আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ রোদন নয়; এ এক প্রেরণার দিন!!!

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

অনেকেই বলেন: এ দিনটি নিয়ে এ দিনেই লিখতে হবে। আমি তা মনে করি না, কেননা ২৮ অক্টোবর আমার নিকট বদর, ওহুদ থেকে নিয়ে বালাকোটের উত্তরসূরী একটি দিন! ২৮ অক্টোবর, দুপুরবেলা ঘুম থেকে উঠার কথা থাকলেও আজকে সকালেই উঠলাম। গত রাত থেকেই অসংখ্য প্রবাসীর মত আমিও দারুন শংকায় ছিলাম আজকে কি ঘটবে তা নিয়ে। বন্ধুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে যোহরের অনেক আগেই, তারপর যা দেখে গেলাম! হায় আল্লাহ্! তা যদি আমার জীবনে একটি স্বপ্নই হতো... না, আমার জন্য স্বপ্ন হতে যায়নি। এ ছিল এক নির্মম বাস্তবতা।

টিভির পর্দা ভেদ করে যেন লগি-বৈঠার প্রতিটি আঘাত আমার শরীর স্পর্শ করছে। কত ভয়ংকর চিত্র-চলচিত্রই তো চোখের পর্দায় তাক লাগিয়ে চলে যাচ্ছে, কত ঘটনাই তো নজর কেড়েছে অতীত হতে বর্তমান পর্যন্ত। কিন্তু এমন অনুভূতি তো কখনো আসেনি...। ইসলামী আন্দোলনে যোগদানের পর জানলাম যে, প্রতিজন মুসলমানের জন্য শাহাদাতের আকাংখা ধারন করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। আমাদের প্রাথমিক ইতিহাসের শাহাদাত পিয়াসী মুসলমানদের সেসব ঘটনাবলী জানার পর দৃঢ় প্রতীজ্ঞ হলাম যে, মৃত্যুই যদি অবধারিত তবে রোগশোকে নয়; বরং শাহাদাতের মৃত্যুই হোক।

সকাল সন্ধ্যা তাই সে প্রার্থনাকেই রুটিন করে নিলাম। কিন্তু শাহাদাতের অবস্থাটা ঠিক কেমন হবে, সে নিয়ে নানা ভাবনায় শিহরিত হতাম। কখনো ভাবতাম, যদি গুলি করা হয় তবে কেমন অনুভূতি হবে? যদি কিডন্যাপ করে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, সে কেমন অনুভব হবে? যদি অন্য কোনভাবে শাহাদাত আসে তবে সেসব কেমন হবে; এমন ভাবনায় ভারাক্রান্ত হতাম। তারপর একদিন জানলাম যে, শাহাদাতের মৃত্যু অনেক সহজ, অনেক নির্বেদন অন্য সকল মৃত্যুর চাইতে। তবু ভাবনারা নানা জাল বুনেই চলছে,,, কিভাবে আসবে শাহাদাত একদিন আমার দুয়ারে... (শহীদ শিপনের উপর অকথ্য নির্যাতন) ২৮ অক্টোবর! আমি এখনো মেলাতে পারছি না কেন এমন হলো...! কেন মনে হলো প্রতিটি বৈঠার আঘাত আমার পিঠেই পড়েছে, প্রতিটি লগির খোঁচা আমার আহত আত্মায় দেয়া হয়েছে।

আজো মেলাতে পারিনি সে হিসেব। না, আমার একটি পশমও ছিঁড়েনি সে অনুভবে, আমি আহত হয়েছি কেবল আত্মায়, অন্তরে। শহীদ জসিমকে যেভাবে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে শুইয়ে দেয়া হয়েছে বাংলার যমীনে; সে দৃশ্য আমায় শিহরিত করার চাইতে আহত করেছে বেশী, আমি ঘুমুতে পারিনি অনেক রাত, আমি ২৮ অক্টোবরের পর মনে পড়ে আরো মাত্র একবার দেখতে পেরেছি সেই দুর্বিসহ সচিত্র। (এই কমিউনিষ্ট কর্মীর হাত থেকে রেহাই পায়নি রাস্তায় পরে থাকা মানুষটি। সে পেটে লাথি দিয়ে এভাবেই উল্লাস প্রকাশ করে।

) আমি জানিনা ২৮ অক্টোবরের শহীদেরা ঠিক কি পরিমাণ যন্ত্রণা নিয়ে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন আল্লাহর যমীন এই বাংলাদেশে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য, তবে আমাদের ইতিহাসের সেসব সান্ত্বনা আমাদেরকে ভুলিয়ে দেয় সকল যন্ত্রণা। হামযা রাদিয়াল্লাহুর শাহাদাতের পর তাঁর বুক চিরে কলিজা কেটে নেয়া হয়েছিল, তা চিবানো হয়েছিল। বীরত্বের কিংবদন্তী সাহাবীদের শরীরের টুকরোগুলোকে একত্র করে সনাক্তকরণের জন্য আত্মীয়দের ডাকা হয়েছিল। Jashim- On his way to Jannah (শহীদ জসিম উদ্দিন এর একটাই অপরাধ ছিল। তিনি আল্লাহকে রব বলে স্বীকার করে নিয়েছিল।

আর সেই অপরাধেই তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ) আমি জানিনা কিভাবে আমিও একদিন পৌঁছে যাবো আমার পরম প্রিয় প্রভু আল্লাহর সাক্ষাতে। তবে এ লেখার সকল পাঠকের নিকট বিনীত অনুরোধ- আমার মৃত্যু যেন কবূল হওয়া শাহাদাতে হয়; আল্লাহর নিকট এ প্রার্থনায় আমীন বলবেন। আমি তীব্রভাবে আকাংখী আমার আত্মার আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাত করতে সেই জান্নাতে, যার ওয়াদা আল্লাহ্ শহীদদের সাথে করেছেন। (রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পরও আওয়ামী হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিবির কর্মীরা) পৃথিবীতে একমাত্র মুসলমানগণই সে জাতি, যারা তাদের প্রভুর নিকট মৃত্যুর জন্যেও প্রার্থনা করে।

তারা তাদের প্রভু আল্লাহর পথে নিজেকে কুরবান করে দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই গাফেল, সন্দেহ নাই; তবে কা’বার চত্ত্বরে সেদিন যখন তাওয়াফ করছিলাম, তখন উচ্চস্বরে একটি কণ্ঠ থেকে দো’আ করতে শুনলাম এভাবে- “হে আল্লাহ্! আমাকে ভাগ্যে আপনার পথের শাহাদাত দান করুন। এবং আমার সে ভাগ্য দান করুন আপনার রাসূলের শহরে”। আমি স্তম্ভিত! এখনো মুসলমাদের অন্তর উচ্চস্বরে পৃথিবীকে সাক্ষী রেখে শাহাদাতের আকাংখায় বিস্ফোরিত হয়। নিরবে-নিভৃতে তো সংখ্যাতীত হচ্ছেই।

হে দয়াময়! ২৮ অক্টোবরের শহীদদের শাহাদাত কবূল করুন। তাদের উচ্চ মর্যাদা দান করুন প্রতিশ্রুত জান্নাতে। এবং আমাদেরকেও তাদের পদাংক অনুসরণের তৌফিক দান করুন। আমীন। ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.28thoctober.com


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।