"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
তৃতীয় নক্ষত্র
(লেখাটি মেধাবী ব্লগার 'হিমালয়' কে উৎসর্গ করলাম)
তুমি স্বপ্ন দেখাতে ভালবাস, আমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। বাস্তবের চেনাজানা দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে চোখ দুটো কেমন যেন থিতিয়ে গেছে। এইসব দৃশ্য আর দেখতে ভাল লাগেনা। কোন রঙ নেই, গন্ধ নেই, বৈচিত্র নেই। সবকিছু কেমন যেন সাদামাটা।
তাইতো স্বপ্ন দেখার এতো সাধ। ক্ষণিকের দেখা স্বপ্নগুলোতে বৈচিত্রের ছড়াছড়ি। কখনো তা রোমাঞ্চকর, কখনোবা অলীক, কখনো আবার পরাবাস্তব। পরাজিত কোন সৈনিকের চোখে যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন চিরকালই বিমূর্ত হয়ে ওঠে। কাল্পনিক যুদ্ধ জয় বাস্তবের পরাজয়ের গ্লানি ধুয়ে দিতে না পারলেও ভুলে থাকার স্বস্তি এনে দেয়।
আমি এখন যুদ্ধরত সৈনিক। পরাজয়ের গ্লানি এখনো আমাকে স্পর্শ করেনি। তাই স্বপ্ন দেখি যুদ্ধ জয়ের। যুদ্ধ জয়ের জন্য তোমার দেখানো স্বপ্নকে অবলম্বন করে আমি কৌশল স্থির করিনা। তবে যুদ্ধে পরাজিত হবার সম্ভাব্য পথগুলোকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করি।
যুদ্ধের শেষ পরিণতি আমার জানা নেই তাই নির্ণিত কৌশলেই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে চাই।
আমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি তাই মনের অজান্তেই হাজারো স্বপ্ন লালন করি। তুমি নিজেও আমাকে স্বপ্ন দেখাও বলে তোমার দেখানো স্বপ্নগুলো আমার ভাবনার পরিপূরক হয়ে আমাকে ঘিরে থাকে। আমার অবচেতন মনে এক কাল্পনিক বলয় সৃষ্টি করে রাখি আর সেই বলয়ে তুমি নিজেকে ভাবো নিকটবর্তী এক উপগ্রহ আর আমাকে ভাবো মাটির পৃথিবীর মতোই এক গ্রহ। মহাজাগতিক ভাবনায় আমাকে মোহাবৃত্ত করে রাখো।
এখানে আমার নিজস্ব কোন আলো নেই- স্বপ্ন আছে, গতি আছে। তোমারও নিজস্ব কোন আলো নেই- স্বপ্ন আছে, মাধ্যাকর্ষণজনিত টান আছে। তৃতীয় এক নক্ষত্র আমাদের দুজনকেই আলোকিত করে রাখে। আলোর সেই সময়টুকুতে তুমি আমি দুজনেই স্বপ্ন দেখার কথা ভুলে যাই। ব্যস্ত হয়ে পড়ি যুদ্ধে।
আমি যুদ্ধ করে চলি আর তুমি সেই যুদ্ধের রসদ যুগিয়ে চলো। চলতেই হয়- কারণ এই যুদ্ধে আমি জয়ী না হলে তৃতীয় কোন শক্তি তোমাকে গ্রাস করবে। তুমি যা স্বপ্নেও ভাবো না, আমিও না। আমাদের অস্তিত্ব জুড়ে সেই তৃতীয় নক্ষত্রের অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। অথচ স্বপ্ন দেখার জন্য আলো নয়, অন্ধকারকেই পড়ে থাকি।
আমাদের অন্ধকারপ্রীতি প্রতিনিয়ত আলোর প্রতি এক ধরণের অবহেলাকে ঈঙ্গিত করে। অথচ সবাই বলে, আলোই নাকি সকল সৃষ্টির উৎস। আলো ছাড়া কোন জীবের সৃষ্টি হয়না। তোমার আমার সৃষ্টির পেছনেও রয়েছে আলোর অবদান। অথচ আমরা দুজনেই ছিলাম মায়ের গর্ভে।
সেখানে শুধুই অন্ধকার, আলো না থাকলেও উত্তাপ আছে। ঠিক পৃথিবীর কেন্দ্রের মতো, সেখানেও উত্তাপ আছে। আলো না থাকলে উত্তাপ আসবে কোথা থেকে? একবার ভেবে দেখো- মায়ের গর্ভে আলোর উৎসটা কোথায়? তৃতীয় নক্ষত্রের সেই আলো কি গর্ভজাত আমাদের ছুঁতে পারে? দেহের ত্বকে নাকি অসংখ্য ছিদ্র। সেই ছিদ্র কী আলো প্রবেশের জন্য যথেষ্ট? আলো নাকি সবসময় সোজা পথে এগোয়। তবে বাঁকা পথে সেই আলো আমাদের ছোঁয় কিভাবে? শুনেছি অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে আলো যে কোন পথেই যেতে পারে।
তবে কী আমরা সবাই আমাদের দেহে অলৌকিক ফাইবার ধারণ করি? আমরা নিজেরাই কী এক একটি আলোর উৎস? এভাবেই কী আমরা অন্ধকারকে জয় করি?
আমাদের কোথায় যেন ভুল করি। স্বপ্ন দেখার নেশায় আমরা অন্ধকারকে আঁকড়ে ধরি। ভুলে যেতে চাই আলোই আমার জীবন ও বেঁচে থাকার উৎস। আলোই যদি জীব সৃষ্টির মূল কারণ হবে তাহলে ছত্রাক জন্মায় কোথা থেকে? ছত্রাক নিজেওতো এক ধরণের জীব। ছত্রাকেরও প্রাণ আছে।
রাতের অন্ধকারে বেড়ে ওঠা ছত্রাক কী করে আলো ছাড়া বেঁচে থাকে? আমরা দুজন কী তবে ছত্রাকের মতোই বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে আছি? নাহ্ কা হয় কী করে? ছত্রাক কী স্বপ্ন দেখে? ছত্রাক কী আলোর মাঝে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পায়? ছত্রাক কী আমাদের মতো আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে বাঁচার জন্য যুদ্ধ করে? আমরা কখনোই ছত্রাক হতে পারিনা। আমরা শুধুই আঁধার নির্ভর নই। আমাদের স্বপ্ন থাকতে পারে, সেই স্বপ্ন শুধু অন্ধকার ঘিরেই নয়। অন্ধকারের মাঝে পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ সবকিছুকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করার উপায় নেই। কিন্তু আমরা পৃথিবীর প্রতিটি সুন্দরকে উপভোগ করতে জানি।
আলো আছে বলেই প্রকৃতির প্রতিটি রূপ আমরা অবলোকন করতে পারি। আমাদের প্রতিটি ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রকৃতির সকল স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ বুঝে নিতে পারি। তাইতো ছত্রাক কী সেটাও বুঝতে পারি। বুঝতে পারি আমরা স্বপ্ন দেখি, আবার প্রয়োজনে যুদ্ধও করি। এসো তুমি আমি স্বপ্ন দেখি- এক সুন্দর পৃথিবীর, আমাদের এ নির্ভরযোগ্য বাসস্থানের।
যেখানে স্বপ্নময় আঁধারে কোন ছত্রাক গজাবে না। আলো থাকবে, শুধুই আলো। তৃতীয় নক্ষত্রের সেই আলোয় খুঁজে নেবো- দিনের সূর্য, রাতের চন্দ্র। আমাদের মধুময় স্বপ্নগুলো উপহার দেবে এক একটি সুন্দর প্রভাতের। যুদ্ধ আমাদের শেষ হবেই- দেশ মাতৃকার গর্ভ থেকে জন্ম নেবে যে শিশু সে এক আলোকিত ভূবন পাবেই।
এসো আজ থেকে সেই স্বপ্নই দেখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।