কবিতা ও যোগাযোগ
আজ 'সঞ্জীব স্বজন' নামে তাঁর বন্ধুরা তাঁকে স্মরণ করবেন বেঙ্গল গ্যালারিতে। বিকেলের শিফটে অফিস থাকায় যেতে পারব না। খুব দুঃখ হচ্ছে। ২৩ বছরের সম্পর্ক। সহজে ভোলা যায়? দাদা পড়তেন গণিতে।
আমিও গণিতে, পরে পরিসংখ্যানে। দাদা ছেড়ে এলেন সাংবাদিকতা বিভাগে। আমিও তাই করলাম। দুজনেই থাকতাম জগন্নাথ হলে। একই সংগঠন করতাম।
সাংস্কৃতিক সংগঠনও একই, হলে কলকণ্ঠ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু সাংস্কৃতিক দল, জাতীয় পর্যায়ে স্বরশ্রুতি। পেশায়ও একই- সাংবাদিকতা। তিনি গল্প-কবিতা লিখতেন। তাঁর গল্পের বই 'রাশপ্রিন্ট' নিয়ে গতবছর লিখেছিলাম। তাঁর 'ল্যাম্পপোস্ট' কবিতা আমার প্রিয়।
আমাকে অনেকবার বলেছেন গান লিখতে। দাদা গাইবেন। হায়! কে জানত! এত আগেই চলে যাবেন। যাওয়ার মাস দুয়েক আগে তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম। দাদা-বৌদির সঙ্গে অনেক আড্ডা হলো।
মেয়েটিও ছিল। দাদা বললেন, 'আর চাকরি করব না। একটা নতুন আইডিয়া বানাইছি, সাপ্তাহিক বানাব। তুমি পারলে পার্টি যোগাড় করো'। আমি হেসেছি।
বলেছি, 'দাদা গান গেয়েও তো মানুষ চলতে পারে। আপনি গানটাকেই পেশা হিসেবে নি না কেন?'
'আরে আমি কি সব সময় গান গাই। ওটা তো সখের জায়গা। '
এর কয়েকদনি পরে ওয়াইডব্লিউভিএ মিলনায়তনে সাংবাকিদরে একটা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় দেখা হলো। দুজনেই প্রশিক্ষক।
আমার ক্লাসে দাদা পাশে বসা ছিলেন বলে বেশ বিব্রত হচ্ছি। তাঁর কাছে আমি তো শিশু। তাই তাড়াতাড়ি শেষ করে তাঁর জন্য চেয়ার ছেড়ে দিতে চাইছি। তিনি বললেন, আমার আইজ বলতে ভালো লাগছে না। তুমি চালাও।
'
তাঁর নির্ধারিত ফিচার লেখার কলাকৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। দুইতিন মিনিট কথা বলার পরে তিনি বললেন, 'আমার ছোটভাই আছে, ও বাকিটুকু আলোচনা করবেন। আমার আজ মন খারাপ। '
এরপর তিনি চলে গেলেন। সেই তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা।
আমি তাঁর শবমিছিলে ছিলাম। কিন্তু শব দেখিনি। দেখতে চাইনি। তাঁর হাসিভরা মুখটাই চিরস্মরণীয় হয়ে থাক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।