আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..
এই গল্পটি লিখেছিলাম অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে, যেহেতু অখণ্ড অবসর পাচ্ছি হলছেড়ে বাসায় যাওয়ার আগে, ব্লগে সেগুলো তুলে রাখতে চাই
অন্ধকার ঘর। এর মধ্যে প্রযোজক আর তার সহকারী পরিচালক ভিসিআর সেটে হিন্দি সিনেমা নিয়ে বসে গেছেন। সঙ্গে আরও কিছু লোক আছে যাদের কাজ হচ্ছে সিনেমার বিশেষ বিশেষ অংশগুলো নোট করে রাখা। এক সিনেমায় কি হয়!তাই আরও কিছু হিন্দি আর ইংরেজি সিনেমাও আছে, অর্থাৎ পুরো রাতটিই এভাবে সিনেমা দেখে কাটাতে হবে। উদ্দেশ্য নতুন একটা সিনেমা বানাতে হবে।
এইসঙ্গে ভার্সিটির বাংলার অধ্যাপককে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে যুতসই একখানা বিশেষণে ভরপুর ভাষণ লিখে দিতে, কেননা সাংবাদিকদের কিছু বলতে হবে তো। ওদিকে নরকে বসে এসব দৃশ্য দেখছিল এক প্রয়াত চিত্রপরিচালক। তাই সে একদিনের ছুটি নিয়ে এল এই আয়োজনে অংশ নিতে।
হঠাৎ ঘরে আলো জ্বলে উঠল। ঘরের মধ্যে একজন মাঝবয়সী লোক দাঁড়িয়ে আছেন, পরনে তার সাদা পাঞ্জাবী আর নীল প্যাণ্ট।
সকলে তার দিকে ফিরে তাকাল.......
প্রযোজক: আপনি আবার কে ভাই?হুট করে রুমে এলেনই বা কিভাবে আর আলোই জ্বালালেন কেন?ও বুঝেছি, আপনি নিশ্চয়ই সাংবাদিক। কিন্তু আমি এখনও তো সিনেমা বানানো শুরু করিনি। কাজ করি , তারপর আসেন।
পরিচালক: এদেশের প্রযোজক, অথচ আমাকে চেনোনা? এ লাইনেনতুন নাকি? জানো কত সিনেমা আমি বানিয়েছি, মানুষ সেগুলোর কথা আজও মনে রেখেছে।
প্রযোজক: দেখুন এ লাইনে এখন এত পরিচালক-প্রযোজক যে নিজেদের সব সহকারীকেও ঠিকমত চিনিনা।
যাহোক, আপনি বসুন। আপনার বুদ্ধি কাজে আসতেও পারে........
পরিচালক: তোমার সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছে কে?
প্রযোজক: লেখার এত সময় কোথায় বলুন!এত ঘনঘন সিনেমা বানাচ্ছি যে, সব কাহিনী এক হয়ে যাচ্ছে। এদিকে মাথাতেও নিউ প্রোডাকশন নেই। তাই দল নামিয়ে দিয়েছি, যেভাবে পার দর্শককে ৩ঘণ্টা আটকে রাখো।
পরিচালক: বেশ বেশ, তা তোমার সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক কে?
প্রযোজক: (অবাক বিস্ময়ে) আপনি দেখি কিছুই বুঝেননি।
এসবও কেউ করে নাকি আজকাল?এখন হচ্ছে শর্টকার্ট দুনিয়া _ এই যে এরা বসে আছে হিন্দি গানের সুর শুনে সেটা আয়ত্ত করে নেবে। তারপর সুর মিলিয়ে শব্দ বসিয়ে নিলেই তো হল, ব্যস গান শেষ। তাছাড়া গানের মধ্যে যদি জাম্পেশ দৃশ্য সেট করা হয় তাহলে তো কথাই নেই। দর্শকরা তো গান শুনেনা, গান দেখে!এখন বছরে ৮০-৯০টি সিনেমা বের হয়। এত সিনেমা, এত গান, যে জন্য মানুষ সকালে দেখলে দুপুরেই ভুলে যায়।
পরিচালক:এটাও নাহয় বুঝলাম, এবার তোমার সিনেমার পা্র-পাত্রীদের ছবি দেখাও।
প্রযোজক: দাঁড়ান দেখাচ্ছি। (প্রযোজক পরিচালককে ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে সিনেমায় তাদের চরিত্রের কথা বলতে লাগলেন, কিন্তু নায়িকার ছবি দেখলেই তিনি প্রায় চেয়ার থেকে পড়ে যাবার যোগাড় হলেন)
পরিচালক: এ কি, তোমার নায়িকাকে তো নায়িকার মায়ের মত মনে হচ্ছে। এ কে দিয়ে কিভাবে কাজ হবে? তোমার সিনেমার বাজেট কম নাকি?
প্রযোজক:(একগাল হেসে) কি যে বলেন! এই তো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা_ সব প্রযোজক-পরিচালক ওর শিডিউল পাবার জন্য বাড়িতে লাইন দেয়। আমি সেই ৬মাস আগে লাইন দিয়ে তবেই ওর সম্মতি পেয়েছি।
আর আপনি কিনা...
পরিচালক: আমি তো আমার সিনেমায় এক্সট্রার চরিত্রে নিতেও ১১বার ভাববো.....
প্রযোজক: আরে ভাই, বুঝেননা কেন সময় বদলে গেছে!এখন কি অভিনয় জানার দরকার আছে ??বিশ্বাসকে ভিঃশ্বাস বলুক, ভালোবাসি বলতে গিয়ে ভালো-আছি বলে ফেলুক , কি আসে যায়! এখন শরীর যত বেশি দেখাবে দর্শককে তত জনপ্রিয় হবে। দর্শক আর নায়িকাকে শুধু আবেগী দেখতে চায়না, দর্শক চায় একটু"............."। তাইতো দর্শকদের কথা চিন্তা করেই.........
(পরিচালক এবার নায়কের ছবিটি হাতে নিলেন, এবং নিয়েই প্রযোজককে শক্ত করে ধরলেন, নয়তো চেয়ার উল্টে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন)
পরিচালক: আরে, এদের তো মামী-ভাগ্নে মনে হচ্ছে। তুমি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে মজা করছো । এমন হালকা-পাতলা ছেলেটাতো এই পর্বত তুলতে গেলে শ্যুটিং
স্পটেই মারা পড়বে।
প্রযোজক: সে ভয় যে আমাদের্ও নেই তা বলছিনা। কিন্তু কি করবো, দর্শক যে চায়....! ভাবেননা নিয়মিত জিমে পাঠিয়ে ওকে এ কয়মাসেই আরোও শক্তিশালী করে ফেলবো।
পরিচালক: এত জোড়াতালি আর খাদ মেশানো সিনেমা কি চলবে?
প্রযোজক: হাসালেন ভাই। এটাই তো নিয়ম এখন। ।
। আপনাকে একটা কথা সাফ জানিয়ে রাখি_ আপনারা হয়ত সিনেমাকে শিল্প ভাবতেন। কিন্তু আমরা অত শির্প বুঝিনা, ভাত বুঝি। তাই আমাদের কাছে আলু-পটল-সিমের মত সিনেমাও একটা ব্যবসা। এই ব্যবসায়ে লাভের জন্য সবকিছু করতে রাজী আছি।
লাক লাখ টাকা খরচ করে সিনেমা বানানোর পর যদি না চলে, তাহলে পরের দিন বাটি নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে। এভাবে গতানুগতিক-ফাকিবাজির কাজ করে যখন ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরে পাচ্ছি, নতুনত্বের কি আবশ্যকতা আছে?? .........(চলবে)..........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।