কোন আপডেট নেই।
কাম্পিউটার নেটওয়ার্ক আর নিরাপত্তা আমার খুব প্রিয় বিষয়।
আর সব থেকে প্রিয় হচ্ছে বেতার নেটওয়ার্ক। মজা করে আমরা বলি তারছেড়া নেটওয়ার্ক।
ল্যাপটপের ব্যবহার অনেক বেড়েছে আর সব ল্যাপটপেই এখন অয়ারলেস ল্যানকার্ড (ওয়াই-ফাই) বিল্ট ইন আছে।
আর তার লাগিয়ে ল্যাপটপে নেটওয়ার্কের কাজ করা ...আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর লাগে। অনেককেই দেখেছি ওয়ারলেস ল্যানকার্ড এর ব্যবহার না জানায় এই চমৎকার প্রযুক্তির মজাটা পান না। আর অনেকেরই রয়েছে বেশ কিছু বিভ্রান্তি। এই সিরিজের উদ্দেশ্য টিউটোরিয়াল জাতীয় কিছু লেখা না। আমার খুব প্রিয় একটা বিষয় নিয়ে কিছু আবজাব (আমার স্বভাবমত ) লেখার উদ্দেশ্য নিয়েই এই সিরিজ।
যে ক্ষুদ্র অংশ আমি জানি সেটুকু খুব সহজ কথায় শেয়ার করতে চেস্টা করব। আর আশা করব যারা এই বিষয়ে কাজ করছেন, জানেন বা আগ্রহি... তাদের কাছ থেকে চমৎকার কিছু আলোচনার।
ওয়াই-ফাই (WiFi) এর হালকা ইতিহাস জেনে রাখা মনে হয় খারাপ হবে না।
আমরা প্রায় সবাই ই এখন কমবেশি বেতার তরঙ্গের কথা জানি। প্রতিদিন পকেটের সেলফোনে, বা এফ এম প্যাচাল শোনার জন্য বা বাড়ীতে মাইক্রো অভেনে আমরা এই তরঙ্গটাকে ব্যবহার করছি।
(গুলশান টু মোহাম্মদপুর এর তরঙ্গবাস কিন্তু এই তালিকার বাইরে )। যাই হোক এই বেতার তরঙ্গ আবার আপনি ইচ্ছে মত ব্যবহার করতে পারবেন না। এর জন্য আপনাকে সরকারের এই বিষয়ের নিয়ন্ত্রন যারা করে (বাংলাদেশে বিটিআরসি) তাদের অনুমতি নিতে হবে। এবং বি....শাল অংকের অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স নিতে হবে তরঙ্গ ব্যবহারের।
তবে কিছু কিছু বেতার তরঙ্গের রেন্জ আবার উন্মুক্ত।
এগুলো গবেষনা বা ব্যাক্তিগত কাজে কিছু নিয়মের ভেতরে থেকে যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে।
আর এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে আমেরিকার ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন এর মাধ্যমে (Federal Communications Commission বা FCC)। তারা কিছু নিয়ম করে সে সময় কিছু তরঙ্গ উন্মুক্ত করে দেন। যা পরবর্তিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কিছু নিয়ম উনিশ-বিশ করে গ্রহন করা হয়। তবে সেসময়ও কিছু ঘাড়-ত্যারা প্রধান সারির রেডিও ইকুইপমেন্ট নির্মাতা সাধারণের জন্য এই উন্মুক্তকরণের বিরোধিতা করেছিল।
ওয়াই-ফাই এর দাদা বলা যায় যাকে ...সেটি আবিস্কার হয়েছিল ১৯৯১ এর দিকে NCR Corporation/AT&T এর যার কাজ মূলত ছিল হিসাব রক্ষণ ব্যাবস্থার জন্য।
এরপর প্রথম সত্যিকারের যে ওয়ারলেস সিস্টেমটি বাজারে আসে সেটি ছিল "ওয়েভ-ল্যান" (WaveLAN) নামের ১/২ মেগাবিট পার সেকেন্ড এর । তবে এটিই ওয়ারলেস টেকনোলজি IEEE 802.11 স্ট্যান্ডার্ডের পতাকা ধরে রাখে প্রায় পরবর্তী প্রায় দশ বছর এর জন্য। সেজন্য একে ওয়াই-ফাই এর জন্মদাতাও বলা হয়ে থাকে। পরবর্তী ওয়াই-ফাই এর স্ট্যান্ডার্ড গুলো যেমন IEEE 802.11b এবং 802.11a জন্য এটি ছিল ভিত্তি।
মোটামুটি ভাবে অনেকটা এরকমই ছিল এই তারছেড়া প্রযুক্তিগুলোর শুরুর দিকটা। বুঝতে পারছি অনেকে এরই মধ্যে বিরক্ত হয়ে "আইছে ইতিহাস কপচাইতে" জাতীয় কমেন্ট করে ফেলেছেন। তাই আর না।
আসুন দেখি ওয়াই-ফাই এর কি কি প্রচলিত ধারা আছে। ওয়াইফাই এর স্ট্যান্ডার্ড গুলো আই ট্রিপল ই (IEEE) নামক (ইন্সিটিউট অফ ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইন্জিনিয়ারস) সংস্থার নির্ধারন করা।
802.11b
ওয়াই-ফাই এর এই স্ট্যন্ডার্ড টি অক্টোবর ১৯৯৯ এ প্রকাশিত। এর কার্যকর ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে ২.৪ গিগা হার্জ। এর তথ্য পরিবহন ক্ষমতা ছিল ১১ মেগাবিট/সেকেন্ড। ইনডোর রেন্জ (মানে যে সীমার ভেতরে আপনি কাজ করার মত সিগন্যাল পাবেন) ছিল প্রায় ৩৮ মিটার। তথ্য নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার হত WEP (Wired Equivalent Privacy)।
তবে তথ্য নিরাপত্তার দূর্বলতা আর কম তথ্য পরিবহন ক্ষমতার জন্য এটি জনপ্রিয়তা হারায়।
802.11a
আরো একটু দ্রুত তথ্য পরিবহন ক্ষমতার চাহিদার থেকে জন্ম নেয় এই স্ট্যান্ডার্ড টি। এটিও অক্টোবর ১৯৯৯ এ প্রকাশিত। এর কার্যকর ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে ৫ গিগা হার্জ। এর তথ্য পরিবহন ক্ষমতা ছিল ৫৪ মেগাবিট/সেকেন্ড।
ইনডোর রেন্জ ছিল প্রায় ৩৫ মিটার। তবে এটিও নতুন কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা না ব্যবহার করে 802.11b এর WEP কেই চালু রাখ। তবে এটি ১৫২ বিট এনক্রিপশন ব্যবহার করত। যেখানে 802.11b ১২৮ বিট ব্যবহার করে তথ্য এনক্রিপ্ট করত।
802.11g
অধিক তথ্য নিরাপত্তা, আরেকটু বেশি কার্যকর রেন্জ আর কম মূল্যের হার্ডওয়ার নিয়ে ২০০৩ এর জুনে আসে ২.৪ গিগা হার্জ এর 802.11g স্ট্যান্ডার্ড।
এর আরেকটি চমৎকার ব্যাপার ছিল ব্যাক ওয়ার্ড কমপ্যাটাবিলিটি। মানে আপনি 802.11g এর ডিভাইস দিয়ে 802.11b এর নেটওয়ার্ক ও ব্যবহার করতে পারবেন। তথ্য নিরাপত্তার জন্য এতে আসে WEP এর সাথে WPA (Wi-Fi Protected Access) নামক চমৎকার ব্যবস্থা।
এখনকার প্রচলিত ল্যাপটপের ওয়ারলেস ল্যান-কার্ডগুলো এবং অনান্য ওয়ারলেস ল্যান-কার্ডগুলো মুলত এই স্ট্যান্ডার্ড এর।
এই ধারায় সামনে আসছে 802.11n, যেখানে থাকবে ২.৪/৫ গিগা হার্জ এর তরঙ্গের ব্যবহার, সাথে ৭৪ মেগাবিট/সেকেন্ড এর তথ্য গতি।
কার্যকর রেন্জ ও বেড়ে যাবে আশা করা যায়।
সামনের পর্বে বিভিন্ন ওয়াই-ফাই চ্যানেল আর নেটওয়ার্ক নিয়ে বলতে চেষ্টা করব।
আর সবার ভাল লাগলে ওয়াই-ফাই এর এন্টেনা, পুর-ম্যানস ওয়াই-ফাই, ওপেন সোর্স এপি ফার্মওয়ার (যেটি ব্যবহার করে আপনার কমদামি একসেস পয়েন্টটিকে বেশ চমৎকার ও দামি একটা বস্তু বানিয়ে ফেলতে পারবেন। ) আর ওয়ারলেস নিরাপত্তা নিয়ে লিখতে চেষ্টা করব।
কষ্ট করে পড়বার জন্য ... ....তারছেড়া ধন্যবাদ।
তথ্য কৃতজ্ঞতা: উইকিপিডিয়া, ওয়াই-ফাই ফোরাম, হাউস্টাফওয়ার্কস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।