আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জরথুশত্র: সুপ্রাচীন এক আলোর উপাসক।

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

বর্তমানকালে আঁকা জরথুশত্রর কাল্পনিক ছবি Zarathustra's teachings are strongly dualistic. The believer has to make a choice between good and evil. Zoroastrianism was one of first world religions to make ethical demands on the believers. জরথুশত্র ছিলেন প্রাচীন পারস্যের অগ্নিউপাসক জরথুশত্রবাদী ধর্মের প্রবক্তা। নানা কারণেই জরথুশত্রর চিন্তাভাবনা ব্যতিক্রমী। তিনি যেমন আলোর কথা বলেছেন, তেননি অন্ধকারের কথাও তিনি অস্বীকার করেন নাই; অন্ধকারের দেবতার শক্তির কথা অস্বীকার করেন নাই।

জরথুশত্রমতে আলো ও অন্ধকারের দেবতা নাকি পৃথক; দুপক্ষই সমান শক্তিশালী। এ জন্যই বলছিলাম জরথুশত্রর চিন্তাভাবনা ব্যতিক্রমী। তবে আশার কথা এই যে- শেষ অব্দি আলোই প্রভূত্ব করবেন অন্ধকারের ওপর। তার আগে আমরা আলো অন্ধকারে যাই ... প্রায় তেমন কিছুই জানা যায়নি জরথুশত্রর জীবন নিয়ে। সেই সুপ্রাচীন সময়টা তো ছিল আসলে কিংবদন্তী কেবলি কিংবদন্তী।

প্রাচীন গ্রিকরা জরথুশত্রকে বলত Zoroaster; আর বলত জরথুশত্র নাকি বেঁচে ছিলেন প্লেটোর জন্মের ৬ হাজার বছর। না না, অত নয়। যিশুর জন্মের ১২/১৩ শ বছরের বেশি হবে না জরথুশত্রর সময়কাল। পন্ডিতবর্গের আজকাল এ রকমই বিশ্বাস। বলছিলাম জরথুশত্রর জন্ম প্রাচীন পারস্যে।

সেই সময় পারস্যে ছিল অনেক ইন্দো-ইউরোপীয় আর্যভাষী গোত্র। মদ্র , পারস ইত্যাদি। এদেরই একদল জরথুশত্রর জন্মের দু-তিনশ বছর আগে প্রাচীন ভারতে এসেছিল । যাহোক। পরবর্তীকালে প্রাচীন পারস্যের গোত্রের প্রত্যেকের দাবি ছিল জরথুশত্রর জন্ম নাকি ওদেরই গোত্রে।

কী হাস্যকর। আসলে সবাই বিখ্যাত মানুষের আত্মীয়তা চায়। বিখ্যাত মানুষের সান্নিধ্যে ধন্য হতে চায়। তো, প্রাচীন সময়টা কিংবদন্তী হলেও পন্ডিতেরা তো বসে নেই। জরথুশত্র ধর্মের ধর্মগ্রন্থ হল আবেস্তা বা জেন্দাবেস্তা।

জেন্দাবেস্তার প্রথম ভাগ হচ্ছে গাথা। ধারনা করা হয় গাথা লিখেছেন স্বয়ং জরথুশত্র। সেই গাথার ভাষা বিশ্লেষন করে পন্ডিতারা বলছেন ভাষাটি ছিল পারস্যের পূর্বদিকের অর্থাৎ, বর্তমান কালের আফগানিস্থানের ভাষা । জরথুশত্রর জন্ম যে বাকত্রিয়া রাজ্যে এভাবেই তা প্রমাণিত হল। বর্তমান কালের আফগানিস্থানের বলখ প্রদেশই (বর্তমান মাজার ই শরীফ) হল বাকত্রিয়া রাজ্য।

রাজ্যটির অবস্থান ছিল পারস্যের পুবে। এভাবে জরথুশত্রর সম্বন্ধে যা জানা গেল তা এই: জরথুশত্রর জন্ম প্রাচীন বাকত্রিয়া রাজ্যের স্পিতামা নামে এক গোত্রে। জরথুশত্রর মায়ের নাম দুঘদবা; বাবার নাম পুরুষহাসপা। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জরথুশত্র ছিলে তৃতীয়। ছেলেবেলায় সম্ভবত মেষ চড়াতেন জরথুশত্র।

জগতের আলোকপ্রাপ্তগনের অনেকেই তো মেষপালাক ছিলেন। পরিনত বয়েসে জরথুশত্র আহরুমজদার দর্শন পেলেন। আহরুমজদা হলেন ঈশ্বর, আলোর ইশ্বর। তিনি জরথুশত্র কে বললেন, to oppose the bloody sacrifices of the traditional Iranian cults and to give aid to the poor. In one of his own compositions, Zarathustra says: Thee I conceived as holy, O Ahuramazda, when thy Good Thought appeared to me and asked me: 'Who art thou? And whose is thine allegiance?' [...] Then I answered: 'Zarathustra am I; to the false believers a forthright enemy, but to the righteous a mighty help and joy. [...] Thee I conceived as holy, O Ahuramazda, when thy Good Thought appeared to me. [...] A difficult thing it seemed to me, to spread thy faith among men, to do that which Thou didst say was best. [Yasna 43.4] স্বর্গীয় দায়িত্ব বুঝে পেয়ে জরথুশত্র পারস্যের নানা রাজ্যের মানুষের মাঝে জ্ঞানীপ্রভূ আহরুমজদার কথা কথা বলতে লাগলেন- that there was a supreme god, the "wise lord" Ahuramazda, who had created the world, mankind and all good things in it through his holy spirit, Spenta Mainyu. The rest of the universe was created by six other spirits, the Amesha Spentas ('holy immortals'). However, the order of this sevenfold creation was threatened by The Lie; good and evil spirits were fighting and mankind had to support the good spirits in order to speed up the inevitable victory of the good. (নিৎসের বিখ্যাত সেই বইটি স্মরণ করি। বইটির নাম Thus Spoke Zarathustra. সে বইয়ে নিৎসে জরথুশত্রর মুখে জীবনজগৎ সম্বন্ধে আপন উপলব্দির কথা লিখেছে অসাধারন গদ্যে।

) যা হোক। জরথুশত্র ধর্মের মূল কৃত্য ছিল উপাসনা, মিথ্যে কথা না বলা, গরিবকে সাহায্য করা; উৎসব উপাসনায় নানান উৎসর্গ এবং অগ্নির উপাসনা। অনুসারীদের শেষ বিচারের কথা বলেছেন জরথুশত্র। বলেছেন শেষ বিচারের দিনে মিথ্যেবাদীরা নরকে যাবে পূন্যবানেরা স্বর্গে। কাজেই প্রাচীন মিশরের Book of the Dead বইটির প্রভাব পারস্যে অবধি পৌঁছেছিল অনুমান করি।

পরলোকের ধারনা ওই মিশরীয় বইটিই ছড়িয়েছিল। জরথুশত্রর সময়ে প্রাচীন পারস্যের প্রধানতম ধর্ম ছিল মিথ্রার (Mithraism) । মিহির শব্দটার মানে সূর্য। অন্য মানে বন্ধু। সূর্য ও প্রেমের দেবতা।

মিহির শব্দটি ওই মিথ্রা শব্দ থেকেই উদ্ভূত। ঐতিহাসিক ‍Peter Clark তাঁর "Zoroastrianism, An Introduction to an Ancient Faith." বইতে লিখেছেন-"The basic doctrine of Mithraism, as far as can be told, is that Mithras was a god who was born from a rock and destined to secure the salvation of the world; to do this he was commanded by the god Apollo (through the intermediary agent of a raven) to slay the Bull from the region of the Moon, which was said to represent the fullness of life. Mithras was reluctant to do this but acquiesced in deference to the divine will; in the ensuing struggle between god and bull, other animals joined in - the dog, and scorpion and the snake. After Mithras was successful a quarrel broke out between Mithras and Apollo, but they were reconciled and celebrated a banquet." (pp. 157-158) তৎকালী বাকত্রিয়া রাজ্যের শাসক ছিলেন হাইসতাসপেস নামে এক গোত্র প্রধান। তিনি মিত্রার উপাসনা করতেন। জরথুশত্র তার কাছে গেলেন। মিথ্রাবাদী পুরোহিতদের তর্কে পরাজিত করেন।

সবার সামনে নাকি তেত্রিশটি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলছিল। তর্ক শেষে সবাই জরথুশত্রর মতই মেনে নিয়েছিল। রাজা হাইসতাসপেস পরিত্যাগ করে জরথুশত্রর আলোর ধর্ম গ্রহন করলেন। রাজ্যের অন্যান্য অভিজাতবর্গও তাই করলেন। আমৃত্যু হাইসতাসপেসএর কাছেই ছিলেন জরথুশত্র।

পার্শ্ববর্তী যাযাবররা বাকত্রিয়া আক্রমন করেছিল। তারা প্রভাবিত ছিল অন্ধকারের দেবতা দ্বারা। তারা জরথুশত্র কে ছুরিকাঘাতে নিহত করেন। আলোর উপাসকের বয়স তখন ৭৭ বছর। আগেই বলেছি জরথুশত্র ধর্মের প্রধানতম ধর্মগ্রন্থ হল আবেস্তা বা জেন্দাবেস্তা।

জেন্দাবেস্তার চারটি প্রধান ভাগ। গাথা, ইয়াসনা, য়াস্ট ও ভেনদিদাস। মনে রাখতে হবে বেদ এও চারটি। এবং বেদ এর সঙ্গে আবেস্তার সম্পর্ক দূরবর্তী নয়। জরথুশত্রর শিক্ষায় অশুভ শক্তির বর্ননায় তিনি বিশেষ বিশেষ শব্দ প্রয়োগ করেছেন।

প্রাচীন ভারতের ঋগ্বেদের সঙ্গে মিলে যায়। কাজেই ধারনা করা হয় প্রাচীন পারস্যের পূর্বাঞ্চলের লোকজন কথা বলত ঋগ্বেদের ভাষায়! আমরা অনুমান করতে পারি জরথুশত্র মিথ্রাবাদ ছাড়াও এমন এক প্রাচীন ধর্মের বিরোধীতা করেছিল যার উত্থান ঘটেছিল প্রাচীন ভারতে (বর্তমান পাঞ্জাবে)। ধর্মটি যাগযজ্ঞ সম্বলিত বৈদিক ধর্ম নয় তো? আবেস্তার গাথা পর্বটি লিখেছেন স্বয়ং জরথুশত্র। যা হোক। আবেস্তার ভাষা কালে কালে বদলে গিয়েছিল।

আবেস্তায় নাকি সেই পরিবর্তনের ছাপ রয়েছে। পন্ডিতের মত এমনই। পরবর্তীকালে পারস্য সম্রাটদের আনুকূল্য পেয়েছিল জরথুশত্রবাদ। সম্রাট সাইরাস থেকে দারিয়ূস-সবাই জরথুশত্র ধর্মের অনুসারী ছিল। পরবর্তীকালে পারস্যে মুসলিম অভিযান ও মঙ্গোল আক্রমন জরথুশত্র ধর্মের অন্তিমঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছিল।

জরথুশত্রর অনুসারীরা প্রাণভয়ে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। একটা দল ভারতে এসেছিল। এদের পার্সি স¤প্রদায় বলা হয়। আজও জরথুশত্রর শিক্ষাকে পার্শিরা ধরে রেখেছে। তখন আমি জরথুশত্র ধর্মের আলোর দেবতার কথা বলেছি।

আহরুমজদা। জরথুশত্র ধর্মে অন্ধকারের দেবতাও রয়েছে। সেই অন্ধকারের দেবতার নাম আহরিমান। আগেই বলেছি, দুপক্ষই সমান শক্তিশালী। মানুষ হিসেবে আমার হৃদয়ে ওই দুটো শক্তিরই উপস্থিতি টের পাই।

আজও আলো অন্ধকারে যাই। সূত্র http://www.livius.org/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।