সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
প্রাচিন বাংলার সামাজিক চিত্র:
চর্যাপদের কবিতাগুলোতে ধর্মের পাশাপাশি সেকালের বাংলা সমাজের ছবি ফুটে উঠেছে। জীবন্ত হয়ে উঠেছে প্রাচিন বাংলার পরিবেশ, গাছপালা আর সাধারন মানুষের সুখ-দুঃখ। একটি কবিতায় এক দুঃখী কবি তার সংসারের অভাবের ছবি মর্শস্পর্শী করে একেছেন-----
টালত মোর ঘর নাহি পড়বেশী
হাড়ীত ভাব নাহি নিতি আবেশী।
বেঙ্গ সংসার বড়হিল জাঅ।
দুহিল দুধু কি বেণ্টে সামায়। ।
কবি বলেন- টিলার উপর আমার ঘর, আমার কোন প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে আমার ভাত নেই, প্রতিদিন আময় উপোস থাকতে হয়। কিন্তু সেখানে নিত্য অতিথির ঢল, ব্যাঙের ছাতার মত সংসার বেড়েই যাচ্ছে।
কবিতাটি থেকে আমরা তখনকার সময়ে অত্যাচারীদের একটি চিত্র দেখতে পাই। এমন বেদনার কথা অনেক আছে চর্যাপদে, আছে সমাজের উচুশ্রেণীর লোকের অত্যাচারের ছবি। আবার কন্বলান্বরপা তার ধন-সন্পদের কথা লিখেছেন এভাবে-----
সোনে ভরিতী করুনা নাবী
রুপা থুই নাহিক ঠাবী।
অর্থাৎ: আমার করুনা নামের নৌক সোনায় সোনায় ভরে গেছে। সেখানে আর তিল পরিমান রুপা থুইবার জায়গা নেই।
এভাবে ৬ নং চর্যায় কাহ্ণপা তার ডোন্বীবিবাহের কথা বলেছেন এভাবে----
ডোম্বী বিবাহিআ অহারিউ জাম।
জইতুকে কিঅ আণুত্তর ধাম। ।
অহণিসি সুরঅ পসঙ্গে জাই।
জোইণি জালে রঅণি পোহাই।
।
অর্থঃ "পটহ ও মাদল জোড়া ঢোল কাসি ইত্যাদির জয় জয় দুন্দুভি শব্দ উচ্ছলিত হল, কাহ্ন ডোমনীকে বিয়ে করতে গেল, বিয়েতে তার জন্ম সার্থক হল-- বিয়ের যৌতুক অনুত্তর ধর্ম। অহর্নিশি সুরত প্রসঙ্গে যায়, রমণী পরিবৃত হয়ে বাসররজনী পোহায়। "
১নং চর্যায় লুইপার বিবরণে অর্থের বাইরে দেহাসক্তিপূর্ণ প্রেমের উল্লাস সহজেই চোখে পড়ে। ৩৩নং চর্যায় উপলব্ধি হয় তখনকার অত্যাচারী সমাজের মূর্ত ছবি।
এ ধরণের অনেক সামাজিক ছবি চর্যাপদে ফুটে উঠেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।