(জন্ম ১৯১২- মৃত্যু ২২ শে নভেম্বর ১৯৮৭)
আজ থেকে প্রায় কুড়ি বৎসর আগে, ছোট মামা একটা অডিও টেপ হাতে দিয়ে বলল, শুনে দেখিস্ ভাল লাগবে। গানবাজনার সাথে সখ্যতা তখন থেকেই। শুনলাম গানগুলো। ভাল লাগলনা। ভাল লাগার কথাও না।
কেমন বিদুঘটে এক বুড়োর গাওয়া সব গান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যোগ দিলাম গনসংগীত দল 'আবহমান' এ। গন সংগীত আর জীবনমুখি গান আগে থেকেই ভাল লাগত; ভক্ত ছিলাম ভুপেন হাজারিকার গানের, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রায় সব গানই কন্ঠস্থ ছিল। এখানে নতুন কিছু গান করতে দেখলাম সবাইকে।
হঠাৎ মনে হল, এই গান তো আমার চেনা! বের করলাম আবার সেই টেপটা।
ততদিনে আরও ৮ বৎসর পেরিয়ে গেছে, বোধ ও কান দুইই কিছুটা পূর্ণতা পেয়েছে। নতুন করে শুনলাম গানগুলো: হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান। উপমহাদেশের প্রখ্যাত গণসঙ্গিত স্রষ্টা হেমাঙ্গ বিশ্বাস।
এই প্রথম হেমাঙ্গের প্রেমে পড়লাম। শুরু হল তাঁর সম্বন্ধে আরও খোঁজখবর।
তখন ইন্টারনেটের নামই শুনিনি। কোন কিছু খুঁজে পাওয়া যে কি দুঃসাধ্য ছিল তখন। তার মাঝেও তাঁর সম্বন্ধে খোঁজ চালু রাখলাম। প্রথম দুঃখটা পেলাম এই জেনে যে যাকে খুঁজছি, সেই তিনি ধরাধাম ছেড়েছেন ১৯৮৭ সালে। প্রায় সেই সময় যখন টেপটা মামা আমাকে দিয়েছিলেন।
আরও অনেক পরের কথা। সেরা স্বাগতের কন্ঠে শুনলাম,
"হবি গন্জের জালালী কইতর,
সুনাম গন্জের কুড়া,
সুরমা নদীর গাংচিল
আমি শুইন্যে দিলাম উড়া। "
মনটাকে ভীষণ নাড়া দিয়েছিল গানটা কিন্তু তখনও জানতামনা গানের মূল উৎসের খোঁজ। যখন জানলাম, পুরো শরীর শিহরিত হয়ে গেছিল। হেমাঙ্গ বিশ্বাস আমাদের দেশের মানুষ; সিলেটের হবিগন্জের মানুষ; এই জালালি কইতর তিনি নিজেই; শুন্যে উড়াল দিয়ে ডানা ভেঙ্গে কলকাতায় গিয়ে পড়েছিলেন (ডানা ভাইঙ্গা পড়লাম আমি কোইলকাত্তার উপর, তোমরা আমায় চিন নি)!!!
Click This Link
কি অদ্ভুত সুন্দর কথা একেকটা গানের! আর সুরের কথা নাই বললাম।
সবচেয়ে বেশী মন কেড়ে নেয় 'শঙ্খচিল' গানটা। পারমানবিক যুদ্ধের প্রতিবাদে ১৯৬৪ সালে রচনা করা গান হয় গানটা। কি অসাধারণ সুরের ভ্যারিয়েশন। ঝাড়া ৮ মিনিটের গান!
Click This Link
তাঁর আরও কিছু গান যেগুলো নেটে পাওয়া যায় সেগুলো হল।
তেলেঙ্গানা, নিগ্রো ভাই আমার পল রবসন (এই গানটার অনেক ভার্সন বেরিয়েছে) , জন হেনরী (১লা মে শ্রমিক দিবসের নায়ককে নিয়ে লেখা), জন ব্রাউন , ভেদে অনশন।
http://www.esnips.com/web/Hemanga-Biswas
তাঁর গানের লিস্ট কে খাটো করে এই স্বল্প পরিসরে জুড়ে দিতে ইচ্ছা করেনা। তবু দিতে হল। পরে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে।
আজীবন সাধারণের অধিকারের জন্য নিরন্তর লড়ে যাওয়া এই মহান প্রাণের আজ মহা প্রয়াণ দিবস।
হেমাঙ্গ বিশ্বাস কে জানাই আমার প্রানঢালা শ্রদ্ধা।
----------------------
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কোন ছবি আমার কাছে নেই। কেউকি দিতে পারেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।