আওরঙ্গজেব
ছবি সূত্র: eFluxMedia.com.
বর্তমান শতাব্দীর এক আতংক ঘাতকব্যাধি এইডস্। বিগত আশির দশকে এইডস্ নামের ঘাতকব্যাধির সাথে মানুষ পরিচিত হয়। ১৯৮১ সালে আমেরিকায় প্রথম এইডস্ রোগ ধরা পড়ে। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বাংলাদেশেও এই মরণব্যাধি হানা দিয়েছে। ওষুধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় বিজ্ঞানের চরম সাফল্যের যুগেও মানুষকে থমকে দিয়েছে ঘাতকব্যাধি এইডস্।
আর এর পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু। ইসলামের অনুশাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এইডস্ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। পবিত্র কুরআন শরীফ গবেষণা করে দেখা গেছে আদ, সামুদ জাতি হস্তমৈথুন, যৌনাচার ইত্যাদিতে দারুণ আসক্ত হয়ে পড়ায় তাদের ভিতর এ ধরনের রোগের উৎপত্তি ঘটেছিল। এটি সম্পূর্ণ প্রকৃতি বিরোধী অনুশীলনের ফলাফল ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ রোগের বিস্তার লাভের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে অবৈধ যৌনমিলন।
তবে আজ তা আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশ থেকে ভারত, চীন, কম্পোডিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ডসহ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশসহ বাংলাদেশেও মহামারী আকারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সে সব দেশে অবাধ সমকামিতা সে সব দেশে এইডস্ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। এইডস্-এর ভয়াবহ ঝড় থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধ ও জীবনাচরণ এইডস্ সংক্রমণের জন্য সহায়ক নয়। তবে বাংলাদেশের তিনদিক থেকে ভারত।
ফলে বাংলাদেশেও ভয়াবহ এইডস্ ঝুঁকির আশংকা রয়েছে।
এইডস্ প্রতিরোধে ইসলামঃ
ধর্মীয় অনুশাসন পালনের মাধ্যমে এইডস্ সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব। এইডস্ প্রতিরোধে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজ থেকে প্রায় ১৪শ’ বছর পূর্বে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অনেক দিকনির্দেশনা দিয়ে গিয়েছেন। আর সে সব বিধি-বিধান বর্তমানে পালিত না হওয়ার কারণে এইডস্-এর মত ভয়াবহ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।
ক. ধর্মীয় অনুশাসন পালনের নির্দেশঃ
ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। ইসলামকে পূর্ণভাবে অনুশাসনের মাধ্যমেই কেবলমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। মহান আল্লাহ তায়ালা পূর্ণভাবে ইসলামকে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে ধর্মীয় অনুশাসন পালন না করার কারণে অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে মরণব্যাধি এইডস্ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।
খ. অবাধ যৌনমিলন নিষিদ্ধকরণঃ
অবাধ যৌনমিলন তথা ব্যভিচারই ভয়াবহ ব্যাধি ও সামাজিক অনাসৃষ্টির কারণ।
বর্তমান বিশ্বে হত্যা, সামাজিক বিশৃক্মখলা ও ভয়াবহ এইডস্সহ নানা ধরনের দুরারোগ্য রোগের যে ছড়াছড়ি তা মূলতঃ নারী-পুরুষের অপকর্মে লিপ্ত থাকার ফল। আর এই কারণে ইসলাম ব্যভিচারের এই অপরাধকে সব অপরাধের চেয়ে গুরুতর হিসাবে সাব্যস্ত করেছে এবং এ অপরাধের শাস্তি অন্যসহ অপরাধের শাস্তির চেয়ে কঠোর করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ব্যভিচারিণী নারী, ব্যভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশত করে বেত্রাঘাত কর। (সূরা নূর-২)।
গ. অসামাজিক ও অশ্লীল কাজ নিষিদ্ধকরণঃ
যুগে যুগে অতি উৎসাহী, বিকৃত চিন্তা-চেতনার অনুসারী কিছু সংখ্যক লোক শয়তানের প্ররোচণায় নানা রকম অসামাজিক, অশ্লীল এবং পাশবিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ আতংক সৃষ্টিকারী মরণব্যাধি এইডস্ ও তেমনি ঘৃণিত অশ্লীল অপরাধ। কুরআনের ঘোষণা “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কারণ উহা নিকৃষ্টতম অশ্লীলতা ও মহাপাপ। ” কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে “হে ঈমানদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিবে যখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দকাজের আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনো পবিত্র হতে পারবে না।
কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন ও শোনেন। ” (সূরা নূর-২১)
ঘ. ভয়ংকর মহামারীর ব্যাপারে সতর্কঃ
অশ্লীল, বেহায়াপনা ও অশালীন আচার-আচরণের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যায়। ঘৃণা এই অশ্লীল কাজের মাধ্যমেই ভয়ংকর মহামারী রোগ সৃষ্টি হয়। রাসূল (সাঃ) বলেন, “যখনই কোন জাতি বা সম্প্রদায় অশ্লীল ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়, তখনই তাদের মধ্যে এমন এক ভয়ংকর মহামারী দেখা দেয় যা তারা কখনো অতীতে দেখেনি।
” (ইবনে মাজাহ)। এ ব্যাপারে কুরআনের ঘোষণা- “স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের করুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করতে চান। যাতে তারা ফিরে আসে। ” (সূরা রুম-৪১)
ঙ. সমাজ-সভ্যতাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার নির্দেশঃ
পৃথিবীতে সমাজ-সভ্যতাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সকল প্রকার মন্দ, দোষণীয়, অশ্লীল ও অশালীনতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য ইসলাম মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছে।
আর এ অশ্লীলতা থেকে বাঁচার মাধ্যমে এইডস্ নামক মহামারী থেকেও বাঁচা যায়। আল্লাহ বলেন, “তোমরা তাদেরকে আহার দেই- নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য। ” অন্য জায়গায় বলা হয়েছে “আমি কত জনপদের ধ্বংস সাধন করেছি যার অধিবাসীরা ছিল পাপী এবং তাদের পর সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি। ” (সূরা আম্বিয়া-১১)
চ. বিয়ে প্রথার মাধ্যমেঃ
ইসলাম মানবতার ধর্ম। ধর্ম কেবল বিধি-নিষেধ আরোপ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং বৈধভাবে উপভোগ করার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
ব্যভিচার প্রতিরোধ তথা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ইসলাম বিয়ের নির্দেশ দিয়েছে। আল কুরআনে বলা হয়েছে “তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্ম পরায়ণ তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দিবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ” (সূরা নূর-৩২)
ছ. ব্যভিচারে উৎসাহ জোগায় এমন কাজ নিষিদ্ধ করুনঃ
পৃথিবীতে এমনও অনেক দেশ আছে যেখানে ব্যভিচার তথা অশ্লীলতাকে উৎসাহ করা হয়।
অথচ মানব জাতির জন্য এটা চরম বিপর্যয়মূলক লজ্জাকর কর্মকাণ্ড। ব্যভিচারকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। কুরআনে এসেছে “ঈমানদার নারীদের বলুন! তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। ” (সূরা নূর-৩১)
জ. লজ্জাস্থানকে হিফাজতের নির্দেশঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা দু’টি জিনিসের তথা মুখ ও লজ্জা স্থানের জিম্মাদারী নাও, আমি তোমাদের জান্নাতের জিম্মাদারী নেবো। ” অতএব লজ্জাস্থানের হিফাজতের মাধ্যমে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তাই পর্দার বিধান হিসাবে লজ্জাস্থানের হিফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, “মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে, এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। ” (সূরা নূর-৩০)
ঝ. লজ্জাস্থান হিফাজতকারী ক্ষমার ঘোষণাঃ
ব্যভিচার সংক্রান্ত যত ধরনের পাপ কাজ সংঘটিত হয় সব লজ্জাস্থান বা যৌনাঙ্গের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর এ পাপাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন মহামারী দেখা দেয়। এইডস্ তার অন্যতম একটি।
মহান প্রভু লজ্জাস্থান হেফাজতকারীকে ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “যৌনাঙ্গ হিফাজতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও যিকিরকারী নারী তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। ” (সূরা আহযাব-৩৫)
ঞ. পতিতাবৃত্তি ইসলামে নিষিদ্ধঃ
বর্তমান সমাজে দেশ-বিদেশে যে পতিতাবৃত্তি অবিরাম চলছে ইসলাম এটাকে কোনক্রমেই সমর্থন করে না বরং এ ব্যাপারে ইসলাম সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞ জারি করেছে। আরও পতিতাবৃত্তির দরুন অবাধ যৌনমিলনের ফলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগসহ এইডস্ নামক মরণব্যাধিতে। কুরআনের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা “তোমরা তাদেরকে আহার দেই- নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না।
প্রকাশ্যে হোক কিংবা অপ্রকাশে। ” (সূরা আনআম-১৫১)
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, ব্যভিচার, অশ্লীলতা এইডস্ নামক মরণব্যাধিকে ইসলাম ঘৃণা করে। আর এসব অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ লাভ সম্ভব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে আমাদের দেশসহ বিশ্বের সকল দেশকে এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষার তৌফিক দিন। আমীন।
লেখকঃ মোহাম্মদ আদেলউদ্দিন আল মাহমুদ
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ফোন: ০১৭১৬ ২৪২৪৫৭
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।