দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...
৫ বছর আইনী লড়াই চালিয়ে মাদ্রাসা পাশ এক মাওলানার কাছ থেকে সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতি আদায় করেছে সুনামগঞ্জের অজপাড়া গায়ের এক সাহসী তরুণী। ওই তরুণীর ৫ বছর বয়সী সন্তানকে পিতার পরিচয় প্রদান ও ২১ বছর বয়স পর্যন্ত ভরণ পোষণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করায় ধর্ষক মাওলানাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়েছে।
২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাবনিয়া গ্রামের দিনমজুর এরশাদ আলীর কিশোরী মেয়ে আলীমুনেচ্ছা (১৫) অভাবের তাড়নায় একই গ্রামের মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেয়। গৃহকর্মের কাজ নেওয়ার পর থেকেই বাড়ির মালিকের ছেলে মাওলানা হেলাল আহমদ এর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার উপর।
বিভিন্ন সময়ে সে তার শরীরের উপর ঝাপিয়ে পড়েও তার গোপন ইচ্ছে মেটাতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কিশোরীর বাধার কাছে সে পরাজিত হলেও এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কোমলমতি কিশোরীকে কাবু করে ফেলে। মিথ্যা প্রলোভনে ভন্ড ও চরিত্রহীন মাওলানা হেলাল আহমদ আলিমুনেচ্ছার সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করে। অবৈধ মেলামেশার এক পর্যায়ে আলীমুন্নেছা অন্তসত্বা হয়ে পড়ে। এসময় ভন্ড মাওলানা আলীমুন্নেছাকে বারবার গর্ভপাতের জন্য বললে আলীমুন্নেছা অস্বীকৃতি জানায়।
২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর ঝলমেলে ভোরে আলীমুনেচ্ছা এক ছেলে সন্তান প্রসব করে। এসময় আলীমুন্নেছাকে ‘নষ্টা-কুলওটা’ বলে মাওলানা হেলাল আহমদের পিতা মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং তার ছেলের পে অবস্থান নিয়ে তাকে নির্দোষ দাবি করে। পিতার সঙ্গে হেলাল আহমদও আলীমুনেচ্ছাকে বিয়ে করতে অস্বিকার করে। আলীমুন্নেছার দিনমজুর পিতা এলাকার মোড়লদের শরণাপন্ন হয়েও প্রভাবশালী মাওলানা পরিবারের সৎ বিচার না পেয়ে অবশেষে আইনের আশ্রয় নেন। আলীমুনন্নেছার দিনমজুর পিতা এরশাদ আলী মাওলানা হেলাল আহমদকে আসামী করে ১৫.০৩.০৩ তারিখে সুনামগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সুরেশ চন্দ্র হালদার অভিযোগটি তদন্ত করে আসামী হেলালের বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) ও ১৩ ধারায় অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ দিন বিচার কাজ চলার পর ১১.১১.০৮ ইং তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের জজ মো: জসিম উদ্দিন অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় আসামী মাওলানা হেলাল উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। রায়ে আলীমুচ্ছোর সন্তানকে পিতার স্বীকৃতি প্রদান ও ২১ বছর পর্যন্ত দন্ডিত অপরাধী ধর্ষক পিতা হেলাল কৃর্তক ভরণপোষণের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
রায়ের পর আলীমুনন্নেছা জানান, মামলা করার পর তার পিতা ও পরিবারকে মাওলানা হেলাল ও তার পিতা মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক হুমকি দিয়ে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দেয় এবং তার পিতাকে একাধিকবার মারধর করে। এক পর্যায়ে সামাজিক চাপও সৃষ্টি করে।
এসব চাপে আলীমুন্নেছার পরিবার মামলা তুলে নিতে অস্বীকার করলে মাওলানা পরিবার এলাকার মোড়লদের নিয়ে আলীমুন্নেছার পরিবারকে ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। বিভিন্নমুখি চাপ ও প্রলোভনের কাছে আলীমুন্নেছার পরিবার নতি স্বীকার না করে আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং অবশেষে জয় হয় তাদের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।