আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পার্সিপোলিস: প্রাচীন পারস্যের বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

পার্সিপোলিসের বিশালত্ব আসলে সম্রাট দারায়বৌষ-এর সিংহ হৃদয়ের প্রতীক। ইরানের দক্ষিণে ফারস প্রদেশ। ওই প্রদেশের একটি প্রান্তরের নাম মারভ দাস্ত।

পার্সিপোলিস ওখানেই। হা হা ধ্বংসস্তুপ। আজ কেবল কয়েকটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। কেন? যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৩৩০ বছর আগের কথা। পারস্য জয় করে পার্সিপোলিস দখল করে নিয়েছেন মেসিডোনিয়ার আলেকজান্দার।

তার সৈন্যরা লুঠ করছে পার্সিপোলিস। তখনই এক রাতে মদ গিলে মাতাল হয়ে পার্সিপোলিস পুড়িয়ে দিয়েছিলেন আলেকজান্দার । সেই সঙ্গে পুড়ে গেল প্রাচীন পারস্যের বিস্ময়কর এক স্থাপত্য নিদর্শন। পার্সিপোলিস আসলে কি? পার্সিপোলিস হচ্ছে প্রাচীন পারস্যের আকামেনিদ রাজবংশের সম্রাটদের রাজপ্রাসাদ। আকামেনিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সাইরাস দ্য গ্রেট হলেও প্রাসাদটি নির্মানের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ।

এর আগে আমি এক লেখায় বলেছি যে- সম্রাট দারায়বৌষ সম্রাট সাইরাসের ছেলে গাওমাতাকে হত্যা করে পারস্যের ক্ষমতা দখল করেছিলেন; তারপর পার্সিপোলিস নির্মানের উদ্যেগ নিয়েছিলেন দারায়বৌষ। আকামেনিদ রাজবংশের পুরনো রাজধানী ছিল পাসারগাদে। সেটি ছিল পার্সিপোলিসের ২৫ মাইল উত্তরে। আকামেনিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সাইরাস দ্য গ্রেট-এর রাজধানী ছিল পাসারগাদে। সাইরাসের সমাধিটি ওখানেই।

পার্সিপোলিস নামটি দিয়েছিল গ্রিকরা। পার্সি= পারস্য বা পারশিক। পোলিস= নগররাস্ট্র। কাজেই, পার্সিপোলিস অর্থ: পারশিকদের নগররাষ্ট্র। সত্যিই পার্সিপোলিস তাই ছিল।

সম্রাট দারায়বৌষ-এর আমলে পার্সিপোলিসের নাম ছিল পারসা। দেশটা পারসীয়দের বলেই। পার্সিপোলিসের মূল ভিত ছিল সমতল থেকে উচুঁ ৪৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০০ মিটার প্রশস্ত চত্তর। সেই উঁচু প্রশস্ত চত্তরে ছিল রাজকীয় ভবন। যার দেওয়ালে ছিল খোদাই করা নকশা।

পুবে ছিল আরও কিছু ভবন ও দূর্গের মতন পাহাড়। পার্সিপোলিসের যে কোথায় সাধারণ মানুষ বাস করত তা আজও বার করা যায়নি। পার্সিপোলিসের সাড়ে ৩ মাইল উত্তরে রয়েছে ‘নাখশ-ঈ-রুস্তাম’। সম্রাট দারায়বৌষ ও তাঁর বংশধরের সমাধিস্থল ‘নাখশ-ঈ-রুস্তাম’। সবচে বিস্ময়ের কথা এই যে-পার্সিপোলিস একেবারে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছিল।

পারস্যের লোকেরা পার্সিপোলিসকে বলতে লাগল “তখত-ঈ-জামশীদ”; জামশীদ ছিল প্রাচীন পারস্যের একজন মিথীয় পুরুষ, ঠিক আকামেনিদ রাজবংশের কেউ নন। আরও পরে পারস্যের লোকেরা পার্সিপোলিসের ধ্বংস¯তূপকে বলতে লাগল চেহেল “সোতুন” বা চল্লিশ স্তম্ভ। ১৩১৮ সালে একজন ইউরোপীয় অভিযাত্রীর লেখায় প্রথম ইউরোপ জানল পার্সিপোলিসের কথা। তারপর থেকে গবেষনা আরম্ভ হল সমতল থেকে উচুঁ ৪৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০০ মিটার প্রশস্ত চত্তর। ধীরে ধীরে সব জানা গিয়েছিল।

জানা গেল যে পার্সিপোলিসেই বাৎসরিক কর গ্রহন করতেন সম্রাট দারায়বৌষ, তাঁর পুত্র জেরেকসেস; ইনিই গ্রিস আক্রমন করেছিলেন, হেরেছিলেন। যা হোক। সবাইকে ১৪ মিটার উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হত। মূল প্রবেশ পথে একটা পাথরের ষাঁড়। উলটো দিকে মানুষমুখো ডানাওলা ষাঁড়।

ভীতিকর জন্তুগুলি পেরিয়ে তারপর চত্তর। বিশাল চত্তর। চারিদিকে স্তম্ভ, দরওয়াজা। এটিই আপাদানা বা সম্মেলন কক্ষ; যা ২.৬ মিটার উঁচুতে পৃথক একটি পোডিয়ামের ওপর দাঁড়িয়ে- প্রতি পাশে ১১০ মিটার দীর্ঘ। ৬টি স্তম্ভের ৬টি সারি।

স্তম্ভের ভিত্তি চৌকোন। স্তম্ভের শীর্ষে ছাদের কাছে জন্তুর মুখ; বশ্যতার প্রতীক। স্তম্ভগুলোর মাঝখানে ৫ মিটার পুরু ইটের দেওয়াল। চত্তরের পশ্চিম কোণে ছিল দারায়বৌষ প্রাসাদ। প্রবেশের দওয়াজা ছিল একটিই, তার আগে প্রহরীকক্ষ।

ভিতরে প্রথমে বড় একটা হল রুম। তারপরে সারিসারি কক্ষ, তার মসৃন সব দরওয়াজা। জানালা। দেওয়ালে কুরুঙ্গিতে কারুকাজ। দেওয়ালে খোদাই করা নকশা।

উপকথা। পারশিক কোনও বীর হত্যা করছে কোনও ভয়ঙ্কর জন্তুকে। আসলেই পার্সিপোলিস ছিল প্রাচীন পারস্যের বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন। ভাবলে অবাক লাগে- মদ খেয়ে মাতাল হয়ে মেসিডোনের আলেকজান্দার ওটা পুড়িয়ে দিলেন। তারপরও ঐ লোকটাকে আমরা আজও গ্রেট বলি! আশ্চর্য!


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।