আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঠারোর গদ্য ........... আমি এবং কয়েকটি ঘাসফড়িং .............

sabujs@yahoo.com
পলিনের সাথে আমার পরিচয় সেই ক্লাস ইলেভেন থেকে । একসাথে কোচিং এ যেতাম । একসাথে মানে কিন্তু ও আর আমি একত্রে নই । আলাদা রিক্সায়। ওর বাসা আমার বাসা হতে বেশ দূরে ছিল ।

। এস এস সি পাশ করার পর কোন কলেজে ভর্তি হবো তা নিয়ে বেশ দু:শ্চিন্তায় পড়েছিলাম। অবশেষে মোটামুটি একটা ভালো কলেজে ভর্তি হয়েই দেখি পলিন আমাদের সাথে ক্লাস করছে। ওকে অনেক আগে থেকেই চিনতাম। কিন্তু অসম্ভব সুন্দরী বলে কখনো কথা বলতে সাহস পেতাম না।

যাহোক , একত্রে ক্লাস করার সুবাদেই ওর সাথে টুকটাক কথা বলতে শুরু করেছিলাম । ওর সাথে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ছিল আকাশ পাতাল তফাৎ। ও রাত জেগে পড়াশোনা করতো, আর আমি আড়াইটা পর্যন্ত টিভি দেখে সকাল সাড়ে দশটায় ঘুম থেকে উঠতাম। ও আল্লাহকে খুব ভয় করতো, আর আমি ধর্মকর্মের দশহাত দূর দিয়ে থাকতাম। যাহোক এবার মূল রচনায় আসা যাক ।

একদিন প্রাকটিক্যাল ক্লাসে হঠাৎ ও এসে আমার পাশে বসলো। ওকে ক্লাসের সব ছেলেই পাগলের মতো পছন্দ করতো। আমিও করতাম । সেইসাথে ওকে ভয়ও পেতাম। তো -- ও এসে আমাকে প্রথম যে কথাটি বললো তা হচ্ছে -- ' আচ্ছা , তোমার কাছে কী ফার্স্ট ইয়ারের ক্যামিষ্ট্রি প্রাকটিক্যাল খাতাটি করা আছে? আমারটা হারিয়ে ফেলেছি ।

'' ...... আমি পড়াশোনায় বরাবরই ছিলাম খুব এলেবেলে টাইপের । তাই স্বাভাবিক নিয়মেই ওকে সাহায্য করতে পারলাম না। তবে আশ্বাস দিলাম --- আগামী দুদিনের মধ্যে ওকে আমি খাতাটি যোগাড় করে দেব । তাই বাসায় এসে যখন আমি নিজেকে ক্যামিষ্ট্রি প্রাকটিক্যাল তোলাম মধ্যে আবিষ্কার করলাম , ঠিক তখনই বুঝলাম যে আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি । এর ঠিক দুদিনের মাথায় অনেক আকাশ পাতাল চিন্তা করে ওকে আমার পছন্দের কথা জানালাম ।

জানানোর সাহস হয়তো পেতাম না, কিন্তু পেয়েছি এই কারনে যে -- আমি জানতাম ও আর কোন ছেলেকে পছন্দ করতো না। যাহোক ওকে জানানোর সাথে সাথে ও খুব ভয় পেল এবং খুব ভদ্র ভাষায় আমাকে 'রিফিউজ' করলো । দু'দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটে যাবার পর আরো সতেরো দিন পার হয়ে গেল । এবং ঠিক আঠারো দিনের মাথায় ও আমার হাত ধরে বললো -- '' সেদিন আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম । '' জীবনে প্রথম কোন মেয়ের হাত ধরার অভিজ্ঞতা লিখে বোঝানো যাবে না।

সেই হাত ধরার মাঝে পলিনের অনুভূতি ছিল -- ভয়, শংকা , ভালোলাগা এবং নির্ভরতার । আর আমার অনুভূতি ছিল খালি হাতে বিশাল এক রাজ্য জয় এবং সেই রাজ্যের প্রতি দায়িত্ববোধ। আমাদের প্রেম আর দশটা সাধারন ছেলেমেয়ের প্রেমের মতো ছিলো না। ও কোনদিন যদি কলেজে না আসতো তাহলে আমার খারাপ লাগতো না। আমি যেদিন না আসতাম সেদিন ওর কেমন লাগতো তা কখনো জিজ্ঞাসা করা হয়নি ।

আমি ওকে কখনোই চিঠি দিতাম না। এসব চিঠি চালাচালি , দু'দিন পরপর রাগ , অভিমান , পরে আবার সেই অভিমান ভাঙানো, পার্কে যাওয়া , বাদাম খাওয়া , একত্রে রিক্সায় ঘোরাঘুরি করা---- এসব আমার কাছে ন্যাকামি বলে মনে হতো। -- তবে হ্যাঁ, মাঝে মাঝে যখন গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যেত তখন বুকের মাঝে কেমন যেন হাহাকার কারে ওঠা এক বিশাল শূন্যতা অনুভব করতাম, তখন আমি বুঝতে পারতাম যে আমি ওকে কী পরিমান পছন্দ করি । যাহোক , এসব পছন্দ- অপছন্দের কথা পরে বহুবার বলা যাবে । এবার ওর পরিবার সম্পর্কে কিছুটা বলি --- ওর বাবা মা ছিলেন খুব কনজারভেটিভ।

আটপৌরে মধ্যবিত্ত পরিবার বলতে যা বোঝায় ওদের পরিবার ছিল ঠিক সেরকম। ও যে খুব ভয়ংকর রকমের সুন্দর তা বোধহয় ও জানত না । আর সে সৌন্দর্যের সাথে অহংকারবিহীন এমন এক সরলতার মাখামাখি ছিল যে মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো ওকে গলাটিপে মেরে ফেলি। এরকম অদ্ভুত ইচ্ছে কেন করতো তা আমি আজও খুজেঁ বের করতে পারি নি । যাহোক , ওর হাত ধরার পর একদিন , দু'দিন করে পুরো একটি বছর পার হয়ে গেল ।

এই এক বছরে কিন্তু ওর সাথে আমার কথাবার্তা হয়েছে খুব কম। ব্যাপারাটা যেন এরকম--- '' তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হবার কথা ছিল , সেটা এখন হয়ে গেছে,, তো আবার কী ?? --- এরকম টাইপের । এবং আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো প্রথমবার হাত ধরার পর কিন্তু কখনই আমরা দ্বিতীয়বার কাজটি করিনি। এরপর পরীক্ষার চিন্তায় আমার হলো '' মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল'' অবস্থা। আর পলিনের হলো ঠিক তার উল্টোটা।

আসলে এরকমই হবার কথা ছিল । সারাবছর না পড়ে পরীক্ষার আগের রাতে পড়লে কী আর ভালো করা যায় ? আমি যেমন জানতাম আমি টেনেটুনে পাশ করবো --- ঠিক পলিনও তেমনি জানতো ও খুব ভালো করবে । যাহোক, যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু হলো , আবার একসময় শেষও হয়ে গেল । ও খুব ভালো করলো বলে এক নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাবজেক্টে ভর্তি হলো , আর আমি টেনেটুনে পাশ করে সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক মার্কামারা সাবজেক্টে চান্স পেলাম । বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর সবাই বোধহয় একটু পাল্টে যায় ।

স্বাভাবিক নিয়মে আমরাও কিছুটা পাল্টে গেলাম । আগে আমাদের প্রেম ছিল সমুদ্রের মতো গভীর -- আর এখন তা হলো আকাশের সীমানা নির্ধারন করে দেবার মতো । ব্যাপারটার অর্থ এরকম-- সমুদ্রের গভীরতা অনেক হলেও তা একসময় মেপে শেষ করা যায় । কিন্তু আকাশের সীমানা নির্ধারন করে দেবার মতো দু:সাহস আজ অবধি কেউ বোধহয় দেখায়নি। তো , ভার্সিটির বিশাল গন্ডীর মধ্যে আমাদের জীবনটা কীভাবে কীভাবে যেন কেটে যেতে লাগলো ।

রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠা, খাওয়া দাওয়া করা , ক্লাসে যাওয়া , ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়া , পলিনের সাথে কথা বলা ........... এসব হাজারো হাবিজাবির মধ্য দিয়ে সময়টা বেশ ভালোই কাটছিল । আমাদের আলোচনার ডানদিকে ছিল জীবনানন্দ , রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শরদিন্দু ও সমরেশ-- বামদিকে ছিল কার্ল মাকর্স , লেলিন , সমাজব্যবস্থা , সাম্যবাদ ও ছাত্র রাজনীতির অন্ধকার ভবিষ্যত ,, সামনে ছিল রাইডার হ্যাগার্ড, দস্তয়োভস্কি, সুমন , অঞ্জন....... পেছনে ছিল ফ্রয়েড আর ---- আর মাঝখানে ছিলাম আমরা দু'জন । পলিন রাজনীতিকে শুয়োপোকার মতো ঘৃনা করতো । ওর সাথে থেকে থেকে আমিও শিখেছিলাম কীভাবে নোংরা রাজনীতিবিদদের ঘৃনা করতে হয় । যদিও আমরা জানতাম কাজটা সহজ হবেনা -- তবুও আমরা দু'জনে মিলে সমাজটা পাল্টে দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ।

ধীরে ধীরে ওর সাথে আমার সম্পর্কটা রূপকথার বইয়ের মতো এক আশ্চর্য সহজতায় রূপ নিল । ও যেমন হয়ে উঠলো আমার জন্য অপরিহার্য , ঠিক তেমনি আমিও হয়তোবা ওর চিবুকে লেপ্টে থাকা সেই লাল তিলটির মতো কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম । এবার রচনাটি শেষ করার সময় এসেছে। এখানেই হয়তো লেখাটি শেষ করে দেবার কথা ভাবতাম না , যদিনা আমাদের ব্যতিক্রমী সম্পর্কের কোন ব্যতিক্রম হতো। বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছিলাম ও কেমন যেন আনমনা হয়ে থাকে।

কোন কথা জিজ্ঞাসা করলে ঠিকমতো জবাব দেয়না । আগের মতো আর হাত নেড়ে নেড়ে বকবক করেনা । ওর এই পরিবর্তনের কথা জিজ্ঞাসা করলে কেমন যেন এড়িয়ে যায় । একদিন ও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল --'' আচ্ছা ,ধরো আমার যদি কোনকিছু হয়ে যায় , তুমি কী তা সহ্য করতে পারবে?? -- আমি ওর কথা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম । বলেছিলাম , এরকম বয়েসে সবারই একটু আধটু মরে যেতে ইচ্ছে করে ।

আমার উল্টো জবাব শুনে ও খুব আহত হয়েছিল । আমি ওর প্রশ্নের মানেটা তখন ধরতে পারিনি। পেরেছিলাম আরো কিছুদিন পরে । কিন্তু সেদিন ওর জবাবটা চিৎকার করে বললেও ও শুনতে পেত কিনা জানিনা। এর পরের দু'দিন ও ক্লাসে এলোনা ।

ভাবলাম কোন সমস্যা হয়েছে বোধহয় । তৃতীয় দিনের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি হলের সামনে বিশাল গন্ডগোল । গন্ডগোল আর কিছুই নয় ---- '' পলিন আত্মহত্যা করেছে!!! "" পলিন আত্মহত্যা করেছে !!!!! ..... এরকম উদ্ভট কথা শুনে প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়নি। ভাবলাম , কোথাও হয়তো কোন ভুল হয়েছে । ভাবলাম, পলিন হয়তো গুরুতর অসুস্থ, কিন্তু একসময় ঠিকই ভালো হয়ে উঠবে।

ভাবলাম, হয়তো পলিন নয় , ওর মতো দেখতে অন্য কোন মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভাবলাম, সবাই বোধহয় আমার সাথে ঠাট্টা করছে। একটু পরেই দেখা যাবে ভিড় ঠেলে পলিন হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসছে। ....... কিন্তু হায় ! সেদিন আমার চারটি ভাবনার একটিও সত্যি ছিলনা। যথাসময়ে পুলিশ এলো ।

ভার্সিটিতে ব্যাপক ভাঙচুর হলো । মিছিল হলো , মিটিং হলো , তদন্ত হলো এবং একসময় আর দশটা ঘটনার চাপে পলিনের ব্যাপারটা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যেতে শুরু করলো । এর ঠিক দু'বছর পর আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম -- পলিন নামে আমাদের সাথে যে মেয়েটি পড়তো তার কথা অনেকেই মনে করতে পারছে না। ওর মৃত্যুর কারনটা পুলিশ ঠিকমতো ধরতে না পারলেও আমি পেরেছিলাম। ওর মৃত্যুর ঠিক তিনদিনের মাথায় ওর বাসায় গিয়েছিলাম।

গিয়েছিলাম ওর বাবা মাকে সান্তনা দিতে। গিয়ে দেখি সবই আগের মতো আছে । ওদের বসার ঘর , ওর ছোট্ট বেডরুম, মাধবীলতায় ছাওয়া পুরোনো কলপাড় , বাড়ির সামনে বিশাল কৃষ্ণচূড়া, টিনশেড চালের উপর ভাঙা অ্যান্টেনা ------ এসব কিছুই যেন পাল্টায়নি। এত্তোসব স্বাভাবিকতার মাঝে ওর না থাকাটা কেমন যেন বেমানান লাগছিলো । সবাই বসার ঘরে কান্নাকাটি করছিলো ।

আমার এসব কিছু্ই ভালো লাগছিলো না । তাই হাটতেঁ হাটঁতে ওদের বাড়ির বেশ কিছুটা সামনে সেই কৃষ্ণচূড়াটার নীচে এসে দাড়ালাম। আমরা এ গাছটির নাম দিয়েছিলাম -- ''দ্য ওল্ড পোস্টম্যান '' । এ গাছের কান্ডের মাঝামাঝি একটি ফোকর ছিল । যদি কোন কারনে পলিন পরদিন কলেজে না যেত তাহলে ও আগের দিন সন্ধ্যায় একটা কাগজে তার কারন লিখে পলিব্যাগে মুড়িয়ে সেই ফোকরে রাখতো।

আমি পরদিন ক্লাস শেষ হলে গাছটির কাছে এসে খোঁজ নিতাম। বেশিরভাগ সময়েই সেসব কাগজে লিখা থাকতো -- ''আজ মেহমান এসেছে। '' .. ''আজ আম্মা অসুস্থ'' ... অথবা ''হঠাৎ করে আজ বড়চাচার বাসায় যেতে হবে ''------- এসব কথা। অবশ্য সেসব ছিল কলেজে পড়ার সময়কার ঘটনা । অনেকদিন আগের .................. ।

তো , এক নস্টালজিক চিন্তার স্রোতে হাটঁতে হাটঁতে সেই গাছের কাছে এসে দাড়ালাম। পুরোনো অভ্যেসমতো ফোকরে হাত দেয়ার সাথে সাথে আমার শরীরটা শক্ত হয়ে গেল । হাতে পলিথিনের মতো কিসের যেন স্পর্শ পেলাম। বের করে দেখি এক টুকরো মুড়ানো কাগজ । কাপাঁ কাপাঁ হাতে পলিথিন ফেলে দিয়ে পড়তে শুরু করলাম।

কাগজটি পড়া শেষ হলেও অনেকক্ষন সেখানে বোধশক্তিহীন জম্বির মতো দাড়িঁয়ে ছিলাম। পলিনের বক্তব্য ছিল এরকম --- শুভ্র , সীমা লঙ্ঘন করে তুমি আমার কাছে কখনও কিছু দাবী করোনি। সেজন্যই তুমি অন্যসব ছেলে থেকে আলাদা। কিন্তু যারা সীমা লঙ্ঘন করতে চায় তাদের আমি কিভাবে ঠেকাই বলো? আমি পারিনি। আমাদের সমাজব্যবস্থার দৃষ্টিতে মেয়েদের যে জিনিসটা সবচেয়ে দামী বলে দাবী করা হয় আমি সেটিই হারিয়েছি।

এরপর এই সমাজে কী আমার আর কোন মূল্য আছে? হয়তোবা নেই । কিন্তু তুমি যে আমাকে ভুল বুঝবেনা সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। বিশ্বাস করো আমি তোমায় ঠকাতে চাইনি। বিদায়! ভালো থেক । দু'জনে মিলে সমাজটা পাল্টে দেবার প্রত্যয় করেছিলাম।

কিন্তু সেটা বোধহয় আর করা হলো না। শুভ্র ! ..... শুভ্র! ........ শুভ্র! ........ শুভ্র! ............... তোমার নামটি লিখতে আমার এতো ভালো লাগে কেন বলতো? ..... পলিন .... '' যাহোক, এই দুই বছরে আমি অনেকবার ওর ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছি। পরে আমার মনে হয়েছে -- ওর সিদ্ধান্তটা ছিল এক মস্তো বড় ভুল। ও আমাকে ঠিকমতো চিনতে পারলে হয়তো ভুলটা করতো না । এখন আমি ওকে কীভাবে বোঝাই যে --- ওর শরীরটা আমার কাছে মুখ্য ছিলনা ।

ওর কথাগুলো , ওর চিন্তু , ওর চেতনা, ওর দৃষ্টিভঙ্গিই আমাকে ওর কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলো । আমি জানতাম আমি ছাড়া ওর অন্য কোন বন্ধু ছিলনা। এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে -- ও ছাড়াও আমার আর অন্য কারও সাথে মেশা হয়নি। পলিনের চলে যাওয়ার ফলে ও যতটুকু না কষ্ট পেয়েছিল তার চেয়ে ঢের বেশি কষ্ট আমি এই দুই বছরে পেয়েছি। আমাদের ভালোবাসা , আমাদের প্রেম ছিল শঙ্খচূড়া সাপের মতো একেবেকে চলা কোন খরস্রোতা নদীর মতো।

আমাদের আবেগ ছিল সুতো ছেড়া শূন্যে বিলীয়মান কোন দুরন্ত ঘুড়ির মতো। আমাদের স্বপ্ন ছিলো ............. ওকে হারিয়ে আমার অনুভূতিগু্লো ভোতাঁ হয়ে গিয়েছে। ও শুধু একাই চলে যায়নি, সেইসাথে আমার ব্যক্তিগত সত্তা, ব্যক্তিত্ব সব কেড়ে নিয়ে গেছে। আমি আর রাতে দেরী করে ঘুমোতে যাইনা। ইদনীং সারাদিন একা একা বিছানায় পড়ে থাকি ।

..... খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলে আমার পলিনের কথা মনে পড়ে। আগুনলাগা কোন কৃষ্ণচূড়ার ডাল দেখলে আমার পলিনের কথা মনে পড়ে । ঝুম বৃষ্টি নামলে আমার পলিনের কথা মনে পড়ে। কবিতার বই খুললে আমার পলিনের কথা মনে পড়ে । শরতের শুভ্র মেঘ দল বেধে ঘুরে বেড়ালে আমার পলিনের কথা মনে পড়ে ।

গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে আমার পলিনের কথা মনে পড়ে। ......... আকাশে মেঘ জমলে আমার পলিনের কথা মনে পড়ে । আমার জীবন এখন কেমন যেন রুটিনমাফিক বৃত্তাকার গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে । খাই , ঘুমাই , দু:স্বপ্ন দেখি আর কাগজে কলম দিয়ে উদ্ভট সব আকিবুঁকি করি । ভাল্লাগেনা .......... আমার কিচ্ছু ভাল্লাগেনা ...।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ওর মতো পালিয়ে যেতে । কিন্তু আমি জানি , ওর স্মৃতি অস্তিত্বের গভীরে বুনে আমাকে আরো বহু বছর বেচেঁ থাকতে হবে। ...... আমিও যদি চলে যাই , তবে ওর কথা ভাববে কে? ..........
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।