♪ একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়াল... শীষ দিয়ে গান গায় ধূসর খেয়ালে...♪
তানিম: মাম্মা, গতকালের হ্যাং আউটটা কিন্তু হেব্বি জোস ছিল!
আনিকা: আবার জিগায়!
আবীর: ইয়াপ, পুরাই ফাটাফাটি!
বিপুল: দূরে গিয়া মর তোরা! আমারে তো ডাকলি না।
তানিম: ক্যান, কালকে যখন বললাম তখন তো খুব পার্ট নিলি!
বন্ধুদের আড্ডার খণ্ডিত এই চিত্রটি কাল্পনিক। তবে তরুণদের ভাষা আজকাল এমনটাই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আড্ডায় কি ফেসবুক চ্যাটিংয়ে—নতুন ঘরানার এই শব্দগুলো তরুণদের মুখে মুখে ফিরছে। ভাষাবিদেরা বলেন, ‘ভাষা সদা পরিবর্তনশীল।
’
ভাষা পরিবর্তনে তরুণেরাই যে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী, তা খুব স্পষ্ট। তরুণদের এই ভাষা নিয়ে অবশ্য ঘোর আপত্তি আছে অনেকেরই। তবে তরুণেরা কি আপত্তি মানছেন? কথা হলো নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর শিক্ষার্থী আসিফুর রহমানের সঙ্গে, ‘এই শব্দগুলো আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক। আমরা প্রতিদিন আমাদের কথায় এই শব্দগুলো ব্যবহার করছি। বয়সে যাঁরা বড়, তাঁদের কাছে তো খানিকটা বেখাপ্পা লাগবেই।
কারণ, তাঁরা তো এতে অভ্যস্ত নন। যাঁরা আমাদের থেকে বড়, তাঁরা যখন আমাদের বয়সী ছিলেন তখন কিন্তু তাঁরাও এমন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছেন। ’
এটা তো তরুণদের ভাবনা। বয়সে যাঁরা বড়, তারা কী ভাবছেন? ‘ভাষার একটা নিজস্ব গতি আছে। তরুণদের এই শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে।
যেমন ধরুন, এখনকার তরুণেরা বলে, “ফোন দিয়ো। ” ফোন কোরো না বলে তারা বলছে ফোন দিয়ো। এমনটা শুনলে মনে হয় কানে আঘাত লাগছে। তবে এটা ঠিক, ভাষা একটা স্রোতের মতো। এই স্রোতের সঙ্গে অনেক ময়লা-আবর্জনা, শ্যাওলা ভেসে আসে।
যেসব শব্দ টিকে যাওয়ার তা টিকে যাবে। আর যেগুলো ভেসে যাওয়ার মতো, সেগুলো একটা সময় ভেসে যাবে। তাই আমি মনে করি, এতে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। সমালোচনা অনেক হবে, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভাষাকে নিজের গতিতেই চলতে দিতে হবে।
’ বলছিলেন নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।
তরুণেরা এখন কথায় কথায় বলে, ‘কুল!’ অভিধান ঘাটলে দেখা যায় এই শব্দের অর্থ ঠান্ডা! তার মানে কি আইসক্রিম খাওয়ার সময় তাঁরা এই শব্দ ব্যবহার করেন? না, গরম গরম জিলিপি মুখে পুড়েও তারা ভালোলাগার প্রকাশ করেন কুল বলে। কোনো একটা বিষয়ে দ্বিতীয়বার নিশ্চিত হওয়ার জন্য ‘তাই’? বললে উত্তরে শোনা যায়, ‘আবার জিগায়!’ কিংবা অদ্ভুত কিছু দেখে মনের অজান্তেই উচ্চারণ করেন ‘জিনিস’, ‘আজিব’, ‘পুরাই অস্থির’, ‘রকস’, ‘অসাম’ শব্দগুলো। আবার মতের মিল না হলে বলে ওঠেন, ‘খেলুম না। ’ পাত্তা না দিতে চাইলে মনের ভাব প্রকাশ করেন ‘বেইল নাই’, ‘গুনলাম না’ কিংবা ‘অফ যা’ শব্দগুলো দিয়ে।
খেলার মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষ শিবিরের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, ‘ধরে দেবানি। ’ এই শব্দ তরুণদের অভিধানে যোগ হয়েছে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার কল্যাণে।
বাকিগুলোর উৎপত্তি কোথায়? নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তরুণদের আড্ডাতেই যে এই শব্দগুলোর অঙ্কুরোদগ্ম—তা নিশ্চিত; তাই বলা চলে ‘আবার জিগায়’! এখন লেখাটা পড়ে আপনি কী বলবেন, ‘এইডা কিছু হইল’ নাকি ‘পুরাই অস্থির’? সিদ্ধান্ত আপনার, ‘ঠিকাসসসসে ভায়াআআ?’
তরুণেরা যেসব শব্দ ব্যবহার করছেন সেগুলোর আভিধানিক ও প্রায়োগিক অর্থ—
‘পুরাই অস্থির’ তরুণদের ভাষা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।