আসিবার দিনে বাংলাদেশ জুড়ে বিশাল আয়োজন হইলো।
দুর্বল গরীব দেশ থেকে দু-জন মহান মানুষ যাইতেছে মঙ্গলে মঙ্গল বারতা নিয়া ইহা কম গর্বের বিষয় নহে। পত্রিকাগুলোতে প্রশংসার নহর বইলো, ইহারা সাক্ষাৎকার নেয়, উহারা লাইভ টেলিকাস্ট করে তাহাদের মঙ্গলযাত্রার, বলা যায় লটারি জিতিবার পরে তাহাদের জীবন একেবারে বদলাইয়া গেলো।
শেষ মুহূর্তে অবশ্য দুজনেরই মনে হয়েছিলো থাক মঙ্গলে না হয় নাই বা গেলাম, পৃথিবীর মায়ায় পৃথিবীতে থেকে গেলেও খারাপ কিছু হয় না সেটা, আপাতত তাহাদের মুখের কথার অনেক দাম, পাপ্পারাৎজি টেলিলেন্স নিয়া তাহাদের বাসার সামনে আসন গেড়ে বসে আছে, এই স্টারডম তাহাদের খারাপ লাগে না, প্রাইম টাইমে প্রাইম মিনিস্টারের চেয়ে বেশী দেখায় তাদের মুখ- এমন ভাগ্য ক'জনার হয়?
তবে মঙ্গলে যাইবার সিদ্ধান্ত বদল করিলে এইসব স্টারডম মুহূর্তেই মরিচিকার মতো বিলীন হইয়া যাইবে এই সংক্রান্ত শঙ্কাও ছিলো তাদের ভেতরে।
তাহারা মঙ্গলে পৌঁছাবার পরে আশ্চর্য হইয়া খেয়াল করিলো এখানের মানুষ অনেক পিছিয়ে আছে, এখানে মানুষ পৃথিবীর খবর পড়ে জীবন যাপন করে, পৃথিবীর টিভিঅনুষ্ঠান দেখে, এবং এখানে তেমন টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র নেই, টিভিস্টেশন নেই, নিউজপেপার নেই, বাতুল জায়গা বলা যায় এটাকে।
সমস্ত জিনিষের সরবরাহ আসে পৃথিবী থেকে সুতরাং কাগজে আঁকিবুকি কাটিতে হইলেও এখানকার জনগণ সেটা পেণ্সিলে লিখে, মুছে আর লিখে, বার বার একই কাজ করে।
আদু মিয়া বদু মিয়ার প্রাণ ওষ্ঠাগত হইয়া উঠিলো প্রথম দিন শেষ হইবার আগেই।
যে মানুষ সংবাদ পত্র পড়ে না টয়লেটে বসে তার মানুষ গন্য হইবার কোনো অধিকার নেই, বদু মিয়া পর দিন সকালে সংসদ ভবনের সামনে অনশনে বসিলেন। তাহার ন্যায্য অধিকার এটা, সকালে সংবাদপত্র না পড়িলে তাহার কেষ্ঠ পরিস্কার হয় না, বিশেষত যাবতীয় দুর্ঘটনার সংবাদে তাহার হাগনছিদ্র অধিকমাত্রায় প্রসারিত হইয়া প্রাতকৃত্যের সুবিধা করিয়া দেয়, এখানে তেমন সংঘাত নেই, আর তাহাকে যেই কম্পিউটার উপহার দেওয়া হইয়াছে সেখানে যদিও পৃথিবীর সকল দেশের সকল সংবাদপত্রই দেখতে পারা যায় কিন্তু পৃথিবীতে একটি ওয়েব সাইট আছে ইসলাম অনলাইন- সেটিও ভার্চুয়াল জগতে রহিয়াছে বলিয়া টয়লেটে কম্পিউটার এনে পড়াটা শোভন হইবে না। এমন ভাবনা থেকেই বদু মিয়া সকাল থেকে ভীষণ চাপে
তবে এখনও কেষ্ঠ পরিস্কার না হওয়ায় তার বায়ু চরিতেছে।
আদু মিয়া বদু মিয়াকে নিরস্ত করিতে চাহিয়াছিলো, তবে পৃথিবীতে থাকিতে তাহারা বিপরীত আদর্শে বিশ্বাসী দুটি দলের সমর্থক ছিলো, সুতরাং বৈরিতা তাহাদের রক্তে, সুতরাং মঙ্গলকে পবিত্র রাখিবার দাবি নিয়ে আদু মিয়াও সংসদের অন্য পার্শ্বে গিয়ে অনশন শুরু করিলো।
রোবেয়ার্স নগরের নগরপিতা অবশেষে একটি উপায় বাতলাইলেন, তিনি উদ্ভাবনকুশল ব্যক্তি ছিলেন সুতরাং তিনি বলিলেন কম্পিউটার ঢুকানোর কোনো প্রয়োজন নেই টয়লেটে, বরং আমরা প্রতি দিন রাতে ঘুমানোর আগেই বীভৎস সংবাদ ক্লিপিংগুলো পেনড্রাইভে ভরিয়া আপনাকে দিবো, আপনি সেটি দেখিয়া কোষ্ঠ পরিষ্কার করিতে পারিবেন।
প্রথম সপ্তাহ যাইবার পরে আদু মিয়া ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিলেন, অনেক দিন পরে তাহার মনে হইলো তিনি সালাত আদায় করিবেন। দিনান্তে তিনি সালতে দাঁড়াইবেন, মাগরিবের আজান শোনানোর মুয়াজ্জ্বিন এখানে নেই, সুতরাং তিনি বদু মিয়াকে কহিলেন হে ভ্রাতঃ তুমি কি একটু আজান দিবে, তাহলে আমি নামাজটা পড়িয়ে ইশ্বর ভজনা করিতে পারিতাম।
বদু মিয়া ঘোরতর নাস্তিক, চটিয়া উঠিয়া কহিলো, আদু তোমার কি বিবেক নেই? আমাকে তুমি আজান দেওয়ার কথা কহিতেছো,তোমার কি মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটিয়াছে?
অল্প কথা, অল্প সংঘাত শেষ পর্যন্ত হাতাহাতিতে গড়াইলো। অবশেষে মঙ্গলে আজানের ধ্বনি শোনা গেলো।
আদু মিয়া বদু মিয়া হঠাৎই উপলব্ধি করিলেন মঙ্গলের অন্য সবার চাইতে তাহারা ভিন্ন, তাহাদের নিজস্ব একটি ঐক্যবদ্ধতার প্রয়োজন রহিয়াছে, সুতরাং নাস্তিক বদু মিয়া আস্তিক আদু মিয়ার সহিত একটি বহুদলীয় মোর্চা গঠন করিলো।
তবে উভয়ের মধ্যেই প্রতি দইন গোলোযোগ বাধে, মঙ্গলে চাঁদ দুইটি, কোনটিকে আসল ধরিয়া মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হইবে, দুটোই আদতে সমান অধিকার পাইবার ক্ষমতা ধারণ করে। তুমি একটাকে অন্যটার চেয়ে আগিয়ে রাখতে পারো না। এটা ভীষণ অন্যায়, সুতরাং সপ্তাহে তিন দিন একটি উপগ্রহ অস্ত গেলেই মাগরিবের ওয়াক্ত হয়, বাকি দিনগুলো অন্য উপগ্রহ অস্ত গেলে মাগরিবের ওয়াক্ত হয়, সমস্যা হয় মাঝে মাঝে দুটোই মাঝ দুপুরে অস্ত চলিয়া যায়, তবে নিয়ম অবশ্যই নিয়ম এবং পালন করিতে হইবে, তাই ভর দুপুরে আদু মিয়া মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।
বদু মিয়া হঠাৎ একদিন বলিলো আচ্ছা আদু, তুমি যে নামাজ পড়িতেছো, সেটা কি শুদ্ধ নামাজ হইতেছে?
দেখো বিবেচনা করিয়া, আদতে কেবলামুখী হইয়া নামাজ পড়িবার রীতি, তোমার কেবলা কোথায়? কা'বা ঘরের দিক মুখ ফিরিয়ে নামাজ পড়িতে চাহো, তবে কা'বা ঘর কিভাবে দেখিবা তুমি, কোন দিকে কা'বা ঘর তুমি জানো?
আদু মিয়ার নামাজ মাথায় উঠিলো, বদু মানুষ খারাপ না, এক্কেব্বারে মোক্ষম কথাটিই বলিয়াছে, আসলেই কোথায় কেবলা, আমি কোন দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ পড়িবো তবে?
আদু বদু ঐক্য জোট নতুন কা'বা ঘরের দাবিতে রোবিয়ার্সের সংসদের সামনে বসিয়া গণঅনশন শুরু করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।